এক মুঠো গোলাপ পর্ব ২২+২৩

এক মুঠো গোলাপ
sinin tasnim sara
২২-২৩
২২
___
সোফার ওপর গম্ভীর মুখে বসে আছেন হুমায়ুন কবির সাহেব।
পাশের বাসার আলতাফ প্রফেসর আজ সুপ্তর নামে কমপ্লেইন করে গেছেন । তাকে নাকি প্রায়ই একটা ছেলের সাথে রাস্তাঘাটে দেখা যায়। ছেলেটা মাঝেমধ্যে বাসাতেও আসে।
কবির সাহেবের বিশ্বাসই হচ্ছে না, তার মেয়ে এত বড় স্পর্ধা দেখাতে পারে!
রান্নাবান্না শেষ করে ড্রয়িং রুমে এসে স্বামীকে গম্ভীরমুখে বসে থাকতে দেখে স্বভাবতই নিশাতের ভ্রু জোড়া কুঁচকে যায়। শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে পাশে এসে বসে।
— কি ব্যাপার সুপ্তর বাবা, কি চিন্তা করছো?
স্ত্রী’র কথায় তার দিকে ফিরে তাকায় কবির সাহেব। শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে_
— সুপ্ত কোচিংয়ে গিয়েছে?
— হ্যাঁ, সকালেই তো গেলো। ভুলে গেলে?
— আচ্ছা তুমি ওর টাইম টু টাইম খোঁজ খবর নাও তো!
— কি হয়েছে বলো তো?
— সামনের বাসার আলতাফ ভাই আজকে সুপ্তর সম্পর্কে আজেবাজে কথা বললো। ও নাকি কোন ছেলের সাথে ঘুরে বেড়ায়, আবার ছেলেটা আমাদের বাসাতেও আসে।
— তুমি ঐ আধ পাগল লোকটার কথা বিশ্বাস করেছো?
— নাহ্ প্রথমে বিশ্বাস করিনি। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ওদের বাসার দারোয়ান টাকে জিজ্ঞেস করেছি, এ ক’দিনে কোনো অপরিচিত ছেলেকে আমাদের বাসার এদিকে আসতে দেখেছিল কি-না!
ও বললো প্রায়ই আসে। সন্ধ্যায় অথবা রাতে। সুপ্তর পরিচিত নাকি ছেলেটা।
— সুপ্তর বন্ধুও তো হতে পারে।
— উঁহু, বন্ধু নয়। বন্ধু হলে, আমাদের আ্যাবসেন্সে ওর সাথে মিট করতো না সুপ্ত। ওর সব বন্ধুকেই তো আমরা চিনি।
— তুমি বলতে চাইছো সুপ্ত কোনো..
— হুম ধারণা করছি। ও বাসায় এলে আমার রুমে আসতে বলবে।
— জামাই বাবাজি আছে বাসায়। তুমি রাগারাগি কোরো না, ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।
— নিশাত, সুপ্ত আমার বড় আদরের সন্তান। ওর ওপর আজ পর্যন্ত চিৎকার চেঁচামেচি করেছি আমি? আজও করবো না। ছেলেটার সম্পর্কে আগে জেনে নেই। ব্যাপারটা সফটলি হ্যান্ডেল করা যেতে পারে। সুপ্ত এখনো বাচ্চাই আছে, যা বোঝাবো তাই বুঝবে ।
মৃদু হেসে উপরোক্ত কথাগুলো বলে উঠে চলে গেলেন উনি। নিশাত চিন্তাগ্রস্ত ভাবে বসেই রইলেন।
তাদের অনুপস্থিতিতে ছেলেপেলে বাসায় আসে, শুনতেই তো বাজে লাগছে।
___
আভার ভাই আশিক কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।
এই নিয়ে বাসায় তুলকালাম কাণ্ড।
আভার মা ডাইনিং টেবিলে বসে কপাল চাপড়াচ্ছেন আর রাগ-কান্না মিশ্রিত এক অদ্ভুত স্বরে ছেলে কে গালিগালাজ করে যাচ্ছেন।
আশিক নতুন বউ সমেত বাবা-র সামনে বসে আছে। ভয়ে তার শরীর থরথর করে কাঁপছে, গলা শুকিয়ে আসছে কিন্তু বউ পাশে আছে বলে প্রকাশ করতে পারছে না।
এদিকে আশিকের বউ সীমন্তিনী, সেও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। অবশ্য ভয়ের চাইতে রাগ আর আক্ষেপই বেশি কাজ করছে ভেতরে।
আশিকের মিষ্টি মিষ্টি কথায় গলে গিয়ে বিয়েটা না করলেই হতো।
সারা পৃথিবীর সামনে ডন সেজে থাকা ছেলেটা বাবা মায়ের সামনে স্রেফ মেনি বেড়াল বৈ কিচ্ছু নয়, এতক্ষণে বুঝে গিয়েছে সীমন্তিনী।
শেষমেশ এমন মুখোশধারী মেনি বেড়াল কে ভালোবাসতে হলো!
রাগে-দুঃখে নিজের চুল পটপট করে ছিঁড়তে মন চাইছে সীমন্তিনীর।
আভা মা’য়ের পাশে বসে সকলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।
ভাই-বৌয়ের চিন্তাধারা খানিক আঁচ করতে পেরে ভেতরে ভেতরে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে সে।
ভাইয়ের কাঁচুমাচু মুখ খানাও বড় আনন্দ দিচ্ছে তাকে।
একইসাথে দুঃখ বোধও হচ্ছে।
আহারে নতুন বউ নিয়ে কেমন ঝামেলাতেই না পড়তে হয়েছে তাকে!
এই ঝামেলা থেকে উদ্ধার করতে পারবে শুধু একজনই। নিদ্র ভাই।
বাড়তি ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে সবার অলক্ষ্যে নিদ্রকে মেসেজ করে দিলো আভা। সব সমস্যা সে-ই এসে সমাধান করুক।
,
নিদ্র বাইরে গিয়েছিল একটা কাজে। আভার ইমার্জেন্সি কল পেয়ে সব কাজ ফেলে বাসায় আসতে হলো। বাসায় এসে তো দেখে এই অবস্থা।
বড় চাচা আর চাচী রেগে অস্থির।
এদের শান্ত করবে কীভাবে ভেবে পেলো না নিদ্র।
সে আভাকে ইশারা করে দিলো নতুন বউকে নিয়ে যেন ভেতরে যায়।
আভা বুঝতে পেরে সীমন্তিনীকে ঘরের ভেতর নিয়ে গেলো৷
নিদ্র বড় চাচার পাশে বসে বিনয়ী সুরে ডাকলো চাচাকে_
— চাচ্চু?
— তুই দেখেছিস বাবা এই বেয়াদব টা কি ভয়ানক একটা কাজ করেছে!
ফুঁসে উঠলেন বড় চাচা।
— বুঝতে পারছি চাচ্চু। তুমি একটু শান্ত হও। আশিকের এতবড় কাজের পেছনে তো কোনো কারণ আছে। সেই কারণটা আগে আমরা শুনি!
— কি শুনবো! আমার মান ইজ্জত সব শেষ করে দিলো এই ছেলে।
— আহা। চাচ্চু একটু শান্ত হও না। এই আশিক তুই বসে আছিস কেন? যা পানি নিয়ে আয় বাবা-র জন্য।
নিদ্রর আদেশ পাওয়া মাত্র বিদ্যুতের গতিতে উঠে চলে গেলো আশিক। কিচেনে এসে নিজে ঢকঢক করে পানি খেয়ে শান্ত হলো। উফফ্ কি ভয়টাই না পাচ্ছিল এতক্ষণ।
নিজেকে ধাতস্থ করে তারপর বাবা-র জন্য গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে গেলো।
ভদ্রলোক রেগে আছেন বলে পানি নিলেন না আশিকের হাত থেকে।
আশিক অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো নিদ্রর দিকে। নিদ্র চোখ পাকিয়ে ঠোঁট নেড়ে বোঝালো_
— বিনীত ভঙ্গিতে দে।
আশিক মাথা নেড়ে বাবা-র উদ্দেশ্যে বললো_
— বাবা পানিটা খাও। রাগ কমে যাবে। আমাকেও একটু এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দাও প্লিজ।
এবারে কাজ হলো। ভদ্রলোক ছেলের হাত থেকে পানির গ্লাস নিলেন। তিন চুমুকে পানি শেষ করে চিরাচরিত গম্ভীর কণ্ঠে আদেশ করলেন_
— যাও বসো।
আশিক মাথা নেড়ে অপজিট সোফায় বসে পড়লো।
নিদ্র আশিকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো_
— কাউকে না জানিয়ে এতবড় সিদ্ধান্ত নিলি কেন?
— কি করতাম ভাই! সীমুর ভাইয়া আমাদের সম্পর্ক টা মানছিলই না। আমি সীমুকে প্রচন্ড ভালোবাসি।ওকে ছাড়তাম কি করে!
— তোদের সম্পর্ক কবে থেকে? আর ওর ভাইয়া কেনই বা মানছিল না ?
— আমাদের সম্পর্ক সেই কলেজ লাইফ থেকে। তোমরা তো জানো আমার এই বেশভূষা কিংবা চলাফেরার কারণে অনেকেই আমাকে গুণ্ডা মনে করে। তাছাড়াও গতবছর স্ট্যাটিসটিকস ডিপার্টমেন্টের কিছু ছেলেপেলেদের সাথে আমাদের ঝামেলা বেঁধেছিল, হাতাহাতি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল ব্যাপারটা। তারা আমার আর সীমন্তিনীর সম্পর্কের কথা জানার পর সীমুর ভাইয়াকে আমার নামে উল্টোপাল্টা কথা বোঝায়। কার ভাই এমন ব্যাড রিপোর্ট ওয়ালা ছেলের হাতে বোন কে তুলে দিবে?
সীমুর ভাইয়াও আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয় না। সে আমাকে থ্রেড দেয়, আমি ওর আশেপাশে গেলে সমস্যা হবে।
কিন্তু ভালোবাসার থেকে দূরে থাকা পসিবল?
আমিও দূরে থাকতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত আমাদের যোগাযোগ বন্ধ না করাতে পেরে সীমুর ভাইয়া ওর বিয়েই ঠিক করে ফেলেছে।
গতকাল সীমু আমায় কল দিয়ে বলেছিল আমি যদি ওকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে না করি, তাহলে ও সুইসাইড করবে। আর তাই…
— আর তাই তুই ওকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে ফেললি!
গর্জে উঠলেন আশিকের বাবা। আশিক মাথা নিচু করে ক্ষীণ স্বরে বললো_
— হু।
— তা বিয়ে যে করলি বউ কে খাওয়াবি কি?
ডাইনিং থেকে চিল্লিয়ে বললেন আশিকের মা।
এ পর্যায়ে নিদ্র উত্তর দিলো_
— চাচী ভালবাসাকে আপন করে নেয়া ভুল কিছু নয়। হ্যাঁ ওদের ভুল হয়েছে ফ্যামিলির অমতে গিয়ে কিংবা লুকিয়ে বিয়ে করে। তবে যে পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে তারা যাচ্ছিল , এর চাইতেও খারাপ কিছু করে ফেলতে পারতো।
বয়স দু’জনারই কম। ভুল না-হয় একটা করেই ফেলেছে। আপনারা রেগে না থেকে সমস্যা টা সমাধান করার চেষ্টা করুন। সীমন্তিনীর ফ্যামিলির সাথে কথা বলে একটা সমঝোতায় আসা যাক।
বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন এবং বিশাল একটা দায়িত্ব। কথায় কথায় যেমন সম্পর্ক জোড়া যায়না, তেমন জুড়ে যাওয়া সম্পর্ক এক নিমেষেই ভেঙে দেয়া যায় না।
আপনারা বাবা-মা, সন্তানের ভালো চাইবেন সবসময়। আপনাদের তো সন্তানের প্রতি আস্থা আছে৷ সে ভুল মানুষকে নিশ্চয়ই পছন্দ করতে পারে না, তাইনা?
এ পর্যায়ে নিস্তব্ধতা নেমে এলো সবার মাঝে। নিদ্রর কথাগুলো একটু গভীর ভাবে চিন্তা করার পর বড় চাচা বললেন_
— বৌ মা’র ফ্যামিলির সাথে কথা বলতে হবে। আশিক তুমি ব্যবস্থা করো। আর আশিকের মা। বৌ মা’র সাথে কথাবার্তা বলো তুমি। সে নিশ্চয়ই ভয় পেয়ে আছে। ছেলে তোমার একটা ভুল করেই ফেলেছে। তাকে ভুল শুধরানোরও সুযোগ দেয়া উচিৎ ।
আর আশিক যতদিন না বৌ মা’র ফ্যামিলি মেনে নিচ্ছে ততদিন সে তোমার আম্মার সাথে থাকবে। তুমি যথাসম্ভব দূরে থাকবে তার থেকে বুঝতে পেরেছো?
— জ্বী বাবা।
মাথা নিচু করেই উত্তর দিলো আশিক।
সে বিশ্বাসই করতে পারছে না। এত সহজে, এত জলদি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
আড়চোখে নিদ্রর দিকে তাকিয়ে মনে মনে তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালো আশিক।
____
দুপুরের খাবারের পর সুপ্তকে ঘরে ডেকে পাঠালেন কবির সাহেব। সুপ্ত ভাবলো পড়াশোনার ব্যাপারে কথা বলবে হয়তো।
স্বাভাবিক ভাবেই সে বাবা-র পিছু পিছু তার ঘরে উপস্থিত হলো।
কিছুক্ষণ বাদে নিশাত এসে দরজা আটকে দিলেন৷ পরিস্থিতি গম্ভীর মনে হলো সুপ্তর। সংশয় প্রকাশ না করে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর কবির সাহেব কথা বললেন। সুপ্তকে আদেশ করলেন বসার।
বাবা-র কণ্ঠস্বর ভালো ঠেকলো না সুপ্তর। ভয়ে ভয়ে মায়ের দিকে তাকালো। মা চোখের ইশারায় বোঝালেন “বাবা যা বলছে তা-ই করো”
উচ্চবাচ্য না করে সে এক কোণে বসে পড়লো। কবির সাহেব সরাসরি প্রশ্ন করলেন_
— বন্ধুমহল ছাড়াও অন্য কোনো ছেলের সাথে যোগাযোগ আছে তোমার সুপ্ত?
বাবা-র প্রশ্ন বুঝতে সমস্যা হলো না সুপ্তর। কোনোরূপ ভণিতা ছাড়াই মাথা নিচু করে ক্ষীণ স্বরে জবাব দিলো_
— আছে।
সাবলীল স্বীকারোক্তিতে বেশ অবাক হয়ে গেলেন মিস্টার এন্ড মিসেস কবির।
— ছেলেটা কে সুপ্ত?
পূর্বের চাইতেও গম্ভীর শোনালো কবির সাহেবের কণ্ঠ।
একটা শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা গলায় সুপ্ত বললো_
— ন..নিদ্র।
— কোন নিদ্র?
— আভার ভাই। আমাকে কিছুদিন আগে পড়াতে আসতো ঐ নিদ্র।
— কিইহ্
মৃদু চিৎকার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন নিশাত।
চকিতে মায়ের দিকে তাকালো সুপ্ত। কবির সাহেবও শীতল দৃষ্টিতে তাকালেন স্ত্রীর দিকে।
— এ্যাই মেয়ে কি বলছিস কি তুই, পাগল হয়ে গিয়েছিস! ওই ছেলে কত্ত বড় তোর থেকে।
অস্বাভাবিক রেগে ধমকালেন নিশাত।
সুপ্ত একইসাথে ভীরু এবং হতভম্ব দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো মায়ের পানে। মা এমন অসঙ্গতিপূর্ণ কথা কেন বলছে বুঝতে পারলো না সুপ্ত।
কবির সাহেব স্ত্রীর কথা অগ্রাহ্য করে সুপ্তর উদ্দেশ্যে বললেন _
— কাল ছেলেটাকে আমার সাথে দেখা করতে বলবে। এখন তুমি আসতে পারো।
অকস্মাৎ বাবা-র মুখ থেকে এমন কথা শুনে বিস্ময় ভাব বেড়ে গেলো সুপ্তর। বোকার মত বসে রইলো সে, কি বলবে বুঝতে পারলো না।
নিশাত আৎকে উঠলেন।
— তুমি পাগল হয়ে গিয়েছো সুপ্তর বাবা।
— সুপ্ত যাও পড়তে বসো।
আদেশ করলেন কবির সাহেব।
সুপ্ত মাথা নেড়ে গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে গেলো।
ও যাবার পর কবির সাহেব দরজা আটকাতে আটকাতে শান্ত স্বরে বললেন_
— নিশাত কন্ট্রোল ইওরসেল্ফ।
— তুমি এত নিরুত্তাপ কি করে থাকতে পারো সুপ্তর বাবা? তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে! ওই ছেলের সাথে দেখা করবা মানে। আমার মেয়েটাকে মার্ডার করাতে চাইছো তুমি। তুমি কি চাও সুপ্তর মায়ের মত ওর পরিণতি হোক!
— নিশাত। সুদূরপ্রসারী চিন্তার অভ্যেসটা বন্ধ করো। আমি সুপ্তর বাবা। আমি জানি ওর জন্য ভালো কি আর মন্দ কি। ছেলের সাথে কথা বলা মানেই বিয়ে করিয়ে দেয়া নয়। এত রিআ্যাক্ট কোরো না। তোমার ভয়ের কারণে এত বছর লুকিয়ে রাখা তিক্ত সত্যিগুলো সন্তানদের সামনে কিছুতেই যেন না আসে।
স্ত্রীর উদ্দেশ্যে কথাটা বলে ব্যালকনিতে চলে গেলেন কবির সাহেব।
নিশাত ধপ্ করে বিছানায় বসে পড়লেন। চোখ টলমল করছে অশ্রুতে। বিড়বিড় করে আওড়াতে শুরু করলেন_
“তুমি ওকে চেনো না সুপ্তর বাবা। ও প্রতিশোধপরায়ণ একটা মানুষ। সুপ্তর জীবনের সত্যি জানলে এক ইঞ্চিও ছাড় দেবে না অত্যাচার করতে। সুপ্তর সাথে ঐ ছেলের সম্পর্ক কিছুতেই এগোতে দিবো না আমি। কিছুতেই না..”
এক মুঠো গোলাপ
২৩
______
(সুপ্ত)

সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টা। গতদিনের তুলনায় বাসার পরিবেশের গাম্ভীর্য্যতা দ্বিগুণ মনে হচ্ছে । জানিনা বাপি নিদ্রর সাথে কি কথাবার্তা বলছেন।
আমার বাপিকে যতটা নিরুত্তাপ মনে হয়, তিনি ততটাও নন। আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে সবচাইতে ইন্ট্যালিজেন্ট মানুষটা বাপিই। সব কঠিন কাজ সফটলি হ্যান্ডেল করা তার স্বভাব। আমি ভাবতাম আমার ফ্যামিলি হয়তোবা লাভ ম্যারেজ বিষয়টা খুব সহজেই মেনে নিবে বাট,
বাট আই ওয়াজ রং। আমার ক্ষেত্রে চাইলেও সব সহজ স্বাভাবিক নয়। এর কারণ বলা যেতে পারে আমার জন্মপরিচয়।
অবশ্য এক্ষেত্রে ফ্যামিলিকে ভুল বোঝাটা আমার উচিৎ হবে না। তারা চায় আমার নিজস্ব একটা পরিচয় হোক। আমার সুখ-সাফল্যই তাদের স্বপ্ন।
আমিও তো আমার স্বপ্নের পথেই এগুচ্ছিলাম, কিন্তু হঠাৎ কি হলো কে জানে!
নিদ্রতেই জীবনটা সীমাবদ্ধ হয়ে গেলো।চাইলেও ওকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুর ওপর ফোকাস করতে পারছি না।
,
হুমায়ুন কবির সাহেব শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নিদ্রর পানে। নিদ্র মাথা নিচু করে ভাবছে কি উত্তর দেয়া যায় ওনাকে। সুপ্ত আর তার এক হওয়ার পথটা এত কমপ্লিকেটেড হবে, সে বুঝতে পারেনি।
— আমার প্রস্তাবে রাজি, নিদ্র?
দ্বরাজ কন্ঠস্বর ভেসে আসলো নিদ্রর কানে। সে মাথা তুলে হুমায়ুন কবির সাহেবের দিকে তাকিয়ে, ক্ষীণ স্বরে পাল্টা প্রশ্ন করলো_

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here