এক মুঠো প্রেম পর্ব -২৯

#এক_মুঠো_প্রেম
#Writer_Mahfuza_Akter
#পর্বঃ২৯

-স্পৃহা এই বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে পারবে না, ভাইয়া।

প্রণবের থমথমে বাচনভঙ্গি দেখে স্পৃহা ভ্রু কুচঁকালো। অবাক হয়ে বললো,

-কেন? আমি এখান থেকে গেলে প্রব্লেম কোথায়?

প্রণব ভরাট কন্ঠে বললো,

-আপনার এতো প্রশ্নের উত্তর এখন দিতে পারছি না বলে দুঃখিত, মিসেস নিস্তব্ধতা! আ’ম নট এট অল আন্সারেবল টু ইউ।

স্পৃহা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। কিছু বলতে যাবে, তার আগেই প্রণব স্পন্দনকে নিয়ে বাইরে চলে গেল। স্পৃহা বিরক্তি নিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো।
_____________________

স্পৃহা মুখ কালো করে বসে আছে। আজ স্পন্দনের বিয়ে। তেমন কোন বিশেষ আয়োজন ছাড়াই একদিনের অনুষ্ঠানে বিয়েটা হচ্ছে। কিন্তু স্পৃহার শুধু সেই অনুষ্ঠানটা এটেন্ড করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। স্পন্দন কড়া গলায় আদেশের সুরে বলে দিয়েছে, স্পৃহা যেন শুধু বিয়ের সময় উপস্থিত থাকে। তার আগে পরে নয়। নিজের ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে স্পৃহা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। প্রণব ওকে কী এমন বলেছে যে, সে স্পৃহাকে বাড়িতে নিয়েই গেল না? আবার হুমকিও দিয়ে গেল!! সব ভাবতে ভাবতে সবটুকু রাগ প্রণবের ওপর গিয়ে জমাট হলো স্পৃহার। দাঁত কটমট করতে করতে নিজের বিরক্তি ঝাড়লো প্রণবের ওপর।

-মনে মন আমাকে বকা দেওয়া শেষ হলে একটু রেডি হওয়ার সময় হবে কি আপনার হাতে, মিসেস নিস্তব্ধতা?

স্পৃহা ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকাতেই দেখলো প্রণব ওর ঘরে ঢুকছে। ওকে দেখেই স্পৃহার রাগটা আকাশ ছুঁইছুঁই হয়ে গেল। কড়া গলায় বললো,

-আপনি আমায় বিয়েতে যেতে দিলেন না কেন?

প্রণব পকেটে দুই হাত গুঁজে ভ্রু উঁচিয়ে বললো,

-যেতে দেইনি মানে? আপনি তো এখন যাচ্ছেন-ই! আমি আটকালাম কখন?

স্পৃহা চোখ রাঙিয়ে বললো,

-আমাকে দেখে আপনার বোকা মনে হয়? আমি কি কিছু বুঝি না নাকি? আপনি ভাইয়াকে উল্টাপাল্টা কিছু বুঝিয়েছেন নিশ্চয়ই। নয়তো ভাইয়া আমাকে সেদিন এখানে ফেলে চলে যেতো না। সাথে নিয়েই যেতো।

-আপনার ভাইয়া তো আর ছোট বাচ্চা না যে, আমি যা বুঝাবো, সেটাই মেনে নিবেন। নিশ্চয়ই যৌক্তিক কিছুই বলেছি। তবে এখন তো যাচ্ছেন-ই! রেডি হয়ে নিন। বিকেলে বের হতে হবে।

স্পৃহা মুখ গোমড়া করে বললো,

-আপনার আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবে না। নিজের কাজ করুন গিয়ে। যান!!

প্রণব হাসলো। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,

-আপনাকে আজ দেখতে যেন খুব বেশি সুন্দর না দেখায়- বিষয়টা মাথায় রেখেই নিজেকে সাজাবেন আশা করি।

স্পৃহা কিঞ্চিৎ বিস্ময় নিয়ে তাকালো। কিন্তু ততক্ষণে প্রণব ওর দৃষ্টি সীমা পেরিয়ে গেছে। প্রণবের বলা কথা গুলো মনে মনে বার কয়েক আওড়ালো সে। ‘আপনাকে আজ দেখতে যেন খুব বেশি সুন্দর না দেখায়’ কথাটা মনে আসতেই নিজের প্রতি তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো স্পৃহার মুখে।

বিয়ে বাড়িতে সন্ধ্যার ঠিক আগমুহূর্তে পৌঁছালো স্পৃহা। ওর সাথে প্রান্তি আর প্রণবও এসেছে। প্রণব আসতে চায়নি যদিও। কিন্তু স্পন্দন এতো বার বলায় না আসাটা খারাপ দেখায়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ফাংশন এটেন্ড করতে হবে। নিজেকে যথাসম্ভব লুকিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলেও কারো দৃষ্টি এড়াতেই সক্ষম হয়নি সে। এমন সুউচ্চ ও সুঠাম দেহকে কীভাবে আড়াল করবে সে- ভেবেই বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ফেললো প্রণব। স্পৃহা ওর অবস্থা বুঝতে পেরে মনে মনে হাসলো। প্রণবকে দেখা মাত্রই দলবেঁধে ছেলে-মেয়েরা ছুটে এলো। সেলফি ও অটোগ্রাফের পাঠ চুকাতে গিয়ে প্রণবের কপালে ঘাম জমে গেছে। তবুও যথাসম্ভব হাসিমুখে সবাইকে হ্যান্ডেল করতে পেরেছে সে।

বিয়ের সব রিচুয়াল শেষ করে স্পন্দন ও মেঘাকে নিয়ে স্পন্দনের বাসায় গিয়ে আবার ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেছে। প্রণব এবার তাড়া দিয়ে স্পৃহা আর প্রান্তিকে নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। যদিও স্পৃহা থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু স্পন্দন তার ঘোর বিরোধিতা করে ওকে প্রণব আর প্রান্তির সাথে ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।

রাতের মধ্য প্রহরে রাস্তা অনেকটাই নীরব। স্পৃহা ফ্রন্ট সিটে চুপচাপ বসে আছে। আর প্রান্তি পেছনের সিটে বসে ঘুমে ঢুলছে। ড্রাইভ করলেও স্পৃহার কার্যকলাপ বেশ মনযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে প্রণব। স্পৃহা যে এক দৃষ্টিতে অদূরে থাকা আইসক্রিম পার্লারের দিকে তাকিয়ে আছে, সেটাও প্রণবের দৃষ্টি এড়ায়নি।

-এই উইন্টারে আইসক্রিম খাওয়া উচিত না।

স্পৃহা ভ্রু কুঁচকে প্রণবের দিকে তাকিয়ে বললো,

-আমি কখন আপনাকে আইসক্রিম খাওয়ার কথা বললাম?

প্রণব অদ্ভুত ভঙ্গিতে হেসে বললো,

-বোঝার জন্য কি বক্তব্যকেই একমাত্র মাধ্যম বলে মনে হয় আপনার?

স্পৃহা আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো,

-হয়তো না!! কিন্তু না বলা কথাগুলো তো আর সবাই বুঝতে পারে না। এমন কতো রাতে হাড়কাঁপানো শীতের সময়ও আমি, ভাইয়া আর আহির আইসক্রিম খেতাম। যদিও তখন আমি ওকে ভালোবাসতাম না। কিন্তু অনুভূতির সূচনা তো সেখান থেকেই!!

প্রণব মলিন হাসলো। বিরবির করে বললো,

-এর থেকেও আরো প্রগাঢ় অনুভূতির বেড়াজালে বন্দী হবেন আপনি, মিসেস নিস্তব্ধতা। আপনি তখনও কাঁদবেন। কিন্তু সেই কান্না হবে আজকের কান্নার উল্টো পিঠ!
__________________

সকালে রেডি হয়ে তাড়াহুড়ো করতে করতে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো স্পৃহা স্কুটিতে চাবি ঘোরাতেই থমথমে কন্ঠ ভেসে এলো,

-একা একা কোথায় যাচ্ছেন আপনি? আপনার একা কোথাও যাওয়া অসম্ভব!!

স্পৃহা চমকে উঠলো। প্রকৃতস্থ হয়ে পেছনে ফিরতেই দেখলো, প্রণব ভ্রু বাঁকিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। স্পৃহা কিছুটা বিরক্ত হলো। সবজায়গায় এই মানুষটা বারবার কপন নাক গলায়।

-আজ প্রান্তির ডিপার্টমেন্টে পরীক্ষা, তাই ও অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে। তাই আমাকে একা-ই যেতে হবে।

-আমার সাথে চলুন। আমি ঐ রাস্তা দিয়েই যাচ্ছি। এরপর কখনো একা কোথাও যাওয়ার দুঃসাহস দেখাবেন না।

শেষোক্ত কথাটা অনেকটা হুমকি স্বরূপ বললো প্রণব। স্পৃহা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে কড়া গলায় কিছু বলার ইচ্ছে থাকলেও সেটা আর করলো না স্পৃহা। এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে। তাই বিরক্তি নিয়েই গাড়িতে উঠে বসলো সে। সেটা দেখে প্রণবের অধর কোণে ফুটে উঠলো হৃষ্টচিত্তের রেখা।

কিন্তু গেইটের কাছাকাছি গাড়ি এগোতেই মিস্টার চৌধুরীকে চিন্তিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রণবের মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল। স্পৃহা তাড়া দিয়ে বললো,

-গাড়ি থামান।

প্রণব নিজের বাবার ঠিক পাশে গাড়ি থামাতেই স্পৃহা জানালার গ্লাস নামিয়ে বললো,

-কী হয়েছে, আংকেল? এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে?

মিস্টার চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-আর বলো না, মা! আমার গাড়িটা গ্যারেজে দিয়েছে ড্রাইভার। আজ মিটিং আছে একটা। কীভাবে এটেন্ড করি সেটা?

বলেই প্রণবের দিকে তাকালেন তিনি। সেটা বুঝতে পেরে প্রণব অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। স্পৃহা বললো,

-আপনি এই গাড়িতেই উঠুন না!

মিস্টার চৌধুরী ইতস্তত করে বললেন,

-না, থাক! আমি দেখি অন্য কোনো ব্যবস্থা করতে পারি কি না।

কথাটা শেষ হতে না হতেই প্রণব ভরাট কন্ঠে বললো,

-মিসেস নিস্তব্ধতা! কাউকে বিপদে ফেলে রেখে নিজেকে প্রায়োরিটি দেওয়ার মতো মানুষ প্রণব মেহরাজ না। গাড়ির ব্যাকসিট খালি-ই আছে আশা করি।

মিস্টার চৌধুরী সন্তুষ্ট চিত্তে গাড়িতে উঠতে উঠতে বললেন,

-স্পৃহা মা, কেউ যদি উপকার করতে আসে, তাহলে তাকে ফিরিয়ে দিতে নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রত্যয় চৌধুরী কাউকে হতাশ করেনা।

প্রণব কথাটা শুনে ভ্রু বাঁকিয়ে ফেললো। কিন্তু কোনে বাক্য ব্যয় না করে গাড়ি স্টার্ট দিলো। স্পৃহা মনে মনে বললো,

-এই বাপ-ছেলের তো দেখি সাপেনেউলে সম্পর্ক! এদের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে কেমন হবে?? কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব?
__________________

-আন্টি, যদি আপনার কাছে কিছু চাই, সেটা রাখবেন?

স্পৃহার এমন কথা শুনে মিসেস মেহরীন অবাক হয়ে বললেন,

-এটা কেমন প্রশ্ন হলো, স্পৃহা? যদি আমার পক্ষে সম্ভব হয়, তাহলে অবশ্যই দিবো!

স্পৃহা নিঃশব্দে হেসে বললো,

-তেমন কিছু চাই না। শুধু চৌধুরী ভবনে একটা দিন আমার সাথে থাকবেন?

মিসেস মেহরীন থমকে গেলেন। তার মুখে আধার নেমে এলো। স্পৃহা ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সেটা বুঝতে পেরে বললো,

-আমায় ফিরিয়ে দেবেন না, আন্টি। শুধু একটা দিনই তো!

-এতে তোমার লাভ?

-আপনার কাছাকাছি থেকে মায়ের স্নেহটা উপভোগ করতে চাই। সাথে প্রান্তিও একদিন এ বাড়িতে নিজের মাকে সঙ্গী হিসেবে পেল।

মিসেস মেহরীন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

-কাল সকালে আসছি আমি।

বলেই ফোন কেটে দিলেন। স্পৃহা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। সে জানতো কাজটা এতোটাও কঠিন নয়। এখন শুধু অভিমানের পাহাড় গলানো বাকি।

সকাল সকাল নিজের মাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে প্রান্তির চোখ কপালে! সে ডায়নিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ হা করে তাকিয়ে আছে। প্রান্তিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিস্টার চৌধুরী ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই থমকে গেল। মিসেস মেহরীনের সাথে চোখাচোখি হতেই দুজনেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অথচ দুজনের চোখই জলপূর্ণ।

প্রণব ব্রেকফাস্টের উদ্দেশ্যে নিচে নামতেই মিসেস মেহরীনকে দেখে অবাক হয়ে বললো,

-মা, তুমি এখানে?

-আমি আসতে বলেছি!

স্পৃহার কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো। স্পৃহা সাহস জুগিয়ে বললো,

-আমি চাই, আংকেল-আন্টির মধ্যে সব মান-অভিমান মিটে যাক!

প্রণব রাগী গলায় বললো,

-যেটা সম্পর্কে আপনি সম্পূর্ণ অবগত নন, সেটা নিয়ে আপনার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, মিসেস নিস্তব্ধতা।

-হয়তো আমি সবটা জানি না। আপনিও তো জানেন না! তবে এতোটুকু আমি নিশ্চিত যে, ওনাদের দুজনেই নির্দোষ আর অহেতুক কষ্ট পাচ্ছে।

স্পৃহার কথা শুনে প্রণব দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইলো। আসল সত্যিটা তো সে-ও জানে না! কী বলবে এখন ও? কিন্তু তার বাবার কারণে তার মায়ের চোখের পানি গুলো তো প্রণব নিজে দেখেছে।

-নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও আমার মাকে রাতের পর রাত চোখের পানি ফেলতে হয়েছে।

-নিজের মায়ের দিকটাই দেখলেন? আপনার বাবার কষ্টটা বুঝতে পারলেন না? কেন পারেন নি? তিনি পুরুষ বলে কেঁদে বুক ভাসাতে পারেন না, তাই?

প্রণব স্পৃহার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। সত্যিই তো সে এভাবে কখনো ভেবে দেখেনি!

স্পৃহা প্রণবের দিকে এগিয়ে এসে বললো,

-সত্যি করে বলুন তো? আপনি আপনার বাবাকে ভালোবাসেন না?

প্রণব মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। বলার মতো কোনো ভাষা অবশিষ্ট নেই। স্পৃহা সেটা বুঝতে পেরে বললো,

-আমি জানি না, আপনাদের মধ্যে কী হয়েছে? আর জানতেও চাই না। কিন্তু আমার মনে হয় নিজেদের ভেতরের কথাগুলো একে অপরের কাছে প্রকাশ করা দরকার। এরপর না-হয় সিদ্ধান্তে আসবেন!!

বলেই মিস্টার চৌধুরী ও মিসেস মেহরীনের দিকে তাকিয়ে বললো,

-আপনারা কি আমার সাথে একমত?

দুজনে একসাথেই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। স্পৃহার মুখে হাসি ফুটে উঠলো সেটা দেখে। মিস্টার চৌধুরী বললেন,

-যখন প্রান্তির বয়স পাঁচ বছর, তখন মেহরীন হসপিটালে চাকরি করতো। সেখানে ওর এক কলিগ একদিন আমায় ফোন দিয়ে বলে যে, মেহরীন না ওর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত। আমি যেন মেহরীনকে ছেড়ে দেই। আমার ঐ ব্যক্তির সাথে অনেক কথা কাটাকাটি হয়। মেহরীনকে সব খুলে বললে, ও ঐ ব্যক্তিকে আবার জিজ্ঞেস করে। সে নাকি বলেছে, সে এমন কিছুই বলেনি। আমি ভয়েস রেকর্ড করিনি বলে কিছু বলতে পারিনি। তবে মেহরীনও বুঝেছিল যে, ঐ ব্যক্তি মিথ্যে বলছে। তাই এতে আমাদের মাঝে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু তার কয়েকদিন পরই আমার অফিসের ঠিকানায় বেশ কয়েকটা ছবি পাঠায় ঐ ব্যক্তি। ছবিগুলো দেখে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিলাম যে, ওদের মধ্যে সত্যিই কোনো সম্পর্ক চলছে। এরপর থেকেই ভাঙন শুরু।

মিস্টার চৌধুরী বলা শেষ করতেই মিসেস মেহরীন বললেন,

-ডক্টর মিহান আমার কলিগ ছিল। উনি আমার সাথে মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক ব্যবহার করতেন। আমি ঠিকই বুঝতে পারতাম, ওনার উদ্দেশ্য ভালো না। প্রত্যয়-কেও বলেছিলাম সবটা। কিন্তু সেদিন ঐ ছবিগুলো দেখে ও আমায় অবিশ্বাস করে। তবে অবিশ্বাস করাটাই স্বাভাবিক। কারণ ছবিগুলো এডিটেড ছিল না। বরং এমন ভাবে তুলে উপস্থাপন করা হয়েছিল যেকেউ দেখলেই খারাপ ভাবে নিবে।

মিস্টার চৌধুরী বললেন,

-আমি পরে জানতে পেরেছিলাম, সবটা সাজানো ছিল। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল।

মিসেস মেহরীন বললেন,

-আমি ভেবেছিলাম প্রত্যয় সবটা জানতে পারলে আমার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু প্রত্যয় আসেনি। তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম, প্রত্যয় আসল সত্যিটা জানতে পারেনি। আর ডক্টর মিহানও হয়তো আমায় খুঁজে পায়নি। কারণ আমি গ্রামে চলে গিয়েছি যেটা প্রণব ছাড়া কেউ জানে না।

প্রণব সবটা শুনে বাবা-মায়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

-আর তোমাদের এই বোকামির জন্য আমাকে সাফার করতে হয়েছে। ইউ গাইস আর জাস্ট ইম্পসিবল!!!

বলেই দাঁত কিড়মিড় করতে করতে নিজের ঘরে চলে গেল। স্পৃহা হতাশ গলায় বললো,

-যাব্বাবাহ!! দুই পক্ষের রাগ ভাঙানোর জন্য এতো কিছু করলাম। সবটা ঠিক হওয়ার সাথে সাথে আরেক জন রেগে গেল কেন?

# চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here