এখানে কোন বৃষ্টি নেই পর্ব ৬

গল্পঃ এখানে কোনো বৃষ্টি নেই
পর্ব০৬
ইফতার পার্টিতে এসে অামার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। বাসার ছাঁদে বিশাল অায়োজন। অভির অনেক বন্ধুরা এসেছে।
অামি প্রথম এরকম কোনো ফাংশন দেখলাম। পাশেই ছোটখাটো স্টেজ। শিরোনাম, “ওয়ান প্রমিস, ওয়ান স্টোরি “!
অভি অামাকে কারো সাথেই পরিচয় করিয়ে দিলোনা। মানে কি?? এম অাই নট স্পেশাল??
কিন্তু সবার মাঝে অামি যেনো ওদেরই একজন ছিলাম।
সবার সাথে এককোনায় প্লেট নিয়ে বসে পড়লাম। ইফতার শেষে স্টেজের ব্যবহার দেখলাম। কয়েকজন গত বছরে করা নিজের একটা করে ব্রেভ কাজের গল্প করলো, অাবার কিছু একটা এমন ব্রেভ করবে কেউ কেউ সেই প্রমিসও করলো।এই সব কিছুতে মজার একটা ব্যাপার হলো, সবকিছুই ভিডিও করে রাখা হচ্ছে।
অভির এক বন্ধু হুট করেই এনাউন্স করলো,
” পরী নিজের একটা ব্রেভ কিছু নিয়ে বলো, এসে…..সো পরী, নাউ দ্য স্টেইজ ইজ ইওরস…
এবং সবাই খুব স্বাভাবিকভাবেই ক্ল্যাপ করলো।
অামি তখনই স্ট্রেঞ্জ হয়ে গেলাম। অভির সব বন্ধুরা অামাকে চেনে…সব্বাই। কিভাবে চেনে???
অামার উপর তখন সবার ফোকাস। অামি নার্ভাস ভঙ্গিতে এদিক ওদিক তাঁকিয়ে অভিকে খুঁজলাম। অভি কোথাও নেই। এই মানুষটা দরকারের সময় কোথাও থাকে না।
অামি স্টেজে উঠে বোকার মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েই রইলাম। অামার নিজের বলার মত কিছু ব্রেভ কিছু পেলাম না। অামার খুবই অাশ্চর্য লাগলো তখন, যে অামার এই ১৮টা বছরের জীবনে কাউকে গর্ব করে বলার মত কিছুই অামি করিনি….. হুহ!
অভির এক বন্ধু বললো,
———পরী তুমি কি অানইজি?? এখানে অামরা সবাই জানি,তুমি খুব ভালো ছাত্রী। পড়াশোনা নিয়ে অন্তত কিছু একটা বলো।
অামি তাতেও সাহস পেলাম না। অামার চোখ শুধু অভিকে খুঁজছিলো।
এর মাঝে অভির অারেক বন্ধু বললো,
——–অভি চলে গেছে পরী! তুমি কি তাঁকে খুঁজছো??
অামার রাগ হলো,
অামি প্রায় চেঁচিয়ে ফেললাম,
——–চলে গেছে মানে??
——–হুঁ ইফতারের মাঝখানেই তো চলে গেলো। বলে যায়নি??
—— অাশ্চর্য! অামি তো উনার সাথে এসেছি। না বলেই গেলো??? উনি সবসময় অামাকে ফেলে চলে যান। এইবার অামি তাঁকে ছাড়বো না। কঠিন শিক্ষা দিবো!
——–অভি তোমাকে সবসময় ফেলে চলে যায়?? বলো কি??
——–হুঁ, অনেকবার ফেলে গেছে এমন ।
সবাই হু হু শব্দে হেসে ফেললো।
———তোমার কি তাঁকে দরকার?? বলোতো পরী??
অামি মাইক হাতে খুব জোরে জোরে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
——- তাহলে একটা প্রমিস হয়ে যাক পরী, যে অাজকের পর থেকে তুমি অার কখনোই অভিকে তোমাকে ফেলে চলে যাবার সুযোগ দেবে না??
অামি ভীষণ অানন্দিত হয়ে সেদিন সবার মাঝখানে প্রমিসটা করলাম। অামি তখনো জানতাম না,অামার পরবর্তী জীবনে এই প্রমিস অামাকে কি কঠিন পরীক্ষায়ই না ফেলবে।।।??
সেদিন বাসায় ফিরে অামি অার অভিকে খুঁজলামনা। মনে তখন অন্য অানন্দ অামার!অামি অভিকে অার কখনোই অামাকে ছেড়ে যাবার সুযোগ দেবো না।
সেদিনকার প্রমিস, বদলে দিলো অামায়। তারপর থেকে অামি যেনো অার অামি নেই। সুযোগ পেলেই অভিকে গাঁ ঘেঁষে ধাক্কা দিই। টেবিলের নিচে দিয়ে এবার পা নয়, হাত টেনে ধরি। অভি তো একবার খাওয়ার সময় বিষম খেয়ে প্রায় দম বন্ধ হবার যোগাড়। অান্টি তো খুবই বিস্মিত হয়ে বললেন,
——-খাওয়ায় বসলেই তোর যত অাজগুবি ব্যাপার ঘটছে , একবার ও” করিস তো, অার একবার অা” করিস। বিষম খাস , এসবের মানে কি??
অভি রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
———এই টেবিলেই কিছু গন্ডগোল আছে মা। হুট করেই অামার উপর কিছু একটা চেঁপে বসছে, অাই থিংক, সামথিং ইজ হ্যাপেনিং ভেরি হিকিং…..
অান্টি তাতে অারো ক্ষেপে গিয়ে বললেন,
——–তুই কি কোনো ড্রাগ-ফ্রাগ নিচ্ছিস?? ফিলিং ভেরি অানকমফর্টেবল.. হোয়াই??
অভিও অারো রেগে গেলো তাতে।
অামি তখন চুপ করে সেখানে থেকে সড়ে পড়লাম।
এছাড়াও অভিকে যখনি অামি একা পেতাম। চট করে জড়িয়ে ধরতাম। দু-তিন সেকেন্ডে অভি পুরো থমকে যেতো; অার অভি কিছু বুঝবার অাগেই অামি সরে পড়তাম।
একদিন তো ছাঁদে একা পেয়ে, জড়িয়ে ধরে অভির ঘাড়ে কয়েকটা চুমু খেয়ে ফেললাম, অভি অামায় খপ করে ধরে ফেললো,
———তুমি এসব কি করছো পরী??? যখন তখন হ্যারাস করছো অামায়?? হোয়াই??
———অামার ভালো লাগে তাই!
——–হাউ ডেয়ার ইউ! তোমার ভালো লাগে মানে???অামার যখন রাগ উঠবে না, অামি কি করতে পারি তুমি তো জানো না!
অামি খুব মিনমিনে গলায় বললাম,
———-অাপনি তো কিছুই পারেন না।
তাই অামিই সব করি!
———-পরী, ডু ইউ রিয়েলাইজ, হাউ ডেস্পারেট ইউ অার?? অাই থিংক অাই সুড গেট এন একশান! দিস ইজ নট দ্য প্রোপার টাইম।উই নিড দ্য প্রিপারেশান,
অভির কথার মাঝখানেই অামি অভির ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে দিলাম দৌড়!
অভি হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলো শুধু।
ব্যাপারটা অামার জন্য ছিল অসীম অানন্দের। অামাদের অফিশিয়াল কোনো ডেট নেই, ফাংশন নেই, কোনো বন্ডিং নেই, কোনো দায়বদ্ধতা নেই । শুধু অামার ইচ্ছেমতো ভালোবাসা। খুব মনে হতো, জীবন এত অানন্দময় কেনো??
ঈদের পরপরই অামার এডমিশন টেস্ট হয়ে গেলো। চান্স পেলাম ডিএমসিতে! ভর্তির কিছুদিন বাকী। নিজের বাসায় সময় কাটে না। সবসময় অভিকে মিস করি! অভি তখন বিসিএসের জন্য পড়ছে। ফোন করলেই কঠিন গলায় বলে,
——–অাপনি যেই মানুষটার সাথে গল্প করতে চাইছেন, সে এখন পরীস্থানে পৌঁছবার ডানা বানানোতে ব্যস্ত! অনুগ্রহ করে পরে ফোন করুন।
অামি কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই বলতাম,
———কে বললো, অামি গল্প করতে চাই?? অামি তো তাঁকে চুমু খেতে চাই। তাঁর চুলে অামার গাল ঘষতে চাই…..। অভি খট করে ফোন রেখে দিতো…
তারপর নিজে অাবার ফোন করে বলতো,
———-তুমি কি সবসময় এক মুডেই থাকো??? ভয় করে না???
অামি জবাব না দিয়ে ফোনে লম্বা করে চুমু খেতাম।
অামার
ভর্তির সময় অভি এলোনা। অঞ্জন ভাই অার অভির এক ঝাঁক বন্ধু এলো।
——-অভি কেনো এলোনা??
অঞ্জন ভাই বললো,
———–ও’র নাকি তোমার কাছে অাসতে ভয় করে! এলেই নাকি তুমি…….
ইশ্। কি লজ্জা তখন অামার।
প্রিলিমিনারীর পর অভি অারো ডুবে গেলো পড়াশোনাতে, অার…….
অার অামার শুধু অপেক্ষা…. কবে অামরা অফিশিয়ালি এনগেজ হবো…….
(চলবে)
লেখিকা: তৃধা আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here