#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_৪
#Jannatul_Ferdos(Esporshi Espriha)
নিরুপমা কান ধোরে এক পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছে আর উৎস নিজের মনে ফোনে গেম খেলতেছে।মনে মনে উৎসের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে নিরুপমা ।মনে চাচ্ছে কাঁচা গিলে খেতে তাকে।
“এক পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে ও তোমার গাল মন্দ করা বন্ধ হচ্ছে না
উৎসের কথায় নিরুপমা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো
” আপনি আসলেই একটা অভদ্র বাজে লোক।তা না হলে আমার মতো একটা বাচ্চা মেয়েকে এভাবে শাস্তি দিতেন না।যা বলেছি বেশ বলেছি।
“অন্যায় করে আবার মুখে মুখে তর্ক করছো, বেয়াদব মেয়ে।আর তুমি বাচ্চা?বিয়ে হয়ে গেছে আবার নিজেরে বাচ্চা দাবি করে হুহ
” বিয়ে হয়েছে তা কি হয়েছে?এখনো ইন্টেক আছি… বলেই নিরুপমা একটা মুখ ভেংচি দিল….উৎস বেকুব এর মতো তাকিয়ে আছে নিরুপমার কথা শুনে রাগবে না হাসবে সে বুঝতে পারছে না।
“অনেক্ষন শাস্তি পেয়েছো যাও এইবারের মতো মাফ করলাম আর যদি কখনো শুনেছি আমাকে গাল মন্দ করছো তখন খবর আছে বলে দিলাম…
” তখন খবর আছে বলে দিলাম…নিরুপমা উৎসের কথাকে ভেঙ্গিয়ে বলে চলে গেল।উৎস কিছুক্ষন ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার গেম খেলায় মন দিল।
উৎসে তখন ওয়াশরুমে ছিল।নিরুপমা ভুলে গিয়েছিল সে ওয়াশরুম চেক করে নাই।তার প্রতিটি কথা উৎস শুনতে পেয়েছিল আর তারপর নিরুপমাকে কান ধরিয়ে এক পায়ের উপরে দাঁড় করে রাখে।
“বজ্জাত, খাচ্চর,গাধা, গরু ছাগল আমাকে কান ধরিয়ে এক পায়ের উপরে দাঁড় করিয়েছে আজকে ওর হচ্ছে হুহ…..
নিরুপমা রান্না ঘরে গিয়ে সুন্দর করে ডালপুরি বানায়।উৎসের জন্য আলাদা ভাবে বানায়।তাতে লবন আর মরিচের গুড়া ইচ্ছা মতো দেয়।সব রাগ এভাবেই উঠাবে সে।প্রবীর খান,তাহমিনা বেগম আর প্রেমা কে তাদের ডালপুরি দিয়ে উৎসের জন্য নিয়ে যায়।উৎস ল্যাপটপে কাজ করছে।সুন্দর মতো ডালপুরি দিয়ে আসে আর বলে আসে খেতে….
” তুমি খাবে না?
নিরুপমা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে….
“যে ব্যক্তি আমাকে স্ত্রীর অধিকার বা মর্যাদা দেয় না, আমাকে নিচে ফ্লোরে ঘুমাইতে বলে সারাদিনে খেলাম কি না খেলাম খোজ নেয় না তার মুখ থেকে কথাটি শুনে ভালো লাগছে।আমি প্রেমার সাথে খাবো আপনি খান।
উৎস চুপসে যায় কিন্তু অনুতপ্ত বোধ বা বিবেকের কাছে সে পরাজিত হলো না।
” আমি অরিত্রাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম ৫ বছরের সম্পর্কের পর ২ বছরের সংসার ছিল।ওর অধিকার বা ভালোবাসা আমি কাউকে দিতে পারব না।আমি কখনোই দ্বিতীয় বিয়ে করতাম না মায়ের কসম দেওয়াই করেছি।আমার জীবন মুসকান তোমাকে ওর জন্যই আনা হয়েছে ওর মা হয়েই থাকো আমার স্ত্রী হতে এসো না বুঝেছো?কষ্ট করে বানিয়েছো সেজন্য আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম এর থেকে বেশি কিছু না। কথা গুলো মাথায় রেখো ওকে?
“একদিন আপনি আমাকে ভালোবাসবেন অনেক বেশি ভালোবাসবেন আর সেদিন আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা ও দেবেন।
” এটা কখনোই হবে না।
“হবে মিলিয়ে নিয়েন। তবে দেইখেন বেশি দেড়ি না হয়ে যায়।কথাই আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝে না।
” সেই আশায় বসে থাকো।আমার মৃত্যুর আগ অব্দি আমি অরিত্রাকেই ভালোবাসব।
“তাহলে মৃত্যুর পরই না হয় আমাকে ভালোবাসবেন….কথাটি বলেই নিরুপমা হনহন করে বেড়িয়ে যায়….উৎস বুঝে উঠতে পারে না মেয়েটার মাথায় কি কোনো সমস্যা আছে?সাইকো নাকি?মৃত্যুর পরে আবার মানুষ ভালোবাসে কেমনে?অর্পিত এর উত্তর খুজে পেলো না।ভাবনা বাদ দিয়ে পুরি মুখে নিল কিন্তু মুখে নেওয়ার সাথে সাথেই অর্পিত প্রচুর জোরে চিৎকার করে উঠে। ঝালে গাল জ্বলে যাচ্ছে তার সাথে আবার লবনে ভরা। ঘরে পানি ও নেই।অর্পিত যেনো পাগল হয়ে যাচ্ছে ঝালে।দৌড়ে বাইরে আসে ডাইনিং টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেতে থাকে।নিরুপমা প্রথমে উৎসুক থাকলে ও এখন তার খুবই খারাপ লাগছে হয়তো অন্যভাবে শায়েস্তা করলে ও পারতো সে।নিজের কাজে নিজেই অনুতপ্ত বোধ করছে।কিচেন রুম গিয়ে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে গুটি গুটি পায়ে উৎসের কাছে যায়।উৎস মিষ্টি পেয়েই খাওয়া শুরু করে।ঝালে ফরসা মুখটা লাল বর্ণ ধারন করেছে।মিষ্টি খাওয়ার পর কিছুটা ঝাল কমেছে।
” আমি আসলে দুঃখিত এটা আমার করা উচিত হয় নি।
উৎস কিছু বলে না।নিরুপমাকে পাশ কাটিয়ে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে চলে যায়।নিরুপমা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।সে বুঝতে পারে নাই এমনটা হবে।
উৎসের সাথে গত ২ দিন ধোরে নিরুপমা কথা বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু উৎস কথা বলে না।তাকে দেখলেই উৎসের রাগ উঠে।আগে যাই হোক সহ্য করতে পারত এখন তার একদমই সহ্য হচ্ছে না নিরুপমাকে।কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে আসছে এখন এমনটা মনে হচ্ছে তার।
নিরুপমা মন খারাপ করে মুসকানকে নিয়ে চলে আসে। মুসকান ঘুমোচ্ছে। মেয়েটা বড্ড ফাজিল।সে কোলে ছাড়া ঘুমায় না।তাই নিরুপমা মুসকানকে নিয়ে অন্যরুমে আসে।ঘুমন্ত অবস্থায় পুরো ঘুমন্ত পরি লাগছে মুসকানকে।নিরুপমা মুসকানের দিকে তাকিয়ে আছে।কখনো ঘুমের মধ্যে হাসছে কখনো বা শব্দহীন কাদছে।লতিফ যখন হয়েছিল তখন এমন করতো লতিফ।তখন পারুল বেগমের কাছে শুনেছিল বাচ্চাদের নাকি ঘুমের মধ্যে ফেরেস্তা স্বপ্ন দেখায়।তাই দেখেই বাচ্চারা কখনো হাসে কখনো কাদে।অনেক কষ্টে মুসকানকে শুয়ে দিয়ে চা বানানোর জন্য নিরুপমা রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায় তখন ফোন বেজে উঠে তার। ফোন রিসিভ করতেই তার রাগে চোখ রক্তবর্ণ ধারন করেছে…..
চলবে!
কাল একটু অসুস্থ ছিলাম রোজার মাস রোজা থেকে খুবই কষ্ট হয়ে যায়।গল্প দিতে না পারার জন্য দুঃখিত। গঠনমূলক কমেন্ট আশা করছি!!