এবং স্ত্রী পর্ব – ৩

#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_৩
#Jannatul_ferdos

” কিরে বড়লোক বাড়ির বউ হইয়া আইসোস বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে। এখন তো আমাগো কোনো দামই নাই। খাওন ফরন দিয়া বড় কইরলাম আর এহন আমাগো মূল্য নাই তোর কাছে?

পান চিবুতে চিবুতে নিরুপমাকে কথা গুলো বলছিল নিরুপমার সৎ মা পারুল বেগম।হুট করেই মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে উদয় হলেন আজ। যখন নিরুপমা উৎসকে কানে কালা বলে দৌড় দেয় রুমের বাইরে পারুল বেগমের মুখোমুখি হয়।সে ভালো মন্দ কিছু না বলে মুসকানকে নিয়ে চলে যায়।এখন রান্না ঘরে নিরুপমাকে কাজ করতে দেখে এগিয়ে এসে কথা গুলো বলে।নিরুপমা কোন উত্তর দেয় না। নিজের মতে কাজ করে।তাকে চুপ থাকতে দেখে পানের চিবি ফেলিয়ে আবার বলেন…

“বড় লোক মিনসে পাইয়ে দেমাগ বাড়ছে নাকি তোর।ভুইলা যাইস না আগে একখান বিয়া আছিল।আবার তো একটা মাইয়া ও আছে।ওরা কইলাম তোরে স্বার্থের লাইগা আনছে।কয়দিনের মধ্যে নিজের একটা বাচ্চা লইয়া লো।দেখবি স্বামী হাতে চলে আইছে।তহন আর ওই মাইয়ারে তোর পালা লাগব না।সৎ রে কোনোদিন আপন ভাব্বি না বুজছোস
” তুমি কি আমাকে তোমার মতো একজন সৎমা হতে বলছো নাকি একজন স্বার্থবাজ খারাপ মা হতে বলছো।আমার না হয় স্বামীর এক বিয়ে এক বাচ্চা আছে তাও ৩ মাসের।আর তুমি যখন আমার বাবারে বিয়ে করেছিলে তখন তার বাচ্চা ছিল না?ছিল ৪ বছরের একটা নিষ্পাপ ফুলের মতো বাচ্চা ছিল। তুমি যখন বাবারে বিয়ে করলে তখন তো তোমার ও ২ বছরের একটা বাচ্চা ছিল ঝুমুর।লতিফ তো আমার বাবা সন্তান কিন্তু ঝুমুর তো আমার বাবার সন্তান না।তবু ও আমার বাবা ঝুমুরকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে।আমার থেকে ও বেশি ভালোবাসে।সে ঠিকি পরের সন্তানকে আপন করতে পারলো কিন্তু তুমি মা মরা একটা মেয়েকে আপন করতে পারলে না তার বাবার কাছে ও তাকে সৎ বানিয়ে দিলে মা।সৎ সৎ ই হয় এটা তোমার মতো বাজে মহিলাদের চিন্তা৷ আমি ও প্রমাণ করে দেব সব সৎমা মা সৎমা হয় না। গর্ভধারণ না করলে ও মা হওয়া যায়।এখন তুমি আমার বাসা থেকে আসতে পারো।
“তোর এতো বড় সাহস তুমি আমারে অপমান করলি?আমারে এতো বড় বড় কথা শুনালি।ওই মাইয়ার জন্য যখন তোর কফাল পুড়বো তখন বুঝবি মুখপুড়ি।আমারে বাজে মহিলা কস হারামজাদি….

নিরুপমা যেতে যেতে তার কানে এই পর্যন্ত কথা আসলো।পারুল বেগম এখন ও বকবক করতেছে।অস্পষ্ট সুরে শোনা যাচ্ছে।হয়তো এই কথা গুলোর আরো জবাব দিতে পারতো সে।কিন্তু ইচ্ছা করেই দিল না। লেবু যতো কচলানো হবে ততো তেতো হবে কিন্তু কিছু কথা না বললে হয় না।তার ওই কথাগুলোর পরিপেক্ষিতে নিরুপমা জবাব না দিয়ে পারে নি।তাই এতো বছর পর এই প্রথম বার নিরুপমা তার সৎমায়ের মুখের উপরে উত্তর দিল।

সারাদিন নিরুপমা উৎসের চোখের সামনে পড়ে নি।কি জানি সামনে পাইলে হইতো আস্ত চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।দুপুরে খাবার টেবিলে একবার দেখা হয়েছিল বাড়ির অন্যান্যরা থাকার কারনে উৎস কিছু বলতে পারে নি। কিন্তু তাকে সকালের মতো রাগান্বিত ও দেখাচ্ছিল না।কিন্তু তাও নিরুপমার সাহস হয় নি উৎসের মুখোমুখি হওয়ার।এইদিকে ৩টা বাজে নিরুপমার গোসল ও হয় নাই।শাড়ি উৎসের রুমে। কিছুক্ষণ দরজার বাইরে পায়চারি করতে লাগলো।ভিতরে যাবে কি যাবে না বুঝে উঠতে পারছে না।তখন মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।পরিক্ষার সময় যে নৈব্যক্তিক এর উত্তর জানা থাকত না নিরুপমা ৪ আংগুলে ৪ টা অপশন ভেবে নিয়ে কামড় দিত।যে আংগুলে সবচেয়ে বেশি ব্যথা আর দাগ হতো সেইটাই উত্তর ধোরে নিত।এই ফর্মুলাই কাজে লাগাবে সে।হাসি পাচ্ছে খুব নিজের বাচ্চাকালের এই স্বভাবের কথা ভেবে।কিন্তু বাচ্চা কালের স্বভাব হবে কেন?এইতো ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষাতে ও সে এমন করেছে।নাকি বিয়ে হয়ে গিয়েছে বলে সে খুব বড় হয়ে গিয়েছে ?আচ্ছা একটা ইন্টার পড়ুয়া মেয়ে কি খুব বড় হয়?নিরুপমা উত্তর খুজে পায় না।এখন এগুলা নিয়ে ভাবলে চলবে না গোসল করতে হবে প্রচুর গরম পড়েছে যেন মনে হচ্ছে আগ্নেয়গিরির মধ্যে আছে সে।নিরুপমা ২ আংগুলের একটাই যাবে একটাই যাবে না ভেবে কামড় দিল।ভাগ্যে ছিল হয়তো এটাই যে নিরুপমা রুমের ভিতরে যাবে।কি আর করার নিজেই তো এই পদক্ষেপ নিয়েছে।পা টিপে টিপে সে রুমে প্রবেশ করে।আরে বাহ রুমে তো উৎস নাই সোনাই সোহগা।নিরুপমা এতোক্ষন শুধু ভয় পাচ্ছিল।এবার সে গলা ফাটিয়ে উৎসকে নিয়ে বলতে শুরু করলো…..
ধুর শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছিলাম। ভয় পাওয়ার কি আছে হেতি বাঘ না ভাল্লুক?জামাই না যেন কুমড়োপটাশ,বজ্জাত একটা লোক খাচ্চোর একটা লোক, রাগীবাবু যেন জমিদার এর নাতি নাকের ডগায় রাগ থাকেই, শেয়াল পন্ডিত না না শেয়াল পণ্ডিতের মাথায় বুদ্ধি থাকে ওনার মাথায় তো এক চুল ও বুদ্ধি নাই।গাধা গরু ছাগল উম না জামাইকে কেউ এগুলা বলে না সে একটা আমড়া গাছে ঢেকি অকর্মা,পচা লাউ মনে চায় করলার জুস খাওয়াই দেই খাটাশ জানি একটা…..
“ব্যাস হয়েছে তোমার গাল মন্দ করা????
হঠাৎ করে কারোর গলার আওয়াজ পেয়ে নিরুপমা ঢোক গিলে আজ বুঝি সে শেষ…….

চলবে!!

পর্ব ২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here