এলি ম্যান পর্ব -০৩

. #গল্প – এলি-ম্যান (৩য় #পর্ব) ( ১৮+ এলার্ট )

মানুষের সাথে বাস্তবিক ভাবে কিছু ঘটছে এমন সময়ে সে স্বপ্নে ঐরকম জিনিসই দেখতে পায় একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। ঠিক এমনই ভাবে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখতে দেখতেই ইভানা ঐ অপরিচিত পুরুষের সাথে সঙ্গমে সায় দিতে থাকে। লোকটি তার শরীরের নিচ থেকে আস্তে আস্তে উপরের দিকে আসতে থাকে। ইভানা শরীরের বিশেষ অঙ্গ গুলোতে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ পেয়েও ঘুম থেকে উঠে না। কিন্তু যখন লোকটি তার ঠোঁট স্পর্শ করে তার সাথে সাথেই তরল পদার্থের স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায় তার। ইভানা এক মুহুর্তও আর দেরি করে না। বালিশের নিচে রাখা 9mm এর ছোট পিস্তলটা হাতে নিয়ে সোজা গুলি চালিয়ে দেয় লোকটির কাঁধের কাছে।

গুলির ধাক্কায় লোকটি ইভানার শরীরের উপর থেকে দুরে ছিঁটকে যায়। ইভানা দ্রুত গতিতে লাইটের সুইচ দিতেই হলুদাভ সাদা আলো জ্বলে উঠে। অপরিচিত লোকটি বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে গেছে। লাইটের আলোতে ইভানা এবার লোকটিকে স্পষ্ট দেখতে পায়। কালো হুডিতে আবৃত একটা বিশালাকার দেহ। হুডির টুপির রং কিছুটা নীলচে এবং কালোর মিশ্রণ। লোকটি তার ডান হাতে দিয়ে বাম কাঁধে গুলির ক্ষত চেপে ধরে রেখেছে। এবার ইভানার চোখ যায় গুলির ক্ষতস্থানের দিকে। সেখান থেকে কেমন যেন সবুজ আঠালো পদার্থ চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। কালো পিচ্ছিল জ্যাকেট বেয়ে আঠালো পদার্থ গুলো খুব ধীরে ধীরে নিচে নামছে। লোকটি খুব জোরে হাত চেপে ধরতেই আস্তে আস্তে রক্ত প্রবাহ কমতে থাকে। ইভানা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে লোকটির দিকে। লোকটি এবার তার মাথা তুলে ইভানার দিকে তাকায়। তার সবুজ জ্বলজ্বলে চোখ দু’টো নজরে পড়ে ইভানার। সেই মায়াবী স্বচ্ছ চোখওলায়া অতিপ্রাকৃত লোকটি এখন তার সামনে! আর তাকে সে নিজ হাতে গুলি করল! মুহুর্তের মধ্যেই যেন সেই সবুজ চোখের মায়ায় পড়ে যায় ইভানা। সে পিস্তল নিচু করে নেয়। চোখ মুখে একটা মায়াবী ভঙ্গি করে আস্তে আস্তে লোকটির দিকে এগুতে থাকে। লোকটিও একদম নড়চড় করে না। ইভানা পিস্তলটা নিজের কোমড়ে গুঁজে নিয়ে একদম লোকটির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাতর গলায় বলে ‘আই এম স্যরি।’
আগুন্তকঃ লোকটি এবার নিজের মুখ খোলে। একদম মেয়েদের মতোই চিকন মায়াবী স্বরে বলে, ‘ইটস ওকে, ঠিক হয়ে যাবে।’

ইভানা মুহুর্তের মধ্যেই যেন গলে যায়। তার মধ্যে আর কোন রাগ নেই। সে দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে একটা ড্রয়ার থেকে সাদা বক্স বের করে আনে। বক্সের ভিতরে হরেকরকমের জিনিস আছে। সে বক্সটা খুলে প্রথমেই একটা বোর্ড বের করে। তারপর ভিতরের জিনিস গুলো একটা একটা করে বের করতে থাকে। ছোট ছোট একটা স্টিলের বাটি। একটা কাঁচি আরেকটা বাকানো কাঁচি। একটা তুলার রোল। আর বেশ কিছু মেডিসিন। যা কাটা ছিঁড়া করার সময়ে দরকার হয়। ইভানা আগন্তুক লোকটিকে হাতের ইশারায় ডাকতেই সে এসে ইভানার পাশে বসল। ইভানা তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শরীরের ভারী কাপড় খুলে নেয়। কাঁধের কাছে গুলির ছিদ্র স্পষ্ট। ইভানা কাঁচিতে তুলা নিয়ে সামান্য মেডিসিন দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে নেয়। অদ্ভুত ভাবেই লোকটির ক্ষতস্থান থেকে লাল রক্তের বদলে সবুজ আঠালো তরল পদার্থ বেরিয়ে আসতে থাকে। ইভানা ভয়ে আঁতকে উঠে পিছনে সরে যায়। আগন্তুক লোকটি এবার ইভানার হাত ধরে ফেলে। কাতর কন্ঠে বলে উঠে, ‘প্লিজ হেল্প মি।’

লেখকের iD- #সালাহউদ্দিন_তারিক (salahuddin.tarik)

ইভানা আবারও মায়ায় জড়িয়ে যায়। কাছে এসে স্বযত্নে গুলিটা বের করে দেয়। বক্স থেকে ব্যান্ডেজ কাপড় নিয়ে পেঁচিয়ে আর কস্টেপ লাগিয়ে গুলির ক্ষতটা আড়াল করে দেয়। আগন্তুক লোকটা বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। নিজের হুডিটা গায়ে জড়িয়ে মায়াবী একটা হাসি দেয় ইভানার দিকে তাকিয়ে। হাসিটা ইভানার মনে তীরের মতো বিদ্ধ হয়ে যায়। ইভানাও পাল্টা হাসি দিয়ে লজ্জা রাঙা একটা ভঙ্গি করে। লোকটি আর কোনরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সোজা ইভানাকে একটা চুমু খায়। মাত্র সেকেন্ড খানেক স্থায়ীত্বের চুমুতেই ইভানা যেন অন্য জগতে হারিয়ে যায়। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে লোকটির দিকে। লোকটি আবারও সেই মায়াবী হাসি দিয়ে জানালার দিকে হাঁটতে শুরু করে। ইভানা দ্রুত গতিতে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, ‘নাম কি তোমার?’
আগন্তুক লোকটিও দ্রততার সাথে মায়াবী স্বরে উত্তর দেয়, ‘ আামার কোন নাম নেই, মাস্টার আমাকে এলি-ম্যান বলে ডাকে।’

ইভানা আবারও প্রশ্ন করে করে, ‘ তোমার মাস্টার কে! সে কোথায় থাকে?’
এলি-ম্যান উত্তর দেয়, ‘ সে এলিনাক্স অঞ্চলে থাকে। সেই আমার প্রভু, আমার মাস্টার।’

ইভানা আর কোন প্রশ্ন করতে পারে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। এলি-ম্যানও আর অপেক্ষা না করে জানালার পাশে গিয়ে একটা ডিগবাজি দিয়ে বিল্ডিংয়ের বাইরে চলে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই যেন ধ্যান ভাঙে ইভানার। সে দ্রুততার সাথে ড্রয়ার থেকে দূরবীন নিয়ে জানালার পাশে চলে যায়। নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় এলি-ম্যান দুই পা ও ডান হাতে ভর দিয়ে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করে আছে। দুইবার এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্রুত গতিতে উত্তর দিকের অন্ধকার পথ ধরে হাঁটতে থাকে সে। চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে তার দিকে আর কোন নজর নেই তার। নিচের দিকে তাকিয়ে দ্রুত গতিতে হাঁটতে থাকে সে। ইভানা আবার নিজের বিছানায় শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে এলি-ম্যান এর মায়াবী সবুজ চোখ দু’টোর কথা। ভাবনার ভিড়েই একসময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায় ইভানা।
.
.
.
আমেরিকার একটা সংরক্ষিত এলাকা আছে। যেটার উপরে কেবল কর্তিত্ব চলে একজনেরই সে হলো ডিটেকটিভ সালাহউদ্দিন। বিভিন্ন দেশের বড় বড় বাহিনীর মধ্যে ঝামেলা পাকলে সেগুলোর সুরাহা করাই তার কাজ। এসব করেই চলে সালাহউদ্দিন এর দিন। প্রায় দশ হাজার বাসিন্দার এই সংরক্ষিত এলাকায় সে এসেছিল এক সাধারণ ছন্নছাড়া যুবকের মতো করেই। কারো সাথে তেমন মেলামেশা করত না সে। সারাদিন নিজের রুমে বসে কি সব খুঁটিনাটি করত। আর রোজ শুক্রবার বিকাল বেলায় চলে যেত পাশের একটা বনে। তীর ধনুক নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রেকটিস করতে থাকতো। সেই থেকেই সে নজরে আসে এলাকার প্রধানের। সে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে সমাদর করে। সালাহউদ্দিন ফিরে আসার সময়ে বয়োবৃদ্ধ লোকটি বলে, ‘যুবক, এই এলাকার দ্বায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে। সুতরাং ভালো করে প্রেকটিস করো। টাকার প্রয়োজন পড়লে সোজা আমার কাছে চলে আসবে। ‘

তারপর থেকে অঘোষিত প্রধান হয়ে যায় ২০ বছর বয়সী যুবক সালাহউদ্দিন। এতোদিনে সে যেন মনোবল ফিরে পায়। নিজের পরিবার পরিজন হারিয়ে একাকী থাকার কষ্টটা দিন দিন গাঢ় হয়ে প্রতিশোধের ইচ্ছেতে রূপ নেয়। এভাবেই সে আজ প্রতিষ্ঠিত একজন।

ইলেক্ট্রনিক ইন্জিনিয়ারিং-এ পারদর্শী সালাহউদ্দিন একজন সফল তীরন্দাজও বটে। তীর চালানো তার শখ, এটা তার কাছে শিল্পের মতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে উন্নত অস্ত্রের ভীড়ে তীর কোন কাজেরই নয়। তাই সে তীরের মধ্যে ইলেক্ট্রিসিটি প্রদান করেছে। যেটা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে পারে। এবং নিজের বৈদ্যুতিক শক্তির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭ জন লোককে একই সময়ে বিদ্যুৎ পৃষ্ট করতে পারে।

আমেরিকার ব্যস্ততম শহরে লাগাতার ঘটে যাওয়া মৃত্যুর সংবাদ অবশেষে এসে পৌছায় সালাহউদ্দিন এর কানে।
বিজ্ঞানী স্টিফেন সাহেবের কানে কিভাবে যেন পৌছেছে অজ্ঞাত খুনির শারীরিক গঠনও খুনের ধরণ সাধারণ মানুষের মতো নয়। এতেই কাজ হয়ে গেছে। সে নিজের অন্য গবেষণা বাদ দিয়ে সেই খুনির খোঁজ করতে লেগে গেল। যদি সেই খুনি সত্যিই মানুষ না হয়ে অন্য কিছু হয়। তবে তাকে ধরে এনে পরীক্ষাগারে ঢুকিয়ে ব্যাবচ্ছেদ করে অনেক কিছুই জানা সম্ভব।

তাই এইসব কাজের জন্য একজন দক্ষ মানুষের প্রয়োজন। তাই উনি সালাহউদ্দিনকে বিস্তারিত বললেন। এবং দ্রুত ওনার সাথে দেখা করতে বললেন।

সালাহউদ্দিন আর দিনক্ষণ না দেখে সোজা নিজের ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেল অপরিচিতাদের বাড়িতে। তাকে সব বুঝিয়ে বলে রওনা দিল নিজের নতুন মিশনের উদ্দেশ্যে।
.
.
.
রাত বারোটা ছত্রিশ মিনিট –

রাস্তার শেষ প্রান্তে ব্রীজের উপরে দাঁড়িয়ে আছে কালো পোশাকে আবৃত এক অপরিচিত ব্যক্তি। সালাহউদ্দিন দুর থেকে নিজের ছোট পিস্তল হাতে নিশানা করল সেদিকে। কিন্তু কিভাবে যেন লোকটা বুঝতে পারল পিছনে কেউ একজন আছে। সে আস্তে আস্তে পিছনে ঘুরে সালাহউদ্দিনের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো। সালাহউদ্দিনও অপরিচিত লোকটির চোখের দিকে তাকিয়ে থ-হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

( চলবে) ( অনুমতি ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)

গল্প — #এলি_ম্যান ( ৩য় পর্ব )

#লেখক — সালাহউদ্দিন তারিক ( জুনিয়র মুগলি )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here