এলি ম্যান পর্ব -০২

#গল্প – এলি-ম্যান (২য় পর্ব) ( ১৮+ এলার্ট )

ইভানা অনুভব করতে পারছে একটা সাপ তার মুখের ভেতরে ঢুকার জন্য চেষ্টা করছে। সে সমস্ত শক্তি দিয়ে দাঁতের পাটি চেপে রাখে। সাপটা বারবার জোর করে ইভানার মুখের ভেতরে ঢুকতে চাচ্ছে। দাঁতের উপরে ঘেঁষে ঘেঁষে পুরো দাঁতের পাটিতে রীতিমতো ব্রাশ করা শুরু করে।

ইভানা কিছুতেই সেটাকে মুখের ভিতরে ঢুকতে দিবে না। কোন রকমে নিজের পা দু’টোকে একসাথে করে বুকের উপরে থাকা লোকটাকে লাথি মেরে উপর থেকে ছিঁটকে ফেলে দিল। লোকটা বিছানা থেকে পড়ে যেতেই ইভানাও গড়িয়ে বিছানার বাম পাশ দিয়ে নেমে পড়ল। ঝাপসা অন্ধকারের মধ্যেই টেবিলের ড্রায়ার খুঁজে পেয়ে গেল সে। ড্রয়ার থেকে ছোট পিস্তলটা বের করে লোকটার দিকে তাক করল। লোকটা সবে মাত্র মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যেই ইভানার হাতে বন্দুক দেখে আর সামনে আগায় না। লোকটি হুডির টুপিটা ঠিক করতে করতে পিছনের দিকে যেতে লাগল। ইভানা এবার স্পষ্ট ভাবে দেখতে পেলো। মানুষের মতোই শারীরিক গঠনের এর লোকটি একটু বেশীই লম্বা। ছয় ফুটের বেশি লম্বা লোকটির পরনে রয়েছে একটা কালো প্যান্ট। আর কালো হুডি। হুডির টুপিটা একটু নীলাভ কালো। কিন্তু তার ভয়ানক চোখ দু’টো বেশ মায়াবীও বটে। সবুজাভ জ্বলজ্বল চোখ দু’টো অনেক স্বচ্ছ। ভিতরের রেটিনা প্রায় বুঝা যাচ্ছে। তবে তার জিহ্বাটা একটু ভিন্ন ধরনের। সাধারণ মানুষের জিহ্বা থেকে অনেকটাই লম্বা। এজন্যই ইভানা এই জিহ্বাকে সাপ ভেবে ভুল করেছে। ইভানা মুহুর্তের মধ্যেই অপরিচিত লোকটির চোখের প্রেমে পড়ে যায়। এতো সুন্দর স্বচ্ছ মায়াবী চোখ সে কোথাও দেখেনি। লোকটির প্রতি একটা আলাদা মায়া অনুভব করে ইভানা, সে বন্দুক নামিয়ে নেয়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চোখ দুইটার দিকে। ঠিক ঐ মুহুর্তেই লোকটির সবুজ চোখের সবুজাভ কাঁলচে মনিটা একবার বড় হয় আর একবার ছোট হয়। ঘোর কেটে যায় ইভানার। সে আবার পিস্তল তাক করতেই লোকটা জানালা দিয়ে এক লাফে নিচে পড়ে যায়।

ইভানা দ্রুত পায়ে জানালার কাছে গিয়ে নিচে তাকাতেই দেখতে পায় লোকটি চার হাত-পা ছড়িয়ে নিচের দিকে পড়ছে। একটা সাত তলা বিল্ডিংয়ের ৪র্থ তলায় থাকে ইভানা। সে ধারণা করে নিল লোকটি হয়তো নিচে পড়তেই মারা যাবে। কিন্তু তার বিবেক এটা মোটেও মানতে নারাজ। যে লোকটা সিঁড়ি অথবা লিফ্ট এর ব্যবহার ছাড়াই চার তলায় উঠে পড়েছে। জ্বল জ্বল সবুজ মায়াবী চোখের অধিকারী একটা বিষ্ময়কর চেহারা। সে চার তলার উপরে থেকে পড়লেও কিছু হবে বলে মনে হয় না।

ইভানা বিছানার এক কোনে চুপচাপ বসে আছে। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠছে সেই জ্বলজ্বলে সবুজ চোখ দু’টো। একদম স্বচ্ছ চোখ দু’টোতে তাকালেই যেন নেশা চেপে যায়। ইভানা গালে হাত দিয়ে কেবল সে কথাই ভাবতে থাকে। একবার মনে মনে ভাবতে থাকে ‘আচ্ছা যদি তার সাথে আমার ঠোঁট দু’টো মিলিয়ে দিতাম তবে কেমন হতো!’

মুহুর্তের মধ্যেই আবার নিজের মাথায় নিজেই থাপ্পড় মেরে বলতে থাকে, ‘যাহ্ কিসব ভাবছি আমি। একটা অপরিচিত অতিপ্রাকৃত লোককে নিয়ে এসব কি ভাবছি!’

শূন্য মস্তিষ্ক শয়তানের বাসস্থান। আর নারী মস্তিষ্কের কথা আর বলতে হয় না। একাকী একটা নারীর মস্তিষ্কে দুনিয়ায় সব কিছু ঘুরতে থাকে। নতুবা একটু আগেও যেই লোকটা ইভানার সাথে রেপিস্টের মতো আচরণ করেছে তার প্রতিই কিভাবে সে দুর্বল হয়! এসব কথা যদি কেউ বাইরের সমাজে বলে তবে নারীবাদীরা তাকে শকুনের মতো টেনে ছিঁড়ে নেবে। কিন্তু সাল ২০৪৮-এ এসে সমাজের সকলেই বুঝতে পেরেছে নারীবাদীরা ছিল এক প্রকারের ক্যান্সার কোষ। এদের পাল্লায় যারা একবার পড়েছে নারীবাদীদের ক্যান্সার কোষ গুলো তাদের মধ্যে দিন দিন কেবল বিস্তার লাভ করেছে। এবং একটা পর্যায়ে এসে তাদের জীবনটাকে ক্যান্সারের মতো পঁচিয়ে ফেলেছে। আর তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার কোন কায়েদা নেই।

গল্প লেখকের আইডি — #সালাহউদ্দিন_তারিক (salahuddin.tarik )

পরদিন দুপুর ৩ টা…

গোল টেবিল বৈঠক বসেছে FBI এর TAC. COM টিমের সদস্যদের মধ্যে। সেখানে পুলিশ প্রধানও এসেছে। ইভানা টেবিলে বাম কোণে বসে সবার সাথে পরামর্শ করছে। ইভানার মুখোমুখি টেবিলের অপর পাশেই বসেছে পুলিশ প্রধান মিস্টার গ্রোনাড। মাথা নিচে করে চুপচাপ বসে আছেন তিনি। ডজন কয়েক পুলিশের সামনে থেকে একজন খুনি পালিয়ে গেল এটার কি জবাব উনি দিবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না। ইভানা বয়সে ছোট হলেও বেশ রাগি। তবুও গ্রোনাড সাহেবের মতো বয়স্ক একজন অফিসারকে কিভাবে শাসাবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছে না সে। কিন্তু সবাইকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে নিজে এবার মুখ খুলল।
‘ মিস্টার গ্রোনাড, আপনি কি মনে করেন যে ঘটনাটা আপনার পুলিশ বাহিনীর জন্য একটা অপমান! ‘ শান্ত গলায় কথাটা বলে ইভানা।

‘ সরি ম্যাম, আমি অত্যন্ত দুঃখীত যে এমন কিছু ঘটেছে। সবার পক্ষ থেকে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ‘ মাথা নিচু করেই উত্তর দেন গ্রোনাড সাহেব।

ইভানা ঠোঁট চেপে মাথা নাড়তে নাড়তে বলে, ‘ থাক, যা হবার হয়ে গেছে। এবার সামনের কথা ভাবুন। এতো গুলো মেয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছে এ নিয়ে আপনার মতামত কী? ‘

‘ মেডাম এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত তেমন কোন প্রমান হাতে আসেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছে এসবের সাথে এলিয়েনদের যোগ সূত্র রয়েছে। হয়তো তারা’ই এসব করছে নতুন কোন এক্সপেরিমেন্টের জন্য। ‘

‘ এসব বিশেষজ্ঞদের আর কোন কাজ নেই। কিছু হলেই এলিয়েনদের সঙ্গে জুড়ে দিবে। ২১ শতকের শুরুর দিকে যেমন ইউটিউবাররা সব সময় চলমান হট টপিক গুলো ঘোলাটে করে টাকা কামানোর চেষ্টা করত। এখনকার বিশেষজ্ঞরাও এমনি বারবার এলিয়েনের কথা বলে নিজেকে আলোচনায় রাখতে চায়।’

‘ হয়তো হতে পারে মেডাম। কিন্তু ওনাদের কথাও তো আর ফেলে দেওয়া যায় না। পুলিশ টিম যেই লোকটাকে দেখেছিল তাকেও বেশ রহস্যময় মনে করা হচ্ছে। তার উচ্চতা ছয় ফুটের বেশি। অথচ বর্তমান সময়ে আমেরিকায় এমন উচ্চতার লোক পাওয়া মুশকিল। আবার লোকটির চেহারা ঢাকা ছিল। খুন করার ধরনও অভিনব। ভিক্টিমের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। কিন্তু পোস্টমর্টেমের সময়ে দেখা যায় তার জিহ্বা নেই। চেনে ছিঁড়ে বের করে ফেলা হয়েছে। আর খুনের আগমুহূর্তে ভিক্টিম যৌনতায় লিপ্ত ছিল। সিসিটিভি ক্যামেরার পরিদর্শক তুষার এটা স্পষ্ট করেছে যে খুনের আগেও ভিক্টিম ঐ আগুন্তকঃ খুনির সাথে লিপ কিস করায় ব্যস্ত ছিল। তাই ধারণা করা যায় হয়তো কিস করার সময়েই কৌশলে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’ এক নাগারে লম্বা ভাষণ দিয়ে ইভানার কথার কাউন্টার দেন গ্রোনাড সাহেব।

ইভানা মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনছিল। গ্রোনাড সাহেবের শেষ কথা গুলো শুনেই উনি কিছুটা চমকে উঠেন। গত রাতেই তো এমনই ছয় ফুট লম্বা এক আগন্তুক তাকে লিপ কিস করার চেষ্টা করছিল। তবে কি সে-ই ঐ খুনি! লিপ কিসের বাহানায় জিহ্বা টেনে ছিঁড়ে নেওয়াই ছিল তার লক্ষ! চিন্তাটা ইভানার মাথায় রীতিমতো গন্ডগোল লাগিয়ে দেয়। কিন্তু মুহুর্তেই মধ্যেই আবার নিজের চিন্তা পরিবর্তন করে ইভানা। তার চোখের সামনে ভেসে উঠে এক মায়াবী সবুজ চোখ। ঝলমলে স্বচ্ছ মায়াবী একটা চোখ। না না, এতো মায়াবী চোখের অধিকারী একটা লোক এমন কিছু করতেই পারে না। উল্টো তাকে নিয়ে বাজে চিন্তা করায় নিজের মস্তিষ্ককে দোষারোপ করে ইভানা।

চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। টেবিলের উপরে আঙ্গুল দিয়ে তবলার মতো শব্দ করতে করতে বলে, ‘ আজকের মতো মিটিং এখানেই সমাপ্তি ঘোষণা করছি। আপনারা সবাই আগামীকাল বিকাল চারটায় এখানে উপস্থিত হবেন। আর গ্রোনাড সাহেব, আপনার দ্বায়িত্ব হলো ঐ খুনির চেহারার কোন একটা ছবি অন্তত জোগাড় করা। কমপক্ষে তার চোখটা দেখতে কেমন সেটা জানাতে পারলেই হবে। ‘

গ্রোনাড সাহেব মাথা নাড়িয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সম্মতি জানান। বাকিরাও নিজেদের ফাইল নিয়ে উঠে পড়ে। রুম থেকে বেড়িয়েই একে অপরের সাথে কানাকানি বলতে থাকে, ‘এটা কী হলো! মেডাম খালি গ্রোনাড সাহেবের কথা শুনেই মিটিং থামিয়ে দিল। আমরা কি তবে নিজেদের চেহারা দর্শন দিতে গিয়েছিলাম?’
অন্যজন আবার কাউন্টার দিয়ে বলে ,
‘ হয়তো গ্রোনাড সাহেবের কথা শোনার পরেই ওনার মাথায় বিশেষ কিছু এসেছে। তাই এমন করেছে। বলা তো আর যায় না,
আমরা বরং আমাদের কাজে মনোযোগ দিই, এতেই মঙ্গল। ‘
সবাই তার কথায় সায় দিতে বাধ্য হয়। আর কোন কথা না বলে চুপচাপ নিজের কর্মস্থলের দিকে রওনা হয়ে যায়।

বিশিষ্ট যন্ত্র বিজ্ঞানী স্টিফেন-এর কারখানাতে রোবট B-32 কে নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন ওনারই একজন বন্ধু। উনি বেশ কিছুদিন ধরেই জেদ করে বসেছেন রোবটের মধ্যেই অনুভূতি বুঝার ক্ষমতা প্রদান করবেন বলে। কিন্তু কিছুতেই কোন কুল-কিনারা করতে পারছেন না। আজকে তিনি আরো বেশ কিছু জিনিস সংযোজন করেই স্টিফেন সাহেবকে কল দিলেন। হাসিখুশি মনে উচ্ছাসের সাথেই বলতে লাগলেন, ‘বন্ধু আজকে আমি সফল হবোই। আমি নোবেল পুরষ্কার জিতে দেখাবোই। ‘

স্টিফেন সাহেব উত্তর দেন, ‘আচ্ছা বন্ধু আমি আসতেছে আমি। আর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করো। আমি নিজ চোখে তোমার সফলতা দেখব। ‘

কিন্তু কে শুনে কার কথা। পাগল বিজ্ঞানী খুশির ঠেলায় মোবাইল রেখেই দৌড়ে চলে যায় পরীক্ষা করতে।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই কারখানায় আসেন স্টিফেন সাহেব। দরজায় ওনার চোখের রেটিনার চেক-আপ শেষ হতেই ভিতরে ঢুকেন তিনি। অমনি ওনার বন্ধুর চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে ওনার কানে। দৌড়ে পরীক্ষাগারে গিয়ে দেখেন রক্তমাখা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ওনার বন্ধু। আর পাশেই রোবট B-32 একটা স্টিলের লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ওনার আর বুঝতে অসুবিধে হলো না যে, ওনার পাগল বন্ধু পরীক্ষা করতে গিয়ে নিজেই ভিক্টিমে পরিনত হয়েছে।
.
.
.
রাত ২ টা ৪৫ মিনিট ।

নিজের রুমে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ইভানা। এমন সময়ে অপরিচিত এক ব্যক্তি ইভানার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। ইভানা আজ আর কোন বাঁধা দেয় না। ঘুমের মধ্যেই তার শরীর সায় দিতে শুরু করে। তার বিবেক হয়তো বুঝতেও পারে না সে কোন দিকে যাচ্ছে।

(চলবে ইন শা আল্লাহ) ( কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ )

গল্প — #এলি_ম্যান ( #পর্ব- ০২)

© #লেখক — সালাহউদ্দিন তারিক (জুনিয়র মুগলি)

.

.

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here