ওয়েডিং_স্টোরি পর্ব ৮+৯

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সামান্য দূরে কৃষ্ণচূড়া গাছটায় অনেক ফুল ধরেছে। গাছটাকে এই মুহূর্তে ” নতুন বধূ”র মত লাগছে। টকটকে লাল রং সম্পূর্ণ গাছ জুড়ে। রক্তিম লাল আবার আভার খুব পছন্দের। তাই এই মুহূর্তে এই কৃষ্ণচূড়া গাছটাও আভার পছন্দের খাতায় নাম লেখালো।

— ” আভা, আমরা চলে যাচ্ছি রে। ”

সিনথিয়ার কথা শুনে আভা ওর দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে বললো,
— ” এখন? দাড়া আমি যাবো তোদের সাথে। মা অপেক্ষা করছেন। ”

তারা আভার কাছে এসে দাঁড়ালো। কাচুমাচু কণ্ঠে বললো,
— ” এই, তুই সত্যিই মেয়ে তো? তোরে আমরা জিজুর সাথে একা টাইম স্পেন্ড করতে দিয়েছি। বাসায় যেতে দেয়নি। যা এখন জিজুর কাছে। আমরা যাচ্ছি। ”

আভা তারার দিকে চোখ বটে নিয়ে তাকালো। বললো,
— ” খুব না! আমিও যাবো। একা টাইম স্পেন্ড করার মতো কিছুই হয়নি। চল এখন। ”

আভা বেঞ্চ থেকে ব্যাগ তুলে কাধে নিলো। নাকের নীচে জমে থাকা ঘামটুকু মুছে নিয়ে এক পা এগুতেই পিছন থেকে কেউ তার ব্যাগ খপ করে ধরে নিলো। আভার বুঝতে বাকি নেই কে সে? আভা পিছন ফিরলো। আহনাফ ভ্রু নাচিয়ে বললো,
— ” কই যাচ্ছো? ”

আভা সোজাসাপ্টা বললো,
— ” বাসায়। ”

আহনাফ ব্যাগ একহাত দিয়ে ধরে দুপা এগিয়ে এলো আভার দিকে। আভার কানে মুখ এগিয়ে এনে বললো,
— ” শর্ত ভুলে গেছো? ”

শর্ত! আভা মাথা ঘাটালো। গত এক ঘন্টার স্মৃতি ধাপিয়ে বেড়ালো। কিন্তু কোনো শর্তের কথা মনে পড়লো না। আভা প্রশ্ন ছুড়লো,
— ” শর্ত? ”
— ” আমি যা চাই তাই দিবে বলেছিলে! মনে পড়েছে? ”

আভা দাত দিয়ে জিহ্বা কাটলো। সে তো ভুলেই গিয়েছিলো! কিন্তু আভা এত সহজে আহনাফের কাছে ধরা দিতে চাচ্ছে না। তাই সে নিজেকে তাড়াহুড়ো করে আহনাফের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
— ” মা অপেক্ষা করছেন। অন্য কোনো দিন হবে। আজ না।”

আহনাফ ভ্রু কুঁচকে বললো,
— ” প্রমিজ ভাঙছো তুমি। পাপ হবে কিন্তু। ”

আভা পড়লো মহাফ্যাসাদে। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে হাফ ছাড়লো। বললো,
— ” ঠিক আছে। বলুন কি চাই? ”

তারা, সিনথিয়া আর রাইমা ইতিমধ্যে রিকশায় চড়ে গেছে। রিকশা যখন আভার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো ঠিক তখন সিনথিয়া আভার উদ্দেশ্যে চেচিয়ে বললো,
— ” বেস্ট অফ লাক দোস্ত। ”

আভা সিনথিয়ার কথা শুনে আহনাফের থেকে চোখ সরিয়ে রিকশার দিকে তাকালো। চোখ রাঙালো। ” একবার পাই তোকে। খবর করে দিবো। ” চোখের ভাষা যেনো এই কথাই বলছে। সিনথিয়া আভার সেই চাহনি হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে রিকশা নিয়ে চলে গেলো।
আহনাফ ইতিমধ্যে বাইকে উঠে বসেছে। মাথায় হেলমেট দিয়ে বাইক চালিয়ে আভার পাশে এসে থামালো। বাইক দেখে আভা ভ্রু কুঁচকে বললো,
–” বাইক দিয়ে যাবো? নো ওয়ে। ”

আহনাফ নিজেও ভ্রু বাঁকিয়ে বললো,
–” কেনো? বাইকে উঠা কি পাপ? ”
— ” পাপ না। কিন্তু এভাবে একসাথে… ! ”

হায়রে মেয়ে মানুষ! আহনাফ মাথা নিচু করে শ্বাস টানলো। তারপর আভার দিকে চেয়ে বললো,
— ” আমাদের মাঝখানে তোমার ব্যাগ দিয়ে দিও। তাহলেই হবে। এখন উঠো জলদি। দেরি হচ্ছে। ”

আভা এবার কিছু না বলে বাইকে উঠে বসলো।

______________________
বাইক কোথায় যাচ্ছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই আভার। সে চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে। বাইকের স্পিডের কারণে খুব বাতাস লাগছে গায়ে। আভা আপাতত এই মুহূর্তটাকে উপভোগ করছে। একসময় আহনাফ বললো,
— ” ধরে বসো। পড়ে যাবে। ”

আভা উত্তর করলো,
— ” লাগবে না। এভাবেই ঠিক আছি। ”

আহনাফ কিছু বললো না। শুধু হাসলো। কয়েক মিনিট পার হতেই আচমকা ব্রেক কষলো সে। সঙ্গেসঙ্গে আভা টাল সামলাতে না পেরে আহনাফের কাধের শার্ট খামচে ধরলো। আহনাফ এতে মুচকি হেসে নিজের কাধের দিকে তাকালো। আভা যখন পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তখন আহনাফের কাধ ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। ভ্রু কুঁচকে বললো,
— ” আপনি এটা ইচ্ছে করে করেছেন,না? ”

আহনাফ বাঁকা হেসে বললো,
— ” ইউ নো বউফ্রেন্ড, আমি মানুষটা কিন্তু ততটা ভালো নই। নিজের জিনিস কি করে আদায় করতে হয় আমি সেটা খুব ভালো করেই জানি। ”

আভা রাগী চোখে আহনাফের দিকে তাকালো। কত শেয়ানা ছেলে! ওকে জিনিসের সাথে তুলনা করলো! ভাবা যায়! কিন্তু আহনাফের বলা এই দৃঢ় কথাই কিছু একটা ছিলো। কিন্তু কি ছিলো? অধিকারবোধ?

__________________

বাইক এসে থামলো একটা পার্কে। আভা নেমে দাড়ালো বাইক থেকে। আহনাফ হেলমেট খুলে নিজেও আভার পাশে এসে দাঁড়ালো। পার্কে মানুষের কোলাহল শোনা যাচ্ছে। দূরে কোথা থেকে একটা গান ভেসে আসছে,
“তোমায় হৃদমাঝারে রাখিব
ছেড়ে দেবো না।
তোমায় বক্ষ মাঝে রাখিব
ছেড়ে দেবো না। ”

গানটা শুনে আভার মনটা হঠাৎই ফুরফুরে হয়ে গেলো। আভার পছন্দের গান কেউ গাইছে। মন থেকে, হৃদয় থেকে উপলব্ধি করে গাইছে। হঠাৎ আহনাফ আভার একহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। আভা অবাক হয়ে নিজের হাতের দিকে তাকালে আহনাফ গভীর কণ্ঠে বললো,
— ” তোমায় মনের পিঞ্জরে রাখবো… কখনোই ছেড়ে দেবো না। আমার প্রাণ যতদিন থাকবে,কথা দিচ্ছি তোমায় আগলে রাখবো। কখনোই ছেড়ে দিবো না। ”

আভা বিস্ময় নিয়ে আহনাফের দিকে চেয়ে রইলো। আহনাফের বলা কথাটা কি গভীর! কিন্তু কতটা গভীর? সমুদ্রের মতন নাকি কুঞ্জভরা মেঘের মত। আহনাফের কথাটা শুনে আভার শিরা উপশিরা কেপে উঠলো। বলতে ইচ্ছে হলো, ” এভাবে আমায় কেউ কখনো বলেনি। আপনার মত কেউ কখনো আমায় এতটা ভালোবাসেনি। ” কিন্তু বলতে পারলো না। কোথায় একটা সংকোচ থেকে গেলো। আহনাফ নিজেকে সামলে আভার হাত ছেড়ে দিলো। আভা মাথা এদিক সেদিক তাকিয়ে নজর লুকানোর চেষ্টা করলো। আহনাফ সেটা বুঝতে পেরে মৃদু হেসে বললো,
— ” চলো হাঁটি। ”

অতঃপর ওরা হাঁটতে শুরু করলো। পার্কের সাদা রং দিয়ে মার্ক করা জায়গায় এলোমেলোভাবে পা ফেললো দুজন। আভার একহাত আহনাফের হাতের মুঠোয়। আভার প্রথমে অস্বস্থি লাগলেও এখন ভালো লাগছে। অতিরিক্ত ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, “একজীবনে ও যে ভরসার হাত খুঁজছিল এটাই সেই হাত। “তবে নিশ্চিত নয় ও।

— ” আফা হাওয়াই মিঠাই নিবেন? ”

আভার পাশে এসে দাঁড়ালো এক কিশোরী মেয়ে। আভা তার দিকে তাকালো। মুখের মধ্যে হাজারো কালো দাগ তার। চুলের মধ্যে হয়তো অনেকদিনের জট পাকানো। চুলে চিরুনি পড়েনি হয়তো কয়েকমাস। তবুও কি মায়াবী চেহারা। আভা মেয়েটার পাশে হাঁটু ভেঙে বসলো। আলতো গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— ” নাম কি? ”

মেয়েটা হেসে উত্তর দিলো,
— ” চন্দ্রা। সবাই চন্দ্র বলে ডাহে। ”

আভা মেয়েটার মাথায় চুলগুলো হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে হেসে বললো,
— ” ঠিকই তো বলে। তুমি চন্দ্রের মতোই সুন্দর। ”

মেয়েটা হাসলো। কথাটা যদি মিথ্যেও হয় তবুও যেনো তার আফসোস নেই। আভার নরম গলা শুনে চন্দ্রার অযথাই হাসি পাচ্ছে। সুখ সুখ অনুভুতি হচ্ছে। আভা হাওয়াই মিঠাইর দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” দাম কত এগুলোর? ”
— ” দশ টাহা। ”

আভা বললো,
— ” দুটো দেও তাহলে। আমি তোমায় একশো টাকা দিবো। ”

চন্দ্রা অবাক হলো। বললো,
— ” এত টাহা? ”
— ” হুম। কেনো? নিবে না? ”
— ” কিন্তু এত টাহা? ”
— ” তুমি আমায় দুটো দেও। টাকার ব্যাপার নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। আমার তোমাকে খুব ভালো লেগেছে। তাই দিচ্ছি। ”

মেয়েটার হাসি এবার প্রসারিত হলো। হাওয়াই মিঠাইর বাঁধন থেকে তিনটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আভার হাতে দিলো। বললো,
— ” একটা আমার থাইকা বোনাস দিলাম আপনারে। আমারও আপনারে অনেক ভালো লাগছে। ”

আভা হাসলো। মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে যাবে তার আগেই আহনাফ একটা একশো টাকার নোট মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিলো। আভা আহনাফের দিকে তাকালে আহনাফ বলে,
— ” তোমার টাকা আর আমরা টাকা ত একই। তাইনা? ”

আভা ভ্রু কুটি করে বললো,
— ” আপনার কাছে নাকি টাকা নেই। তাহলে একশো টাকা কোথা থেকে আসলো? ”

আহনাফ বুকে হাত ভাজ করে ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
— ” ওটা তোমার হাতে ফুচকা খাওয়ার একটা বাহানা ছিলো, দ্যাটস ইট। ”
#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

— ” সেটা তোমার হাতে ফুচকা খাওয়ার একটা বাহানা ছিলো, দ্যাটস ইট। ”

আভা আহনাফের অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। কি সরল স্বীকারোক্তি। কোনো সংকোচ নেই। না আছে কোনো ভাবনা। পাশের মানুষটা এতে রাগ করতে পারে কিংবা কলার ধরে দাতে দাত চিবিয়ে বলতে পারে “কথাটা মুখে বললেই হতো।বাহানার কি দরকার?” কিন্তু আভা এসবের কোনোটাই করতো না। ছেলেটার সাথে সে এখনো ততটা সহজ হয়ে উঠতে পারেনি। হয়তো এইজন্যেই আহনাফের ওমন বেপরোয়া ভাব।
চন্দ্রা নামক মেয়েটা টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনটা হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে আবারও নতুন খদ্দের খুঁজছে। এটাই হয়তো তাদের জীবন। প্রতিদিন একই নিয়ম,একই ধারা। তবে আজ চন্দ্র খুশি। কারো কাছে সুখ কিনতে পেরেছে সে। তাই সুখে পাগল হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে সে। আভা সেদিকে তাকিয়ে হাঁটু সোজা করে উঠে দাড়ালো। হাওয়াই মিঠাই একটা আহনাফের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— ” খাবেন? ”

আহনাফ হাওয়াই মিঠাইর দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
— ” আমি সুগার কম খাই। ”

আভা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো আহনাফের দিকে। তারপর হঠাৎ-ই আহনাফের হাতে হাওয়াই মিঠাইর কাঠি ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— ” একদিন বেশী সুগার খেলে কিছু হয়না। খেয়ে দেখুন। ভালো লাগবে। ”

আহনাফ কাঠি হাতে নিয়ে খাবারটায় একবার চোখ বুলালো। সে এই জিনিসটা একদমই খেতে চাইছে না। কিন্তু আভার ওমন আগ্রহী মুখ দেখে না করতে পারছে না। আভা আহনাফের দিকে চেয়ে আছে, হাওয়াই মিঠাই টা খেতে কিরকম লাগছে,জানতে। আহনাফ আভার ওমন দৃষ্টি দেখে গলে গেলো। আভার হাতে এখন বিষ খেলেও তার আফসোস নেই। তাই আহনাফ সব জড়তা ঝেড়ে ফেলে হাওয়াই মিঠাইয়ে দাত বসালো। মুখের ভিতর এক মুঠো মিঠাই পুড়ে নিতেই মুহূর্তেই গলে গেল মিঠাই। ব্যাপারটা দারুন তো! বাতাসের মত মুখে যেতেই নিঃশেষে হয়ে যায়। আহনাফ আরো এক কামড় মিঠাই খেলো। এবারও নিঃশেষ হয়ে গেলো। আভা ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— ” ভালো লাগছে? ”

আহনাফ মৃদু হেসে মাথা নেড়ে বললো,
— ” দারুন খেতে। ”

আভা হেসে নিজেও হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে হাটা শুরু করলো। আহনাফ পাশাপাশি হাঁটছে। আভা একসময় খেতে খেতে বললো,
— ” মা বলেন, কোনো খাবার সামনে এলে সেটা কখনো না খেয়ে ফিরিয়ে দিতে নেই। খেয়ে একবার দেখা উচিত। ভালো না লাগলে তখন ফিরিয়ে দিও। ”

আহনাফ খাওয়া শেষ করে কাঠিটা ফেলে দিলো ডাস্টিবিনে। আভা একটা শেষ করে দ্বিতীযটায় মুখ দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর আহনাফ বললো,
— ” একা একাই খাচ্ছো? ”

আভা আহনাফের দিকে তাকালো। বললো,
— ” কেনো? আপনি খাবেন? ”
— ” কেউ দিলে খেতে পারি। ”

আভা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
— “সেটা সরাসরি বললেই হতো। এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার কি আছে? ”

আভা কথাটা বলেই আহনাফের দিকে নিজের হাওয়াই মিঠাই এগিয়ে দিলো। আহনাফ সেটা হাতে নিলো না। বরং বললো,
— ” তুমি নিজ হাতে খাইয়ে দিলে খেতে পারি। ”

আভা এবার অস্বস্তিতে পরে গেলো। কি করবে ভেবে না পেয়ে আহনাফের হাতে হাওয়াই মিঠাইর কাঠি ধরিয়ে দিলো। বললো,
— ” নিজে খান নয়তো ফেলে দেন। ”

আহনাফ মুচকি হেসে নিজেই খেতে লাগলো। থাক! মেয়েটাকে আর অস্বস্তিতে ফেলার দরকার নেই। আহনাফ একটু মিঠাই ছিঁড়ে আভার মুখের দিকে এগিয়ে দিলো। আভা তখন নিজের মুখ পিছিয়ে নিয়ে বললো,
— ” আপনি খান। আমার পেট ভরে গেছে। ”
— ” একটা হাওয়াই মিঠাই খেয়ে পেট ভরে গেছে? ”
— ” আব.. হ্যাঁ! ”
— ” মিথ্যে কম বলো। নিজে তো খাইয়ে দিবে না। তাই আমি খাইয়ে দিচ্ছি। খাও।”

আভা না চাইতেও আহনাফের হাত থেকে মিঠাই খেয়ে নেয়।
এভাবেই তারা এসে দাঁড়ায় একটা বকুল ফুলের গাছের নিচে। আহনাফ ততক্ষণে একবার আভার মাকে তাদের একসাথে পার্কে আসার কথা জানিয়ে দিয়েছে। নয়তো তিনি চিন্তা করবেন। আভা বকুল ফুলের গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কতক বকুল ফুল কুড়ালো। ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে সাদা কাগজ ছিঁড়লো। অতঃপর ফুলগুলো কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে আবার ব্যাগের একসাইডে যত্ন করে রেখে দিলো। আহনাফ বকুল গাছের নিচে একটা বেঞ্চে বসে পড়ে। আভাকে হাত দিয়ে ইশারায় বসতে বলে তার পাশে। আভা ব্যাগের চেইন লাগিয়ে বেঞ্চে আহনাফের থেকে দূরত্ব নিয়ে বসে। আহনাফ আভার দিকে চেয়ে বললো,
— ” বকুল ফুল ব্যাগে নিলে কেনো? ”

আভা হাতে একটা বকুল ফুল নিয়ে সেটার পাঁপড়ি ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো,
–” মালা বানাবো। ”
— ” মালা? ”
— ” হুম। গলার মালা। ”
— ” কিন্তু এই ফুলগুলোতো আজকের মধ্যেই পচে যাবে।”
— ” মালা বানিয়ে কয়েক মিনিট গলায় পড়ে থাকবো। তারপর পঁচে গেলে ফেলে দিবো।”
— ” গ্রেট..! এত ধৈর্য্য? ”
— ” হুম। ”

আহনাফ হঠাৎ আভার খুব কাছে চলে এলো। আভার শরীরের থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে বেঞ্চে বসলো। আভার আহনাফের দিকে অবাক চোখে তাকালে আহনাফ আভার চোখে চোখ রেখে গভীর গলায় বললো,
— ” কিন্তু আমার একবারে ধৈর্য্য নেই। মনটা তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে,জানো? তোমার চোখে একটিবার নিজের জন্যে অনুভূতি দেখার জন্যে ছটফট করছি আমি। যে দহনে আমি পুড়ছি, তোমাকেও সেই দহনে পুড়িয়ে ছাই করার ইচ্ছে হচ্ছে। তোমাকে দেখার পর কতশত অদ্ভুত ইচ্ছে হয়,জানো?
মাঝেমধ্যে মন চায় তোমায় বুকের ভিতরের কয়েকশত গভীর কোনো জায়গায় লুকিয়ে ফেলি। যেখান থেকে তুমি কখনোই বেরুতে পারবে না। সারাক্ষণ আমার বুকের মাঝেই থাকবে। সারাক্ষণ.. সর্ববস্থায়। ”

আভা আহনাফের চোখের দিকে চেয়ে রইলো। বুকটা কি কেপে উঠলো? কত জোরে? আগুনের ফুলকির তেজে নাকি বৃষ্টির বেগে? আভা চোখের পানি পলক ফেলতে ভুলে গেলো। অন্যদিনের মত আহনাফের থেকে চোখ সরালো না। চেয়ে রইলো আর চেয়ে-ই রইলো। আহনাফের চোখের মধ্যে কডুবে গেছে সে। একটা মানুষের চোখেও এতটা প্রেম.. এত অনুভূতি লুকিয়ে থাকে? কিভাবে? আভার ইচ্ছে হলো সে এখন আহনাফের চোখের সমুদ্রে সাঁতার কাটতে। কিন্তু তার আগেই তার মেয়েলি মস্তিষ্ক জানান দিলো” সে লজ্জাহীন কাজ করছে। এভাবে একটা ছেলের দিকে চেয়ে থাকা উচিত না। ” আভা চোখ সরিয়ে নিলো। পায়ের কাছে বিছিয়ে থাকা কদম ফুলের দিকে তাকিয়ে রইলো অপলক।কিন্তু অবাধ্য মনটা চাইছে, তার দিকে চেয়ে থাকা মুগ্ধ দৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে নিস্পলক চেয়ে থাকতে অপরপাশে মানুষটার দিকে। কিন্তু তা ত সম্ভব না। মেয়ে তো ও..!

আহনাফ সরে এলো আভার থেকে। বেঞ্চে দুহাত ঠেসে আকাশের দিকে চেয়ে রইলো। পাশে নতজানু হয়ে বসে আছে তার আকাশরানী। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ অনুভূতি আর কি হতে পারে? কেটে গেলো কয়েক মুহূর্ত। নিরবতার মত বিশেষ শব্দখেলায় কথা হলো তাদের। একসময় আহনাফ হাত ঘড়ি দেখলো। একটু পরেই আসরের আযান দিবে। আহনাফ উঠে দাঁড়ালো। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে বললো,
— ” আমাদের এখন যাওয়া উচিত। অনেক লেট হয়ে গেছে। যাওয়ার সময় রেস্টুরেন্টে খেয়ে যাবো। চলো এখন। ”

আভা বেঞ্চ থেকে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আহনাফের আগেই হাটা শুরু করলো ও। আহনাফ আভার পিছু হাঁটতে লাগলো।

#চলবে
ছোট হয়েছে তার কারণ খুব বেশি ব্যস্ত ছিলাম। যদি বড় করে দিতাম তাহলে আজকে আর দেওয়া হতো না। হ্যাপি রিডিং

আগের পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here