ও আমায় ভালোবাসেনি পর্ব ১৭

# ও আমায় ভালোবাসেনি
১৭.
.

.
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১ টা ।
বড্ড ক্লান্ত থাকায় বাবার সাথে শুধু দেখা করেই বিছানায় গড়িয়ে পড়েছি , চেইঞ্জ করারও শক্তি নেই যেন!
শুধু শাড়িটা খুলে এক পাশে রেখেই ঘুম ।
ঘুমটা হালকা হয় মাথায় কারো ছোঁয়া পেয়ে ।

মনে হচ্ছিল মাথায় কেউ পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আবার মনে হচ্ছিল এক দৃষ্টিতে কেউ তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।
হাতটা অতোটা মোলায়েম না , বুঝে গেলাম কে এসেছে ।
চোখ বন্ধ করেই বললাম_ রাইদ ভাইয়া মাঝরাতে আবার এসেছেন আপনি?
— হ্যাঁ এসেছি । একশোবার আসবো ।
— আমি তো চলেই যাবো তবুও এসব না করলে হয়না?
এবার আমার গাল শক্ত করে চেপে ধরলেন রাইদ ।
— তুই যাবি মানে? যেতে চাইলেই আমি তোরে যাইতে দিবো? অতো ইজি সবকিছু? তুই আমাকে জবাবদিহি করবি আগে তারপর যাবি ।
কেনো তুই বিয়ের আসর থেকে পালাইলি? আমার মাঝে কমতি ছিলো কিসের??
,
আমি এবার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসলাম ।
মাথায় রাগ ভর করতে শুরু করলো আমার ।
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বললাম_ মাঝরাতে এসব নাটক আমার ভালো লাগছে না রাইদ ভাই । আপনি প্লিজ যান তো ঘুমাতে দিন আমাকে ।
— ঘুমাতে দিবো মানে? গত দু’বছর থেকে আমার রাতের ঘুম, জীবনের শান্তি সব নষ্ট করে তুই শান্তির ঘুম ঘুমবি এটা আমি মানবো কি করে? সেদিন কতটা অপমানিত হতে হইছিলো আমাকে , আমার মা কে এই সম্পর্কে আইডিয়া আছে তোর?
বেঈমান কোথাকার , নিমোকহারামি করেছিস তুই । যার বাড়িতে থাকলি , সব দায়দায়িত্ব যে নিলো তাকেই চরম অপমান করে আসলি?

,
কথাটা শুনে প্রচন্ড রাগ হলো ।
রাগে চোখে পানি এসে গেলো আমার । স্থির থাকতে পারলাম না , চিল্লিয়ে উঠলাম_ নিমোকহারামি আমি করেছি নাকি তুই করেছিস?
আমার ফিলিংসের কোনো মূল্যই তোর কাছে ছিলো না । একটা মেয়ে তোকে টিন এজ থেকে ভালোবাসে , তোকে নিয়ে বিয়ের স্বপ্ন দেখলো আর তুই কি করলি? তাকেই ঠকালি? তুই জানতিস না পৃথিবী বাপ-ভাইয়ের পর তোকেই সব থেকে বেশী ভালোবেসেছি তাহলে ঠকালি ক্যান আমাকে বল ঠকালি ক্যান?
এতোই বডি নিড ছিলো যে নিজের বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে…
ছিঃহ্!
আমাকে বলতি, তোর জন্য তো জান কুরবান ছিলো ।
অমানুষ কি করে পারলি এত নিচ কাজ করতে?
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে কেঁদে ফেললাম আমি ।
রাইদ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।
আমার কান্নার দমক বেড়ে যাচ্ছে , ও দুই কদম এগিয়ে এসে আমার ডান হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো_ মিথি কি বলছো এগুলো?
এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে বললাম_ চলে যাও এখান থেকে ।
,
সে গেলো না উল্টো আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলো আস্তে আস্তে বললো_ মিথি তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না প্লিজ ক্লিয়ার করো ব্যাপারটা? আমাকে শুনতে দাও , বুঝতে দাও?
আমি ওকে সরানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ও সরলো না , শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো ।
আমি ধাক্কাতে ধাক্কাতেই হাফিয়ে গেলাম , পিঠ খামচে ধরে শব্দ করে কেঁদে ফেললাম ।
— আপনি এটা একদমই ঠিক করেননি রাইদ ভাই। আমাকে একবার বললেই কি আমি নিজেকে উজাড় করে দিতাম না? কেনো ধোঁকা দিলেন আমাকে? কি কমতি ছিলো আমার মাঝে??
,
রাইদ আমাকে সোজা দাঁড় করিয়ে মুখটা আঁজলা ভরে নিলো তারপর ফিসফিস করে বললো_ মিথি আমি তো তোমাকে ভালোবেসেছি , ধোঁকা কেনো দিবো? তুমি এসব কেনো বলছো?
,
আমি শুধু ওর দিকে তাকালাম , ওর চোখে পানি ।
বাইরে দরজা নকের শব্দ হলো , ভাইয়া আমার নাম ধরে ডাকছেন আর বলছেন মিথি কি হইছে? দরজা খোল বাচ্চাটা!
মিথি??
ভাইয়ের গলা শুনে আমি রাইদকে সরিয়ে দিলাম । মুখ ফিরিয়ে বললাম_ আমি আপনাকে ঘৃণা করি রাইদ । কোনো কিছু বলবার নেই আর না আছে শোনবার । আপনি চলে যান আমার সামনে থেকে ,নইলে আমি কিছু করে বসবো ।
বাকি যে ক’টা দিন আছি আমাকে শান্তি দিন ব্যাস!
,
দরজা ধাক্কানো বেড়ে গেলো । রাইদ রেগে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন ।
ভাইয়া ভেতরে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে?
আমি ভাইয়ার বুকে পড়ে কেঁদে কেঁদে বললাম_ ভাইয়া ও কেনো করেছিলো ওরকম? আর কেনো এখন আমার সামনে আসছে? আমাকে চাইছে কেনো?
ভাইয়া মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন_ তুই আমাকে কসম না দিলে তো আমি ঠিকই ওকে জবাবদিহি করতাম । কিছু ভুল বোঝাবুঝিও তো হতে পারে মিথি কিন্তু তুই ই তো..
,
মিথি ভাইয়ের বুকে পড়ে বিড়বিড় করে শুধু বললো_ ওরা কেউই চাইতো না আমাকে ভাই । আমাকে কেউ চায়না কেনো বলতে পারো?
,
রাইদ রুমে এসে চুপচাপ বসে আছে , চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে ।
ও বুঝতে পারছে না মিথি ওগুলো বললো কেনো?
কোনো ভুল বোঝাবুঝি তো নিশ্চয়ই হয়েছে , আর কেউ ওকে ভুল বুঝিয়েছে । সেটা কে?
কোন বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড এর কথা বললো মিথি?
বেশ ভাবনায় পড়ে গেলো রাইদ ।

,
হাতে একটা রাবারের বল নিয়ে বারবার দেয়ালে ঢিল দিচ্ছে আর ক্যাচ ধরছে শব্দ ।
মুখে একটা বাঁকা হাসি ।
একা একাই সে বলছে_ আমার যেটা চাই সেটা পেয়েই ছাড়ি , হয় আপোষে নয়তো ছিনিয়ে নো ম্যাটার সেটা আমার খুব আপন কারো জিনিস!
আর তুমি তো আমার ভালোবাসা , তোমাকে অন্যকেউ কেড়ে নিবে এ সাধ্য আছে কার??
তারপর বলটা ছুঁড়ে দিলো আয়নায় , ঝনঝন শব্দে হুট করে ভেঙে গেলো আয়নাটা ।
মেঝে থেকে উঠে একটা কাঁচ টেনে নিলো শব্দ , বা হাতে একটা আঁচড় কাটা মাত্র গলগল করে রক্ত বেরুতে লাগলো ।
সেই রক্ত আঙ্গুলে তুলে আস্তে আস্তে বললো_ তোমার অপেক্ষায় এভাবেই রক্তাক্ত হতে থাকবো মিথি , কবে আসবা তুমি? ভালোবেসে উষ্ণ আলিঙ্গন করবা আর আমি পরম শান্তিতে তোমার বুকে মুখ গুঁজবো ।
আমার পরম শান্তির ঠাঁই ।
ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো শব্দ , পৈশাচিক হাসি ।

,
হাতে থাকা রিপোর্ট টাতে আরো একবার চোখ বুলালো ফয়সাল ওর ঠিক সামনে বসে দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে চারু ।
ফয়সাল ওর কান্না দেখে আলতো হেসে বলে_ জানো চারু? তুমি চলে যাবার পর আমি বড্ড ভেঙে পড়েছিলাম এবং এসময় আমাকে সামলেছিলো মিথি ।
ওকে দেখে মনে নতুন করে বাঁচার আকাঙ্খা জাগলো , বড্ড ভালোবেসে ফেললাম ওকে কারণ অবস্থাটা আমাদের একই রকম ছিলো আর তাই দু’জন দু’জনকে বুঝতাম খুব ।
কিন্তু ওর ইনফ্যাচুয়েশন তৈরী হয়েছিল আমার ওপর ।
একবার মনে হতো ওর সাথে রাইদের বিয়ে হবার কথা ছিলো ওকে ভালোবাসা কি আমার ঠিক হবে? কিন্তু তারপরই মনে হতো ওর ভালো থাকার অধিকার আছে । ও যেভাবে ভালো থাকতে চায় সেভাবেই থাকবে ।
তাই আমি ওকে ভালোবাসতে শুরু করলাম কিন্তু দেখো তোমার শূন্যতা আমার শরীরে যে মারণ রোগের বীজ বুনে গেছিলো এটা কি আমি জানতাম বা ও জানতো??
নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর চারু , না তুমি ছেড়ে যেতে না রাইদের সাথে ওর ছাড়াছাড়ি হতো না আমরা আজ এই পজিশনে আসতাম ।
আজ বড্ড অসহায় আমরা সবাই । বড্ড অসহায়!
,
চলবে,
Sinin Tasnim Sara

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here