কথা দিলাম পর্ব -১৬+১৭

কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ১৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আধভিক: (চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিয়ে) আই লাভ ইউ সিয়ারা!

সিয়ারা কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালে আধভিক নিজের চোখ খোলে কিন্তু কিছু বলে না। দুজনেই নীরব। আধভিক নিজের নীচের ঠোঁটটা একটু কামড়ে ধরতেই সিয়ারা নীরবতা ভেঙে বললো,

সিয়ারা: নেশাটা মনে হয় একটু বেশিই করে ফেলেছেন আজকে। বুঝতে পারছি, যান বাড়ি চলে যান।

আধভিক: আমি সত্যি বলছি।

সিয়ারা নিজের কথা শেষ করে পিছন ফিরে চলে যাচ্ছিলো এমন সময় আধভিকের কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো। তবে আধভিকের দিকে ফিরলো না।

আধভিক: আমি তোমাকে ভালোবাসি সিয়ারা। আমি সত্যি তোমাকে নিজের জীবনে চাই। আজকে হঠাৎ করে তোমাকে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখে আমি মেনে নিতে পারিনি। মাথাটা কাজ করছিল না তাই আর জিজ্ঞেসও করিনি কিছু। যা মুখে এসেছে বলে গেছি।

সিয়ারা: এখনও মনে হয় সেটাই বলছেন। কারণ আপনি তো প্রেম ভালোবাসার মানেই বুঝতেন না তাহলে আজ হঠাৎ করে কীভাবে এতো নির্দ্বিধায় “ভালোবাসি” বলছেন?

আধভিক: তুমিই তো শিখিয়েছো “ভালোবাসা” শব্দের মানে। বুঝিয়েছো যে ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করা যায়, তাই বলছি। আমি অনুভূতিটা বুঝতাম কিন্তু সেটার নাম জানতাম না। যখন তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখন প্রতিটা মুহূর্তে তোমার মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। তখন হয়তো সেটা শুধু ভালোলাগা ছিলো কিন্তু এই একমাসে সেটা ভালোবাসাতে পরিণত হয়েছে। এখন তুমি আমার থেকে দূরে গেলে সবার আগে এটা মনে হয় তোমাকে ফিরে পাবো তো? কারণ তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়টা আরো বেশি জেঁকে বসেছে আমার মনে। আর এই ভয়টাই আমাকে বুঝতে শিখিয়েছে আমি তোমাকে ভালোবাসি। কারণ ভালোবাসা থাকলেই তো হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তাই না?

সিয়ারা স্থির চাহুনীর দ্বারা আধভিকের দিকে তাকিয়ে থাকে। হয়তো সে চোখের দ্বারা আধভিকের কথার সত্যতা যাচাই করছে।

সিয়ারা: ভালোবাসা শব্দের মানে যখন শিখেছেন তখন এটাও নিশ্চয় জানেন এই শব্দটা আরো একটা শব্দের উপর নির্ভর করে? সেই শব্দটা হলো “বিশ্বাস” যা আপনি আমাকে করেন না।

আধভিক: করি, নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি তোমাকে। আমি তোমাকে সন্দেহ করিনি সিয়ারা। আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে তুমি হয়তো অন্যকারো। আসলে, কাছের মানুষের বড্ড অভাব আমার জীবনে। তাই হারিয়ে ফেলার ভয়টাও ভীষণ। বলতে পারো এইজন্যেই কখনও কাওকে নিজের জীবনে আনিনি। খালি মনে হতো, জীবনে আসবে আবার হারিয়েও যাবে। তখন সেই কষ্টটা তো আমাকেই সহ্য করতে হবে, যেটা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।

ধীরে ধীরে সিয়ারার মন গলতে শুরু করেছে। তবুও সে চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব নিজেকে শক্ত রাখার। সিয়ারা কিছু না বললে আধভিক সিয়ারার কাছে এগিয়ে এসে ওর হাত দুটো নিজের দুহাত দিয়ে ধরে। সিয়ারার চোখে চোখ রেখে আধভিক বলে,

আধভিক: প্লিজ, প্লিজ বি মাইন সিয়ারা। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। নিজের অজান্তেই আমি তোমার সাথে জড়িয়ে পরেছি। আমার ভালো থাকা, খারাপ থাকা পুরোটাই তোমার উপর নির্ভর করছে। আমি জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। এমন একজনকে আমি নিজের জীবনে চাই যে সম্পূর্ণ আমার হবে। তার উপর সব অধিকার শুধু আমার থাকবে। তাঁকে আকড়ে ধরে, তাঁর ভালোবাসাতেই আমি নিজের বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। আর সেই একজনটা হলে তুমি!

সিয়ারা কিছুক্ষণ চুপ করে আধভিকের দিকে তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ করেই নিজের হাত ছাড়িয়ে সরে আসে। নিজেকে একটু শক্ত করে বলে,

সিয়ারা: এতই যখন ভালোবাসেন তখন আমার কথা অমান্য করেন কীভাবে?

আধভিক: ক..কি কথা অমান্য করেছি?

সিয়ারা: আবার জিজ্ঞেস করছেন? আমি না বলেছিলাম এইসব নেশাভাঙ চলবে না আর?

আধভিক: ইয়ে.. হ্যাঁ মানে না..মানে….

সিয়ারা: এতক্ষণ তো খুব বুলি ফুটছিলো। এখন তুতলে যাচ্ছেন কেন?

আধভিক: তোমাকে দেখে…

সিয়ারা: কিহ? (ভ্রু কুঁচকে)

আধভিক: (মাথা চুলকে) ইয়ে মানে নেশাটা কেটে যাচ্ছে তোমার রাগ দেখে। আর সব গুলিয়ে যাচ্ছে আবার কেমন জানো।

সিয়ারা: ও তার মানে নেশা করে থাকলেই ভালো ভালো কথা বলবেন আর নেশায় না থাকলে সকালের মতো কথা বলবেন?

আধভিক: এ বাবা না না। ধুর, এমনটা কখন বললাম? আমি এটা বলতে চাইনি। (বাচ্চাদের মতো করে)

সিয়ারার হাসি পেলেও সে হাসে না। হাসি চেপে নিয়ে আধভিকের চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। তারপর আধভিকের চোখে চোখ রেখে বলে,

সিয়ারা: অনেক রাত হয়ে গেছে। এইবার বাড়ি ফিরে যান। খাওয়া দাওয়া না করে সারাদিন ধরে যে এইসব গিলেছেন বুঝতেই পারছি। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নেবেন আগে।

আধভিক: উত্তরটা না পাওয়া পর্যন্ত গলা দিয়ে খাবার নামবে না। (কাতর ভাবে)

সিয়ারা: তাহলে আর কি? যান গিয়ে আবার মদ গিলতে বসে পরুন। সেটা তো গলা দিয়ে নেমে যাবে। (রেগে)

আধভিক: (তাচ্ছিল্য হেসে) তার মানে তোমার উত্তর না তাই তো? ঠিক আছে। আমি তোমার ডিসিশনকে রেসপেক্ট করবো।

সিয়ারা: (যেতে বাঁধা দিয়ে) বড্ড বেশি বোঝেন আপনি জানেন তো? এতই যখন রেসপেক্ট করেন আমার ডিসিশনকে তাহলে কেন এত ড্রিংক করেছেন বারণ করার পরেও? সেইবেলা রেসপেক্ট নেই তাই না? সকালবেলা যখন আমার কথা শোনার দরকার ছিল, বোঝার দরকার ছিলো তখন বুঝেছেন? সবসময় অকাজ করেন আর তারপর বাচ্চামু করেন। (একনাগাড়ে)

আধভিক সিয়ারার বকা শুনছে চুপচাপ বাচ্চাদের মতো। আধভিকের মুখটা দেখে সিয়ারা বলেই ফেলে,

সিয়ারা: আপনাকে ঠিক কি বলা উচিত আমি বুঝে উঠতে পারছি না জানেন তো? মাঝে মধ্যে ভীষণ ম্যাচিউর, মাঝে মধ্যে একদম বাচ্চা তো মাঝে মধ্যে পাগল।

কথাটা বলে সিয়ারা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ছোট্টো নিশ্বাস ছাড়লে আধভিক মাথা তুলে সিয়ারার দিকে তাকিয়ে বলে,

আধভিক: এইসব কিছুই তোমার কাছে সিয়ারা। বাইরের সবার কাছে আমি যেমন তোমার কাছে আমি তেমন নই। বাইরের লোকের কাছে নিজের যেই রূপটা আমি লুকিয়ে রাখি, আমার সেই রূপটা শুধুমাত্র নিজের কাছের মানুষ, তোমার কাছেই প্রকাশ পায়। তুমি বিরক্ত হলে বলো, আমি নিজেকে সামলে নেবো।

সিয়ারা: হয়েছে হয়েছে। আব, যান এবার বাড়ি যান। অনেক রাত হয়ে গেছে আমার এখন ঘুম পাচ্ছে।

সিয়ারা আধভিককে চলে যেতে বলেও নিজেই নীচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মাথার মধ্যে আধভিকের বলা কথাগুলো ঘুরছে সমানে। নিজের হাতে যখন আবার আধভিকের হাতের স্পর্শ পায় তখন সিয়ারা আধভিকের দিকে তাকায়।

আধভিক: আমি তোমার বিশ্বাস ভাঙতে দেবো না সিয়ারা। জাস্ট একটাবার আমাকে সুযোগ দাও। আমি নিজেকে বদলে নেবো, তোমার যা পছন্দ নয় আমি তা করবো না।

সিয়ারা: একদম না আধভিক। কখনও কাওর জন্য নিজেকে বদলাবেন না। নিজের জন্য নিজেকে বদলাবেন, নিজে ভালো থাকার জন্য নিজেকে বদলাবেন।

আধভিক: কেউ কাওর জন্য বদলায় না, ভালোবাসা বদলে দেয়। আমি তোমাকে ভালোবাসি সিয়ারা, তোমাকে পাওয়ার জন্য সব কিছু করতে পারি। কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক আমি জানি না। আমি শুধু জানি তোমাকে আমার চাই। ভালোবাসতে হবে না আমাকে। ভালোবাসা পাওয়ার মতো ভাগ্য আমার নেই। (তাচ্ছিল্য হেসে) শুধু আমার সাথে থেকো, আমাকে ছেড়ে যেও না। তাহলেই হবে।

সিয়ারা কোনো উত্তর দেয় না। আধভিকের চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে ও। সিয়ারা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারে আধভিকের মনে লুকিয়ে থাকা কষ্টটা। প্রথম দিন থেকেই ও আন্দাজ করেছে ছেলেটার মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। এইবার একে একে বার করতে হবে সব।

আধভিক: চলো।

সিয়ারা: হম? কোথায়? (অবাক হয়ে)

আধভিক: চলোই না আগে।

সিয়ারা: মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার? কত রাত হয়েছে বলুন তো? এখন এইভাবে আপনার সাথে গেলে লোকে কি বলবে? ভাগ্যিস আমি আবাসনে থাকি, নাহলে এতক্ষণে সবাই জেনে গেলে আমি আস্ত থাকতাম না। যান বাড়ি যান।

আধভিক: সিয়ারা প্লিজ! আমি জানি তুমি খাওনি কিছু। তোমার মুখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে সেটা। চলো আমার না সাথে? তোমার সাথে আরো কিছুক্ষণ থাকার সুযোগও পেয়ে যাবো। (অনুরোধ করে)

সিয়ারা: (হালকা হেসে) আপনার বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমাতে ঘুমাতেই দেখবেন সকাল হয়ে গেছে। তারপর এনজিও তে চলে আসলেই দেখা পেয়ে যাবেন আমার।

আধভিক: তার মানে তুমি যাবে না আমার সাথে তাই তো? (মন খারাপ করে)

সিয়ারা: আজ্ঞে না। মন খারাপ করার প্রয়োজন নেই, আমি বললাম তো সকালে এনজিও তে চলে আসবেন। আর ড্রাইভার কেন নিয়ে আসেন না বলুন তো আপনি? আপনি এইরকম নেশা করে গাড়ি চালালে আমার ভয় করে।

আধভিক: (হাসিমুখে) চিন্তা করো না। আমি ঠিকভাবে পৌঁছে যাবো।

সিয়ারা: গিয়ে টেক্সট করবেন। আমি অপেক্ষায় থাকবো।

আধভিক: জো হুকুম।

সিয়ারা কিছু বলার আগেই দেখতে পেলো পাশের ফ্ল্যাটের লাইট জ্বলে উঠেছে। সঙ্গে সঙ্গে সিয়ারা নিএক্র বাড়ির ভিতরে দৌঁড় দিয়ে চলে গেলো আর দরজা বন্ধ করে দিল। আধভিককে টেক্সট করে দিলো যাতে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায় ওখান থেকে। সিয়ারার সাথে সাথে আধভিকও টের পাওয়া সেও গাড়িতে উঠে বসে। তখনই সিয়ারার টেক্সট আসলে আর দেরী না করে বেরিয়ে যায় ওখান থেকে। বাড়ি ফিরে সিয়ারাকে টেক্সট করে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পরে। খাওয়া আর হয় না।

সকালে,

সিয়ারা বেশ হাসিখুশি মনে রেডি হচ্ছে এনজিও যাওয়ার জন্য। আজকে একটু তাড়াতাড়িই যাচ্ছে সে এনজিওতে। যাতে ছুটিটাও তাড়াতাড়ি নিয়ে আধভিকের সাথে বেশি সময় কাটাতে পারে। এমন সময় দিয়ারা ওর ঘরে এসে উপস্থিত হলে সিয়ারা একটু অবাক হয়।

সিয়ারা: কি ব্যাপার দিয়া? তুই এত সকালে আমার ঘরে?

দিয়ারা: আমারও তো এটাই প্রশ্ন দি। তুই এত সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছিস?

সিয়ারা: আব, আমি এনজিওতে যাচ্ছি। আজকে একটু তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেবো ওদের, কাজ আছে তাই।

দিয়ারা: ওহ, তো প্রেম করাটাও আজকাল কাজের মধ্যে পরে বুঝি?

সিয়ারা নিজের ব্যাগ গোছাচ্ছিলো ঠিক সেই সময় দিয়ারার কথাটা শুনে একটু চমকে ওঠে ও। কিছুক্ষণ চুপ থেকে দিয়ারার দিকে ফিরলে দেখে দিয়ারা হাত ভাঁজ করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে একভাবে।

দিয়ারা: কি হলো? কি এক্সকিউজ দিবি ভেবে পাচ্ছিস না?

সিয়ারা: এক্সকিউজ দেওয়ার কিছুই নেই দিয়া। তুই যেমন ভাবছিস তেমন কিছুই না।

দিয়ারা: আচ্ছা? তুই বলতে চাইছিস তুই আধভিকের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস না? ওর সাথে বেশি সময় কাটানোর জন্য এনজিওতে তাড়াতাড়ি যাচ্ছিস না?

সিয়ারা: তুই এত কিছু কীভাবে জানলি?

দিয়ারা: কারণ আধভিককে ফলো করি আমি। ও কখন কি করছে না করছে সব কিছুর খোঁজ থাকে আমার কাছে। দেখ দি! আমি তোকে কিছু বলতে এসেছি। আমি আধভিককে ভালোবাসি। আর এটা তুই ভালো ভাবেই জানিস।

সিয়ারা: (অবাক হয়ে) কিহ? আমি জানতাম তুই একজন নামকরা প্রোডিউসারের ছেলেকে পছন্দ করিস। দূর থেকে আমরা এমন অনেককেই পছন্দ করে থাকি দিয়া, তাই বলে তাঁকে ভালোবাসা? এটা সম্ভব নয়।

দিয়ারা: কেন সম্ভব নয় দি?

সিয়ারা: কারণ ওই মানুষটা তোর ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আজ হঠাৎ একটা সুযোগ তুই পেয়ে গেছিস ওনার সাথে দেখা করার, কাজ করার তাই বলে তুই তাঁকে ভালোবেসে ফেললি? আজ যদি এই সুযোগটা না আসতো? তখনও কি তুই বলতিস তুই আধভিককে ভালোবাসিস? না। তুই তখন বলতিস তুই ওকে পছন্দ করিস। ভালো লাগা আর ভালোবাসার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ আছে দিয়া।

দিয়ারা: একদম জ্ঞান দিতে আসিস না দি। তোর এই ভালোবাসা সম্পর্কে জ্ঞান শুনতে আমি মোটেও বসে নেই। আমার আধভিককে ভালো লাগতো বলেই তো ওর কাছাকাছি আসায় সেটা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। ও দূরে থাকলে না আমি ওকে চিনতাম, বুঝতাম আর না ভালোবাসতাম। এই সহজ বিষয়টা বুঝতে পারছিস না তুই?

সিয়ারা: (নিজেকে শক্ত করে) তাহলে কি বলতে চাইছিস তুই?

দিয়ারা: আমি গতরাতে দেখেছি আধভিককে আমাদের বাড়ির সামনে আসতে। এর আগে ও বারে গিয়ে বসেছিলো সেই খবরও আছে আমার কাছে। তোদের মধ্যে কি কথা হয়েছে আমি জানি না আর জানতেও চাই না। আমি শুধু তোকে বলতে এসেছি, তুই সরে যা আমাদের মাঝখান থেকে।

সিয়ারা: অনুভূতিটা তোর হাতের পুতুল নয় দিয়া। আধভিক আমার জন্য ফীল করে। হি হ্যাভ আ ফিলিংস ফর মি। তুই সেটা জোর করে বদলে দিতে পারিসনা। আমি আজ অবধি আধভিককে যতটা চিনেছি তাতে এটুকু বলতে পারি, আমি যদি ওর জীবন থেকে সরে যাই তাহলে দ্বিতীয় কাওকে নিজের জীবনে আসতে দেবে না।

দিয়ারা: এটা তোর মনের ভুল। আধভিক ভালোবাসা চায় যেটা আমি ওকে দিতে পারবো। তুই তো শুধু কষ্টই দিতে জানিস ওকে। আসার পর থেকে তো সেটাই দেখছি আমি আর তাছাড়া তুই তো এইসবে ইনভলভ হতে চাসনি কখনও তাহলে আজ কেন আধভিককে ছাড়তে চাইছিস না। তুইও কি লোভী হয়ে গেলি দি?

সিয়ারা: দিয়া! (জোরে) লোভী আমি নই তুই হয়ে গেছিস। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ, আধভিককে কোনরকম কষ্ট পেতে আমি দেবো না। বিষয়টা যখন ওর ফিলিংস নিয়ে তখন কখনওই সেটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হতে আমি দিতে পারি না। ও এমন একটা মানুষ যে কখনও কাওর অনুভূতি নিয়ে খেলতে জানে না। সব জানার পরেও আমি ওকে তোর হাতে তুলে দেবো বলছিস?

দিয়ারা: আজ অবধি আমি যা যা চেয়েছি সবই তো দিয়েছিস দি। তাহলে আধভিককে কেন দিতে পারবি না?

সিয়ারা: ও কি কোনো জিনিস নাকি দিয়া? যে তুই চাইলি আর আমি দিয়ে দিলাম? ও একটা জলজ্যান্ত মানুষ। ও যদি নিজে তোর হতে চায় তাহলে আমি বিনা বাক্যে তোদের মাঝখান থেকে সরে যাবো। আর না চাইলে কেউ আমাকে ওর জীবন থেকে সরাতে পারবেনা। কথাটা মাথায় রাখিস আর এই ভুল চিন্তা ভাবনাগুলো বের করে ফেলিস।

সিয়ারা ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে তার আগেই দিয়ারা বলে উঠলো,

দিয়ারা: আমি যদি আধভিককে না পাই তাহলে আধভিককে অনেক কষ্ট পেতে হবে দি। পারবি তো সেটা সহ্য করতে? তুই খুব ভালো ভাবেই জানিস আমার জেদ ঠিক কতটা ভয়ানক। (বাঁকা হেসে)

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ১৭||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আধভিক আজকে একটু আগে আগেই চলে এসেছে এনজিওতে। গাড়ি থেকে নেমে, গাড়িতে হেলান দিয়ে একহাত পকেটে গুঁজলো সে। চারিপাশটা একবার দেখে নিয়ে বাম হাতটা উপরে তুলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবলো,

আধভিক: আজকে কি তুমি একটু তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারো না সিয়ু?

কথাটা ভেবে আধভিক নিজ মনে হেসে ওঠে। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে হঠাৎই যখন দেখে সিয়ারা ওর দিকে এগিয়ে আসছে তখন আবারও প্রশ্ন করে নিজেকে,

আধভিক: আমি কি হ্যালুজিনেট করছি তোমায়? নাকি তুমি সত্যি এসেছো? এখন তো সবসময়ই আমি তোমার কথা ভাবি, তোমাকে দেখি চারিদিকে।

সিয়ারা: আমি সত্যিই এসেছি আধভিক।

আধভিক: (সোজা হয়ে) কেন? আমার থেকে দূরত্ব বুঝি সহ্য হচ্ছিলো না তাই এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছো আজ?

সিয়ারা: (তাচ্ছিল্য হেসে) আপনাকে যাতে আর কোনদিন সহ্য করতে না হয় তাই এসেছি।

আধভিকের হাসিটা নিমিষে মলিন হয়ে যায় সিয়ারার কথা শুনে। সিয়ারা অপেক্ষা করে আধভিকের উত্তরের কিন্তু আধভিক এতটাই হতবাক যে কোনো উত্তর দিতে পারে না। তাই সিয়ারা বলে ওঠে,

সিয়ারা: আপনি গতকাল আমার কাছে যে উত্তরটা চেয়েছিলেন আজ সেটাই দিতে এসেছি আপনাকে। (কিছুক্ষণ থেমে) আমি আপনার জীবনের সাথে জড়াতে রাজি নই আধভিক। আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না।

আধভিক: আমি তো বলিনি ভালোবাসতে। (কাতর স্বরে)

সিয়ারা: কাওকে ভালো না বেসে তার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি যদি আপনার মনের কথা না জানতে পারতাম তাহলে বন্ধু হয়ে থাকতাম কিন্তু সবটা জানার পর এটা আর সম্ভব নয়। কারণ আপনি আমাকে এক নজরে দেখবেন আর আমি আরেক।

আধভিক: আই প্রমিজ সিয়ারা তোমার অপছন্দের কোনো কথা আমি বলবো না তোমাকে। তুমি যেমন টা চাও তেমনটাই হবে। বন্ধুর মতোই থাকবো আমি। প্লিজ, প্লিজ এভাবে চলে যেও না।

আধভিকের কাতর অনুরোধ শুনে সিয়ারার বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। চোখের কোণে জল জমেছে তবে তাঁর কিচ্ছু করার নেই।

সিয়ারা: আমার পক্ষে সম্ভব নয় আধভিক! কেন বুঝতে পারছেন না আপনি? আপনিই তো বলেছিলেন আমার ডিসিশনকে রেসপেক্ট করবেন? তাহলে এখন কেন এমন করছেন?

আধভিক: কারণ আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। আই নীড ইউ ইন মাই লাইফ ভেরি ব্যাডলি! প্লিজ সিয়ারা?

সিয়ারা: আমি আগেই আপনাকে বলেছিলাম আধভিক আপনার আর আমার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। আপনার স্ট্যাটাসের সাথে আমার স্ট্যাটাস যায় না। আপনি একজন নামকরা প্রোডিউসারের ছেলে আর আমি একজন সাধারণ মেয়ে।

আধভিক: আমার স্ট্যাটাসের জন্যই কি তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছো?

সিয়ারা: যদি হ্যাঁ বলি তাহলে কি আপনি আপনার স্ট্যাটাস চেঞ্জ করে ফেলবেন?

আধভিক: হ্যাঁ করব। তাই করবো দরকার পরলে। আমার শুধু তোমাকে চাই সিয়ারা, বাই হুক অর ক্রুক আমার তোমাকে চাই।

সিয়ার আধভিকের পাগলামি দেখে হতবাক হলেও টা বুঝতে দেয় না। আধভিককে কাটানোর জন্য বলে,

সিয়ারা: তার মানে আমি শুধুই আপনার জেদ আধভিক। ভালোবাসা নই। কে বলতে পারে আপনি অন্য ছেলেদের মত আমাকে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন না?

আধভিক এক কদম পিছিয়ে গেলো সিয়ারার কথা শুনে। সিয়ারা নিজে কথাটা বলে নিজের জামাই মুঠ করে ধরলো। আধভিক ধীরজ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

আধভিক: তোমার মনে হয় আমি তোমার সাথে টাইম পাস করছি?

আধভিকের গলার স্বর শুনে সিয়ারা আন্দাজ করতে পারছে সে কতটা আঘাত পেয়েছে। কতটা আহত হয়েছে। বুক চিড়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে আসে সিয়ারার। সে এড়িয়ে যায় আধভিকের প্রশ্ন।

সিয়ারা: প্লিজ আর আমার সাথে কোনরকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না মিস্টার রায় চৌধুরী। আশা করবো আপনি আমার এই রিকুয়েস্টটা রাখবেন।

কোনো মতে কথাটা বলে সিয়ারা হনহন করে এনজিওর ভিতরে চলে আসে। ভিতরে এসেই দু হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্নায় ভেঙে পরে সিয়ারা। নিজেকে একটু সামলে মনে মনে বলে,

সিয়ারা: আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিতে চাইনি আধভিক। না চেয়েছিলাম এসব কিছু বলতে। কিন্তু আমি যদি এগুলো না বলে আপনাকে বলতাম “আপনি আমার বোনকে ভালোবাসুন” তাহলে তাতে আরো বেশি আঘাত পেতেন আপনি। আমি পারবো না এভাবে আপনাকে অন্যকাওর হাতে তুলে দিতে। এতে যে আপনার অনুভূতি, ভালোবাসাকে অপমান করা হয়। অসন্মান করা হয়।

সিয়ারা নিজের চোখ মুছে চোয়াল শক্ত করে বলে,

সিয়ারা: আমি আমার বোনের জেদ সম্পর্কে জানি। ও যখন একবার ঠিক করেছে ও আমাকে আপনার জীবনে থাকতে দেবে না তখন ও কিছুতেই দেবে না। ও কিছুতেই আপনাকে ভালো থাকতে দেবে না তাই আমি বাধ্য হলাম আপনার থেকে দূরে সরে আসতে। এই সুযোগে যদি ও আপনার মন জয় করতে পারে তাহলে তো ভালোই আর না পারলে ও নিজেই শিক্ষা পেয়ে যাবে। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যাবে আমি জানি। তখন আর চেয়েও আমি আপনাকে পাবো না। তবে যদি আপনি আমাকে ছাড়া কষ্টে থাকেন তাহলে আমি আপনাকে ঠিক মানিয়ে নেবো।

ডুকরে কেঁদে ওঠে সিয়ারা। কিছুতেই তাঁর কান্না থামছে না আজ। যেহেতু অনেক সকালে সে এনজিওতে এসেছে তাই বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে। ওরই পরিচিত একজন এসে ওর কাঁধে হাত রাখে যাকে ও দিদি বলে সন্মোধন করে।

__কি হয়েছে সিয়া? এতো সকালে আজকে এখানে কি করছিস? আর এভাবে কাঁদছিস কেন তুই?

সিয়ারা জড়িয়ে ধরে মেয়েটিকে। কিছুক্ষণ কাঁদার পর মেয়েটির কাঁধে মাথা রেখেই প্রশ্ন করে,

সিয়ারা: আমার সাথেই এমন কেন হয় দিদি? প্রথমে নিজের মায়ের ভালোবাসা হারালাম তারপর বাবার। সৎ মা যদিও আমাকে ভালোবাসার অভাব বুঝতে দেয়নি তবে আজ যখন আধভিকের ভালোবাসা অনুভব করেছি তখন ভীষন নিজের মনে হচ্ছিলো জানো? মনে হচ্ছিলো অবশেষে আমি নিজের একটা মানুষ পেয়েছি। কিন্তু দেখো? সেইটাও সইলো না আমার কপালে।

__আধভিকের সাথে সব তো ঠিকই চলছিলো তাহলে হঠাৎ এসব কেন বলছিস?

সিয়ারা ধীরে ধীরে সবটা খুলে বললে ওর দিদি দিয়ারার উপর ভীষণ রেগে যায়।

__তুই যে বলছিস তুই আধভিককে কষ্ট পেতে দিবি না তাহলে এখন কি আধভিক কষ্ট পাচ্ছে না? তোর উচিত ছিলো এই বিষয়টা আধভিককে জানানো।

সিয়ারা: না দিদি। ওনার যা মাথা গরম, উনি যদি শুনতে পান আমাকে ওনার থেকে সরানোর চেষ্টা করছে কেউ তাঁকে তিনি আস্ত রাখবেন না। আমার বোন ওদের প্রোডাকশন হাউজের হয়ে কাজ করছে, এসব জানতে পারলে উনি ওকে বার করে দেবেন। কোনো কনট্র্যাক্ট কোনো কিছুর পরোয়া করবেন না। আমি এটা কি করে হতে দিতে পারি দিদি?

__যেই বোন তোর কথা ভাবছে না তুই এখনও তার কথা ভাবছিস? এতো মহান হওয়া ভালো না সিয়া। ছোটো থেকে ওর কথা ভেবে এসেছিস তুই। ওর জন্য নিজের স্বপ্ন পূরণ করলি না, পড়াশোনা করলি না। নিজের জিনিস ওকে দিয়ে এসেছিস সবার আগে আর ও কি করলো? তোর ভালোবাসার মানুষটাকে তোর কাছ থেকে কেড়ে নিলো।

সিয়ারা: আমি ওর কথা ভাবছি না দিদি। আমি ভাবছি মায়ের কথা। যেই মা কি না কখনও আমাকে বাবা মায়ের ভালোবাসার অভাব টের পেতে দেয়নি। তাঁর কথা ভেবেই আমি দিয়া কে একটা সুযোগ দিলাম। আমার ধীর বিশ্বাস, আধভিক দিয়াকে কখনওই ভালোবাসবেন না। উনি শুধু আমাকেই ভালোবাসেন। তবে এটা আমি দিয়াকে বোঝাতে পারিনি, ও জেদ ধরেছে আমাদের আলাদা করবে। তুমি তো জানোই ওর জেদের কথা?

__তাই বলে তোরা দুজন এভাবে কষ্ট পাবি?

সিয়ারা: আমি যদি ওনাকে অন্যকাওর হাতে তুলে দিতাম সেই কষ্ট এই কষ্টের থেকে দ্বিগুণ হতো। সব তো এক-দুটো মাস হয়েছে আমার সাথে ওনার পরিচয়ের। এতো কিছুর পর আমি যদি ওনার মন থেকে মুছে যাই তাহলে হয়তো কষ্টটাও কমে যাবে।

__এমন কিছুই হবে না সিয়া। আমি বলছি তোকে দেখিস, তোরা দুজন ঠিক এক হবি। তোর মুখে আধভিকের যা বর্ণনা আমি শুনেছি তাতে ও কখনোই তোকে ভুলতে পারবে না। অভিমান করতে পারে তবে ভুলতে পারবে না। তুই বললি না, বাবা মায়ের ভালোবাসা হারানোর পরেও সেই ভালোবাসা ফিরে পেয়েছিস তোর সৎ মায়ের থেকে। এক্ষেত্রেও দেখবি তুই আধভিকের ভালোবাসা আবার ফিরে পাবি। এইবার চোখ মোছ তো, ইশ কি অবস্থা করেছিস চোখ মুখের।

সিয়ারাকে জোর করে তুলে নিয়ে দাঁড় করায় দিদি। তারপর চোখে মুখে জল দিয়ে আসতে বলে। সিয়ারা যাওয়ার আগে একবার দরজার দিকে তাকাতেই দেখে আধভিক এখনও ঠায় ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের জল মুছে নেয় সে, আর গাড়িতে ওঠে।

সিয়ারা: (মনে মনে– না জানি কি পাগলামি করবে এরপর ছেলেটা? উনি আবার ওনার বাবাকে ভুল বুঝবেন না তো?)

__কি হলো? যেতে বললাম তো আমি?

সিয়ারা দিদির কথা মতো চোখে মুখে জল দিয়ে এলে দিদি জোর করে ওকে একটু কিছু খাইয়ে দেয়। বাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারতো সে চাইলেই কিন্তু বাড়িতে গেলে একা থেকে আরো বেশি মন খারাপ করবে সিয়ারার। তার থেকে বাচ্চাদের সাথে থাকুক কিছুটা সময়।

অন্যদিকে,

আভাসবাবু আধভিককে বিদ্ধস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে দেখে ঘাবড়ে যান। উনি ভাবেন ছেলে হয়তো নেশা করে ফিরেছে কিন্তু কাছে গিয়ে দেখেন না! আধভিক কোনরকম নেশা করেনি। আধভিক গিয়ে সোফায় চুপ করে বসে পরলে আভাস বাবু জিজ্ঞেস করেন,

আভাস বাবু: কি হয়েছে ভিকি? তোকে এতটা বিদ্ধস্ত লাগছে কেন?

আধভিক: আমি কি খুব খারাপ ড্যাড? সবাই কেন আমাকে ছেড়ে চলে যায় বলো তো?

আভাস বাবু: সি..সিয়ারা তোকে ছেড়ে চলে গেছে? (আতঙ্কিত কণ্ঠে)

আধভিক: ও ছাড়া আর কে’ই বা ছিলো আমার জীবনে ড্যাড? আচ্ছা তুমি আমাকে জন্মের পরেই তো মেরে ফেলতে পারতে? কেন বাঁচিয়ে রাখলে আমাকে?

আভাস বাবু: ভিকি!! (জোরে)

আভাস বাবু ছেলের মাথাটা বুকে জড়িয়ে নিয়ে রইলেন বেশ কিছুক্ষণ।

আধভিক: মম আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। তারপর তুমিও আমাকে সময় দিলে না। আর এখন? এখন সিয়ারা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। কেন আমি এতটা একা ড্যাড? কেন?

আভাস বাবু: আমি, আমি কথা বলবো সিয়ারার সাথে। তুমি এসব বলো না বাবান! এমন বলতে নেই। কে বলেছে তুমি একা? আমি আছি তো? আমি থাকতে তুমি কখনওই একা হবে না। যে ভুল একবার করেছি আমি সে ভুল দ্বিতীয় বার করবো না। তোমার ড্যাড সব সময় তোমার পাশে আছে।

আভাস বাবু ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন। ছেলেকে এভাবে ভেঙে পরতে দেখে, চোখের জল ফেলতে দেখে আভাস বাবুও ভীষণ ভেঙে পরেন। সে আগে কখনও আধভিককে এভাবে ভেঙে পরতে দেখেননি। আভাস বাবুর স্নেহে আধভিকও শান্ত হয়ে যায় ধীরে ধীরে আর চোখ লেগে যায় ওর। আভাস বাবু আস্তে করে আধভিককে সোফায় শুয়ে দিয়ে কাজের লোককে বলে কম্বল নিয়ে আসতে, কম্বলটা গায়ে দিয়ে উনি নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যান।

আভাস বাবু: এমনটা কেন করলে সিয়ারা? আমি তো তোমাকে অনুরোধ করেছিলাম আমার ছেলেটাকে ছেড়ে না যাওয়ার জন্য? তুমি সেই কাজটাই করলে?

রাতে,

সিয়ারা বাড়িতে আসলে ওর মা জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, চোখ মুখ কেন শুকিয়ে আছে। পরিবর্তে সিয়ারা “কিছু না বলে” ঘরে চলে যায়। সিয়ারা চলে যেতেই উনি দিয়ারাকে দেখতে পান, সেও ঘরে চলে যায়।

মা: কিছু তো একটা হয়েছে সিয়ার। মাঝে মধ্যেই দেখছি রাতে খাওয়া দাওয়া করছে না। এই যে গিয়ে ঘরের দরজা দিলো আর বেড়াবে না, সেই সকালে। দেখি, এইবার কথা বলতে হবে আমায় ওর সাথে।

ঘরে,

সিয়ারা: সোহমদাকে ফোন করেও তো ওনার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতে পারলাম না। শুধু বললেন বাড়ি ফিরেছেন, নেশাও করেননি। আচ্ছা কোনো ভুলভাল কিছু করে বসবেন না তো? আজ যেভাবে পাগলামী করছিলেন তাতে ভুলভাল কিছু করে বসাটা অস্বাভাবিক কিছু না। উফ! কেন ঠাকুর কেন? কেন আমার সাথেই এমন করো তুমি? শুধু শুধু মানুষটা আমাকে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছেন।

এইসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই সিয়ারার মাথা যন্ত্রনা উঠে যায়। মাথায় বাম লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে শুতেই ঘুমিয়ে পরে সে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here