কথা দিয়েছিলে ফিরবে পর্ব ১৩

#কথা_দিয়েছিলে_ফিরবে
#পর্ব_১৩
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

সেদিন রাতে জ্বরের তাড়নায় অবস্থা খারাপ জুঁই । নাফিস ইফসিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে জুঁইয়ের মাথার কাছে বসে আছে । শরীরের ব্যাথায় ককিয়ে উঠে জুঁই । জুঁইয়ের যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠে নাফিসের ভেতরটা । তখন নাফিস জুঁইয়ের খুব কাছে চলে যায় ,

– কি হলো জুঁই ?
-……………
– এই ,,,,,, এই কাদম্বরী , কি হয়েছে ?
– নাফিস পুরো শরীর ব্যাথা করছে , উফফফ কোমড় ফেটে যাচ্ছে , পা টাও ব্যাথা করছে অনেক ।
– পেইন কিলার দিলাম এরপরেও কমছে না ?
– উহু ।

নাফিস জুঁইয়ের চোখে পানি দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে নি । পুরো রুম খুজে মুভ মলম খুজে আনে সে । আজকে না হয় সে স্বামীর দায়িত্বটাও পালন করবে । লাজ লজ্জা এক পাশে রেখে জুঁইয়ের শরীরে হাত দেয় নাফিস । জুঁইয়ের সেলোয়ার উপরে তুলে দিয়ে মুভ দিয়ে দেয় নাফিস । নিজের শরীরে নাফিসের হাত পড়েছে কিন্তু তাতে তার খেয়াল নেই কারণ সে জ্বরে ঘোরের মধ্যে । নাফিস জুঁইকে ঘুরিয়ে জুঁইয়ের জামা তুলে কোমড়ে মুভ দিয়ে দেয় । প্রায় অনেক্ষণ পর জুঁইয়ের ব্যাথাটা দমে আসে । শেষ রাতের দিকে জুঁই ঘুমিয়ে যায় । জুঁইয়ের পাশে ইফসিটাও ঘুম । নাফিস ঘড়িতে দেখে তখন ভোর রাত ৪ টা । জ্বরের প্রকটে জুঁইয়ের হয়তো কিছুই খেয়াল নেই । নাফিস সামনের রুমে গিয়ে পাশে থাকা খাটে নিজের শরীরটাকে ছেড়ে দেয় । মনে তার একটু হলেও শান্তি আসে । তার ক্লান্তু শরীরে কিসের যেনো একটা প্রশান্তি কাজ করে । আজ যেন তার করা কিছু কৃতকর্মের জন্য সে অনেকটাই দ্বায় মুক্ত । শুয়ে তো আছে সে কিন্তু বার বার জুঁইকেই মনে পড়ছে তার । জুঁই তখনও ঘুমে বেহুশ । এদিকে নাফিসের অন্তর পুড়ে ছাই ।

আগুন মানুষকে শারীরিক ভাবে যতটা না পোড়ায় তার চেয়েও বেশি পোড়ায় মনে । আগুনের কাছে আগুন শরীরকে পুড়িয়ে শেষ করে দেয় । আর প্রেমের আগুন মনকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেয় । নাফিসকে প্রেমের আগুন গ্রাস করেছে বর্তমানে ।

সকাল ৯ টার পরে জুঁইয়ের ঘুম ভেঙে যায় । আজ শরীর অনেকটাই ভারমুক্ত মনে হচ্ছে তার নিজের কাছে । শরীরের ব্যাথাটাও আজ কম । হঠাৎ খেয়াল এলো নাফিসের কথা । কাল রাতে হয়তো নাফিস তার বাসাতেই ছিল । কিন্তু জুঁই বুঝতে পারছে না কিছুই ।

– আশ্চর্যের বিষয় হলো নাফিস কিভাবে টের পেলো আমি অসুস্থ । অফিসে কেউ কিছু বলেছে নিশ্চয়ই ।

পাশে থাকা ওড়নাটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় জুঁই । পর্দা সরিয়ে সামনের রুমে এসে দেখে নাফিস রান্নাঘরে কি যেন করছে । সেই কালকের জামাকাপড় পরা । অন্যদিকে নাফিস জুঁইকে দেখে একটু অবাক হয়ে যায় । অবাক হওয়ার কারণ আছে তা হচ্ছে সে ভাবে নি জুঁই এত তাড়াতাড়ি উঠে যাবে । ঠোঁটের কোণে হাল্কা মুচকি হাসি দিয়ে নাফিস জুঁইয়ের দিকে এগিয়ে আসে ।

– ঘুম ভেঙেছে ?
– হু , তুমি এখানে এখনও ?
– ঘুম কেমন হলো , শরীরের কি অবস্থা এখন ?
– নাফিস আমি প্রশ্ন করেছি , তুমি এখনও এখানে কি করছো ? অফিসে যাবে না ? আর কাল রাতে এখানে ছিলে ?
– এখানে আছি তোমাদের জন্যে । অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি একদিন । কাল রাতে এখানেই ছিলাম ।
– কেন নাফিস ?
– তোমার শরীর ভালো না , তোমার দিন দুনিয়ার খবর থাকে নাকি জ্বর হলে ? তার উপর তোমার মা মানে আন্টিকেও বলো নি আসতে । তা আমি কিভাবে যাই , বলো তো ?

জুঁইয়ের মন যেনো আবার নাফিসের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে । কেন জানি মন আবারও বেহায়া হতে চাচ্ছে । নাফিস জুঁইয়ের কাছ থেকে সরে গিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে যায় । আর বলতে থাকে ,

– কাদম্বরী এক কাজ করো , ফ্রেশ হয়ে নাও । পরোটা বানিয়েছি আর তোমার ফেভারিট গাজর আর আলুর ভাজি । এক সাথে খাওয়া যাবে । আর তোমার যেটা সব থেকে বেশি প্রিয় আমার হাতের মালাই চা । সেটাও করেছি ।

নাফিসের কথায় চমকে গেলেও নিজেকে দমিয়ে রাখে জুঁই । শরীরে শক্তিও নেই যে দাঁড়িয়ে থাকবে । তাই নিজের শরীরটাকে রান্নাঘরের দরজার সাথে ছেড়ে দিয়ে হেলে দাঁড়ায় জুঁই । তারপর নাফিসকে উদ্দেশ্য করে বলে ,

– প্রিয় মানুষটাই যখন জীবনে নেই তখন প্রিয় খাবার গুলো আর নাই বা থাকলো ।

জুঁইয়ের কথা শুনে নাফিসের হাত সেখানেই স্তব্ধ হয়ে যায় । জুঁই কথাটা এমন ভাবে বললো , যে সব কিছুই ভেস্তে গেলো । নাফিস খুব দ্রুত জুঁইয়ের সামনে দাঁড়ায় । জুঁইয়ের একদম কাছে চলে আসে নাফিস ।

– একবার অপরাধ করেছি বলে কি আরও একবার সুযোগ দিয়ে ভালোবাসা যায় না আমায় ?
– আমি তো আমার মাঝেই নেই । ভালোবাসবো কি ? এখন আর সেই সুযোগ টাও নেই , তুমি যাকে ছেড়ে গিয়েছিলে সে একজন কুমারী ছিল । আর এখন যাকে আপন করতে চাইছো সে এক বাচ্চার মা ।

কথাটা বলে জুঁই পেছনে ফিরে রুমে যেতে নিলে নাফিস জুঁইকে পেছন থেকেই জড়িয়ে ধরে । নাফিসের স্পর্শ পেয়ে জুঁই কেঁপে ওঠে । নাফিস এইভাবে তাকে জড়িয়ে ধরবে ভাবে নি সে ।

– নাফিস ছাড়ো আমায় ।
– চুপ ,,,
– নাফিস , ছাড়ো আমায় , বলছি ছাড়ো ।
– নাহ ,,
– তুমি এই মুহুর্তে আমার কাছে পর পুরুষ । তোমার স্পর্শেও পাপ হবে আমার ।
– চুপ করতে বলছি । তুমি আমার কাছে আগে যেমন আমার কাদম্বরী ছিলে এখনও সেই কাদম্বরীই আছো ।

এই বলে নাফিস জুঁইয়ের ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে চুমু দিয়ে জুঁইকে ছেড়ে দেয় । নাফিসের ঠোঁটের স্পর্শে জুঁই আরও কাবু হয়ে যায় । পেছন থেকে নাফিস আবারও বলে উঠে ,

– ফ্রেশ হয়ে আস্তে আস্তে ইফসিকে ডাকো , দেখো উঠে কিনা । যাও ,

নাফিস আগেও জুঁইকে এমন শাসন করতো আর এখনও করে ঠিক আগের মত । কিন্তু সময়টাই আর আগের মত নাই ।

দুপুরের দিকে সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে জুঁইকে মেডিসিন বুঝিয়ে দিয়ে ইফসিকে খাইয়ে দিয়ে নাফিস বাসা থেকে চলে যায় । যাওয়ার আগে দরজা অবদি এগিয়ে আসে জুঁই । আর নাফিস সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় । দরজার কাছে এসেই চট করে জুঁইকে জড়িয়ে ধরে সে । জুঁইয়ের মন যেন আরও দুর্বল হয়ে যায় , নাফিসের স্পর্শ তার শরীরে পড়া মাত্র নিজেকে আবার নতুন করে আবিষ্কার করে জুঁই । তবুও অতীতের কথা মনে পড়লে নিজের মনের মধ্যে যেন কেউ ছুরি চালাচ্ছে । তাই জুঁই নিজ থেকেই বলে দেয় ,

– বার বার এভাবে আমায় কেন জড়িয়ে ধরছো নাফিস ? আমি তোমার প্রাক্তন , তুমি আমার প্রাক্তন ।
– মানি না ,
– কোনটা মানো না , সব তো নিজের হাতে শেষ করে দিয়েছো ।
– কিন্তু ফিরেও এসেছি ।
– কখন এলে , যখন ফিরে আসার কথা ছিল তখন তো ফিরে এলে না । কথা তো দিয়েছিলে ফিরবে ।
– ফিরে তো এসেছি ,
– সময় টা আর নেই ।

নাফিস জুঁইকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয় । তারপর জুঁইয়ের দুই গালে নিজের দুই হাত রাখে । তারপর জুঁইয়ের আরও কাছে চলে আসে সে ।

তুমি মোর প্রাণ বীনা
মোর স্বপনে আছো মিশিয়া
দূরে সরিয়ে রেখেছিলেম তোমায়
তবে সদা ছিলে মনতে প্রিয়া
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি
আমি যে তোমায় ভালোবাসি
যত দূরে ছিলে তুমি মোর থেকে
তত কষ্টে রেখেছি আমি নিজ আমাকে
একটা কথাই বলবো তোমায়
ওগো আমার কাদম্বরী
শুনতে পাচ্ছো তুমি
হ্যাঁ গো আমি তোমাকেই ভালোবাসি

কাব্যটা বলে নাফিস জুঁইয়ের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে এক পা পিছনে দিয়ে আবার ঘুরে তাকায় জুঁইয়ের দিকে । তারপর বলে যায় ,

– রেডি থেকো তুমি কাদম্বরী , আমি এই সাদায় রাখবো না তোমায় । রাঙা শাড়িতে তোমায় তোমায় রাঙিয়ে আমার মনের রানী করে নিয়ে যাবো তোমায় কাদম্বরী ।

এই বলে নাফিস চলে যায় । আর জুঁই সেথায় অবাক নয়নে নাফিসের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয় ।

.
.

চলবে…………………..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here