কথা দিয়েছিলে ফিরবে পর্ব ১৫

#কথা_দিয়েছিলে_ফিরবে
#পর্ব_১৫
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

অফিসে পা রাখতেই জুঁইয়ের চোখে পড়ে , অফিসের স্টাফরা তাকে দেখে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করা শুরু করে দিয়েছে । ওদের তাকানোর স্টাইলই বলে দিচ্ছে নিশ্চয়ই ওরা কিছু জানতে পেরেছে নয়তো কিছু বুঝতে পেরেছে । জুঁই সোজা নিজের কেবিনে গিয়ে বসে । মনে মনে তার একটাই সংকা , হঠাৎ তাকে দেখে সবার এমন রিয়েকশন কেন ।

একটু পরেই মোহি ফাইল নিয়ে রুমে আসে ।

– ম্যাডাম আসবো ?
– জ্বি আসুন ।
– ম্যাডাম এটায় সাইন লাগবে ।
– আচ্ছা ,

জুঁই সাইন করছিল আর তখন মোহি হাত কচলাচ্ছে । মোহির হাত কচলানো দেখে জুঁই বুঝে যায় সে কিছু বলতে চাচ্ছে ।

– আপনি কি কিছু বলবেন মোহি ?
– না মানে আসলে ম্যাডাম ,
– বলুন কি বলবেন ?
– না মানে সবাই বলছিল ,
– কি বলছে সবাই ?
– না মানে ম্যাডাম৷, নাফিস স্যার,,,,,,,,,,,,

তখনই জুঁই বুঝে যায় ঘটনা কোথায় গিয়ে গড়িয়েছে । সাথে সাথে জুঁই ফাইল মোহির দিকে এগিয়ে দেয় ।

– সাইন করা শেষ , নিয়ে স্যারের রুমে যেতে পারেন ।
– জ্বি ম্যাডাম ।

যাওয়ার সময় মোহি ইফসিকে আদর করে যায় । দরজার কাছে গিয়ে একবার জুঁইয়ের দিকেও তাকিয়ে যায় । মোহি মাথাতেই আনতে পারে না ঘটনার সূত্র কোথা থেকে আর অফিসে এইসব নিয়ে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করা স্টাফরাই বা এইসব কোথায় পায় । মোহির কাছে জুঁই একজন আদর্শ নারী যে কিনা একা একজন মেয়ে মানুষ হয়ে নিজে এবং তার বাচ্চাকে নিয়ে সার্ভাইব করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত । সেই আদর্শ নারীর নামে এত লো ক্লাস ম্যান্টালিটির কথা একেবারেই বেমানান । তবুও মোহির কেন জানি মনে হচ্ছিলো কিছু তো আছে , কিছু তো আছে যা লুকায়িত । কারণ সব মিথ্যা হলেও চোখ মিথ্যা হয় না । আর সেদিন পার্টিতেও মোহি দেখেছিল নাফিসের সাথে জুঁইকে যেতে । তার জন্যই সব হিসেব যেন মিলেও মিলছে না তার কাছে । কথা না বাড়িয়ে সেদিনকার মত মোহি জুঁইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে যায় ।

অন্যদিকে নাফিসও বুঝে গেছে অফিসে কিছু তো একটা চলছে । নাফিসকে দেখলেও স্টাফরা একটু আধটু আলাপ আলোচনা করে । অবশ্য তা নাফিসের অগোচরেই যা নাফিসের চোখে অনায়াসে লাগে । তবে নাফিস অনেকটা এক ঘেয়ে হয়ে গেছে । সব কিছুতেই সে ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখায় । তার কাছে সব থেকে important হচ্ছে সে নিজেই । কিন্তু নাফিস ভুলে যাচ্ছিলো যে সমাজ বলেও কিছু একটা থাকে । আর সে সেই সমাজেই বসবাস করা এক নাগরিক । যা তার কাছে সহজ মনে হয় আসলে কিন্তু তা সহজ নয় ।

লাঞ্চ আওয়ারে জুঁই ক্যানটিনে পা রাখবে তখনই তার কানে কিছু আসে । ভেতরে কয়েকজন ফিমেইল স্টাফ বলাবলি করছিল ,

– যা বলছি একদম ঠিক বলছি ।
– তুমি কি করে বুঝলে ?
– না বুঝার কি আছে , দেখো না তোমরা স্যার ইফসিকে নিয়ে কি করে । আর স্যার নাদিরা ম্যাডামের দিকে কেমন করে তাকায় ।
– হ্যাঁ তা তো দেখিই ।

এদের মাঝে আরেকজন বলে ওঠে ,

– আমি তো আরও কিছু দেখেছি ।
– কি দেখছো তুমি আবার ?
– স্যার কিন্তু ম্যাডামের বাসায় যায় ।

তখন সবাই এক সাথে বলে ওঠে ,

– কিহহহহ ,
– হ্যাঁ , স্যার ম্যাডামের বাসাতেও যায় , থাকেও ।
– তুমি জানলা কিভাবে ?
– ম্যাডামের পাশের ফ্ল্যাটেই আমার খালার বাসা । সেদিন আমি খালার বাসাতেই ছিলাম । স্যারও আসছে আর আমিও দরজা খুলছি তখনই দেখছি ।
– ম্যাডাম জানে না ওটা যে তোমার খালার বাসা ।
– নাহ , কখনো দেখাই হয় নাই ।
– ম্যাডাম কিন্তু চুপ চুপ করে থাকে অথচ তলে তলে তার কত কিছু চলে ।
– তা নয়তো কি , আর নাফিস স্যার উনিই বা কেমন । দেশে কি মেয়েদের আকাল পড়েছে নাকি , গেছে এক বাচ্চার মায়ের কাছে ।
– আরে পুরুষের নজর , কতই বা ভালো হবে আর । থাকতে পারলেই চলে । বিছানা অবদি যাবে , কাজ শেষ তো তার পরদিন বলে হু ইজ সি ?

তারপর সবাই মিলে সেখানে হেসে দেয় । তাদের মাঝে অন্যজন বলে ,

– তবে কিন্তু বুঝা যায় না যে উনি এক বাচ্চার মা । বডি ফিট আছে , দেখতে আমাদের থেকেই ইয়াং লাগে ।
– এটাই তো ওনার প্লাস পয়েন্ট ।
– মাহবুব স্যার যদি বিবাহিত না হতেন হয়তো মাহবুব স্যারও ফেসে যেতেন ।

তারপর আবারও সবাই হেসে দেয় । আর এদিকে জুঁইয়ের কলিজা ফেটে যাচ্ছে । যেই স্টাফরা তাকে দেখলে সম্মানের সহিত ম্যাডাম বলে মাথা নিচু করে থাকে আজ সেই স্টাফরাই তার অগোচরে তাকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করছে । পরিস্থিতি আজ কোথায় এসে ঠেকেছে । এরা যখন জানে তখন তো তাহলে পুরো অফিসই জানবে এইসব । জুঁই পারে না সেখানেই চিৎকার করে কাঁদে । তখন শুধু মন থেকে একটা কথাই বেরিয়ে আসে । আর তা হচ্ছে ,

– এইসব কিছুর জন্যে একমাত্র নাফিস দায়ি । আমার সব কিছু শেষ করে দিয়ে আমায় একা করে ফেলে গেছিলো । আবারও এসেছে ফিরে আমার সম্মানটুকু শেষ করতে ।

সেখানে আর এক মিনিটও দাঁড়ায় নি জুঁই । সোজা নাফিসের রুমে ঢুকে যায় জুঁই । চোখে তার অঝোর শ্রাবণ । যেন থামার নাম নেই তার । পাগলের মত অবস্থা , মনের মাঝে কি চলছে তা একমাত্র সেই কেবল জানে ।

নাফিস তখন ফাইল ঘাটছে । জুঁই সোজা রুমে গিয়ে নাফিসের হাত থেকে ফাইল টা ছিনিয়ে নিয়ে নিচে ফেলে দেয় । জুঁইয়ের এম্ন আচরণে অনেকটা অবাক হয়ে যায় নাফিস । কারণ আর যাই হোক জুঁই কখনো এতটা বেয়াদবি করে না । তখন নাফিস তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় । জুঁই তখন অশ্রুসিক্ত চোখে নাফিসের পানে চেয়ে আছে ।

– কি হয়েছে , এমন করলে কেন ?

জুঁই তখনও অত্যন্ত সভ্যতার সাথে তাকিয়ে আছে নাফিসের দিকে । অন্যদিকে নাফিস তার কাদম্বরীর চোখে পানি দেখে পুরাই অবাক । না চাইতেও কেন জানি বুকটা তারও ফেটে যাচ্ছে তখন ।

– কি হয়েছে জুঁই ?
– বলেছিলাম না দূরে থাকতে , বলেছিলাম না আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকতে ।
– হয়েছে কি ?
– কেন আমায় সবার সামনে ছোট করলে ? আমি তো বেশ আছি আমার যন্ত্রণা গুলোকে আঁকড়ে ধরে । বেশ তো আছি আমার মেয়েকে নিয়ে । কেন এলে নাফিস আবার । দূরে যখন চলেই গেছো ফিরে কেন এলে ।
– কেউ কিছু বলেছে ?
– দেশে কি মেয়েদের আকাল পড়েছে নাকি তুমি এক বাচ্চার মায়ের কাছেই কেন এলে নাফিস ?
– জুঁইইইইইই !!
– চিৎকার করে লাভ আছে ? সবাই এটাই বলছে । তুমি আমার বাসায় যাও এটা সবাই জানে নাফিস । সবাই ভাবছে আমি তোমার সাথে,,,,,। আমাদের মাঝে কোন অবৈধ সম্পর্ক আছে । আর কত ছোট হতে হবে আমাকে । আর কত নিচে নামাবে সবার সামনে নাফিস ?
– কে বলেছে এইসব , বলো কে বলেছে ?
– যেই বলে থাকুক না কেন ? কথাটা তো সত্যিই ।
– যে এইসব বলেছে তার জিব টেনে ছিড়ে নিবো আমি ।
– অনেক হয়েছে নাফিস , অনেক হয়েছে । আমি একা আছি , বেশ আছি । ফেলে যখন গেছিলে তখন যখন আমার ভবিষ্যত ভাবো নি এখন কেন এতটা সময় পর আমার ভবিষ্যত ভাবতে হবে তোমাকে । যখন পায়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম , তখন তো তোমার কষ্ট হয় নি । তবে আজ কেন আমার কান্নায় তোমার মন ভাঙে নাফিস ।

জুঁইয়ের কথায় আজ আর উত্তর দিতে পারে না নাফিস । আজ যে তার কোন উত্তর নেই । ঠিকই তো , আজকে জুঁই ভুল কিছু বলছে না তো ? সব তো সঠিক কথাই বলেছে সে । তাহলে আজ কেন নাফিসের ভেতরের সব কিছু গুড়িয়ে যাচ্ছে । তখন জুঁই আবারও বলে ওঠে ,

– আমার ভাগ্য এত খারাপ কেন , বলতে পারো নাফিস ? কেন এত খারাপ আমার ভাগ্য । আমি অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে ফেললাম , তারপর তোমাকে ভালোবেসেও হারাতে হলো , ভাগ্য আর বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বিয়ে করে অন্যের ঘরে গেলাম সেখানেও শান্তি মেলে নি । ফারুকটা যেমনি ছিল , আমার জীবন সাথী তো হয়েছিল তাকেও হারাতে হলো । আমার জন্যে নাকি তারা ছেলে হারিয়েছে এই অপরাধের জন্য আমাকে আর আমার ৮ মাসের বাচ্চাটাকে বের করে দেয় বাসা থেকে । জীবনের সাথে প্রতি মুহুর্তে লড়াই করতে হয়েছে আমায় । একদিকে অফিস অন্যদিকে বাচ্চা , উফফফফ কি দুঃসহ স্মৃতি সেইসব যা আজও তাড়া করে বেড়ায় আমায় । ঢাকা ট্রান্সফার হয়ে এলাম । ভাই ভাবী ধরে নিলো তাদের সংসারে আমরা মা মেয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসেছি । নিজের বাবার বাড়ি থাকতে একই শহরে মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকতে হচ্ছে আমাকে । আমার তাহলে শান্তি কোথায় ? অসময়ে আবার তুমি আমার শহরে পা দিলে যখন আমি আর একা নেই । এরপরেও নিজেকে বিকিয়ে দেয়নি কারো কাছে । এখন কিনা শুনতে হয় আমি খারাপ চরিত্রের নারী । তাও আবার তোমারই জন্যে , কেন নাফিস কেন ?

নাফিস তখন জুঁইয়ের সব কথা গুলো মন দিয়ে শুনে নেয় । ডেস্কের উপর দুই হাত ভর দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে নাফিস । জুঁই অনবরত কেঁদে যাচ্ছে । তখন জুঁই আবারও বলে ওঠে ,

– আমি তোমার দুটো পা ধরি নাফিস , দয়া করে দূরে থাকো । আমার আর আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকো । না হয় আমি আর আমার মেয়ে এমন কোথাও চলে যাবো যে তুমি দেখতেও পাবে না । মনে রেখো এই কথাটা ।

এই বলে জুঁই চলে যেতে নিলে নাফিস খপ করেই তার হাতটা ধরে নেয় । তারপর এক টানে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে সে জুঁইকে ।

– কে কি বলেছে ?
-……………
– বলো , কে কি বলেছে ? আর হ্যাঁ কারো কথায় তো আমি এখন আর কিছু করবো না । বিগত তিন বছর আগে একজনের কথা শুনে বলি দিয়েছিলাম নিজের ভালোবাসাকে , বলি দিয়েছিলাম নিজের হাসি আনন্দকে । বহুত হয়েছে । আর না , এইবার যা করবো সব নিজের মত করে করবো । বলো কে কি বলেছে ।
-…………….

জুঁই তখনও চুপ করে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে । এমতাবস্থায় ,

– ক্যান্টিনে বসে কয়েকজন স্টাফ এইসব নিয়ে আলোচনা করেছে , সেই মুহুর্তে ম্যাডামও সেখানে গিয়ে সব টা শুনে নেয় স্যার ।

নাফিস আর জুঁই কারো কন্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকায় । সেখানে মোহি দাঁড়িয়ে ছিল । তখন মোহি আরও কিছু কথা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে যায় ।

– সরি স্যার , সরি ম্যাডাম আমি আপনাদের বিনা পারমিশনে আপনাদের সব কথা শুনে নিয়েছি । খুব কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করুন । আর স্যার কিভাবে পারলেন এই মোমের পুতুলের মত একজন মানুষকে এইভাবে কষ্ট দিতে ?
– মোহি আপনি এখানে ?

জুঁইয়ের প্রশ্নের উত্তরে মোহি আবারও বলে ওঠে ,

– আপনি আমার কাছে আইডল ম্যাডাম । যে নারী প্রতিকূলতা ডিঙিয়েও নিজেকে আর নিজের মেয়েকে নিয়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত লড়াই করে যাচ্ছে সে নারী আর যাই হোক খারাপ চরিত্রের না । স্যার ওরা ক্যান্টিনে আপনাকে আর ম্যাডামকে নিয়ে বাজে বাজে কথা বলেছে । তখন ম্যাডামের পিছনে আমিও ছিলাম । ম্যাডাম এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে আমাকে খেয়ালই করেন নি । মাহবুব স্যার নেই । নয়তো আমি সরাসরি স্যারের কাছেই যেতাম । তাই ভাবলাম আপনাকে এসে বলি কিন্তু এখানে এসে আমি যা শুনলাম নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না । কিভাবে পারলেন স্যার এই মানুষটাকে ঠকাতে ?
– মোহি , আপনি এখন যান । কাজ করুন গিয়ে ।

এই কথা বলে জুঁইও চলে যেতে নিলে নাফিস মোহির সামনেই হাতটা আরও শক্ত করে ধরে রাখে জুঁইয়ের । তার পর পরই নাফিস মোহিকে উদ্দেশ্য করে বলে ,

– মিস মোহি , জীবনের একটা ভুলই কি সব কিছু নষ্ট করে দিতে পারে ? আমি মানি আমি খুব খারাপ একটা কাজ করেছিলাম তাই বলে কি আমি তা সুধরাতে পারবো না ?
– আপনার একটা ভুল যে এই মানুষটাকে কোথায় নিয়ে দাড় করিয়েছে তা কি বুঝতে পারেন স্যার ?
– পারি বলেই এই হাতটা আর ছাড়তে চাইছি না ।
– এইভাবে কিছুই হবে না স্যার , উল্টো ম্যাডাম সবার কাছে খারাপ প্রমাণিত হচ্ছে দিন দিন । যদি সত্যিই নিজের ভুলটুকু বুঝতে পারেন তাহলে ম্যাডামকে সম্মানের সহিত নিজের করে নিন । আপন করে নিন তাকে । ইফসির মাথার উপর বাবার ছায়া হয়ে দাঁড়ান । ম্যাডামের এই ফিকে রঙ বদলে রঙিন রঙে রাঙিয়ে দিন তাকে ।

মোহির কথা শুনে আরও অবাক হয়ে যায় জুঁই । সে যেই জিনিসটা মাটি চাপা দিতে এখানে এসেছে সেই জিনিসটা মোহি আরও প্রকাশ্য করে দিতে চাইছে ।

– মোহি মাথা ঠিকাছে আপনার ? না জেনেই এইসব বলছেন আপনি
– ম্যাডাম সবটা শুনে , নিজের মত করে বুঝেই এই কথা গুলো বললাম যাতে বাহিরে যারা আপনাকে আর স্যারকে নিয়ে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছে তাদের এইসব বন্ধ হয়ে যাক ।

মোহির কথায় নাফিস জুঁইকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয় । তারপর জুঁইয়ের হাতটা আলতো করে ধরে সে । সোজা জুঁইকে নিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে । জুঁই পুরাই অবাক , তাদের পিছনে পিছনে মোহিও যায় । আজকে হয়তো কিছু একটা করে ফেলবে নাফিস ।

ক্যান্টিনে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নাফিস । নাফিসকে এইভাবে দেখে সবাই ভড়কে যায় । সাথে জুঁইকে দেখে আরও ভড়কে যায় । সেই ৪/৫ জন তখন কথা বলছিল তারাও সেখানেই ছিল । সবার নজর নাফিসের হাতের দিকে । সে জুঁইকে ধরে রেখেছে । তারপর নাফিস বলা শুরু করে ,

– এইসব গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করা বন্ধ করুন । অফিসে কেন আসেন ? নিশ্চয়ই নিজের কাজ কর‍তে । কাজ রেখে অন্যদের নিয়ে এত মাতামাতি কিসের জন্য ? আর হ্যাঁ , ফিমেল স্টাফরা , নিজেরাও তো মেয়ে । নিজে একজন মেয়ে হয়ে অন্য একজন মেয়েকে নিয়ে এত কিসের কথা । এর বয়সে এ যা করেছে না তার ১ ভাগও কেউ করেন নি এখানে । আর হ্যাঁ , এর সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক নেই । খুব শীঘ্রই আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবো । আর হ্যাঁ , পৃথিবীতে মেয়েদের আকাল পড়েনি । আকাল পড়েছে এর মত মেয়ের । আর এই দুর্মূল্যের বাজারে এর মত নারীকে আমি কিভাবে আমার থেকে দূরে রাখি বলেন ? তিন বছর আগে করা ভুল টা না হয় তিন বছর পরেই ঠিক করলাম । আর হ্যাঁ , নেক্সট টাইম এই অফিসে শুধু আমাদের নিয়ে কেন অন্য কাউকে নিয়ে কেউ গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করবেন না । যে বা যারা করবেন তাকে এখান থেকে ছুড়ে ফেলে দিতে আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না । এক্ষেত্রে আপনাদের মাহবুব স্যারও কিছুই করতে পারবে না আপনাদের জন্যে । কথাটা মাথায় রাখবেন প্রত্যেকে ।

নাফিসের এমন কথায় সমস্ত স্টাফরা একদম চুপ মেরে যায় । সবার সামনে থেকে নাফিস জুঁইকে নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে । মোহি সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হালকা মুচকি হাসি দিয়ে বের হয়ে যায় ।

জুঁই যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে । নাফিসকে কি বলবে কিছুই মাথায় আসছে না তার । নাফিস সবার সামনে ডিক্লেয়ার করে দিয়েছে সে তাকে বিয়ে করবে । কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব । নাফিস সোজা জুঁইকে নিয়ে জুঁইয়ের কেবিনে যায় । সেখানে গিয়ে জুঁইয়ের হাত ছেড়ে দেয় সে । উন্মাদের মত এপাশ ওপাশ হাটাহাটি করে । নাফিসের এমন আচরণে জুঁই চুপ করে মাথা নিচু করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে । কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে নাফিস এসে জুঁইকে জড়িয়ে ধরে । তারপর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে ।

– এই কাদম্বরী , আমি ভালোবাসি তোমায় । তুমি বুঝেছো আমার কথা ? আমি ভালোবাসি তোমায় । অনেক ভালোবাসি । ছেড়ে দিয়েও ভালোবেসে গেছি আর এখনও ভালোবাসি । ফিরিয়ে দিও না আমায় । আমি ফিরে এসেছি তোমার কাছে । আমায় আঁকড়ে নেও তোমাতে কাদম্বরী , আমায় আঁকড়ে নেও তোমাতে ।

জুঁই আর শান্ত থাকতে পারে নি । দুই হাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে নাফিসের শার্ট । নাফিসের বুকের মাঝে মাথা রেখে চাপা স্বরে কেঁদে দেয় জুঁই । আজ জুঁই কাঁদকাঁদছে , অনেক কাঁদছে । তার ভালোবাসাকে সে আর আটকে রাখতে পারে নি । দুজনের এমন মিলনে ছোট ইফসিটা টুক টুক করে চেয়ে আছে । এ যেন এক অসম্পূর্ণ মিলনের সম্পূর্ণতা । এ যেন হাজারো তৃষ্ণার পর এক পরিপূর্ণতা । তখন জুঁইও বলে ওঠে ,

– আর পারলাম না , পারলাম না আমি আর । ভালোবাসি তোমাকে আমি । হ্যাঁ নাফিস ভালোবাসি তোমাকে আমি ।

জুঁইয়ের এমন কথায় জুঁইকে আরও শক্ত করে নিজের মাঝে চেপে ধরে নাফিস । আর বাচ্চা ইফসিটা মায়ের কান্না দেখে নিজের ঠোঁটটাও ফোলাতে থাকে । তার চোখেও পানি এসে জমে গেছে । হয়তো একটু পরেই ভ্যা করে কেঁদে দিবে বাচ্চাটা ।।

.
.

চলবে……………………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here