কাঁটায় লেখা ভাগ্য পর্ব -০৯+১০ শেষ

#কাঁটায়_লেখা_ভাগ্য
পর্ব—০৯+১০ (শেষ পর্ব)
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—আরে বাহহহ!
এতোদিন আমার মনের মতো কাজ করেছিস তুই,তোকে আমার তরফ থেকে কি উপহার দেবো বুঝতে পারছি না আমি।

এই বলে দুজনেই খিলখিল করে হেসে উঠলো।আম্মার বলা শেষ কথাটা মনে পড়ে গেলো আমার।তাকগীর ভাইজানের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে সেই কথাটাই ভাবছি।

—তাকদীর সবথেকে বড়ো ধোঁকাবাজ!

এখন বুঝতে পারছি আম্মা কেনো কথাটা বলেছিলো আমায়….

—তাকদীর ভাইজান তুমি শেষ পর্যন্ত এইভাবে ঠকালে আমায়।ছলনা করলে আমার সাথে?

—আমায় ক্ষমা কর মান্নাত এটা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না আমার।আমি আমার প্রভুর আদেশ পালন করেছি।

—ইনি তোমার প্রভু?

–হ্যাঁ ওনার এক সামান্য গোলাম ছাড়া কিছুই নয়।তুই এতোদিন যাদের যাদের নিজের শত্রু ভেবে এসেছিস কেউ তোর শত্রু নয়।তোর আসল শত্রু ছিলাম আমি,আর এখনও আছি।

—না এটা হতে পারে না,আমি বিশ্বাস করি না তোমার কথা…

–তোর আমার কথা বিশ্বাস করতে হবে না।শুধু একটা কথা মনে রাখ আজ থেকে এখানেই পঁচে গলে মরতে হবে তোকে।আর কেউ তোকে বাঁচাতে আসবে না।

তাকদীর সেই লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।

—এবার তাহলে আমায় আমায় কর্তব্য থেকে মুক্তি দিন,আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই।

—চলে যাবি মানে,কোথায় চলে যাবি তুই?

—আমি আমার জ্বীনরাজ্যে ফিরে যাবো।সেখানে সবাই আমার জন্য প্রতিক্ষা করছে…

—কিন্তু তোর যে এখন কোথাও যাওয়া হবে না?আমার যে অনেক কাজ করানোর বাকি তোকে দিয়ে।

—ক্ষমা করবেন।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আর কোনো মানুষের গোলামি করবো না।আমায় আমায় স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন,

—মুর্খ জ্বীন।তোকে আজীবনের জন্য আমার বশ্যতা স্বীকার করে থাকতে হবে।আর এটাই তোর নিয়তি।যদি আমার কথা না শুনিস এর পরিনাম কি ভয়াবহ হতে পারে তুই ভাবতেও পারছিস না।

—আমার কিছুই জানার প্রয়োজন নেই।আমি চলে যাচ্ছি নিজের রাজ্যে।আপনি ভালো থাকবেন।

এরপর আবার সামনে যা ঘটলো তা আরোও বিস্ময়কর।তাকদীর ভাইজান তার হাতদুটো প্রসারিত করতেই দু’টো ডানা বেরিয়ে আসলো তার দুপাশ থেকে।আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।সে তার বিশাল ডানায় ভর করে উড়ে যেতেই লোকটা পেছন থেকে তার ডানাটা চেপে ধরে এরপর তাকে আছড়ে মাটিতে ফেলে দে।লোকটা এগিয়ে গিয়ে তাকদীর ভাইজানকে পা দিয়ে পিষে ধরলো।

—তোদের জন্মই হয়েছে মানুষের গোলামী করার জন্য,কি ভেবেছিস আমার একটা কাজ করে এতো সহজে মুক্তি পেয়ে যাবি আমার থেকে।এরপর অন্য কাউকে আমার জন্য জোগাড় করে আনতে হবে তোকে,যে কিনা এই মান্নাতের থেকেও আরোও বেশী সুন্দরী।যাকে দেখে আমার মনের লোভ আর লালসার আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে।আর সেই আগুনে আমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবো তাকে।

—তুমি আমায় মেরে ফেললেও আর কোনো অন্যায় করাতে পারবে না আমার থেকে।আর এটা ভুলে যেও না তুমি সাধারণ এক মাটির তৈরী আর আমি আগুনের তৈরী।

–নিজের শক্তি নিয়ে বড়াই করছিস,দেখ এবার এই মাটির শক্তি।আমি কি করি তোর দেখ শুধু।

তাকগীর ভাইজানকে মন্ত্রপূত সুতো দিয়ে একটা খুঁটির সাথে বেঁধে দিলো লোকটা।তাকদীর ভাইজান নিজেকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

—এই সুতোটা শুকানোর সাথে সাথে তোর এই আগুনের তৈরী শরীর শুকোতে থাকবে…সেদিন এই সুতোটা সম্পূর্ণ ছিড়ে যাবে ভাববি তোর সেদিনই এই দুনিয়ার তোর শেষ দিন।নিজের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা কর।

এরপর লোকটা আমায় জোর করে টেনে নিলো গেলো।একটা ঘরের ভেতরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিলো।হঠাৎ আমার মাথায় আসলো তাকদীর ভাইজানের দেওয়া সেই শিশিটা আমার কাছেই আছে।আর সেই শিশির ভেতরে বন্দী অবস্থায় আছে নকল মান্নাত।ও আমার যতোই ক্ষতি চাক না কেনো,তাকদীর ভাইজানকে ভালোবাসে এটা তো সত্যি।এই মুহুর্তে তাকদীর ভাইজানকে বাঁচানোর আর কোনো রাস্তা নেই আমার কাছে।শিশিটা বের করে তার ছিপিটা খুলে দিলাম।একটু পরেই তার ভেতর থেকে নকল মান্নাত বেরিয়ে আসে।ধীরে ধীরে তার ক্ষুদ্র শরীর আগের আকারে ফিরে আসে।আমি তাকে কিছু বলে ওঠার আগেই সে আমায় বলে উঠলো।

—আর কিছু বলতে হবে না আমায়,আমি সব দেখতে পেয়েছি।

—তুমি সব দেখেছো?

—হ্যাঁ।তাকদীরকে এই শয়তান তান্ত্রিকটা আঁটকে রেখেছে তাই তো?

—হ্যাঁ…
আমি বুঝতে পারছি না আমি কিকরে তাকে মুক্ত করবো,কিকরে সাহায্য করবো তার।

—তাকদীর তো ধোঁকা দিয়েছে তোকে,এরপরেও ওকে সাহায্য করার কথা ভাবছিস কিকরে?

—আমি জানি না কেনো তার জন্য এতো অস্থির লাগছে আমার।শুধু এইটুকু জানি তাকে এই বাজে অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে তারপর যা হবার হবে।

—তোর হিম্মত আছে বলতে হবে,মনে হচ্ছে সত্যিই খুব ভালোবাসিস তাকদীরকে।আমিও হয়তো ওকে এতোটা ভালোবাসতে পারি নি।নয়তো নিজের আসন্ন বিপদের কথা জেনেও তুই আমায় মুক্ত করার কথা ভাবতে পারতি না।

—এসব ছেড়ে তাকদীর ভাইকে কিভাবে মুক্ত করবো সেটা তো বলো…

—তোর আম্মা ছাড়া এই কাজ কেউ করতে হবে না।এই কাজ আমিও করতে পারবো না।

—তুমি কি বলছো এসব,আম্মা আমাদের সাহায্য কেনো করতে যাবে,উনি শুধুই ক্ষতি চান আমাদের।

—ভুল জানিস তুই!তোর মা কখনোই কোনো ক্ষতি চায়নি তোর,উনি যা করেছে তোর ভালোর জন্যই করেছে।

—তুমি আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে না একদম।আমার আব্বাকে খুন,আমাকে আসিফ সাহেবের সাথে বিয়ে দেওয়া,জ্যান্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করা এগুলো কি এমন ভালোর জন্য হতে পারে বলতে পারো?

—হ্যাঁ আমি জানি।তোর আব্বাকে খুন তোর আম্মা এই জন্য করেছিলো যাতে যে তোকে এই শয়তানের হাতে তুলে দিতে না পারে।

—কি বলছো কি তুমি এগুলো?
আমি অবাক হয়ে নকল মান্নাতকে প্রশ্ন করি।

—তোর আব্বাও এই শয়তান তান্ত্রিকের সঙ্গী ছিলো।ও এই শয়তানকে কথা দিয়েছিলো নিজের মেয়েকে তুলে দেবে ওর হাতে।এটা জানার পরে তোর আম্মা বাঁধা দেয় তাকে।কিন্তু সে কোনো বাঁধাই মানলো না,তোকে এই শয়তানের হাতে তুলে দেওয়ার আগেই এই দুনিয়া থেকে সরিযে দেয় তাকে।এরপর তোকে নিয়ে আসিফ শেখের কাছে যায়।আসিফ শেখ সাথে আগে থেকেই চুক্তিবদ্ধ ছিলো যে তোর আঠারো বছর হলেই বিয়ে করবে তোকে আর তুই একবার তার বাচ্চার মা হলে শয়তানটার কিছুই করার থাকতো না।কারণ ও শুধু আঠারো বছরের উর্ধ্বের কুমারী মেয়েদেরই বিয়ে করে আর তাদের সতীত্বনাশ ওর জীবনের একমাত্র ব্রত আর আনন্দ।তোর মা এইসমস্ত কথা মাথায় রেখেই আসিফ সাহেবের সাথে বিয়ে দেয় তোকে,এমনকি তোর সাথে তাকে ফুলসজ্জা করতে বলে।বাচ্চা জন্ম দেওয়ার কথা বলে।কিন্তু আসিফ শেখকে এই শয়তানটার হয়ে তাকদির এমনভাবে বশ করে সে তোকে নিজের মেয়ে ভাবতে শুরু করে দেয় শেষ পর্যন্ত আ*ত্ম*হ*ত্যা করতে বাধ্য হয়।

—সব বুঝলাম কিন্তু আম্মা আমায় মে*রে ফেলতে চেয়েছিলো কেনো?এটা তো বুঝিয়ে বলো আমায়।

—তোকে বাঁচানোর আর কোনো পথ ছিলো না তার কাছে।শেষ ভরসা আসিফ শেখ যখন মারা গেলেন আর তোর বয়স আঠারো পেরিয়ে যায়।ঠিক সেইসময় তাকদীরের প্রতিক্ষার অবসান ঘটে,ও প্রস্তুত হতে থাকে তোকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।তোর আম্মা চেয়েছিলো তোকে জ্যান্ত কবর দেওয়ার নাটক করে অন্য কোথাও সরিয়ে দিতে।যাতে তাকদীর সহ সবাই জেনে যায় তুই মারা গিয়েছিস,আর তোর পিছু ছেড়ে দেয়।এবার বুঝতে পেরেছিস তো কোনো গর্ভধারিণী মা নিজের মেয়ের সর্বনাশ করতে পারে না,মায়েরা সবসময় তার সন্তানের ভালোই চায়।

—হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি।আমার সমস্ত ভুল ভেঙ্গেছে।তুমি আমার সমস্ত ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছো।এবার দয়া করে এটা তো বলে তুমি কে?তুমি সত্যিই আমার ক্ষতি করতে চাও নাকি উপকার,আর এতো কিছু জানলে কিকরে তুমি?

—তাকদীর ভাইয়ের সাথে আমিও তোদের গ্রামে অদৃশ্য অবস্থায় ছিলাম।আমার নজর সর্বক্ষণ ছিলো তোদের ওপরে,

—আমি ভুলিনি তুমি সেদিন আমায় ভিড়ের ভেতরে ঠেলে দিয়ে আমার মৃত্যু কামনা করেছো,তাছাড়া তুমি তাকদীর ভাইয়ের সাথে খারাপ কাজ করতে চেয়েছিলে!

—আমায় ক্ষমা করে দে…আমি তোর ক্ষতি করতে চেয়েছিলাম একসময় এটা সত্যি।কিন্তু আজ তুই আমায় মুক্ত করে নিজের উদারতা আর ভালোবাসার যে পরিচয় দিয়েছিস আমি আপ্লুত।নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি আমি।এবার নে আমার আসল রুপ দেখ।

এই বলে নকল মান্নাত তার আসল রুপে ফিরে আসলো।

—-আমি পরী জগতের এক পরী।আমার নাম জান্নাত পারি।আমিও তাকদীর জ্বীনকে একসময় ভালোবেসেছিলাম।তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সে বারবার প্রত্যাখান করে আমায়,শেষে সে মানুষের গোলামী করা শুরু করে যা আমি মোটেও মানতে পারিনি।এই কারণে আমি ওর সাথে তোদের গ্রামে এসে থাকতে থাকি।

—আম্মার কাছে আমায় ক্ষমা চাইতে হবে।আমি তাকে ভুল বুঝে অনেক কষ্ট দিয়েছি।এবার তাকদীর ভাইকে মুক্ত করবো কিভাবে সেই ব্যবস্থা করো।

—আমি তোর আম্মাকে এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।এরপর ওর কি করি শুধু দেখ তুই।

এরপর জান্নাত পরি আম্মাকে ফিরিয়ে আনার জন্য এই গ্রামে চলে গেলো।এদিকে বদমায়েশ লোকটা এসে আমার ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো।আমায় টানতে টানতে তার কক্ষে নিয়ে যায়।আমি তাকে প্রশ্ন করি…

—আপনি কি করতে চাইছেন আমার সাথে?

—কি করতে চাইছিস বুঝতে পারছিস না?তোর সতীত্ব নাশ করবো আমি,একশো মেয়ের সতীত্ব নাশ করে আমি আমার সাধনা পূর্ণ করবো,

—যা খুশি করুন।দয়া করে দেখবেন আমার পেটের সন্তানের যেনো কোনো ক্ষতি না হয়…
(আমি বুদ্ধি করে তান্ত্রিককে এই কথাটা বললাম।কারণ সে শুধু কুমারী মেয়েদের সাথেই শারী*রিক সম্পর্ক করে।কিছুতেই আমাকে ভোগ করার জন্য নিজের সাধনা ভঙ্গ করবে না সে)

আমার কথা শুনে তান্ত্রিক বেশ অবাক হয়।

—কি বললি,তুই মা হতে চলছিস।কার সন্তানের মা হতে চলেছিস তুই?

—তাকদীরের….

—তাকদীর তোর সাথে এসব কবে করলো?

—আমাদের গ্রামে বসে।কেনো সেসব কথা আপনাকে কোনো বলবো আমি….

আমার কথা শুনে তান্ত্রিক রাগে গর্জে উঠলো।তাকদীর ভাইজানের কাছে ছুটে গেলো সে।এরপর তার গলাটা চেপে ধরে বলতে লাগলো।

—বিশ্বাসঘাতক….
আমি তোকে বিশ্বাস করে পাঠিয়েছিলাম নিজের কাজের জন্য।তুই এতো বড়ো ধোঁকা দিলি আমায়,আজ তো শেষই করে ফেলবো তোকে।
বল কেনো আমার জিনিসের ওপরে হাত দিয়েছিস তুই?আরেকটু হলেই আমার এতোকালের সাধনা মাটির সাথে মিশে যেতে চলছিলো।

তাকদীর ভাইয়ের ডানা কেটে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো তান্ত্রিক।আমার পক্ষে এই দৃশ্য দেখা সম্ভব হচ্ছে না,শুধুমাত্র আমার বলা মিথ্যার কারণে তাকদীর ভাইজানকে কষ্ট পেতে হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পরে জান্নাত পরি আম্মাকে নিয়ে এই তান্ত্রিককের আখড়ায় উপস্থিত হয়।আম্মার কাছে তান্ত্রিকদের শায়েস্তা করার উপায় জানা আছে।ঠিক এই ভয়েই তান্ত্রিক নিজেকে আম্মার থেকে লুকিয়ে রেখে নিজের পালিত জ্বীনকে দিয়ে কাজ করিয়েছে।আম্মা একটা তাবিজের ওপরে আগুন ধরিয়ে তান্ত্রিকের ওপরে ছুড়ে মারলো।মুহুর্তেই মাটিতে গড়াগড়ি খেতে খেতে ছটফট করতে লাগলো সে….

—এটা কি হচ্ছে আমার সাথে!কে এতো বড়ো সর্বনাশ করলো আমার,ছাড়বো না আমি কাউকে ছাড়বো না।

—নিজের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসেও তোমার অহংকার এতোটুকু কমেনি তান্ত্রিক?
আম্মা তান্ত্রিককে উদ্দেশ্য করে বললো।

—একি তুমি….তুমি এখানে কিকরে এলে?কে নিয়ে এলো তোমায় এখানে?

—তোদের মতো তান্ত্রিকদের শেষ করার উপায় আমি আমার তান্ত্রিক স্বামীর থেকেই শিখেছিলাম।ঠিক এইভাবেই মেরেছিলাম তাকে আজ তোকেও মারলাম।আর জানিস তো তোদের দুজনের একই অপরাধ।তোরা দুজনেই আমার মেয়ের ক্ষতি করতে চেয়েছিলি।

কিছুক্ষণের মধ্যে তান্ত্রিক ছটফট করতে করতে মারা যায়।আমি আম্মার কাছে ক্ষমা চাইলে আম্মা হাসিমুখে আমায় নিজের কাছে টেনে নিলো।এরপর তাকদীর ভাইজানকে মুক্ত করা হলো।তাকে নিয়ে আমরা সবাই আমাদের গ্রামে ফিরে যাই।জান্নাত পরী নিজের জায়গায় ফিরে গেলো।সে বুঝতে পেরে গিয়েছে তাকদীরকে কখনোই নিজের করে পাওয়া সম্ভব নয় তার জন্যে।কারণ তাকদীর যা করেছে ঐ তান্ত্রিকের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে করেছে,মায়াজাল কেটে যেতেই ভুল ভাঙলো তার।



একসপ্তাহ পরে।
একহাত ঘোমটা দিয়ে বাসরঘরে আমি তাকদীরের জন্য অপেক্ষা করছি।একটু পরে সে এসে আমার ঘরের ভেতরে ঢুকলো।আমার মাথার ওপর থেকে ঘোমটাটা সরিয়ে নিলো সে।

—তুমি কি সত্যিই আমায় ছেড়ে চলে যাবে তাকদীর?

—এই জায়গাটা যে আমার জন্য নয় মান্নাত,তাহলে আমি কেনো থাকবো এখানে…তাছাড়া জ্বীনরাজ্যে আমার পরিবার আছে,তারা যে অপেক্ষা করছে আমার জন্য।

—ওহহ…তার মানে আমি তোমার পরিবারের কেউ নই?

—মানুষ আর জ্বীন আল্লাহ তায়ালার আলাদা সৃষ্টি।আমাদের জগৎটাও আলাদা তাই আমরা কখনোই একসাথে থাকতে পারি না…এটা অসম্ভব…

—তাহলে আমি সারাজীবন কি আঁকড়ে বেঁচে থাকবো?

—কেনো,আমাদের সন্তানকে নিয়ে থাকবে।তাছাড়া আমি তো চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছি না,যখনই প্রয়োজন পড়বে আমি চলে আসবো তোমার কাছে।

—কসম কেটে বলো…

—আমি আমাদের অনাগত সন্তানের কসম কেটে বলছি তোমায় ভুলে যাবো না কখনো,সারাজীবন জ্বীনরাজ্যে থেকেই তোমায় আর আমাদের সন্তানকে আগলে রাখবো।

এরপর তাকদীর আমায় তার বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো।আমরা একে অপরকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে লাগলাম……

💙🌼 (সমাপ্ত) 💙🌼

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here