কাঁটায় লেখা ভাগ্য পর্ব -০১

—আব্বা এগুলো কি নোংরামি করতেছো তুমি আমার সাথে…আমি যে মেয়ে হই তোমার!

—চুপ কর!কিসের বাবা…আমি তোর নিজের বাপ নাকি…?

—নিজের বাপ যতোই না হও,তুমি আমার আম্মার স্বামী।আমি তোমারে নিজের আব্বার মতোই মনে করি…

—তুই আমারে নিজের বাপ ভাবলেও আমি কোনোদিন তোরে নিজের মেয়ে হিসেবে ভাবি নাই!তুই আমার কাছে যে কি জিনিস নিজেও জানিস না পাগলী…

—ছিহ!এগুলো কি বলতেছো তুমি পাগলের মতো।এই চিন্তা করার আগে মে*রে কেনো ফেললে না আমায়,আমি তোমার মুখ থেকে আর এগুলো শুনবার চাই না।

—তুই মরলে আমার কি হবে রে…আমি যে তোরে পাওয়ার আশায় দিন গুনে বসে থাকি!

এই বলে সে আমায় এক ধাক্কা মেরে বিছানার ওপরে ছুড়ে ফেলে।আমি তার কবল থেকে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করি,কিন্তু সে আমাকে এমনভাবে ধরে রেখেছে নড়তে পর্যন্ত পারছি না।অবশ্য এটাই প্রথম নয়,সপ্তাহে অন্তত তিন চারদিন আব্বা নামের এই জা*নো*য়ার লোকটার কবলে পড়তে হয় আমাকে।কিন্তু আল্লাহর রহমতে আজ অবধি সে আমার কোনো ক্ষতি করতে পারে নি।

কোনোমতে নিজেকে তার কবল থেকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম।তারপর দৌড় লাগালাম।দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে পুকুরপাড়ের পেয়ারা গাছটার পাশে এসে দাঁড়াই,তারপর হাঁফাতে থাকি।ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম না কেউ নেই পেছনে।এই জায়গায় একটু জিরিয়ে নেওয়া যাবে।

জিরিয়ে আবারও হাঁটা শুরু করলাম।আমাদের গ্রামের পেছনে একটা মস্ত বড়ো শালবন আছে।যখনই মন খারাপ করে বা নিজের লুকোনের দরকার পড়ে এই জায়গাটাই আমার শেষ ভরসা।শালবনের ভেতরে গিয়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে বসে রইলাম।কেনো জানি না এই জায়গাটায় আসলে আমার মনের সমস্ত ক্লান্তি,হতাশা দূর হয়ে যায়।মনে হয় এর থেকে শান্তির জায়গা আর দুটি নেই।

আমার নাম মান্নাত!মাত্র তিনবছর বয়সে নিজের বাবাকে হারাই।অবশ্য সেই সময়ের কথা আমার কিছুই স্মরণে নেই।যখন আমার বয়স আট বছর আম্মার সাথে এই লোকটার বিয়ে হয়।আম্মা আমার হাত ধরে এই গ্রামে এসেছিলাম আমি।এরপর আরোও দশটা বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো।এ পর্যন্ত কতোবার নিজের সৎ বাবার কাছে লাঞ্ছনার স্বীকার হয়েছি তার ইয়ত্তা নেই।আম্মা অনেক চেষ্টা করেছে আমার অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার কিন্তু এই লোকটা প্রতিবারেই বাঁধ সাধতো।কোনো না কেনোভাবে বিয়ে ভেঙে দিতো।

কিছুক্ষণ পরে নিজের কাঁধের ওপর কারোর স্পর্শ অনুভব করি,আমার বুঝতে বাকি রইল না কার স্পর্শ হতে পারে।নিশ্চয়ই আম্মা এসেছে।এই পৃথিবীতে আম্মা ছাড়া আপন বলতে কেউ নেই আমার।তার নিঃশ্বাসে শব্দে তার উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারি আমি।পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখি মা হাতে একটা টুকটুকে লাল বেনারসী নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকে প্রশ্ন করি।

—আম্মা তুমি এখানে…?এইটা কি তোমার হাতে..?

—এইখানে বসে কি করতেছিস তুই?

—কিছু না!

—আমার সাথে চল,আজ আমি বিয়ে দেবো তোর।এই জা*হা*ন্নামের আ*গুন থেকে মুক্তি দেবে তোরে..

—আম্মা এইডা কি কইতেছো তুমি?আমার বিয়ে দেবা মানে,তুমি কার সাথে বিয়ে দেবে আমার! আর আব্বা ভাঙানি দেবে না আবারও?

—না এইবার আর তোর আব্বা ভাঙানি দিতে পারবো না…

–কেনো পারবে না,তোমার কথার কোনো অর্থ বুঝতে পারতেছি না আমি আম্মা।

—কারণ তোর বিয়েটা তার সাথেই হবে।আর কথা না বাড়িয়ে চল আমার সাথে,সবাই অপেক্ষা করতেছে!

আম্মার কথা শোনার পরে যেনো আকাশ থেকে পড়লাম আমি।পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে যেতে লাগলো,এটা কি শুনছি আমি নিজের মায়ের মুখ থেকে!

—কি হলো এতো চিন্তা করছিস কেনো?আসিফ শেখরে আমি তালাক দিছি।ও আর তোর আব্বা নেই না আমার স্বামী।এইবার তোগো বিয়া আর কেউ আটকাইতে পারবে না!
চলবে…..
গল্পের নাম : #কাঁটায়_লেখা_ভাগ্য
পর্ব —০১
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
সবার ভালো লাগলে গল্পটা কনটিনিউ করবো।পরবর্তী পর্ব পেতে সবাই রেসপন্স করুন।ধন্যবাদ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here