কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ পর্ব ২৩+২৪

কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ
পর্ব : 23+24
#writer: DaRun NayEm (Rejon)
– আচ্ছা ডানা তুমি কি পারবে আমার জন্যে ওই আংটি টি তুলে আনতে।
– হুমম ১০০ বার পারব। তোমাকে ভালবেসে যদি সামান্য আংটি তুলে আনতে না পারি তাইলে আর কিসের ভালবাসা।
– এখানেই কিন্তু অনেক গভীরতা। আমি শিওর মারা যাবে এখানে নামলে?
– তোমার জন্যে শতবার মরতে প্রস্তুত ।
কথাটা বলেই ডানা নদীতে নামতে যাবে তাঁর আগেই ডানার হাত ধরে ফেললাম।
– দেখছো জান্নাত এটাই ভালবাসা। যে ভালবাসায় মৃত্যুর ভয় থাকে না।
( জান্নাতকে উদ্দেশ্যে করে কথাটা বলেই দুজন পা বাঁড়লাম বাড়ির পথে।) ( জান্নাতকে উদ্দেশ্যে করে কথাটা বলেই দুজন পা বাঁড়লাম বাড়ির পথে।)
– আর জান্নাত ওখানেই থ মেরে বসে রইল।
রিক্সা করে বাড়ির পথে যাচ্ছিলাম হঠাৎই মনে পড়ে গেল, আজকে না কিছু কেনাকাটার ছিল। পরক্ষনেই রিক্সাওয়ালা মামাকে উদ্দেশ্যে করে বললাম।
– মামা ব্যাক করেন তো একটু।
– কেনো মামা।
– মামা কিছু কেনাকাটা আছে, আপনি প্লিজ শপিংমলের দিকে নিয়ে যান।
– ওকে মামা যাচ্ছি।
– এই জান আজকে কেনাকাটা না করলে হতো না বুঝি?
– কেন? আজকে কেনাকাটা করলে সমস্যা কি?
– আজকে মন ভাল নেই। চলো না বাসায় যায়।
– না আজকেই কেনাকাটা করা লাগবে।
– কার জন্যে কেনাকাটা করবে?
– আমার জান, আমার কলিজা,আমার প্রাণ,আমার নিশ্বাস প্রশ্বাস, আমার হার্ট, আমার টুনির মা, আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এর জন্যে কিছু কিনবো।
– কে সেই ভাগ্যবান মেয়ে?
– তোমাকে বলব কেন?
– প্লিজ বলো না ( রোমান্টিক স্বরে)
– না বলব না।
– না বললে কিন্তু ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব রিক্সা থেকে।
– খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু বলো।
– তুমি চাইলে ফেলে দিতে পারো তারপরও নাম বলব না।
– ওকে যাহ তোর নাম বলা লাগবে না।
– হুমম।
– আর আমার সাথে তুই কোন কথা বলবি না।
– কথা না বললে কি হবে আমার শুনি। মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে বুঝি তাই না?
রেজনের কথায় সামান্য কষ্ট এসে জুড়ে বসেছে ডানার বুকের বাম পাশে। ব্যাথা অনুভব করছে ডানা বুকের বাম পাশে। এই কষ্ট টা যেন ডানার জীবনে পাওয়া সকল কষ্টের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ কষ্ট। কষ্টটা কেন জানি ডানা নিতে পারছে না। এর আগেও হাজারও কষ্ট সহ্য করেছে ডানা কিন্তু কখনও এতোটা খারাপ লাগেনি।
।।
জান্নাত কতক্ষণ পড়ে গাড়িতে করে বাসার দিকে রওনা দিলো। বাসায় এসে সোজাসুজি নিজের রুমে প্রবেশ করে জান্নাত। রুমে প্রবেশ করেই দরজা বন্ধ করে দেয়। আজকে জান্নাতের কেন জানি খুব কষ্ট অনুভব হচ্ছে।
কতক্ষণ পড়ে জান্নাত ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। ওয়াশরুমে গিয়েই শাওয়ার নিচ্ছে জান্নাত আর তাঁর অজান্তেই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে যাচ্ছে। অশ্রু আর পানি একাকার হয়ে যাচ্ছে। চোখের জল যেন জান্নাতের সাথে বেইমানী করেছে। বেইমান হয়ে গেছে তাঁর দুটি চোখ। কোন বাঁধাই মানছে না
।।
শপিংমলে পৌঁছানোর আগ মুহূর্তে পর্যন্ত কেউ কারো সাথে কোন প্রকার কথা বলিনি। শপিংমলে প্রবেশ করেই ডানাকে বললাম।
– ডানা আমার একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আছে যার জন্যে আজকে কিছু কেনাকাটা করব। তোমার উচ্চতা আর আমার গুরুত্বপূর্ণ মানুষের উচ্চতা একই। আবার তোমার সাইজ আর আমার গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাইজ ও একই। মোট কথায় তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সম্পুর্ণ টাই মিল রয়েছে। আর আমার মেয়েদের চয়েজ সম্পর্কে কোন প্রকার ধারণা নেই। তাই বলছি কি তুমি যদি তোমার চয়েজ মতো কিছু কেনাকাটা করে দাও তাহলে খুব খুশি হতাম। হাজার হলেও গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।
– ঠিক আছে। ( গোমড়া মুখে)
– আচ্ছা তুমি একটু কেনাকাটা করতে থাকো তাহলে আমি একটু আসছি।
– হুমম।
তারপর আমি শপিংমল থেকে বের হয়ে একটা কেক অর্ডার দিতে গেলাম। কতক্ষণ পড়ে কেক অর্ডার দিয়ে আবার ব্যাক করলাম শপিংমলে। ব্যাক করে দেখলাম ডানা নেই যেখানে লাস্ট দেখে গিয়েছিলাম। ভাবতে লাগলাম হয়তো আশেপাশে কোথাও আছে। খুঁজতে লাগলাম ডানাকে। কতক্ষন পড়েও ডানাকে পেলাম না খুঁজে । কিছুটা ভয় বিরাজ করছে নিজের মধ্যে। তাড়াতাড়ি করে ফোনটা বের জান নামে সেভ করা নাম্বারে ডায়াল করলাম কিন্তু ফোনটা সুইচ অফ দেখাচ্ছে। ভয়ের পরিমাণটা যেন সামান্য বেড়ে গেল। আরও অনেক কিছু বার ফোন দিলাম কিন্তু ফোন টা বার বার সুইচ অফ দেখাচ্ছিল। অজানা ভয় বিরাজ করছে কেন জানি। নিজের অজান্তেই চোখের কোনায় দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে গেল। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে। হাজারো মানুষ কে আমার ডানার কথা জিজ্ঞাসা, ডানার ছবি দেখিয়েছি কিন্তু কেউ আমার ডানাকে দেখতে পায় নি। এক প্রকার পাগল হয়ে পড়েছি। মনে হচ্ছে যেন উঁচু গলায় কান্না করি। কেন যে ডানাকে রেখে বাহিরে গিয়েছিলাম। আল্লাহ প্লিজ তুমি আমায় আমার ডানাকে ফিরিয়ে দাও।
কতক্ষণ পড়ে হঠাৎই ডানাকে দেখতে পেলাম। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে নিলাম ডানাকে। চোখ দিয়ে যেন জল গড়িয়ে পড়ছে। জল দিয়ে যেন ডানার জামা ভিজে যাচ্ছে।
– এই কি হয়েছে এমন করছো কেন?
– কোন কথা বলতে পারছে না রেজন শুধু কান্না করছে।
– এই কি হয়েছে কি ? সবাই দেখছে তো।
ডানাকে ছেড়ে দিয়ে সামান্য জায়গা করে নিল রেজন। সামান্য কান্না থামিয়ে।
– কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
– ওয়াশরুমে।
– তোমার ফোন অফ কেন?
– এমনই।
– এতো টাইম ওয়াশরুমে কি করছিলে?
– চোখে মুখে জল নিচ্ছিলাম।
– তাই বলে এতো টাইম।
– হুমম। কেন কি হয়েছে?
– কি হয়েছে আমি বলছি ( অচেনা একজন)
তারপর অচেনা একজন মানুষ সকল ঘটনা ডানাকে খুঁলে বলল।
– তখন কষ্ট দিয়ে এখন আবার ভালবাসা দেখাচ্ছে। আমাকে বলে কিনা কথা না বললে তাঁর কি হবে। আবার তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মানুষের জন্যে আমায় কেনাকাটা করতে হবে। আমার কষ্ট হয়না বুঝি। তুমি যেমন কষ্ট পেয়েছো তেমন আমিও কষ্ট পেয়েছিলাম তোমার কথা শুনে। তাই তো তোমার উপর রাগ অভিমান করে ফোন টা বন্ধ করে রেখেছিলাম। সাহস কতো তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মানুষের জন্যে আমার নাকি শপিং করে দিতে হবে। এসব হাজার ও কথা ভাবছে ডানা।।।
।।
প্রায় অনেক সময় পড়ে জান্নাত বের হয় ওয়াশরুম থেকে। কান্না করতে করতে যেন জান্নাতের চোখ ফুলে গিয়েছে। জান্নাত যেন আজকে খুব ক্লান্ত। খুব ঘুম জড়িয়ে নিচ্ছে জান্নাত কে। জান্নাত চেন্স করে বিছানায় গাঁ হেলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে অসময়ে।
।।
কতক্ষণ পড়ে রেজনকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ করিয়ে বাহিরে বের হয় দুজন। রেজন যেন খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। ডানার দেখা পেয়ে ও ডানার হাতের ছোঁয়া পেয়ে রেজন যেন আবার নিজের অবস্থানে ফিরে আসে। ফ্রেশ হয়ে রেজন নিজেকে নিজের কাছে হালকা লাগছে।
।।
তারপর ডানার পছন্দ মতো কিছু শপিং করে বাসার পথে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত গ্রহণ করে দুজন।
রিক্সা করে বাসার পথে যাচ্ছে দুজন। মাঝে মাঝে দুই একটা কথা হচ্ছে দুজনের মাঝে ।
রেজন ভাবছে জীবনে শ্রেষ্ঠ সারপ্রাইজড হবে ডানা আজকে। এমন সারপ্রাইজড হয়তো ডানা এর আগে কোন দিন পাই নি।
কতক্ষণ পড়ে তাঁরা বাসায় পৌঁছে গেল। আস্তে আস্তে সিঁড়ি পথে উঠে আসছে দুজন। কিন্তু বাড়িতে সকল লাইট অফ। ডানার ফোনের আলো তে দুজন সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠে আসল।
– ডানা তোমার ফোন টা দাও তো।
– কেন?
– এমনই।
– এই নাও।
রেজন ডানার থেকে ফোন টা নিয়ে নক করতে লাগল দরজায় কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। এক প্রকার বিরক্ত হচ্ছে ডানা। কতক্ষণ পড়ে হঠাৎই দরজা খুঁলে গেল। ডানা ভিতরে প্রবেশ করল। ভিতরে প্রচন্ড অন্ধকার। নিজের চোখ দিয়ে নিজেকেই দেখা যাচ্ছে না পর্যন্ত। অন্যদিকে ডানার ফোন রেজনের কাছে। ডানা অবাক হতে লাগল কাউকে দেখতে না পেয়ে। আর রেজন কেউ দেখা যাচ্ছে না। ডানা ভাবছে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো নাকি রেজন।
কিছুক্ষন পড়ে ঘরের সকল লাইট অন হয়ে গেল। আর সবাই একই সাথে বলে উঠল।
“” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডানা। “”” “” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডানা। “”” “” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডানা। “””
ডানার চোখ আকাশে উঠার উপক্রম হয়েছে। ডানা বিস্মিত হয়েছে বিষয়টা নিয়ে। ডানার যেন নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। জীবনের ফাস্ট টাইম এমন সারপ্রাইজড হয়েছে ডানা।
সারা ঘরে বেলুন দিয়ে সাজানো। ঘরটা খুব ভাল আর্কিটেকচার দিয়ে সাজানো হয়েছে। ঘরটা এতো সুন্দর করে আলোকপাত করেছে যেটা ডানা দেখে হতভাগ।

চলবে

কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ
পর্ব : 24
#writer: DaRun NayEm (Rejon)
“” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডানা। “”” “” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডানা। “”” “” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডানা। “””
ডানার চোখ আকাশে উঠার উপক্রম হয়েছে। ডানা বিস্মিত হয়েছে বিষয়টা নিয়ে। ডানার যেন নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। জীবনের ফাস্ট টাইম এমন সারপ্রাইজড হয়েছে ডানা।
সারা ঘরে বেলুন দিয়ে সাজানো। ঘরটা খুব ভাল আর্কিটেকচার দিয়ে সাজানো হয়েছে। ঘরটা এতো সুন্দর করে আলোকপাত করেছে যেটা ডানা দেখে হতভাগ।

আসলে ডানা ভুলেই গিয়েছিল যে আজকে তাঁর জন্মদিন। আর ডানার জন্মদিনে এতো আয়োজন করে কখনও কোন দিন অনুষ্ঠান করা হয়নি। আর ডানা কেকটার উপরে দেখতে পেল খুব সুন্দর করে হ্যাপি বার্থডে টুনির মা লেখা। লেখাটা দেখে ডানা এতো পরিমাণ খুশি হয়েছে যে সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আবার লজ্জা ও লাগছে টুনির মা নামটা দেখে।

কতক্ষণ পড়ে কেক কাটার পর্বটা শেষ হয়ে গেল। সবাই ডানাকে জন্মদিনের গিফট করছে। রেজনের আম্মুর গিফট টা লক্ষ্যনীয়। রেজনের আম্মু নিজের হাত থেকে সোনার বালা জোড়া খুঁলে ডানার হাত পড়িয়ে দেয়। ডানা ভীষণ খুশি বালা জোড়া পেয়ে। হটাৎই ডানা চিন্তায় পড়ে গেল রেজনকে না দেখতে পেয়ে। সবার উপহার পেলেও রেজনের উপহার পাওয়া হলো না। বিষয়টা যেন ডানার কাছে কেমন লাগছে। ডানা আরও ভাবতে থাকে যে আজকে আমার জন্মদিন সেটা আমি নিজেই ভুলে গিয়েছিলাম তাহলে আমার জন্মদিন আর কেন জানতো যে এতো সকল আয়োজন করল। আর আমি তো কোন দিন ও আমার দাঁতের ফাসা দিয়েও বের করিনি যে আজকের দিনে আমার জন্মদিন। এরকম হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ডানার মনে।

রাত ১১টা।
আজকে আমার জন্মদিন ছিলো। আর ব্যটা রেজন কেক কাটার পর্বটার আগে থেকেই হাওয়া। এখন পর্যন্ত আমাকে বার্থডে উইশ করল না। আর ফোন টাও দেখছি সুইচ অফ দেখাচ্ছে। সবাই আমাকে জন্মদিনের গিফট দিল কিন্তু শুধু রেজন দিলো না। বিষয়টা ডানার কাছে খুব খারাপ লাগছে। ডানা মন ভার করে বসে রইল।
কতক্ষণ বাদে ডানার রুমে রেজনের আম্মু প্রবেশ করল ।
– তোর বালা জোড়া পছন্দ হয়ছে মা?
– কেন হবে না আম্মু? আমার তো খুব ভাল লাগছে।
– এটা কিসের বালা জানিস তো?
– না তো আম্মু। ( কিছুটা আগ্রহ নিয়ে)
– তোকে এই বালা পড়ানো মানে তোকে এই বাড়ির বউমা হিসেবে মেনে নেওয়া।
– মানে বুঝলাম না আম্মু ক্লিয়ার করে ।
– আমাকে যখন তোর শ্বশুর বিয়ে করে আনে তখন আমার শাশুড়ি মানে তোর দাদি শাশুড়ি আমার হাতে এই বালা জোড়া পড়িয়ে দেয়। আর বলেছিল যখন আমার নাতীবউ আসবে তখন যেন তাঁকে পড়িয়ে দিয়ে যত্নে রাখতে বলি। তাই তোকে পড়িয়ে দিলাম। খুব যত্ন আগলিয়ে রাখিস বালা জোড়া।
– আম্মু এটা আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও আগলিয়ে রাখব।
– আমার এই বিশ্বাস আছে তোর উপর।
– হুমম আম্মু।
– রেজন কোথায় গিয়েছে? এখনও বাসায় ফিরলো না ?
– জানি না আম্মু। সেই কখন বের হয়েছে এখনও ফিরল না ।
– ফোন করেছিস?
– হুমম কিন্তু সুইচ অফ দেখাচ্ছে ।
– টেনশন করিস না চলে আসবে?
– হ্যাঁ আম্মু।

জান্নাত চোখ খুলে আবিষ্কার করল সে তাঁর রুমে নেই। জান্নাত চারপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সে হাসপাতালে। তাও আবার অপারেশন থিয়েটারে। জান্নাতের মাথায় কিছুই আসছে না যে কিভাবে এখানে আসল। আর আমার কি হয়েছে যার জন্যে আমি হাসপাতালে। কিছুই মনে করতে পারছে না জান্নাত। জান্নাত যে কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসা করবে আমি এখানে কেন, সেই শক্তি পর্যন্ত নেই। জান্নাতের কথা বলতে চাইলেও মুখে অক্সিজেন মার্কস লাগানো যার জন্যে কথা বলতেও প্রবলেম।

কতক্ষণ পড়ে নার্স জান্নাতের অবস্থা জানতে আসলে নার্স বুঝতে পারে জান্নাতের জ্ঞান ফিরেছে। নার্স গিয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে বিষয়টা জানলো। ডাক্তার বিষয়টা তদন্ত করতে জান্নাতের সামনে এসে একটু চেক করে চলে গেল। ডাক্তার বাহিরে গিয়ে জান্নাতের বাবা মাকে উদ্দেশ্যে করে।
– আপনার মেয়ের জ্ঞান ফিরেছে। আপনারা চাইলে তাঁর সাথে দেখা করতে পারেন।
– সত্যি ডাক্তার।
– হুমম। আর একটা কথা আপনারা ওর সাথে দেখা করার সময় কেউ কান্নাকাটি করবেন না। এখন আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেকটাই সুস্থ। আপনারা যদি ভিতরে গিয়ে কান্নাকাটি করেন তাহলে সে আরও ভেঙ্গে পড়বে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই প্লিজ কান্নাকাটি করবেন না। হাসি মুখে কথা বলবেন।
– ওকে ডাক্তার সাহেব।
ডাক্তারের কথা শুনে জান্নাতের বাবা মায়ের চোখে মুখে উজ্জ্বলতার ছাপ দেখা দিল।
– জান্নাতের বাবা মা প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে ভিতরে প্রবেশ করল। ।

অক্সিজেন মার্কস টা খুলে।
– আচ্ছা বাবা আমি এখানে কেন? ( চিকুন গলায়। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে)
– মারে তুমি সেন্স লেস হয়ে পড়ে ছিলে বিছানায়।
– বাবা তারপর।
– তুমি হুট করে বাসায় এসে দরজা ভিড়িয়ে দিলে। তোমার এই হুট করে এসে দরজা ভিড়িয়ে দেওয়ার কারনে তোমার মায়ের মনে চিন্তা জাগে। তোমার মা তোমাকে অনেক ডাকাডাকির পরেও যখন তুমি দরজা খুলো নাই তখন তোমার মা আমায় ফোন করে বিষয়টা জানায় তারপর আমি তখন ই বাসায় চলে আসি। আমিও এসে যখন ডাকাডাকি করলাম তখনও তুমি দরজা খুললে না । তাই তখন প্রচন্ড আকারে চিন্তা বেড়ে গেল। তখন কি করব বুঝতে না পেরে রেজনকে ফোন করে আসতে বলি।
রেজন আসার পড়ে চিন্তা ভাবনা করে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে গিয়ে দেখি তুমি বিছানায় পড়ে আছো। তখন কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। রেজন তখন বলল আংকেল আপনি তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করেন। আমি জান্নাতকে নিয়ে নিচে আসতেছি।
– তারপর।
– তারপর রেজন তোমাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কোলে করে নিয়ে আসে। তারপর গাড়ি করে হাসপাতাল পর্যন্ত যতো কাজ রেজন একাই সামলিয়েছে। খুব কষ্ট করেছে ছেলেটা আজকে। এতো ভাল ছেলে আসলে পাওয়া দুস্কর।
জান্নাত বিনীত গলায় তার বাবাকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
– বাবা রেজন কোথায়?
– রেজন বাহিরে বসে আছে।
– বাবা আমি রেজনের চাঁদ মুখখানি দেখবো?
– ওকে মা। আমি রেজন কে ডাকছি।

জান্নাতের বাবা রেজনের সামনে গিয়ে।
– রেজন।
– হ্যাঁ আংকেল।
– বাবা তোমার সাথে জান্নাত দেখা করতে চাচ্ছে তুমি যদি একটু ভিতরে এসে ওর সাথে দেখা করতে।
– এভাবে বলছেন কেন? আমি জান্নাতের সাথে এখন ই দেখা করছি।
– ওকে বাবা।
জান্নাতের বাবা আর রেজন একসাথে ভিতরে প্রবেশ করলো।
ক্ষীণ গলায় অনুনয়ের ভঙ্গিতে জান্নাত তাঁর বাবাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন ।
– বাবা আমি একটু রেজনের সাথে একাকী কথা বলতে চায়।
– ওকে মা তোরা কথা বল।

– কেমন আছো? ( রেজন)
– যেমনটা রেখেছো।
– কেমন লাগছে এখন শরীর টা ?
– খারাপ না।
– এটা কেমন কথা?
– হুমম। তুমি কেমন আছো?
– হুমম আল্লাহর অশেষ রহমতে ভাল আছি।
– রেজন তোমার হাতটা ধরতে দিবে একটু ?
রেজন কি বলবে বুঝতে পারছে না।
– কি হলো দিবে না?
– হুমম।
জান্নাত রেজনের হাত ধরে আছে।
– এবার বলো ডানা কেমন আছে?
– আজকে ডানার জন্মদিন ছিলো।
– আংকেলের ফোন করার ফলে ডানার কেক কাটার পর্বটাও শেষ না করে চলে এসেছি। ওর জন্মদিনে আমি এখনও ওকে গিফট তো দূরের কথা উইশ পর্যন্ত করতে পারলাম না।
– প্লিজ স্যরি।
– কিসের জন্যে।
– তোমার গার্লফ্রেন্ড এর জন্মদিনে পার্টি রেখে আমার মতো অমানুষকে দেখতে এসেছো তার জন্যে ।
– এভাবে বলছো কেন?
– যা বলছি সেটা তো আর মিথ্যা কিছু বলছি না বলো।
– আমি তো অসুস্থ তাই ডানার জন্যে গিফট করতে পারলাম না ওর জন্যে ডানা কে স্যরি বলে দিও। আর ডানাকে আমার তরফ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিও।
– হুমম।
– আমি সুস্থ হলে ডানার জীবনের সবচেয়ে বড় গিফট আমি দিবো। এমন একটা জিনিস গিফট করব যেটা ডানা কল্পনা ও করেনি কোন দিন।
– হুমম।
– শুধু হুমম হুমম করছো কেন? ভাল ভাবে কথা বলো।
– স্যরি।
– স্যরি কেন?
– এমন পরিস্থিতি তৈরি করার জন্যে।
– এটা আমার কপালে ছিল। আর তুমিও যদি আমার কপালে থাকো তাইলে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আমার জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমি আমার ভালবাসার জন্যে যুদ্ধ করব।
– পাগলামো কথা বাদ দাও। আর তুমি আমার মধ্যে কি এমন পেয়েছো যার জন্যে এতোটা পাগলামো করছো।
– আমি তোমাকে ভালবাসি এটা ছাড়া আমার কাছে কোন জবাব নেই।
– আচ্ছা রেজন একটা সত্যি কথা বলো তো।
– হুমম।
– ওয়াদা দাও বিন্দুমাত্র মিথ্যা বলবে না?
– ওকে ওয়াদা দিলাম।
– আমার অসুস্থতার কথা শুনেই তুমি ডানার জন্মদিনের পার্টি ছেড়ে চলে আসলে এর মধ্যে কি কোন ভালবাসার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক আছে?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here