কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ পর্ব ১৫+১৬

কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ
পর্ব : ১৫+১৬
#writer: DaRun NayEm (Rejon)

দুজনেরই নিশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। একজনের নিশ্বাস অন্যজন নিরব ভঙ্গিতে অনুভব করতে পারছি।
এক সময় দুই জোড়া ঠোঁট মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল।
এক পর্যায়ে প্রায় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ ছেড়ে দিতে নারাজ।
হঠাৎ কারো কন্ঠে কিছু কথা শুনতে পেলাম।
– অফিসে লেট হয়ে যাচ্ছে। (আম্মু)
আম্মুর কথা শুনতে পেয়ে যে যার মতো অবস্থান নিলাম।
– স্যরি আম্মু।
– কিসের জন্যে।
– আসলে আম্মু ডানার স্বপ্ন ছিল………………
– আর বলতে হবে না আমি ডানার সকল চাওয়া পাওয়া কতটুকু সকল তথ্য জানি ।
– ওকে আম্মু বাই।
– বিসমিল্লাহ বলে দেখে শুনে যাস বাবা।
– হুমম।
কতক্ষণ পড়ে বেড়িয়ে গেলাম বাসা থেকে। বাইরে গিয়ে একটা রিক্সা করে উদ্দেশ্যে স্থলে অফিসের দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম।
।।
অন্যদিকে জান্নাত পায়চারী করেছে রেজন আসার অপেক্ষায়। জান্নাত কিছু ভেবে না পেয়ে রেজনকে ফোন দিতে আগ্রহ প্রসন করল।
।।
রিক্সা চলছে তাঁর নিজ্বব গতিতে। হালকা বাতাস হচ্ছে মনে হচ্ছে যেন বাতাসে ভেসে হারিয়ে যায় দূর অজানায়। আবার ভাবি আমি যদি হারিয়ে যায় তাইলে ডানা কি নিয়ে বাঁচবে। হঠাৎ ভাবনারা জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলে বাধ্য করল ফোনে রিংটোন।
– ফোন টা বের করে দেখি ফোনের ডিসপ্লেতে বস নামটা ভাসতেছে।
– কিছুটা বিরক্তিকর মনোভাব নিয়ে ফোন রিসিভ করলাম।
– ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ও পাশ থেকে।
– আসসালামুয়ালাইকুম।
– ওয়ালাইকুমুস সালাম ( অবাক মনোভাব নিয়ে। )
– কোথায় এখন আপনি ❓
– আসলে আমি চিনতে পারিনি।
– নিজের বসকেই ভুলে গেছেন।
– স্যরি ভুলি নাই। কিন্তু কে আপনি বসের ফোন নিয়ে আমায় ফোন দিয়েছেন।
– আরে হাদারাম আমিই আপনার বস।
– আপনি বস বলে তাইলে জান্নাত স্যার কোথায়।
( কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। সব কিছুই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। নতুন বস আবার অফিসে জয়েন করল নাকি আর জয়েন করলে তো আমি সবার আগে জানতাম )
– আমিই আপনার জান্নাত স্যার।
– আমার বিশ্বাস হয় না ❓
– আপনি এখন কোথায় ❓
– অফিসে আসতেছি।
– ওকে তাইলে অফিসে আসেন তারপর কথা হবে।
– ওকে স্যার।
– আসসালামুয়ালাইকুম। দেখে শুনে আসবেন।
– ওয়ালাইকুমুস সালাম। ওকে।
কতক্ষণ পড়ে ফোন কেটে গেল। কিছুই বুঝে উঠে পারছি না আসলে আমি কার সাথে কথা বললাম।
আবার ভাবলাম এতো ভাবাভাবির কিছুই নেই অফিসে গিয়ে সব বুঝতে পারব।
।।
।।
।।
কতক্ষণ পড়ে অফিসে পৌঁছে গেলাম। অফিসে গিয়ে সোজা আমার কেবিনে প্রবেশ করলাম।
কেবিনে প্রবেশ করার কিছুক্ষন পড়ে দেখলাম ম্যানেজার সাহেব নক করছে।
– আসব স্যার।
– হুমম আসুন।
ভিতরে এসে।
– কেমন আছেন স্যার আপনি ❓
– আলহামদুলিল্লাহ ভাল। আপনি ❓ আচ্ছা ম্যানেজার সাহেব আমাদের অফিসের বস কি চেন্স হয়েছে।
– আমি ভাল আছি স্যার। কি বলেন বস চেন্স হবে কেন ❓আর স্যারের মেয়েকে বাদ দিয়ে অন্য কারো হাতে অফিস ছেড়ে দিবে এটা কোন কথা হলো বলেন।
– আর স্যার আমার আপনার কেবিনে আসার মূল কারণ জান্নাত স্যার ডাকছে আপনাকে এই কথা টা বলার জন্যে।
– ওকে ম্যানেজার সাহেব আপনি যান আমি আসতেছি।
– ওকে স্যার।
– তাঁরপর ম্যানেজার সাহেব চলে গেল কেবিন ছেড়ে ।
কতক্ষণ পড়ে আমি অগ্রসর হতে লাগলাম জান্নাত স্যারের কেবিনের দিকে।
– ভিতরে আসব স্যার ❓
– হুমম আসুন।
– ভিতরে গিয়ে আমি বিস্মিত না হয়ে পারলাম না। বিস্মিত না হবার কোন প্রকার চান্স নেই। আজ মনে হচ্ছে যেন জান্নাত স্যার পুরোটাই চেন্স। কালো বোরকা কালো হিজাব পড়ে বসে আছে জান্নাত স্যার। আজ খুব সুন্দর লাগছে জান্নাত স্যারকে দেখে।
আজ যেন জান্নাত স্যারকে খাঁটি মুসলিম পরিবারের মেয়ে মনে হচ্ছে।
– রেজন সাহেব আপনি কি মুসলিম পরিবারের সন্তান ❓
– হুমম কেন বলুন তো ❓
– তাইলে সালাম না দিয়ে কেন বললেন যে ভিতরে আসব স্যার❓
– স্যরি স্যার।
– আজকে এতো লেট করলেন কেন অফিসে আসতে ❓
– আসলে স্যার পরিবারকে একটু সামান্য সময় দিতে গিয়ে এমনটা হয়েছে।
– আপনার আম্মু মানে আমার হবু শ্বাশুড়ি মা কেমন আছে ❓
– ভাল।
– সাদিয়া কেমন আছে ❓
হুমম ভাল।
– আর কাজের মেয়েটি ❓
– স্যরি স্যার আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন যে ডানা আমার গার্লফ্রেন্ড প্লাস বউ ।
– হুমম ফকিন্নি আবার গার্লফ্রেন্ড।
– কি বলেন বিড়বিড় করে ❓
– কিছু না।
– এখনো কিছু ফাইল আছে একটু দেখে দিয়েন ❓
– ওকে স্যার আসসালামুয়ালাইকুম ।
– ওয়ালাইকুমুস সালাম।
।।
অফিসের সমস্ত কাজ শেষ করে সন্ধ্যার দিকে বের হলাম অফিস থেকে।
প্রতিদিনের মতো আজকেউ রিক্সার জন্যে ওয়েট করছি কিন্তু একটি রিক্সা ও পাচ্ছি না।
আমি বুঝে উঠে পারি না সারাদিন রিক্সা চলে এই রাস্তায় এমনকি রাতেও চলে কিন্তু সন্ধ্যায় রিক্সা পাওয়া যায় না কেন ❓
– দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রায় বিরক্ত ফিল করছি আমি।
কতক্ষণ পড়ে জান্নাত স্যারের গাড়ির হর্ন শুনতে পেলাম।
– রেজন সাহেব চলে আসুন।
– আমি কোন প্রকার দ্বিধা ছাড়াই উঠে গেলাম গাড়িতে।
– জান্নাত স্যার গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়ি চলছে তাঁর নিজ্বব গতি সীমায়।
– আচ্ছা স্যার একটা কথা বলি ❓
– হুমম।
– আপনার হটাৎ এই পরিবর্তন ❓
– সেটার মূল কারণ তুমি।
– তাই বুঝি ❓
– হুমম।
।।
কতক্ষণ কেউ কারো সাথে কথা বলছি না। হটাৎ জান্নাত স্যার অন্য রাস্তায় গাড়ি ঢুকিয়ে ফেলল।
– স্যার আমার বাসা তো এই দিকে না।
– জানিতো।
– তাইলে কোথায় যাচ্ছি আমরা ❓
– আজকে আমরা…………………………….


চলবে

কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ
পর্ব : ১৬
#writer: DaRun NayEm (Rejon)
কতক্ষণ কেউ কারো সাথে কথা বলছি না। হটাৎ জান্নাত স্যার অন্য রাস্তায় গাড়ি ঢুকিয়ে ফেলল।
– স্যার আমার বাসা তো এই দিকে না।
– জানিতো।
– তাইলে কোথায় যাচ্ছি আমরা ❓
– আজকে আমরা আমাদের বাসায় যাচ্ছি। আম্মু তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে বাসায়।
– বাসায় অনেক কাজ পড়ে রয়েছে।
– যত কাজই থাকুক না কেন আজকে যেতেই হবে আমাদের বাসায়। আর আমি তোমাদের বাসার ফোন দিয়ে বলে দিচ্ছি তুমি আমার সাথে আসো।
– আমি আর এই বিষয়টা নিয়ে কথা বাড়ালাম না। জানি কথা বাড়িয়ে লাভ হবে না।
কতক্ষণ পড়ে দেখলাম জান্নাত ফোন বের করে কোথায় যেন ফোন দিচ্ছে।
– আসসালামুয়ালাইকুম❓
– ওয়ালাইকুমুস সালাম।
(আমি এতোক্ষনে বুঝে গেছি জান্নাত আসলে কোথায় ফোন দিয়েছে।)

– কে আপনি ❓
– আমি ডানা । আপনি কে বলছেন ❓
– তাইলে তুমিই সেই ফকিন্ন কাজের মেয়ে ডানা।
– হুমম আমি সেই ডানা ( ডানা ততোক্ষণে বুঝে গেছে কে ফোন দিয়েছে)
।।
ডানার সাথে জান্নাত কথা বলছে আর আমি মাথা নীচু করে ফোন টিপা টিপি করছি।
– তুমি কি জানো রেজন এখন কোথায় ❓
– কেন অফিসে।
– রেজন এখন আমার সাথে। আমরা এখন একটা পার্টিতে যাব। সেখান থেকে ডিনার করে বাসায় ফিরব। ( ডানাকে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা)
– আমার বিশ্বাস হয় না রেজন আপনার সাথে ।
– তোর বিশ্বাসের গুষ্টি কিলায়। তোর বিশ্বাস না হলে আমি কি করব । বিশ্বাস করলে কর না করলে না কর।
– আমার রেজন তোর সাথে কোন ভাবেই যেতে পারে না। ( কান্না জড়িত কণ্ঠে)
– কথা বলবি রেজনের সাথে ❓
– আমার কথা বলা লাগবে না আমি জানি আমার রেজন তোর সাথে নেই। আমার রেজনের উপর দীর্ঘ আস্থা ও বিশ্বাস আছে।
– তোর সাথে ফালতু কথা বলে লাভ নেই।
– আমার শ্বাশুড়ি আম্মু কোথায় আমি তাঁর সাথে কথা বলব। তোর মতো ফকিন্নির সাথে কথা বলার জন্যে ফোন দেয় নাই।
– তুই লাইনে থাক আমি ডেকে দিচ্ছি।
– হুমম।
।।
– আম্মু ❓( চোখ মুছে)
– হুমম মা বল।
– তোমার বউমা ফোন দিয়েছে।
– আমার বউমা তো আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।
– আমার আবার ভাগ্য হবে তোমার বউমা হবার ❓( অভিমান)
– তুই ই তো আমার বউমা।
– তোমার ছেলে যাহ শুরু করেছে তাতে আমার আর হয়তো এই বাড়ির বউ হওয়া হবে না ।
– কি করেছে রেজন ❓আর কে ফোন দিয়েছে ❓
– জান্নাত।
– কি বলে❓
– রেজন নাকি ওর সাথে বের হয়েছে ঘুরতে। আর তোমার সাথে কথা বলবে ওর শাকচুন্নি।
– ফোন টা দে আমার কাছে ।
তারপর ডানা ফোন এগিয়ে দিল মায়ের দিকে।
– হ্যাঁ জান্নাত বলো ।
-আসসালামুয়ালাইকুম আম্মু।
– ওয়ালাইকুমুস সালাম।
– আম্মু কেমন আছেন ❓
– ভাল। তুমি ❓
– আমিও ভাল আছি আম্মু।
– দেখ জান্নাত আমার বাবুর বন্ধুর মেয়ে হিসাবে আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।তাই বলে আমাদের কাছে থেকে এমন কিছু চেয়ে বসো না যেটা দিতে পারব না।
– দেখেন আম্মু আমি আপনার ছেলেকে খুব ভালবাসি ।
– আমার ছেলে কি তোমাকে ভালবাসে ❓
– হুমম ভালবাসে।
– কিভাবে বুঝলে আমার ছেলে তোমাকে ভালবাসে ❓
– আপনার ছেলে যদি আমাকে ভাল না বাসত তাহলে আজ আমার সাথে ঘুরতে আসত না।
– রেজন কোথায় এখন ❓
রেজন এখন আমার পাশের সিটে বসে আছে।
– আমার তো বিশ্বাস হয় না রেজন তোমার সাথে।
– তাইলে কথা বলেন আপনার ছেলের সাথে।
জান্নাত আমার দিকে ফোন টা এগিয়ে দিল। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিলাম।
– হ্যালো আম্মু।
– তুই যে আমার আমার পেটের ছেলে এটা আমার ভাবতেই এখন ঘৃনা হচ্ছে।
– আম্মু আমার কথা প্লিজ একবার শোন আমার কথা প্লিজ একবার বুঝতে চেষ্টা………… ( কথা শেষ করার আগেই আম্মু ফোন কেটে দিল)
– আম্মু তোমার ছেলে কার সাথে এখন ❓(ডানা)
– জান্নাতের সাথে।
– যাকে এতো বিশ্বাস করতাম সে আমার বিশ্বাসের মূল্য দিল না।
( কান্না করতে করতে আম্মুর রুম থেকে বের হয়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বালিসে মুখ লাগিয়ে কান্না করতে থাকে। )

– আমি আম্মুকে বোঝাতে আবার ফোন দিতে সিধান্ত নিলাম। কিন্তু ফোন বার বার দিচ্ছি আর বার বার একটা মেয়ে কন্ঠে বিরক্তকর কন্ঠ ভেসে আসতেছে “” আপনি যে নাম্বারে ফোন দিয়েছেন সেটি এখন বন্ধ আছে। “”
।।
।।
।।
কতক্ষন পড়ে ডানা আর আম্মুর ফোনে একটা টেক্সট করলাম যেটা দেখে সবাই ঠান্ডা হয়ে গেল। টেক্সট টা ছিল এইরকম।
তোমাদের বুঝতে হবে আমি জান্নাতের পি.এ ও যখন যা বলবে আমার তখন তাই করতে হবে।ওর আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে আমার। আর আমরা এখন অফিসিয়াল কাজে এই জায়গায় যাব ( লাস্ট কথাটা মিথ্য )
।।
কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে আম্মু ডানার কথা ভাবছি আর জান্নাতকে একটা কথা বললাম।
– কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয়না। আমি তোমাকে আজ দেখে মনে করেছিলাম তুমি ভাল হয়ে গেছো কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম যে কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয়না।
– আমার সব কিছু পরিবর্তন হবে যদি তুমি পাশে থাকো।
– তোমার পরিবর্তন সম্ভব না কোন ভাবেই ❓
– একবার সু্যোগ করে দাও প্লিজ তোমাকে ভাল বেসে পরিবর্তন হবার। তুমিই পাড়ো তোমার ভালবাসা দিয়ে আমাকে পরিবর্তন করতে। প্লিজ বলো আমাকে ভাল হবার সুযোগ করে দিবে। (হাতে হাত রেখে) – একবার সু্যোগ করে দাও প্লিজ তোমাকে ভাল বেসে পরিবর্তন হবার। তুমিই পাড়ো তোমার ভালবাসা দিয়ে আমাকে পরিবর্তন করতে। প্লিজ বলো আমাকে ভাল হবার সুযোগ করে দিবে। (হাতে হাত রেখে)


চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here