কিশোরী কন্যার প্রেমে পর্ব -০২+৩

#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২
.
ফুচকা খাওয়া শেষে টাকা দিতে গেলে ফুচকাওয়ালা বলল,
-“টাকা লাগবে না। আপনার টাকা দেওয়া আছে।”
-“মানে! কে দিয়েছে?”
-“রাস্তার ওপারে যে ছেলেদের দলটা আছে সেখানের একটা ছেলে দিয়েছে।”
-“ছেলেটা দিল আর আপনি নিয়ে নিলেন? আমাকে কি নতুন চেনেন আপনি? ছোটবেলা থেকে এই স্কুলে পড়ছি আর আপনার কাছ থেকেই ফুচকা খাচ্ছি। প্রতিবার টাকা আমি অথবা আমার ভাই দেয়। সেখানে চেনেন না জানেন না অন্য একটা ছেলের দেওয়া টাকা নিলেন কোন আক্কেলে?”
রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে অর্ঘমার। শাকিলের ওপরে ওঠা রাগটা সে ফুচকাওয়ালার উপর ঝেড়ে দিয়েছে। নিধির কথায় পাশে তাকাল। শাকিল এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। অর্ঘমা রেগে বলল,
-“আপনি অতিরিক্ত করছেন এবার। কতবার বলেছি আমি আপনাকে পছন্দ করি না! তারপরও কেন পিছে পড়ে আছেন আমার? এতদিন কিছু বলিনি। কিন্তু আজ আপনি আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছেন। ওনাকে টাকা দিয়েছেন কোন সাহসে আপনি? আর আপনি ভাবলেনই বা কি করে যে আপনার দেওয়া টাকায় আমি খাব, যেখানে আমি আপনাকে চিনিই না! আর একদিন আমাকে ডিস্টার্ব করবেন তো আমি আমার ভাইকে বলে আপনাকে শিক্ষা দেওয়ার সকল ব্যবস্থা করব।”
অর্ঘমা ফুচকাওয়ালা আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করল,
-“কত টাকা দিয়েছেন উনি আপনাকে?”
-“একশো টাকা।”
ব্যাগ থেকে একশো টাকার একটা নোট বের করে শাকিলের সামনে ফুচকাওয়ালার গাড়ির ওপর টাকাটা রেখে বলল,
-“আমার বাপ-ভাই আমার সকল চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। বাইরের মানুষের টাকার আমার কোনো প্রয়োজন নেই। ইরিটেটিং পার্সোন একটা।”
কথাগুলো বলেই হনহন করে বাসার দিকে চলল অর্ঘমা।

বাসার সামনের গলির মাথায় এসে নীরদকে দেখতে পেল। বেশ কয়েকজন ছেলের সাথে ক্যারাম খেলছে। ছেলেগুলো বন্ধু হবে হয়তো। নীরদের দিকে এক পলক তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল। নীরদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। অর্ঘমা নিজের রাগ কমাতে পারছে না দেখে হনহনিয়ে চলে গেল বাসার ভেতরে। একসাথে ৪-৫ বার কলিংবেল চেপে দাঁড়িয়ে রইল। তার মা এসে দরজা খুলে বকতে লাগল এতবার বেল দেওয়ার জন্য। কোনো কথা না বলে অর্ঘমা হনহন করে নিজের রুমে চলে গেল। অন্যদিন হলে এতক্ষণে সে মায়ের কথার বিপরীতে অবশ্যই কিছু বলতো। কিন্তু আজ তার মাথা গরম হয়ে আছে।

মেয়ের কিছু একটা হয়েছে বুঝে আর চেঁচামেচি করলেন না অর্ঘমার মা। ফোন হাতে নিয়ে অভ্রকে কল লাগালেন তিনি। অর্ঘমা সবার আদরের হলেও নিজের সকল কথা একমাত্র অভ্র ছাড়া আর কারো সাথে শেয়ার করে না। অভ্রও অর্ঘমাকে ছোট থেকে একদম নিজের বাচ্চার মতো করে বড় করেছে। অভ্র আর অর্ঘমার সম্পর্কটা বেস্টফ্রেন্ডের মতো। দু’জনই দু’জনকে নিজেদের সব কথা শেয়ার করে। আবার যেকোন বিষয়ে দু’জন একে অপরের রায় জেনে তারপর কাজ করে। এজন্যই অর্ঘমার সবথেকে বড় দূর্বলতা তার ভাই অভ্র। অভ্ররও সবথেকে বড় দূর্বলতা তার ছোট বোন অর্ঘমা।

মায়ের ফোন পেয়ে এক প্রকার হন্তদন্ত হয়েই ফিরেছে অভ্র। বাসার সামনের গলির মাথায় এসে দোকান থেকে দুইটা আইসক্রিম, চিপস, চকলেট আর একটা ডিউয়ের বোতল নিয়ে দোকানিকে টাকা দিতেই অভ্রর ফোন বেজে উঠল। ফোন হাতে নিয়ে বন্ধুর কল দেখে ব্যাগটা এক হাতে নিয়ে অপর হাতে কল রিসিভ করে কানে ধরলো। বাসার দিকে হাঁটতে হাঁটতে ফোনে থাকা বন্ধুকে জানাল অর্ঘমার বিষয়টা। অতঃপর কল কেটে বাসায় ঢুকল।

অভ্র অর্ঘমার রুমে ঢুকে দেখে অর্ঘমা উবু হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। তার পরনে এখনো স্কুল ড্রেস রয়েছে। কাছে এসে অর্ঘমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-“কী হয়েছে বুড়ি?”
ভাইয়ের গলা শুনে উঠে বসল অর্ঘমা। অভ্র তার হাতের ব্যাগটা অর্ঘমার দিকে এগিয়ে দিতেই অর্ঘমা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসল। তার একটু মন খারাপ হলেই অভ্র তার পছন্দের সকল খাবারের জিনিস নিয়ে আসবে তার মন ভালো করার জন্য। ব্যাগটা নিয়ে পাশে নামিয়ে রাখল। অর্ঘমার সামনের চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে অভ্র জিজ্ঞেস করল,
-“কী হয়েছে বললি না তো?”
-“আমার স্কুলের সামনে একটা ছেলে তার দলবল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমার জন্য বলেছিলাম তোমায়।”
-“হ্যাঁ। কী করেছে ওই ছেলে? ডিস্টার্ব করেছে! কিছু বলেছে তোকে?”
-“আমি তাকে কয়েকবার রিজেক্ট করেছি। এরপর সে দাঁড়িয়ে থাকলেও আমাকে আর ডিস্টার্ব করত না কখনোই। কিন্তু আজ ফুচকা খাওয়ার পর টাকা দিতে গিয়ে শুনি সে ফুচকাওয়ালাকে একশো টাকা দিয়ে রেখেছে আমার জন্য। আমি কেন নিব তার টাকা? আমি কি তাকে চিনি! এই নিয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ফুচকাওয়ালা আঙ্কেল আর ওই ছেলেকে ইচ্ছা মতো ঝেড়ে এসেছি। আমার রাগ লাগছিল প্রচুর।”
অভ্র উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-“আজকে ওই ছেলেকে আমি পিষেই ফেলবো।”
অভ্র যেতে গেলেই অর্ঘমা তার হাত ধরে থামাল। বলল,
-“আগেই ঝামেলা করো না ভাইয়া। আমি তাকে ওয়ার্নিং দিয়ে এসেছি। আর কখনো যদি সে এমন কিছু করে বা আমাকে ডিস্টার্ব করার চেষ্টা করে তাহলে তুমি তাকে যা মন চায় করো। আমি তখন আর কিছু বলব না।”
-“কিন্তু!”
-“কোনো কিন্তু না। যাও গিয়ে চেঞ্জ করে, গোসল করে এসো। তিনটা বাজতে চলল। খিদে পেয়েছে আমার। তোমার সাথে খাবার খাব।”
-“আচ্ছা।”
অভ্র চলে যেতেই জামাকাপড় নিয়ে গোসলে ঢুকল অর্ঘমা। ভাইয়ের সাথে কথা শেয়ার করে এখন তার অনেকটা হালকা লাগছে। রাগটাও কমে গিয়েছে।

অর্ঘমা আজকে আর প্রাইভেট পড়তে গেল না। বিকেলে অভ্রকে নিয়ে ছাদে এসেছে। এ বাসার ছাদে এই প্রথম আসলো তারা। ছাদটা সুন্দর। গাছগাছালি আছে কিছু। সবই ফুলের গাছ। এগুলো সব বাড়িওয়ালাদের। কারণ তারা বাসা দেখার সময়ই বাড়িওয়ালী জানিয়ে দিয়েছিলেন ছাদে কোনো গাছ লাগানো যাবে না। ছাদে শুধু তাদের লাগানো গাছ আছে। ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে দুই ভাইবোন মিলে গল্প করছিল। একটু পর পর দমকা হাওয়া বইছে। অভ্র অর্ঘমাকে ফোনে কিছু একটা দেখাচ্ছে। তা দেখে পেট চেপে জোরে জোরে হাসছে অর্ঘমা।

অভ্র খেয়াল করল ছাদের দরজার সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। অভ্র নিজেও ভ্রু কুঁচকে তাকাল তার দিকে। অর্ঘমা হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“কী হয়েছে?”
অভ্র ফিসফিস করে বলল,
-“কে এই ছেলেটা? এভাবে তাকিয়ে আছে কেন আমাদের দিকে?”
অর্ঘমা ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার সামনে নীরদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফিসফিসিয়ে বলল,
-“এটাই বাড়িওয়ালার ছেলে। আমার ক্রাশ বয়।”
অভ্রর কুঁচকানো ভ্রু এবার নীরদের থেকে সরে অর্ঘমার দিকে স্থীর হলো। আবারও নীরদের দিকে তাকাল। তখনো নীরদের দৃষ্টি তাদের দিকেই স্থীর। অভ্র বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল,
-“কী ভাই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
নীরদের সোজা প্রশ্ন,
-“আপনি কে?”
অর্ঘমা নীরদের কঠিন গলার স্বর শুনে প্রথমে ভরকালো। পরক্ষণেই তার মনে হলো হয়তো নীরদ তাদের ভুল বুঝছে। তাই সে বলল,
-“ও আমার বড় ভাই অভ্র। আপনাদের সম্ভবত এখনো দেখা হয়নি একে অপরের সাথে।”
নীরদের কুঁচকানো ভ্রু শিথিল হলো। ভদ্রতাসূচক হেসে এগিয়ে এসে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আসলে অচেনা কাউকে দেখলে আমার রিয়্যাকশন এমনই হয়। কিছু মনে করবেন না।”
-“ইট’স ওকে।”
-“আমি নীরদ। তিন তলায় থাকি।”
-“বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের ছেলে?”
-“জি।”
-“আমি অভ্র। তোমাদের বাসার চারতলার নতুন ভাড়াটিয়া।”
অর্ঘমা ভ্রু কুঁচকে অভ্র আর নীরদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা দু’জন খোশ গল্পে মেতে আছে। বিরক্তবোধ করল অর্ঘমা। সে সামনে থাকাকালীন যদি কেউ তাকে বাদ দিয়ে কথা বলে বা গল্প করে তাহলে সেটা তার একদমই পছন্দ নয়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দু’জনের খেজুরে আলাপ শুনে হনহনিয়ে চলে গেল। নীরদ সেদিকে তাকিয়ে বলল,
-“আপনার বোন কী রাগ করে চলে গেল?”
-“মনে হয়। আসলে ও সামনে থাকাকালীন যদি কেউ ওকে ইগনোর করে অন্য কারো সাথে গল্পে মশগুল হয়ে থাকে তাহলে ও সেটা পছন্দ করে না। সহ্যই করতে পারে না বলা যায়।”
-“ওহ আচ্ছা।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই অভ্র এবং নীরদের মাঝে বেশ ভালো সখ্যতা হয়ে গেল। যদিও অভ্র নীরদের থেকে বয়সে বড় আর তার গ্র্যাজুয়েশনও শেষ।

সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা করে পড়তে বসেছে অর্ঘমা। তখনই অভ্র এলো তার রুমে। ফোনটা অর্ঘমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“রিয়া কথা বলবে তোর সাথে।”
-“দাও।”
রিয়া অভ্রর গার্লফ্রেন্ডের নাম। অর্ঘমার সাথে রিয়ার খুব খাতির। বেশ কিছুক্ষণ রিয়ার সাথে কথা বলে ফোনটা অভ্রকে দিয়ে দিল। রুম ছেড়ে যাওয়ার আগে প্যান্টের পকেট থেকে একটা কিটক্যাট বের করে অর্ঘমার বইয়ের উপর নামিয়ে রেখে চলে গেল। তা দেখে হাসল অর্ঘমা।

পরের দিন সকালে স্কুলের জন্য অর্ঘমা তাড়াতাড়ি বের হলো। তিন তলার সিঁড়ির সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল নীরদের আশায়। কিন্তু তাকে নিরাশ হতে হলো। আজ আর নীরদের দেখা পাওয়া গেল না। নীরদের উপর তার খুব রাগ হলো। যাওয়ার সময় তিন তলার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রেগে একসাথে ছয়-সাত বার বেল চেপে দৌড়ে নিচে নেমে গেল। নামার সময় বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের চেঁচামেচি তার কানে এসেছে। রাস্তায় এসে পা দিয়ে মাটিতে দু’বার আঘাত করে হাঁটা শুরু করল স্কুলের দিকে।

আজকে আর ছুটির পরে শাকিলকে দেখতে পেল না অর্ঘমা। কিছুটা অবাক হলো। কারণ তাকে দেখার পর থেকে শাকিল একদিনও স্কুলের সামনে আসা মিস দেয়নি। আজ আসেনি দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও পরক্ষণেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। অবশেষে বুঝি তার পিছু ছাড়ল ছেলেটা!

বিকেলে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় অর্ঘমা সাইকেল নিয়ে বের হলো। গত বছর অনেক কান্নাকাটি করার পর অবশেষে তার সাইকেলের আশা পূরণ করেছে তার আব্বু। প্রথম প্রথম সে সাইকেল চালাতে জানত না। অভ্র তাকে একমাস ট্রেনিং দিয়ে শিখিয়েছে সাইকেল চালানো।

দোকান থেকে সেন্টার ফ্রুট কিনে যেতে গেলেই নীরদকে দেখতে পেল। বন্ধুদের সাথে রাস্তার পাশে টং দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে। হাতে রয়েছে চায়ের কাপ। অর্ঘমা সেখান দিয়েই যাবে স্যারের বাসায়। একটা সেন্টার ফ্রুট খুলে মুখে দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল নীরদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে সাইকেল চালিয়ে দ্রুত সেখানে গেল। হকচকিয়ে গেল নীরদ। ব্যাগের চেইন খুলে দুইটা সেন্টার ফ্রুট বের করে নীরদের হাতে দিয়ে বলল,
-“যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, আপনাকে না দিয়ে খেলে আমার পেটব্যথা করবে নিশ্চিত। তাই এগুলো আপনার। আর নজর দিবেন না। ওকে? আসছি।”
নীরদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলে গেল অর্ঘমা। আহাম্মকের মতো কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল নীরদ। তার এক বন্ধুর কথায় হুঁশ ফিরল তার। সেন্টার ফ্রুটগুলোর দিকে তাকিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে রাখল।
-“মেয়েটা কে ছিল রে নীরদ?”
-“আমাদের বাসার চারতলার নতুন ভাড়াটিয়া।”
-“দেখে তো বাচ্চা মনে হলো। তোকে কি সব বলে গেল। চিনে তোকে?”
-“চিনে বলতে তাদের বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের ছেলে আমি। এতটুকুই চেনা পরিচিত।”
-“সেন্টার ফ্রুট কেন দিল তোকে? তুই কি সত্যি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলি?”
-“জাস্ট চোখে চোখ পড়ে গিয়েছিল, এই। আর তাছাড়া গতকাল ছাদে ওর বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল আমার। ভাইয়া বেশ ভালো। তিনিই আগ বাড়িয়ে তার বোনের ব্যাপারে বললেন। মেয়েটা নাকি বেশ দুষ্টু আর চঞ্চল প্রকৃতির। দূরন্তপনায় ঘেরা তার স্বভাব। তাই এই সেন্টার ফ্রুট দেওয়ার বিষয়টা আমার কাছে ওর স্বভাব অনুযায়ী নরমালই মনে হলো।”
-“আচ্ছা, ওর কথা বাদ দে।”
-“ওকে।”

চলবে….#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_৩
.
অর্ঘমারা নতুন বাসায় উঠেছে প্রায় দু’মাস হতে চলল। বিল্ডিংয়ের দোতলার ভাড়াটিয়ার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত পেয়েছে তারা। মূলত ওই আপুর আম্মুর সাথে অর্ঘমার আম্মুর বেশ খাতির হয়েছে গত দু’মাসে। সেই সুবাদেই তারা দাওয়াত পেয়েছে। পরশু বিকেলে বিয়ে। অর্ঘমা ভেবেছিল সে যাবে না। কিন্তু তার মায়ের কয়েকটা ঝারি খাওয়ার পর যেতে রাজি হয়েছে। বলতে গেলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই যেতে রাজি হয়েছে।

নীরদ ছাদে এসেই টের পেল তার ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। সম্পূর্ণ ছাদ বেলী ফুলের ঘ্রাণে ম-ম করছে। ফুল গাছের দিকে এগিয়ে গিয়ে খুশি হলো সে। বেলী ফুল তার ভীষণ পছন্দের। গুনগুন শব্দ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল। কাউকে দেখতে না পেয়ে শব্দের উৎস খুঁজতে লাগল। ছাদের অপর পাশে এসে অর্ঘমাকে দেখতে পেল। এক কর্ণারে বসে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে খাতায় কিছু একটা করছিল সে। নীরদ এগিয়ে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করল। অর্ঘমা উপরে তাকিয়ে নীরদকে উঁকি দিতে দেখে হকচকিয়ে গিয়ে দ্রুত খাতা বন্ধ করল। কান থেকে ইয়ারফোন খুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“উঁকি দিচ্ছিলেন কেন ওভাবে?”
-“কী করছিলে তুমি?”
-“আমি যা-ই করি না কেন, আপনি এভাবে উঁকি দিবেন কেন? জানেন না এটা ব্যাড ম্যানার্স!”
-“তুমি স্কেচ তৈরি করছিলে। আমি ডিস্টার্ব করতে চাই নি। তাই উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলাম। এখন যখন তুমি টের পেয়েই গিয়েছ তখন আর উঁকি দিব না। সরাসরি দেখব এবার।”
হাত থেকে খাতাটা টান দিয়ে নিয়ে নিতেই লাফিয়ে উঠল অর্ঘমা। সে কোনোমতেই নীরদকে খাতাটা দেখতে দিবে না। কিন্তু নীরদ তো নাছোড়বান্দা। সে দেখেই ছাড়বে কি এঁকেছে অর্ঘমা।

অর্ঘমার সাথে নীরদ পারলে সারাক্ষণ একে অপরের পেছনে লেগে থাকে। পান থেকে চুন খসলেই দু’জনের মাঝে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। দু’জন যেন পুরো টম এন্ড জেরী। মাঝে মাঝে অবশ্য অর্ঘমাকে লজ্জা দিতেও ছাড়ে না নীরদ। নীরদ, অর্ঘমা দু’জনই নিজেদের পরিবারের ছোট সদস্য হওয়ার সুবাদে আহ্লাদী আর খুব আদরের। নীরদ বয়সে, ক্লাসে অর্ঘমার থেকে বড় হলেও দু’জনের মাঝে সবসময় বাচ্চাদের মতো কথা কাটাকাটি লেগেই থাকে। তাদের পরিবারও এই ব্যাপারে বেশ ভালো মতোই অবগত হয়েছে গত দু’মাসে। কিন্তু তারা এগুলো স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছেন। অভ্রর কাছে বিষয়টা বেশ কিউট লাগে। নীরদকে তার পছন্দ। অর্ঘমার সাথে নীরদের সম্পর্ক হলে তার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু দু’জনের দেখা হলেই যেভাবে বাচ্চাদের মতো একে অপরের পেছনে লেগে থাকে, তাতে বুঝা মুশকিল যে তাদের ভেতরে আদৌও কিছু হবে কিনা।

নীরদ খাতার প্রথম পেইজ উল্টাতেই অর্ঘমা নিজের জিনিসপত্র নিয়ে খাতা রেখেই দৌড়ে চলে গেল। নীরদ সেদিকে বেকুবের মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও খাতা দেখায় মনোযোগ দিল। খাতার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল নীরদ। স্কেচগুলো দেখে মনে হচ্ছে প্রফেশনাল কেউ করেছে। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো সবগুলো স্কেচ তার। তার বিভিন্ন রকম ভঙ্গিমার ছবিগুলো এঁকেছে অর্ঘমা। স্কেচগুলো ভীষণ পছন্দ হয়েছে নীরদের। তার ঠোঁট কোলে সুক্ষ্ম এক হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। মনে মনে অর্ঘমার আঁকার হাতের অনেক প্রশংসা করল।

গত আধঘন্টা যাবত একটার পর একটা টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে অর্ঘমা বিরক্ত। বিয়েতে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে বসে আছে সে। অথচ তার মায়ের খবর নেই। তিনি এখনো সাজগোজ করতে ব্যস্ত। অভ্র রুম থেকে বেরিয়ে এসে অর্ঘমাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
-“বিয়ে কার? তোর নাকি ওই মেয়ের!”
-“আমি সুন্দর আমি জানি। এত পেঁচিয়ে কথা বলতে হবে না তোমাকে।”
-“কে বলল তুই সুন্দর? তুই তো পেত্নী।”
-“তুমি নিজে কি! যেই না চেহারা, নাম রাখছে পেয়ারা।”
-“আমি জানি আমি অনেক হট এন্ড হ্যান্ডসাম। তাই তো আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।”
-“তোমার ব্রেকআপ করাতে আমার জাস্ট এক মিনিট লাগবে। এখন বাকিটা তোমার উপর ডিপেন্ড করে।”
-“নিজে একটা বয়ফ্রেন্ড জুটাইতে পারোস না দেখে আমার গার্লফ্রেন্ডের দিকে নজর দিতিছিস!”
-“আমাকে কি তোমার লেসবিয়ান মনে হয় যে তোমার গার্লফ্রেন্ডের দিকে নজর দিব?”
অভ্র কিছু বলার আগেই তার মা রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এসে তাড়া দিয়ে বলল,
-“জলদি চল। দেরি হয়ে গেছে অনেক। আপা ফোন দিয়ে পাগল করে ফেলছে।”
-“এত তাড়াতাড়ি কেউ তৈরি হয়? আরেকটু সময় নিতে!”
-“বেশি কথা বলবি না অর্ঘ। নিজে আজকে একটু তাড়াতাড়ি তৈরি হয়েছিস বলে এত কথা বলছিস। এখন চল জলদি।”
গোমড়া মুখ করে জুতো পড়ে ভাইয়ের সাথে নিচে নামল অর্ঘমা। নিচে নামতেই চোখাচোখি হয়ে গেল নীরদের সাথে। তারাও বিয়েতে যাচ্ছে। বাসার বাড়িওয়ালা হওয়ার সুবাদে দাওয়াত পেয়েছে তারা। অভ্র এগিয়ে গিয়ে নীরদের সাথে কুশল বিনিময় করল। নীরদের চোখ মুগ্ধভাবে তাকিয়ে আছে অর্ঘমার দিকে। মেয়েটাকে ভারি মিষ্টি দেখাচ্ছে। লাল রঙের জামার উপরে সোনালি সুতোয় কাজ করা দারুণ একটা গাউন পরেছে অর্ঘমা। মুখে ভারি মেকাপ আর জামার সাথে মিলিয়ে ম্যাচিং জুয়েলারিতে খুব সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে। নীরদের দৃষ্টি কিছুটা বিব্রত করে তুলল অর্ঘমাকে। সে এদিক সেদিক তাকিয়ে অভ্রকে ডেকে নিল। তাদের সাবধানে আসতে বলে অভ্র অর্ঘমাকে নিয়ে রিকশায় উঠে গেল। তাদের বাবা-মা সামনের রিকশায় চলে গেছে ইতোমধ্যে।

বিয়ে বাড়ি মানেই অর্ঘমার কাছে মাথাব্যথার অপর নাম। আর সেই মাথাব্যথা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তো এখানকার আন্টিরা আছেই। একজনের বিয়ে খেতে এসে পারলে তারা নিজেদের ছেলেমেয়ের বিয়েও করিয়ে ফেলে। শুধু নিজেদের ছেলেমেয়ে না, পারলে এরা বাসার কাজের লোকের জন্যও বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। অসহ্য! অর্ঘমা একপাশে চুপচাপ বসে থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে আশেপাশের লোকজনদের কার্যকলাপ দেখছে। অভ্র এখানে এসেই কিছু আন্টিদের কবলে পড়ে গিয়েছিল বলে আপাতত সে নিরুদ্দেশ। আন্টিরা যে কি পরিমাণ ভয়ংকর হয় সেই ধারণা হয়ে গেছে বেচারার। জেনেশুনে নিজেকে বলির পাঠা কে-ই বা বানাতে চাইবে! তাই ভেগে গেছে বেচারা।

পাশে কেউ বসায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে চমকে উঠল অর্ঘমা। নীরদ এসে বসেছে তার পাশে। বিব্রতবোধ করল সে। তার স্কেচবুক নীরদ দেখে ফেলেছে ভাবতেই শরীরে বারবার কাটা দিয়ে উঠছে। না জানে ছেলেটা কি ভাবছে তাকে। অন্য দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসে রইল। নীরদ হালকা গলা ঝেড়ে বলল,
-“মাশাআল্লাহ্।”
অর্ঘমা চোখ বড় বড় করে তাকাল। নীরদ হেসে বলল,
-“তোমার আঁকার হাতের কথা বলছি।”
আবারও মুখ ঘুরিয়ে ফেলল অর্ঘমা। নীরদ কিছুটা এগিয়ে বসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,
-“তোমাকেও কিন্তু দেখতে মাশাআল্লাহ্ লাগছে।”
অর্ঘমা চমকে উঠে শক্ত হয়ে বসে থাকল। নীরদ তা দেখে হেসে বলল,
-“বি ইজি। এমন অদ্ভুত আচরণ করছ কেন? স্কেচই তো করেছ যাস্ট। সত্যি বলতে আমার খুব পছন্দ হয়েছে স্কেচগুলো। আমি তো ভাবছি ওগুলো পেইন্ট করে প্রিন্ট করিয়ে আমার ঘরে রাখবো।”
-“ভদ্রলোকের মতো আমার স্কেচবুক ফেরত দিয়ে দিবেন। কারো পারমিশন ছাড়া তার জিনিসপত্র দেখা ব্যাড ম্যানার্স।”
-“বাহ! আমি তোমার জিনিস হলাম কবে থেকে?”
থতমত খেয়ে গেল অর্ঘমা। আমতা আমতা করে বলল,
-“আমি স্কেচবুকের কথা বলেছি।”
-“ওর ভেতরে তো আমার ছবি ছিল। আর তুমিও কিন্তু আমার অনুমতি ব্যতীত আমার ছবি এঁকেছ।”
-“পৃথিবীতে একই চেহারার ৭ জন মানুষ হয়। আমি তাদের ভেতরে একজনেরটা এঁকেছি।”
-“আর সেই একজনটা আমি।”
-“এঁকেছি তো এঁকেছি। কী করবেন আপনি?”
-“তোমাকে একটা চকলেট দিব। কারণ স্কেচগুলো আমার পছন্দ হয়েছে। তোমার আঁকার হাত কিন্তু দারুণ!”
অর্ঘমা মনে মনে খুশি হওয়ার পাশাপাশি প্রসংশা শুনে কিছুটা লজ্জাও পেল। অনুভব করতে পারল তার গাল গরম হয়ে আসছে। হয়তো লজ্জার লালিমা ছেয়ে গেছে এতক্ষণে গাল জুড়ে। আড়চোখে নীরদের দিকে তাকিয়েই থতমত খেয়ে গেল। নীরদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। অর্ঘমা অধর কামড়ে ধরে মিনমিন করে বলল,
-“পানি খাবো।”
নীরদ উঠে গেল পানির খোঁজে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল অর্ঘমা। ছেলেটা যেভাবে তাকিয়ে ছিল তার দিকে, মনে হচ্ছিল চোখ দিয়েই তাকে গিলে খাচ্ছে।

নীরদ পানির বোতল হাতে নিয়ে অর্ঘমার দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ অর্ঘমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। অকারণে হঠাৎই সে হেসে ফেলল। আর দাঁড়িয়ে না থেকে পানির বোতল নিয়ে এগিয়ে গেল। পাঁচ-সাত হাত দূর থেকেই খেয়াল করল একজন মহিলা এসে পাশে বসলো অর্ঘমার। নীরদ আবারও দাঁড়িয়ে গেল। তার কপালে ভাজ পরলো। মহিলাটির উদ্দেশ্য কিছুটা আন্দাজ করে আর সামনে গেল না। উল্টো ঘুরে অর্ঘমার চেয়ারের পেছনের চেয়ারে গিয়ে বসলো তাদের কথা শোনার জন্য।

পাশে বিয়ে বাড়ির এক আন্টিকে বসতে দেখে অর্ঘমা যারপরনাই বিরক্ত হলো। এখন এই মহিলা হয়তো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দিবে। কিছুক্ষণ পর অর্ঘমার ভাবনাকে সত্যি প্রমাণিত করে মহিলাটি হাসি হাসি মুখ করে বললেন,
-“তুমি কোন পক্ষ?”
-“মেয়েপক্ষ।”
ছোট জবাব অর্ঘমার। মহিলাটি আবারও জিজ্ঞেস করলেন,
-“তুমি কী হও কনের?”
-“আমরা একই বিল্ডিংয়ে থাকি।”
-“ওহ আচ্ছা। কিসে পড়?”
-“আপনার ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে?”
থতমত খেয়ে গেলেন মহিলাটি। হালকা বিব্রত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
-“হ্যাঁ, কেন?”
-“আমার মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজছি তাই।”
মহিলাটি চমকালেন সাথে ভরকালেন। অবাক হয়ে অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“তোমার মেয়েও আছে?”
-“হ্যাঁ। মেয়েটা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে।”
-“বলো কি! বয়স কত তোমার? তোমাকে দেখেই তো মনে হচ্ছে না তুমি অনার্সে পড়। তাহলে তোমার মেয়ে অনার্সে পড়ে কীভাবে?”
-“চেহারা দেখে তো সঠিক বয়স সহজে বিচার করা যায় না।”
মহিলাটির ফ্যাকাসে চেহারা দেখে মনে মনে খুব হাসল অর্ঘমা। আচ্ছা শিক্ষা দেওয়া গেছে মহিলাকে। বিয়ে বাড়িতে বিয়ে খেতে এসেছিস। তাহলে বিয়ে খেয়েই বিদায় হ! তা না করে আরেকজনের মেয়েকে নিয়ে টানাটানি করবি কেন তুই? অসহ্য সব লোকজন। মহিলাটি কিছুক্ষণ ইতিউতি করে বললেন,
-“তোমার মেয়েকে দেখা যাবে?”
-“আমার মেয়ে তো বিয়েতে আসেনি। আসলে ওর বিয়ে বাড়ি পছন্দ নয়। এখানের আন্টিদের ও একদম পছন্দ করে না। একজনের বিয়ে খেতে এসে আরেকজনের ছেলেমেয়েকে নিয়ে যখন বিয়ে বাড়ির আন্টিগুলো টানাটানি করে তখন ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তাই ও আসেনি।”
মহিলাটি এবার চুপসানো চেহারা নিয়ে আমতা আমতা করে বললেন,
-“আচ্ছা, তাহলে আমি উঠি। একটু স্টেজের দিকে যাই।”
-“আচ্ছা।”
মহিলাটি তড়িঘড়ি করে সরে পড়লেন অর্ঘমার সামনে থেকে। মহিলাটি চলে যেতেই অর্ঘমা হো হো করে হেসে ফেলল। পেছন থেকে হাসির আওয়াজ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নীরদ বসে পেটে হাত চেপে হাসছে। অর্ঘমা কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে নিজেও হেসে ফেলল।

চলবে….

নোটঃ গল্প যাদের কাছে পৌঁছাবে, তারা সবাই রেসপন্স করবেন প্লিজ। পেইজের রিচ অনেক কমে গিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here