কিসসাপূরণ পর্ব -শেষ

#কিসসাপূরণ
#শেষ_পর্ব
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আজকের মত এতটা কড়া ঝটকা বোধহয় আবার ইহজন্মে খায়নি। বিয়ের পালা চুকাতেই আজ হুট করে জুনায়েদ আভার ঘরে আসলেন। আভা তখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাবাকে দেখে আভা চটজলদি উঠে বসে সালাম দিল। আভার বাবা ধীরেসুস্থে চেয়ারে বসলেন। আভা বললো,
— কিছু বলবে, বাবা?
আভার বাবা মুচকি হাসলেন। কোনপ্রকার ভনিতা ছাড়া সোজাসাপ্টা বললেন,
— আভা, আহনাফকে তোমার কেমন লাগে?
আভা বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে গেল। চোখ বড়বড় করে বাবার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল,
— মানে?
— মিনহাজের বন্ধু, আহনাফকে তোমার কেমন লাগে?
আভা হঠাৎ করেই চুপ হয়ে গেল। কি বলবো কথা খুঁজে পেলো না। জুনায়েদ মেয়েদের দিকে এখনো প্রশ্নবোধক চোখে চেয়ে আছেন। আভা মিনমিনিয়ে বললো,
— ভালো।
জুনায়েদ যেনো স্বস্তি পেলেন। ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
— আমরা যদি তোমার বিয়ে আহনাফের সাথে ঠিক করি, তোমার কোনো আপত্তি আছে তাতে?

আভার বিস্ময়ের মাত্রা এবার সীমানা পেরুলো। সে নিজের কানকেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। যাকে এতটা দিন ধরে ভালোবেসে এসেছে, তার সাথে আভার বিয়ে? আভার মনে হচ্ছে, ও মাথা ঘুরিয়ে যেকোনো সময় মূর্ছা যেতে পারে। আভাকে চুপ থাকতে দেখে জুনায়েদ আবার বললেন,
— বলো, তোমার কি মতামত এতে?
বাবার গুরুগম্ভীর কথা শুনে আভা ভাববার অবকাশ পেলো না। ছোট করে বললো,
— আ-আমার কোনো আ-আপত্তি নেই।

জুনায়েদ হাসলেন। যেনো মেয়ের মুখে এই কথাটারই তার আশা ছিলো। জুনায়েদ উঠে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আশ্বস্থ করে বললেন,
— চিন্তা করো না। তোমার ১৮ বছর হলেই আমরা বিয়েটা দেবো। ততক্ষণ আমাদের মেয়েকে আমরা ছাড়ছি না। ঠিক আছে?

আভা লজ্জা পেয়ে গেলো। মাথা নত করে রইলো অনেকক্ষণ।
জুনায়েদ ঘর ছেড়ে চলে যেতেই আভা মাথা তুললো। লজ্জায় তার কোমল গাল জোড়া ফুলে গেছে। চোখ তুলে ততাকাতে অব্দি পারছে না ও। আহনাফের সাথে তার বিয়ে? এত স্বপ্ন সদৃশ।
হঠাৎ আভার মোবাইল মেসেজ এলো। আভা ভ্রু কুঁচকে মেসেজটা অপেন করতেই চোখে পড়লো এক মহা সুন্দর লেখা,
‘ এখন অপেক্ষা শুধু তাকে কাছে টেনে নেওয়ার। আমার আর তর সইছে না, বউফ্রেন্ড। কবে আসবে আমার রাজ্যে রানী হয়ে? এতদিন কথাটা বলতে দ্বিধা ছিলো। কিন্তু আজ সেই দ্বিধা, জড়তার সুতো ছিন্নভিন্ন করে বলছি, ভালোবাসি।

সম্পূর্ণ মেসেজটা পড়ে আভা কেপে উঠলো দ্বিগুণ বেগে। লজ্জায় তার সর্বাঙ্গ শিরশির করে উঠলো। সেও আভাকে ভালোবাসে? দুহাতে মুখে ঢেকে নিয়ে লজ্জা লুকানোর চেষ্টায় মত্ত হয়ে গেলো এই কিশোরি প্রেমিকা। ইশ, কি লজ্জা!
_________________________
অতঃপর, সে দিন এলো। আভা বাসর ঘরে বসে আছে তার প্রিয় মানুষটির অপেক্ষায়। সে আসবে, আভার কাছের মানুষ হয়ে। আভার কি হবে তখন? অতি সুখে আভার না মৃত্যু হয়! ইশ! লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে আভার।

দরজায় সিটকিনি আটকানোর শব্দে আভার ধ্যান ভাঙলো। ঘোমটার আড়ালে আহনাফের চেহারা দেখে আভার গলা নিমিষেই শুকিয়ে খা খা হয়ে গেলো।

— মিসেস আহনাফ, পায়ে ধরে সালাম দিবেন না?
আহনাফের কথা শুনে আভা সম্ভিত ফিরে পেলো। মনে পড়লো, একটু আগে আহনাফের দাদী তাকে এ কথা বলেছিলেন। স্বামীর পায়ে ধরে সালাম দিয়ে দোয়া নিতে। ইশ, আভা তো ভুলেই গেছে। আভা দেরি না করে উঠে দাড়ালো। আহনাফের পায়ের দিকে ঝুঁকে সালাম করতে উদ্যত হলে, আহনাফ হুট করেই আভার দেহখানা নিজের মাঝে আবদ্ধ করে নিল। আহনাফের আচমকা এভাবে জড়িয়ে ধরাতে আভার রুহ অব্দি কাপিয়ে তুললো। সে চুপটি করে মিশে রইলো আহনাফের বুকের সাথে। আহনাফ আভাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কতগুলো দোয়া পড়ে আভার মাথায় ফু দিল। আভার চুলে ঠোঁট বসিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
— আমার বউফ্রেন্ড।
আহনাফের কণ্ঠে এহেন আদুরে ডাক শুনে আভার মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেলো। চুপটি করে মিশে রইলো নিজের প্রিয়তমের সাথে।

— আচ্ছা, আপনি কেনো এতদিন নিজেকে এভাবে আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছেন।

বারান্দাতে চায়ের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে আভা প্রশ্নটা করলো। আহনাফ হাসলো একটুখানি। বললো,
— কারণটা হলো, আপনি একদম পিচ্চি ছিলেন। ভালোবাসার মানে বুঝার মত মন আপনার তখনও হয়নি। তোদের বাসার সবাই জানতো আমার ফিলিংসের কথা। শুধু তুইই জানতি না।

এতবড় ধোঁকা? আভার মুখ ফুলে হুতুম পেঁচার মত হয়ে গেল। আভার এমন মুখ ফোলানো দেখে আহনাফ হেসে ফেললো। আভার গাল টেনে বললো,
— মুখ ফুলিয়ে রাখিস না তো। স্ট্রবেরি স্ট্রবেরি মনে হয়।

আহনাফের কথা শুনে আভার ফুলানো মুখ বেলুনের মগন চুপসে গেল। অথচ সেই চুপসে যাওয়া মুখে জন্ম নিল অজস্র লজ্জা। ইশ, মানুষটা এত লাগামহীন কেনো?

#সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here