কি ছিলে আমার গল্পের লিংক | রুবাইবা মেহউইশ | পর্ব -০১

“এইযে মিস একটু চিনি হবে?”

“চিনি!”

“চিনি চিনেন না?”

“আপনাকে চিনতে পারছি না।”

“ওহ বলতে ভুলে গেছি আমি আপনাদের ভাড়াটিয়া। মানে আপনি যদি মুজিব আঙ্কেলের মেয়ে হয়ে থাকেন তাহলে। আম্মা ব্যস্ত তাই আমাকেই পাঠিয়েছে চিনি নিতে।”

“আচ্ছা দাঁড়ান।”

কথাটা বলেই মৈত্রী দরজা থেকে সরে ভেতরে চলে গেল। মিনিট দুয়ের মধ্যেই সে হাতে বাটি ভরে চিনি এনে দিলো দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ছযুবকটিকে৷ মৈত্রীদের নিচতলায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে আজ। ভাড়াটিয়া বলতে তার বাবার পরিচিত কেউ একজন সপরিবারে এসেছে৷ সেই পরিবারে একটি ছেলে আছে৷ যে কিনা বেসরকারি এক কলেজের শিক্ষক এ কথা জানে মৈত্রী। কিন্তু ছেলেটি যে দেখতে এমন বাউণ্ডুলে আর খে-চর টাইপের হবে তা ধারণার মধ্যে ছিলো না। সে চিনি ভর্তি বাটি এগিয়ে দিতেই ছেলেটি চোখ দুটো টেনে ঝকমকে হাসি দিয়ে বলল, “আরেহ বাহ্ আপনি তো দারুণ দয়াবতী দেখছি। একটু চিনি চেয়েছিলাম আপনি একদম বাটি ভরে এনেছেন৷ বোঝা গেল আপনি খুব…. বুঝে নিবেন!”

ছেলেটির এহেন কথাবার্তায় অবাক হতে গিয়েও হতে পারেনি মৈত্রী। সে নরম আর মুখচোরা স্বভাবের। সহজেই কিছু সহজভাবে নিতে পারে না। ছেলেটি তার আচরণে বুঝতে পারলো মেয়েটি তার সাথে কথা বলতে চাইছে না সেজন্যই চিনির বাটি নিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। যেতে যেতে বলে গেল, “আবার আসবো কোন কিছুর প্রয়োজন পড়লে তখনও এমন ওপেন-হার্ট থাকবেন প্লিজ।”

মৈত্রী তাকিয়ে ছিলো ছেলেটির যাওয়ার পথে। পেছন থেকে রোকসানা বেগম জিজ্ঞেস করলেন, “কে এসেছিলো মৈত্রী?”

-নিচতলার ভাড়াটিয়া।

-কেন?

– চিনি চাইতে।

মৈত্রী সদর দরজা লাগিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। রোকসানা বেগম মৈত্রীর সৎ মা তবে সম্পর্কটা তাদের মধ্যে সৎ বা আপনের মত না। কিছুটা খাপছাড়া আর আবেগহীন তবে এতে মৈত্রীর জীবনে কোন অনুভূতির প্রকাশ নেই। না দুঃ-খ না আনন্দ সে স্বাভাবিক সর্বাবস্থায়। আজ রবিবার তার ক্লাস আছে বলে আর দাঁড়ালো না সে। নিজের ঘরে ঢুকে বোরকা পরে হিজাব বেঁ-ধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আজ আব্বুর হয়ত খেয়াল ছিলো না তাই টাকা দিয়ে যায়নি। মৈত্রী বাড়ির গেইট পার হতে গিয়ে হঠাৎ কারো সাথে ধা- ক্কা লাগায় ক- কিয়ে উঠলো। ধা* ক্কাটা ঠিক বিপরীত দিক থেকে কেউ একজন আসার ফলেই লেগেছে। কপালে হাত ঘষতে ঘষতে মৈত্রী সামনে তাকিয়ে দেখলো সামনের ব্যক্তিটি থুতুনি ঘষছে তার দিকে তাকিয়ে। থুতুনি ছেড়ে এবার মুখের দিকে তাকালো সে লোকটার। এই চোখ তু’লে তাকানোটাই বুঝি বি-প-দ হলো! পুরু ভ্রুদ্বয়ের নিচে সফেদ দুটো চোখ ঠিক যেন সাদা আদুরে বিড়ালের নিষ্পা*প চোখ। সামনের ব্যক্তিটি মৈত্রীর চোখ দেখেই বুঝি একটু অপ্রস্তুত হলো। গেইটের এক পাশে দাঁড়িয়ে স্য-রি বলে মৈত্রীকে বেরুবার জায়গা করে দিলে। লজ্জা এতে মৈত্রীও পেল কিছুটা তবে সেই লজ্জার রেশ তার চেহারার দৃশ্যমান হলো না। মৈত্রী একটুখানি এগিয়ে আবার থামলো। ব্যাগের ছোট পকেটটাতে চেক করলো, নাহ আছে চল্লিশ টাকা। এতেই হয়ে যাবে বাস পেলে। মহল্লা ছেড়ে মেইনরোডে উঠে অপেক্ষা করতে হলো পাঁচ সাত মিনিট তারপরই বাস পেলো।

_______

“কিরে ময়ূখ তোকে বলেছি এককেজি চিনি আনতে তুই এমন বাটিতে করে চিনি কোথায় পেলি?”

ইরিন বেগম প্রশ্নটা করতেই ময়ূখ হি হি করে হাসতে লাগল। তার এই হাসিই বলে দিলো সে কিছু একটা গ- ড়-মি-ল করেছে। সবে মাত্র নতুন ফ্ল্যাটে এসে উঠেছে আজ তারা। ঘরদোর এখনও কিছুই গোছানো হয়নি কিন্তু চা ছাড়া ইরিন বেগমের ঘরের সদস্যগুলো কোন কাজে হাত দিতে পারেন না। কিন্তু নতুন বাড়িতে এসে হুট করেই চায়ের মশলাপাতি খুঁজতে গিয়ে বুঝলেন ময়ূখ আর ইরশাদ উনার রসুইয়ের মশলাপাতির সাড়ে সর্ব-না- শ করে দিয়েছে। তাই ছেলেটাকে পাঠিয়েছিলেন চিনি কিনে আনতে। ইরিন বেগম দেখলেন ইরশাদ এসে ঘরে ঢুকছে তাকেই প্রশ্ন করলেন, “চিনি কোথায় রেখেছিলি তোরা!”

“তোমার গুণধর বা-দ-ড়কে জিজ্ঞেস করো আম্মু।”
শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ইরশাদ চলে গেল খালি একটা ঘরে। ঘরটা তার পছন্দ হয়েছে বলে সকালেই বলেছে এ ঘর তার। কিন্তু সে খেয়াল করেনি সে কলেজে যাওয়ার পরপরই ময়ূখ এ ঘরে তার গিটার আর পিসি রেখে গেছে মানে এ ঘরটা তার চাই। ইরশাদ শার্ট,প্যান্ট বদলে ড্রয়িংরুমে ঢুকলো৷ ময়ূখ কাজকর্ম ফেলে সোফার ওপর গা এলিয়ে ছিল তা দেখে ইরশাদ গিয়ে ধা- ক্কা মেরে তাকে ফ্লোরে ফেলে দিল।

“আহ্ ভাই ধা-ক্কা দিলা ক্যান।”

ইরশাদ জবাব দিলো না। সে প্রথমেই তার পড়ার টেবিলে হাত দিল। ময়ূখ বুঝলো আর বসে থাকা যাবে না৷ ব্যস দু ভাই হাতে হাতে ফার্নিচার গুলো নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে শুরু করল। ইরিন বেগম ততক্ষণে চা আর নুডুলস তৈরি করে নিলেন। এখন আপাতত এসবই খেতে দিবেন ছেলেদের রান্না রাতে করবেন বলে ঠিক করেছেন। ঘন্টা দেড়েক এর মাঝেই বাবা- মায়ের ঘর আর বেলকোনিসহ দ্বিতীয় ঘরটা গোছানো হয়ে গেছে। রুমটা গুছিয়েছে ইরশাদের পছন্দানুযায়ী কারণ ইরশাদের পাখির খাঁচা আর ফুলের টবগুলোর জন্য হলেও বেলকোনিটা লাগবেই। বাধ্য হয়েই ময়ূখকে তৃতীয় এবং ছোট ঘরটাই নিতে হলো। তবুও সে নিতো না যদি না ইরশাদ বলতো, “দু দিন পর আমি বিয়ে করব তখন বউ বাচ্চা নিয়ে বড় একটা ঘর তো আমার লাগবেই তাই না তুই বরং একা মানুষ ওদিকে গিয়ে ম- র।”

ময়ূখ তার ঝাঁকড়া চুলে হাত চালাতে চালাতে বলল, “যাও ভাবীর নামে ছেড়ে দিলাম ঘরখানা এমনিতেও বউ ছাড়াই তোমার বাচ্চার অভাব নেই।” ইরশাদের পাখিগুলোকেই উদ্দেশ্যে করেছে ময়ূখ তা বুঝতে পেরে হো হো করে হেসে উঠল সে।

ক্যাম্পাসের উত্তরে লম্বা একটা পুকুর তার পাড় ঘেঁষে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া আর কদম গাছের সারি। বর্ষায় এ পুকুরের পানি হলদে, লালে সজ্জিত হয় ফুলে ফুলে৷ পড়াশোনা জীবনে মৈত্রীর প্রিয় জায়গা ছিলো স্কুলের লাইব্রেরি আর ইউনিভার্সিটির এই জায়গাটুকু। বন্ধু বান্ধব বলতে দুজন খুব কাছের বান্ধবী হয়েছে তার এই ভার্সিটিতে অথচ গোটা স্কুল আর কলেজ জীবন কেটেছে তার বন্ধুহীন৷ টিউশন পড়াতো যে আন্টি তাকে তিনিই একমাত্র বন্ধু তার শৈশব কৈশোরের। এখন অবশ্য সেই মানুষটার ছায়া পর্যন্ত মাড়ায় না। আজ বান্ধবীরা কেউ আসেনি বলেই একা একা বসে রইলো পুকুরের বাঁধানো ঘাটে। বান্ধবীদের ছাড়া তার ক্লাস করতে ইচ্ছে হয় না একদমই। ক্লাসের অন্যান্যদের সাথে তার একদমই কথা হয় না। অনেকে তাই আড়ালে তাকে ভাবওয়ালী বলেই সম্মোধন করে। পুকুরে শান্ত জল ক্ষণে মৃদু ছন্দ তুলে কেঁপে উঠছে হালকা বাতাসে। মৈত্রী নিষ্পলক চোখে সেদিকে তাকিয়ে ভাবছিল কি করে একটা চাকরি জোগাড় করা যায়! ব্যাগের ভেতর ফোনটা ভাইব্রেশনে তার ভাবনায় ছে-দ ঘটালো। ফোন তুলে কানে নিতেই দেখলো বাবা কল দিচ্ছে। ফোন তুলে সালাম দিতেই বাবা জিজ্ঞেস করলেন, “তুই আমাকে টাকার কথা মনে করাসনি কেন রে! বাবা তো ভুলে গিয়েছিলাম তাই দিয়ে আসিনি।”

“আমি বুঝতে পেরেছি বাবা। আমার কাছে আছে আজ।”

“তুই অপেক্ষা কর আমি তোর ক্যাম্পাসে এসে দিয়ে যাচ্ছি।”

মৈত্রী অবাক হয়নি একটুও বাবা এমনই করে। ভুল করে কখনো টাকা না দিয়ে গেলে কিংবা মৈত্রী কখনো নাশতা না করে এলে বাবা এসে হাজির হয় ক্যাম্পাসে। এই নিয়েও তাদের ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন হাস্যকর কথা হয়। মৈত্রী বাবাকে আটকাতে বলল, “এসো না বাবা আমি বাড়ি ফিরছি।”

“সেকি! আজ ক্লাস নেই?”

“একটা করেছি আর একটা তিনটা থেকে সেটা করব না।”

“আচ্ছা তবে বাড়ি যা আমিও একটু পরই বাড়ি ফিরব। বাপ- বেটি একসাথে লাঞ্চ করব তাহলে।”

বাবাকে বাই বলে ফোন কাটতেই মৈত্রীর চোখে পড়ল নয়নকে। এই ছেলে নিশ্চয়ই এখন তার পথ আটকাবে! ভয়েই আর বসল না সে। নয়ন যেন তাকে দেখতে না পায় এমনভাবে সরে পড়ল জায়গাটা থেকে। মিনিট কতক দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠে পড়লো সে। বাড়ি ফিরে নিজেদের ডোর বেল বাজিয়ে হিজাবের মুখটা খুলছিল সবে । ভেতর থেকে দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সামনে পা বাড়াতে গিয়ে পা থেমে গেল মৈত্রীর।

“ওয়েলকাম হোম মিস।”

“আপনি!”

“আরে আরে ঘরে আসুন আগে পরে কথা। ”

নিজেদের ঘরের দরজা অচেনা একটি ছেলে খুলছে। তাও আবার এমনভাবে ওয়েলকাম বলছে যেন সে নিজেই মেহমান আর ছেলেটিই এ বাড়ির সদস্য। মৈত্রী ভেতরে ঢুকে বসার ঘরের সোফার দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল কিছুটা। সেখানে দু’জন নারী-পুরুষ বসে আছে সাথে আছেন রোকসানা বেগম। তিনি হাসিমুখে গল্প করছেন তাদের সাথে আর এই ঝাঁকড়া চুলের পাগ-লাটে ছেলেটা এসেছে দরজা খুলতে!

“অত কি ভাবছেন মিস আমরা আপনাদের ভাড়াটিয়া। আপনার আম্মু আমাদের লাঞ্চ করার ইনভাইটেশন দিয়েছেন।”

“ওহ” বলেই মৈত্রী নিজের ঘরে চলে গেল। ময়ূখ হা করে সেদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করল, “বাহ্ আজব সুন্দরী তো! সারাক্ষণ কি মুখটাকে অমন বাংলার পাঁচ করেই রাখে নাকি!”

ইরিন বেগম সোফা থেকে গেইটের দিকে তাকালেন ভয়ে ভয়ে। ছেলেটা এত পা-গ-ল যে কখন কি করে বসে সেই নিয়ে ভয় হয় খুব। এই যে, এখনি তো করলো একটা পাগলামি। বাড়িওয়ালা পরিচিত বলে দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণ জানালেন। ইরশাদ আসেনি তাই ইরশাদের বাবা ফখরুল সাহেব, ইরিন বেগম আর ময়ূখ এসেছে লাঞ্চের দাওয়াত গ্রহণ করে। ওদের বাড়ির কলিংবেল বাজছে ছেলে নিজেই উঠে বলল, “আপনি বসেন আন্টি আমি দেখছি কে এসেছে।”
কে জানে বাড়িওয়ালি কি মনে করলো! দুপুর প্রায় আড়াইটার দিকে সকলে ডাইনিংয়ে গেল। মুজিব রহমান বাড়ি আসতে লেট করায় সবাই অপেক্ষা করছিল। এখন সবাই একসাথে টেবিলে বসতেই মৈত্রীকে ডাকলেন মুজিব।
“মৈত্রী আয় তোর আঙ্কেল আন্টির সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”

গোসল সেরে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে বসেছিল মৈত্রী।বাবার ডাক শুনে তোয়ালে রেখে মাথায় ওড়না টেনে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। এক পলক দেখে নিলো ডাইনিংয়ে কে কে আছে। নাহ, সেই পরিবারটি এখনো বসা তার মানে এখনো কেউ খাওয়া শুরু করেনি। মৈত্রী গিয়ে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো নতুন আঙ্কেল আন্টির উদ্দেশ্য। তারা দুজনে সালাম গ্রহণ করে মিষ্টি হেসে তাকেও বসতে বলল, অল্প কথায় পরিচিত হলো তারা। বাবার দিকে তাকাতেই বুঝলো বাবাও তাকে এখন খেতে ডাকছে। মৈত্রী বসল বাবার পাশের চেয়ারটায়। মৈত্রীর ছোট ভাই মিশুও বসেছে খেতে তবে সে খাওয়া কম তার পাশে বসা উ-দ্ভ-ট ছেলেটার সাথে বকবকই বেশি করছে। খাওয়া পাতে এত কিসের গল্প করা! বিরক্ত হয়েই ভাত মেখে মুখে পুরল মৈত্রী। ঠিক সে সময়েই বেজে উঠলো কলিংবেল। রোকসানা বেগম নিজে খাওয়ার পাশাপাশি সবাইকে সার্ভও করছেন তা দেখে মৈত্রী উঠে গেল। বা হাতে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিতেই দেখলো সেই লম্বা করে বিড়ালচোখা লোকটা। ভাতের লোকমা মুখে থাকায় গালদুটো ফুলে আছে মৈত্রীর তা দেখেই কি লোকটা একটু মুচকি হাসলো! অপ্র-স্তুত হলো মৈত্রী লোকটাও বুঝতে পেরে একটা চাবি এগিয়ে দিলো, “আমার আম্মুকে চাবিটা দিয়ে দিবেন।”

কথাটা বলেই ইরশাদ সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে গেল। অবাক হয়ে আছে মৈত্রী, “এ কোন আজব ফ্যামিলি এসে জুটলো এ বাড়িতে!”

চলবে

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-১
(ভু-লত্রু-টি চোখে পড়লে অবশ্যই জানাবেন৷ কোথাও কোন গল্পের সাথে মিল আছে মনে হলেও তা যেন ঠিক করে নিতে পারি সুযোগ করে দিবেন অনুরো-ধ রইলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here