কুঞ্জছায়া পর্ব ১৯+২০

#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব_১৯
(কপি করা নিষেধ)
ছায়া থমথমে মুখ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।ছায়াকে দেখে নীলা আর মেঘা দৌড়ে আসলো।নীলা আর মেঘার চোখে মুখে কৌতূহল।
-এই ছায়া ঠিক আছিস?বল না অরন্য ভাইয়া তোকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল?তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি তো?
নীলা সন্দিহান স্বরে বললো।
মেঘা ছায়ার চোখে শুকিয়ে যাওয়া পানি দেখে তার নিজের উড়না দিয়ে ছায়ার মুখটা মুছে দিলো।ছায়ার এলোমেলো চুল গুলা গুছিয়ে ছায়াকে ধরে নিয়ে বিছানায় বসালো।
-এই নীলা ছায়ার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়তো। জলদি।
নীলা দৌড়ে গিয়ে পানি নিয়ে এসে ছায়ার সামনে ধরে।
ছায়া ঢক ঢক করে পুরো গ্লাসের পানিটা শেষ করে।

-আহান এসেছিলো।সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।ডক্টর অরন্য চৌধুরী তা দেখেই আমাকে নিয়ে গিয়েছিল।কোথায় নিয়ে গিয়েছিল জায়গার নাম জানি না।বেশ দূরে।নদীর পাড়ে।আশেপাশে জংগল ছিলো।মানুষের যাতায়াত বেশ কম।
নীলা আর মেঘা বিস্মিত হয়ে গেলো আহানের কথা শুনে।
-এইবার উপায়?কি ভেবেছিস ছায়া?আমরা তোকে একা ছাড়ছি না।আমরা সাথে আছি।এইবার আহান তোর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
-আমি আর আহানকে ভয় পাই না।এইবার ওর বিচার আমি নিজের হাতে করবো।কালো অধ্যায় যখন আবার উন্মোচিত হতে চাচ্ছে আমি সাহসিকতার সাথে এর মুখোমুখি দাঁড়াবো।তবে এর আগে অরন্য চৌধুরী থেকে অনেক দূরে যেতে হবে।আমি বাড়ি চলে যাব কাল সকালেই।
-অরন্য ভাইয়া তোকে ভালোবাসে ছায়া।কেন মেনে নিচ্ছিস না?এতোটাও কঠোর হস না।আর কতো নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করবি।অনেক তো হলো।
নীলা ব্যথাতুর কন্ঠে বললো।

ছায়া নিশ্চুপ হয়ে গেলো।তার কাছে উত্তর নেই।তার পরিবারকে কি বলবে?আবারও এক কলঙ্ক গায়ে লাগাতে পারে না সে।
….
অরন্য নিজেদের পুরানো বাগান বাড়িতে এসে সেই যে বাগানের দোলনায় বসলো রাত বাড়ছে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কিন্তু অরন্যের উঠার নাম নেই।একদৃষ্টিতে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।আজ আকাশের বুকে চাঁদ নেই।চারিদিকে ঘন কালো অন্ধকার যেমন আধার তার মনে ছেয়ে আছে ঠিক তেমন।
-ছায়াকরী আপনাকে পাবার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমার হৃদয় আর আত্মায় জন্ম নিয়েছে। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে আমি চলে গিয়েছিলাম।কিন্তু দেখুন আমি ভালো নেই।আবারও এসেছি আপনার দ্বারে।খুলে দিন আপনার মনের দ্বার।

কে বলেছে পুরুষ কাঁদে না। তারাও কাঁদে।অতি কষ্ট বিহীন পুরুষ কাদে না।পুরুষের কান্না ভয়ংকর।কারো কান্না দেখা যায়। কারো কান্না দেখা যায় না।খুব নীরবে সংগোপনে কাঁদে। অরন্যের চোখের কোণে চিক চিক করছে স্বচ্ছ অশ্রুর কণা।কি ব্যথাতুর তার দৃষ্টি।
প্রাণ হন্তদন্ত হয়ে অরন্যকে খুজলো।অবশেষে তার বাগান বাড়ি এলো।সে জানে কোথাও খুজে পাওয়া না গেলও অরন্য কোথায় যেতে পারে।
প্রাণ নিঃশ্বব্দে অরন্যের কাধে হাত রাখলো।অরন্য বুঝলো এইটা কে।
-খুব ভালোবাসিস তাই না?
অরন্য নিশ্চুপ থাকলো।ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য অনেক সময় কয়েকটা শব্দ যথেষ্ট নয়।
-বিয়ে করে ফেল তাকে।না মানলে কি করা উচিৎ তোকে নিশ্চয় বলে দিতে হবে না।অনেক তো হলো মন জয় করার চেষ্টা এইবার দেখিয়ে দে তুই কে।
অরন্য এইবার ভালো করে চাইলো প্রাণের দিকে।এই শান্তশিষ্ট ছেলেটা তাকে কি ভয়ংকর প্ল্যান দিচ্ছে।ভাবা যায়!
-আগে আহানের একটা ব্যবস্থা করি।বড্ড বাড় বেড়েছে।আমার আহানকে নরমাল লাগে না।কিছু একটা তো আছে।আগে আহানের সম্পর্কে সব বের করতে হবে।এর আগের বার ছেড়ে দিয়ে ভুল করেছিলাম
প্রাণ ও সম্মতি জানায়। বিষয় বিগড়ে যাবার আগে যা করার করতে হবে।
প্রাণ আশিককে কল দেয়।আশিক ফোন ধরতেই অতি সন্তঃপর্ণে বলে,
-হ্যালো আশিক আহানের বিষয়ে সব বের কর তো।বের করে সব ইনফরমেশন অরন্যকে মেইল করে দিস
-আচ্ছা দোস্ত।আমি খবর নিচ্ছি।আহান আবার কিছু করেছে?
-পরে সব বলছি।আহান যাতে টের না পায়।খেয়াল রাখিস।
প্রাণ আশিকের সাথে কথা শেষ করেই অরন্যকে একবার দেখে নিলো।ছেলেটাকে একা ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না।আজ অরন্যের সাথে এইখানেই থেকে যাবে।কল করে অরন্যের মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলো আজ অরন্য আর সে বাগান বাড়িতে থাকবে।
….
ছায়া এইদিকে সব জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে।কাল সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বে।এক্সাম শেষ।১৩ দিনের ছুটি আছে।কয়েকদিন থেকে আসা যাবে।অরন্যের নজর থেকেও দূরে দূরে থাকা যাবে।আহানের বিষয়টা তাকে ভাবাচ্ছে।বাড়ি গিয়ে কিছু একটা করতে হবে।
নীলার মনটা আজ বেশ খারাপ।ছায়া চলে যাবে এতোগুলা দিনের জন্য।নীলা একা একা এইখানে থাকবে না।তারও বাসায় যেতে হবে।ছায়া একা সব সামলাতে পারবে তো।নীলা এগিয়ে এসে ছায়ার সাথে তার ব্যাগ গুছাতে সাহায্য করছে গুমড়া মুখ করে।
ছায়া লক্ষ্য করলো নীলার মুখটা কালো হয়ে আছে।ছায়া নীলাকে টেনে নিয়ে তার পাশে বসালো।
-মন খারাপ কেনো?আমি কি আজীবনের জন্য চলে যাচ্ছি?
নীলা প্রতুত্তর করলো না।সে একদমই কথা বলবে না ছায়ার সাথে।
-কথা বলবি না?
নীলা এইবারও চুপ।ছায়া এইবার উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
-তেলাপোকা তেলাপোকা। এই নীলা তোর জামার ওইখানে।
নীলা তেলাপোকার নাম শুনে না দেখেই দিলো এক চিৎকার।
-ওমাগো,বাবাগো।তেলাপোকা!তেলাপোকা কোথায়?এই ছায়া সরা সরা।আমি মরে যাবো।
ছায়া বেশ জোরেই হেসে দেয়।নীলা তাজ্জব বনে যায়।সব বুঝতে পারে।তাকে এতোক্ষণ এই মেয়ে বোকা বানাচ্ছিলো আর সে সুন্দর বোকা হচ্ছিলো?
নীলা এইবার ভ্রুকুটি করে তাকালো ছায়ার পানে।ছায়া দাঁত দেখিয়ে হাসলো।
নীলা এই ভেবেই প্রশান্তি পেলো যাক মেয়েটা হাসছে এইটাই বেশি।সে আর মন খারাপ করবে না।
-হয়েছে হয়েছে বুঝেছি।যাচ্ছিস যা ঘুরে আয়।কল দিবি বেশি বেশি।
-তোর বিয়ে দিয়ে দিলে কিভাবে থাকবি আমাকে ছাড়া রে নীলু।
নীলা মুখটা ফুলিয়ে ফেললো।যাক বাবা তার বিয়ে অবধি চলে গেলো এই মেয়ে।
-হুহ তোর ভাসুর অথবা দেবরকে পটিয়ে নিবো নইলে তোর সতিন হয়ে যাবো।তোর এতো ভাবতে হবে না।
ছায়া মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।নীলা তার সতিন হতেও রাজি?
ছায়া নিজের ফোনটা অফ রাখলো।আজ রাতটা নীলার সাথে গল্প করেই কাটাবে।
মনটা কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে।খারাপ কিছু হবে না তো?রিয়াটা কেমন আছে কে জানে?অনেক দিন কথা হয় না।তার এতো ভালো বান্ধবী অথচ একটা ঘটনা সব পালটে দিলো।এই বার ছায়া এর শেষ দেখতে চায়।তাকে সব খুঁজে বের করতে হবে।
#চলবে#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব_২০
(কপি করা নিষেধ)
ছায়া সকাল ৮টার দিকে রওনা দিলো আশুগঞ্জের উদ্দেশ্যে।ট্রেনে যাবে।আগে কমলাপুর স্টেশনে যেতে হবে।সে ব্যাগ হাতে নিয়ে বাইরে বের হলো।নীলা তাকে জড়িয়ে ধরলো।
-সাবধানে যাবি ছায়ু।ফোন দিস পৌঁছে।
ছায়া মাথা নাড়ালো।আর একটা সুন্দর নির্মল হাসি উপহার দিলো।তাকে মেয়েটা কতো ভালোবাসে।সেও নীলাকে বললো,
-আমি সাবধানে যাবো।চিন্তা করিস না।তুইও সাবধানে বাড়ি যাবি।আমাকে কল দিয়ে জানাবি।আমি অপেক্ষা করবো।
দুই বান্ধবীর যেন আত্মার টান।
ছায়াকে বিদায় দিয়ে নীলা নিজের বাসায় যাবে।ছায়া একটা সিএনজি ডেকে ওইটায় বসলো।সিএনজিতে বসে তার চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে এলো।কাল রাতে ঘুমায়নি।নীলার সাথে কথা বলতে বলতে আর সব কিছু গুছাতেই ভোর হয়ে গিয়েছিল।আবহাওয়াটা আজ বেশি ভালো না।মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।বাইরে শো শো করে হাওয়া বইছে।গাছের শুকনো পাতা গুলো উড়িয়ে যাচ্ছে বহুদূর।এটা যেমন বাতাস আর পাতার মজার খেলা।দেখিতো আমাকে কতো দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলতে পারো পাতা বুঝি বাতাসকে এইভাবে বলছে।বাতাস নিজের দাপট পাতাকে দেখিয়ে বলবে হতচ্ছারা বাদর আমার ক্ষমতা তাহলে এই দেখো।এইটা বলেই দাপটের সাথে পাতা গুলোকে অজানা উদ্দেশ্যে উড়িয়ে নিয়ে যায়।পাতা গুলি খিল খিল করে হেসে যাবে।মেঘগুলো ওদের খেলা দেখে হিংসে করবে।আমাকে রেখে কেমন করে খেলছো গো। আমাকে একটু খেলায় নাও না।মেঘ সাথেই সাথেই অশ্রু হয়ে ঝরে পড়বে।
-আপা নামেন।আইসা পড়ছি তো।
ছায়ার তন্দ্রা ভাঙে। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।সে ভাড়া মিটিয়ে গিয়ে দৌড়ে স্টেশনে গিয়ে ছাউনির নিচে আশ্রয় নিলো।তার জামা কিঞ্চিৎ ভিজে গিয়েছে।আশেপাশে মানুষের কলরব।ট্রেন আসতে আরো ১৫ মিনিট বাকি।এতোক্ষণ তাকে অপেক্ষা করতে হবে।সে আগে গিয়ে টিকেট কেটে নিয়ে আসলো।
ভাগ্যিস সিট পেয়েছে।নয়তো দাঁড়িয়ে যেতে হতো।
টিকেট কেটে এসে বেঞ্চে বসে তার চোখ গেলো একটা কপোত কপোতীর দিকে।হয়তো সদ্য বিয়ে হয়েছে।ছেলেটা মেয়েটার শাড়ির কুচি ঠিক করে দিচ্ছিলো আদুরে হাতে।মেয়েটার মুখে তৃপ্তির হাসি।ছেলেটা শাড়ির কুচি ঠিক করেই মেয়েটার পাশে বসলো।মেয়েটাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলো।বাইরে বোধ হয় তুফান আসবে।মেয়েটার চোখে মুখে হালকা ভয় দেখা যাচ্ছে।ছেলেটা মেয়টাকে অভয় দিচ্ছে।হয়তো বলছে,ভয় কিসের মেয়ে।আমি আছি না?
ছায়া তাকিয়ে থাকলো সেইদিকে নিনির্মেষ।সেই দৃষ্টিতে হয়তো ছিলো পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা।
হুইসেল বাজিয়ে ট্রেনের আগমন ঘটলো।ট্রেনের ঝিকঝিক ধ্বনি কর্নগহ্বরে প্রবেশ করছে।ট্রেন থামলে ছায়া ব্যাগ হাতে নিয়ে গিয়ে ট্রেনে ঢুকলো সন্তঃপর্ণে।নিজের সিট খুঁজে পেতেই গিয়ে বসলো।জানালার পাশের সিট পেয়েছে সে।পাশের সিটটা খালি পড়ে আছে।সে ব্যাগ টা জায়গা মতো রেখে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।জানালা দিয়ে বাতাসের ঝাপটা এসে তার গা ছুঁয়ে দিচ্ছে।চুল গুলো বাতাসের তালে উড়ছে।চোখে মুখে এসে পড়ছে।তখনই কেউ একজন এসে হুড়মুড়িয়ে তার পাশের সিটে বসলো।ছায়া তাকিয়ে দেখলো না।যার আসার এসেছে।তার এখন একটা লম্বা ঘুমের প্রয়োজন।
বেশ কিছুক্ষণ ঘুমের পর ছায়ার ঘুম কিছুটা হালকা হলে অনুভব করলো কেউ প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকে দেখছে।
সে চোখটা খুলে পাশে তাকাতেই হকচকিয়ে উঠলো।

-আপনি এইখানে?কীভাবে?

-আপনি ঘাবড়ে যাচ্ছেন কেন মিস?আমার মনে হলো অনেকদিন ট্রেনে উঠা হয় না।তাই চলে এলাম।পাশে লক্ষ্য করতেই দেখলাম আপনার মতো একজন।কিন্তু কিন্তু চিনতে পারলাম না।চুল দিয়ে মুখ ঢাকা ছিলো।

-মিথ্যে বলছেন আপনি।আপনার নিজের গাড়ি থাকতে ট্রেনে কেনো উঠতে যাবেন?আর ট্রেনে উঠবেন তো যাওয়ার আরো অনেক জায়গা আছে।আর বসবেন ভালো কথা তাও আমার পাশের সিটে?

-হুয়াট আ কো-ইন্সিডেন্স মিস।
বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসি দিলো।

ছায়া ফুসঁতে লাগলো।কথা বললেই কথা বাড়বে।তাই আর কিছুই বলল না।

-মিস আপনি কি মানুষকে নিজের বডি শেপ দেখাচ্ছেন?
ছায়ার চোখ বড় হয়ে গেলো।পরে নিজের দিকে চাইলো।বাতাসের জন্য উড়না সরে গিয়েছে গা থেকে।
ছায়া একটা হালকা কাশি দিয়ে উড়না ঠিক করে দিলো।
অরন্য ছায়ার দিকে সরে বসলো।
-দেখুন না মিস আমার ব্যাগ গুলো রাখার জায়গা পাচ্ছি না।ব্যাগ রাখার জায়গাগুলো ফিল আপ হয়ে গিয়েছে।
ছায়া বেশ বুঝলো এইসব তার চালাকি।ছায়া আরেকটু চেপে বসলো জানালার দিকে।আজ যে কার মুখ দেখে উঠেছিলো।তার মনে পড়লো। ঘুম থেকে উঠে সে আয়নায় নিজের চেহারাই দেখেছিল।ছায়ার এখন নিজের কপাল চাপড়াতে মন চাইছে।
ছায়া বিড়বিড় করে বললো,
-অসভ্য পুরুষ।
অরন্য ছায়াকে বিড়বিড়াতে দেখে বললো,
-আপনি কি চাচ্ছেন আমিমি আরেকটু কাছে আসি?আপনার কি খুব শীত করছে?আসুন তো এইদিকে একটু গরম করে দেই।
ছায়া নিজের মুখ চোখ কুচকে বললো,
-অসভ্য পুরুষ। দূরে থাকুন।একদম এইদিকে আসবেন না।আর আমি একদম ঠিক আছি।আমার শীত লাগছে না।

-ওহ আচ্ছা।
এইটা বলেই পানির বোতল হাতে নিলো।পানি খেয়ে বোতলের মুখটা ছায়ার দিকে নিয়েই নাটকীয় ভঙ্গীতে পানিটা ছায়ার কাধে ফেলে দিলো।
-ইশ মিস ছায়া পানিটা পড়ে গেলো।আপনি কিছু মনে করেননি তো?
ছায়ার মেজাজ সপ্তম আকাশে। ইচ্ছা করে পানিটা ফেলে এখন নাটক করা হচ্ছে।ছায়া তাড়াতাড়ি করে উড়না নিয়ে পানি মুছতে শুরু করলো
ছায়া বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
-অভিনয় করবেন না একদম।যান তো। সামনে আরো সিট আছে।ওইখানে বসুন।

অরন্য এইইবার ছায়ার দিকে চেপে বসলো,
-উফফ মিস বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।শীত শীত লাগছে।কবে যে আপনার প্রেমের বৃষ্টিতে সিক্ত হবো।
অরন্যের সংস্পর্শে আসতেই ছায়ার অস্বস্তি হতে লাগলো।সে আরও জড়োসড়ো হয়ে বসলো।

– কি হলো মিস?আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?দেখি তো আপনার চোখ দুটো।হা করুন তো জিহ্বা দেখি।শত হলেও আমি ডক্টর।কাউকে অসুস্থ হতে দেখলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।আসুনতো এই দিকে।

অরন্য কাছে আসতেই ছায়ার ঘাম ছুটলো কপাল বেয়ে।তার বুকের ভিতর ধরফর করছে।সে কি জানে না তরুণীদের খুব কাছে আসতে নেই।
ছায়া অরন্যকে ধাক্কা দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।
-মিস এই অসময়ে আপনি নেগেটিভ ফিল কেন দিচ্ছেন বলুন তো।
অরন্যের কথা শুনে ছায়া বেশ লজ্জা পাচ্ছে।তার দিকে তাকাতে পারছে না।
-নির্লজ্জ,ঠোঁট কাটা পুরুষ।
অরন্য গা দুলিয়ে হাসে।
ছায়া আড়চোখে সেই হাসি দেখে।আহা কি সুন্দর এই সুদর্শন যুবকের হাসি।তার বুকে এসে হানা দিচ্ছে।কি জীবন্ত,স্বচ্ছ সেই হাসি।এই হাসি দেখে কয়েক যুগ পার করে দেওয়া যাবে।আচ্ছা এই মানুষটার আরো কিছু বছর আগে আসলে কি হতো!
ছায়া নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।সে ভুল করছে।নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালে চলবে না।বাকি সময়টা সে চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলো।আর বুকের বাম পাশে চেপে রাখলো কিছু অযাচিত নাম না জানা মিশ্র অনুভূতি।

-খেয়ে নিন মিস।
এক প্যাকেট চিপস,একটা কেকের প্যাকেট আর একটা জুসের বোতল ছায়ার দিকে এগিয়ে দিলো অরন্য।
ছায়া সাথে সাথেই নাকোচ করে দিলো।
-খাইয়ে দিতে হবে?
ছায়া মাথা ঝাকিয়ে না করলো।
-তবে খেয়ে নিন ভালো মেয়ের মতো।খাবারই দিচ্ছি চুম্বন অথবা বিষ দিচ্ছি না।তাই গুড গার্লের মতো খেয়ে নিন।
ছায়ার মুখটা মুহুর্তেই লাল হয়ে গেলো লজ্জায়।ইশশ কি লজ্জা।ছেলেটার মুখে কিচ্ছু আটকায় না।
ছায়া খেলো কিছু।বাকিটা অরন্যের দিকে এগিয়ে দিলো।অরন্য খুশি মনে তা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।প্রিয়তমার হাতে বিষও পান করতে প্রস্তুত।
ছায়া জুসের বোতলে ঠোঁট লাগিয়ে খেলো অর্ধেকটা।বাকিটা রেখে দিলো নিজের কাছেই।
অরন্য সেই আধা খাওয়া জুসটা নিজের মুখ লাগিয়ে খাওয়া শুরু করলো।ছায়া সেটা দেখে চোখ বন্ধ করে জানালার বাইরে মুখ করে রাখলো।

-মিস দেখুনতো এই খানে আপনার ঠোঁটের লিপস্টিক লেগে ছিলো সেটা আমার ঠোঁটে লাগলো নাকি?
ছায়ার কান গরম হয়ে উঠলো।এইসব লাগামহীন কথাবার্তা সে আর নিতে পারছে না।সে চুপ করে রইল।নিজের ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে মুখ করে রইলো।নইলে সু্যোগ পেলেই তাকে আবার অপ্রস্তুত করবে।

#চলবে
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here