কুঞ্জছায়া পর্ব ৩৬+৩৭+৩৮

#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব-৩৬
(কপি করা নিষেধ)
…..
রাস্তার কিনারা ঘেসে দুইটা বিড়াল ছানা মিয়াও মিয়াও করে কাঁদছে।সেই রাস্তায় একটা দুইটা তিনটা করে করে গাড়ি সাই সাই করে চলাচল করছে।যে কোন সময় অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে।ছায়া মেডিকেল কলেজ থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় বিড়াল ছানা দুটোর দিকে নজর যায়।ছায়ার খুব মায়া লাগে।নীলার হাত ধরে ছায়া বিড়াল ছানা দুটোর দিকে অগ্রসর হয়।আদুরে হাত বুলায় বিড়াল দুটোর মাথায়।এইবার বিড়াল দুটো ছোট ছোট চোখ মেলে তাকায় ছায়ার পানে।কিলবিল করে হেঁটে এসে ছায়ার পা ঘেষে দাঁড়িয়ে মিউ মিউ করতে থাকে।
ছায়া আলতো হাসে।

-তোমাদের মা কোথায় বাবু?

-ইশ কি কিউট রে ছায়া বিড়ালের ছানা দুইটা।এইভাবে একা পড়ে থাকলে তো বাচ্চা দুইটার কিছু একটা হয়ে যাবে।
ছায়া নীলার কথায় মাথা নাড়ায়।
-হ্যাঁ।এইভাবে রাস্তায় পড়ে থাকলে যে কোন সময় কুকুর রা হামলা করতে পারে।আবার ছানা দুইটা গাড়ির নিচে পড়ে অ্যাকসিডেন্টও করতে পারে।কিভাবে কাঁদছে বিড়াল দুইটা মনে হয় ক্ষিদে পেয়েছে।তুই দাঁড়া এই খানে আমি রাস্তার ওইপাশের চায়ের দোকান থেকে দুই কাপ দুধ কিনে আনছি।
নীলা ছায়ার কথায় সম্মতি জানায়।
ছায়া রাস্তা পার হতে গেলেই দেখে একটার পর একটা গাড়ি আসছে যাচ্ছে।থামার নাম নেই।রাস্তা খালি হচ্ছে না।ছায়ার চোখে মুখে বিরক্তির প্রজাপতিরা এসে ভর করলো।অরন্য অদূরে থেকে ছায়ার এইসইব দেখে ঠোঁট চেপে হাসে।এরপর এগিয়ে আসে হাতে রোদ চশমাটা ঘুরাতে ঘুরাতে।

-ছায়াকরী আসুন আমার সাথে।আমি পার করিয়ে দিচ্ছি।

ছায়া অরন্যকে দেখেও দেখলো না।

-আপনি কি কানে শুনতে পান না?যতদিন দেখলাম আপনি প্রশ্নের উত্তর দেন না।তাই মনে হচ্ছে আমার কথা আপনার কানেই পৌঁছাতে পারছে না।সো স্যাড।

অরন্য এইটা বলেই মুখটা একেবারেই বাচ্চাদের মতো করে ফেলে।এরপর ছায়ার দিকে তাকিয়ে একটা কিউট স্মাইল দেয়।
ছায়া এইবার বিরক্তভরা চাহনি নিক্ষেপ করে অরন্যের দিকে।
-সেই মেডিকেলের প্রথম দিন থেকে দেখে আসছি আপনাকে। কি চাইছেন বলুন তো?যান এই খান থেকে।আমি নিজে পার হতে পারবো।

-চাওয়ার হিসাবটা তুলা থাক মিস।সময় হলে আমি নিজেই নিয়ে নিবো।আর রাস্তা পার হতে পারলে এতোক্ষণে পার হয়ে যেতেন।এইভাবে কাবাডি খেলতেন না গাড়িদের সাথে।
অরন্য কথা না বাড়িয়েই ছায়ার হাত ধরে গাড়িদের হাতের ইশারা দিয়ে থামিয়ে মুহুর্তেই রাস্তা পার হয়ে যায়।ছায়া হাত ছাড়াতে চাইলেও পারলো না।

-আরে ছায়াকরী আপনি মাঝ রাস্তায় কি মারতে চাইছেন আমাকে?নিজেও মরবেন আমাকেও মারবেন দেখছি। বি এ গুড গার্ল।

-আমার হাত ছাড়ুন।যখন তখন আমার হাত ধরেন কোন সাহসে?ভুলেও আমাকে ছুঁবেন না।

-আরে ছুঁয়েছি কোথায়? আমি ছুঁলে কি আর রাস্তায় অক্ষত থাকতে পারতেন?

ছায়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।ছায়া তৎক্ষণাৎ হাত টান দিয়ে ছাড়িয়ে একহাতে উড়নার কোণা ধরে মুচড়াচ্ছে আর অরন্যের দিকে রাগে কটমট করছে।এইভাবে অচেনা কাউকে এইরকম করে বলতে মুখ কাঁপে না ছেলেটার?ছায়া অরন্যকে একদমই নজর আন্দাজ করে চায়ের দোকানে চলে গেলো।
অরন্য ঠোঁট কামড়ে হাসে।মেয়েটার সাথে লাগতে ভালো লাগছে।এইরকম প্রতিদিন প্রতিদিন লাগলে কেমন হয়?
ছায়া চায়ের দোকানে গিতে দুই কাপ দুধ কিনে আনে।এরপর আবার তার রাস্তা পার হতে হবে।এইবার ছায়া রাস্তা পার হতে যায় কিন্তু দুই হাতে দুই কাপ দুধ।চেষ্টা করেও পারছে না পার হতে।নীলাকে ডাকলেও শুনতে পাবে না গাড়ির আওয়াজ আর মানুষের কোলাহলের জন্য।ছায়া দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগলো কি করবে।
অরন্য ছায়াকে এইভাবে অবলা নারীর ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে পাশে দাঁড়ায়।এরপর ছায়ার উড়নার একসাইড ধরে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
ছায়া ভড়কে যায় অরন্যের উড়না ধরা দেখে।

-আপনি আমার উড়না ধরলেন কেনো? ছাড়ুন বলছি।আমি কিন্তু আশেপাশের মানুষ ডাকবো।

-কুল মিস কুল।আপনার হাত ধরলেও সমস্যা উড়না ধরলেও সমস্যা।রাস্তাটা পার করবো কীভাবে শুনি?।উপকারীর দাম নেই বুঝলেন ছায়াকরী। কই আপনি আমাকে ধন্যবাদ দিতে দিতে গলা শুকিয়ে ফেলবেন।তা না করে আপনি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন?

ছায়ার মুখটা বেলুনের মতো চুপসে যায়।আসলেই ছেলেটা তাকে দুইবার সাহায্য করেছে।প্রথম দিন পড়ে যাওয়া থেকে এখন আবার রাস্তা পার করিয়ে দিয়ে।ছায়া এইবার বাধ্য মেয়ের মতো অরন্যের সাথে গেলো কোন কথা না বলে।

ছায়া গিয়ে দুই কাপ দুধ বিড়ালের সামনে রাখলেই বিড়াল দুটো এগিয়ে এসে জিহ্বা বের করে চেটে চেটে দুধ খাচ্ছে তৃপ্তি সহকারে।কে জানে কতোদিন ধরে ক্ষুধার্ত আছে।
ছায়ার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে ছানা দুটোকে খাওয়াতে পেরে।এইবার বাচ্চা দুটোর একটা ব্যবস্থা করতে পারলেই হয়।
অরন্য এই প্রথম ছায়াকে হাসতে দেখলো।তার গায়ে যেনো একটা শীতল বাতাস বয়ে গেলো।আচ্ছা এই পবন কি মধুমাসের প্রেমের পবন?মেয়েটার হাসিটা কি ভীষণ সুন্দর কোমল পল্লবের ন্যায়।
কিন্তু সব সময় মুখটা বাংলা পাচের মতো করে রাখে।অরন্য এইবার নীলার কাছে গিয়ে বলে,

-তোমাদের বিড়ালদুটোকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।আমি অলরেডি অনলাইনে বিড়ালদের গ্রুপে ছবি পোস্ট করে দিয়েছি।অনেকেই নিতে চাচ্ছে।বিকাল নাগাদ তারা তাদের নতুন বাড়ি পেয়ে যাবে।তোমরা নিশ্চিন্তে বাড়ি যাও।
নীলা অরন্যের দিকে প্রসন্ন দৃষ্টিতে তাকায়।মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
-ধন্যবাদ ভাইয়া।

-ওয়েলকাম।

ছায়া যেনো কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়।সে এইবার অরন্যের দিকে তাকায় আড়চোখে।ছেলেটা বেশ লম্বা,গালে খুচা খুচা দাড়ি।কালো জিন্স আর ধূসর কালারের শার্ট।হাতে সাদা এপ্রোন ভাঁজ করা।অন্য হাতে স্টেথোস্কোপ।

-আমাকে আপনার আড়চোখে দেখতে হবে না ছায়াকরী। আমাকে সামনাসামনি দেখতে পারেন।

ছায়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়।চোখের তারা হয় চঞ্চল।সে নীলাকে তাড়া দেয় জলদি পা বাড়ানোর জন্য।
….
-কি মামা কি দেখতাছি এইসব?তলে তলে কি চলে?
অভীক অরন্যকে দেখে হাসতে হাসতে রসিকতা করে বলে।

-হ মামা অরন্যকে আজকাল ফার্স্ট ইয়ারের মেয়ের
আশেপাশে দেখা যাচ্ছে?ব্যপার কি?

শান্তের সাথে প্রাণ তাল মিলায়।
-হ ঠিক কইছস তোরা।হেতি তলে তলে টেম্পু চালায়।আমরা কইলেই দোষ।এইবার তাইলে অরন্যের মনেও বসন্তের প্রেমের আবির লাগলো।

স্নেহা নিজের ঐতিহাসিক চশমাটা চোখের নিচের দিকে নামিয়ে নাকের ডগায় রেখে।অরন্যের দিকে দুই চোখ দিয়ে জহুরির ন্যায় তাকায়।

-আমার মনে হচ্ছে তুই প্রেমে পড়েছিস ভাই।আমার আর শান্তের প্রেম কাহিনী নিয়ে তোরা আমাকে অনেক লেগপুল করেছিস। একমাত্র মিংগেল আমরা ছিলাম এই গ্যাং টাতে তাই।এইবার তোর পালা কি বলিস?

এইটা বলেই শান্ত আর স্নেহা হাত তালি দেয় এক সাথে।
অভীক,প্রাণ,আনফালরা হৈ হৈ করে উঠে।

অরন্য ওদের কথা শুনে মাথা চুলকায়।যেইখানে এইসব শুনলে সে রেগে যেতো।আজ তার মনে খুশির পবন বইছে।সে কি তবে প্রেমে টেমে পড়েই গেলো?আশ্চর্য!

#চলবে #কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব_৩৭
(কপি করা নিষেধ)
….
দিন লুকোয় রাতের অন্তরালের আধারে।রাত ফুরোয় প্রভাকরের দর্পে ভরা অংশুর আগমনে।কিন্তু রয়ে যায় মনে চাপা নীরব যাতনা।
ছায়া নবীন বরনে গান গাওয়ায় নাম দিলেও মন থেকে রাজি হয়নি।তার ইচ্ছে করছে না এখন আর।নীলা আর মেঘার মন রক্ষার্থে দিয়েছিলো।এইবার বইয়ের ভাজে মুখ গুঁজা ছাড়া আর কি করবে।ছায়া পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালো। তার গায়ের নীল রঙা সালোয়ার কামিজ আর শুভ্র রঙের উড়না
সকালের সতেজ বাতাসে উড়ছে।গায়ে হালকা শীত শীত লাগছে কেমন জানি।গায়ে হাত ঘষে শীত কমানোর চেষ্টা করলো। নীলা বেঘুরে ঘুমাচ্ছে।এতো সকালে উঠা তার কাম্য না।ছায়া একবার বেলকনির বাইরে চোখ বুলায়।বাইরে খালি বিল্ডিং আর বিল্ডিং। অল্প স্বল্প গাছ গাছালিও আছে।ছায়াদের বাড়ির পাশের শিউলি গাছটার নিচে যেতে ইচ্ছে করলো হঠাৎ করে।ছায়া মাথায় উড়না দিয়ে নিচে যায়।ছায়া বাড়ির গেইট পেরিয়ে বের হতেই নজর যায় একটা কালো রঙের গাড়ির দিকে সেই শিউলি ফুলের গাছের নিচে।ছায়ার মনে একটু সন্দেহ তৈরি হলো গাড়িটা কার হতে পারে?এই বাসার কারো হলে গ্যারেজে থাকার কথা।তবে অন্য কারো গাড়ি তাদের বাসার সামনে কি করে?
ছায়া একবার পিছনে ঘুরে দাড়োয়ান মামাকে দেখে নিলো।দাড়োয়ান মামা হালকা তন্দ্রায় আচ্ছন্ন।ছায়া
ভাবলো না আর কিছু। সে দুলতে দুলতে গেলো।নরম ধূসর বাকল বিশিষ্ট শিউলি গাছটির নিচে।শিউলি গাছকে বলা হয় Tree of sorrow অর্থাৎ বিষন্ন গাছ।রাতের বেলা লাল বৃন্তের উপরে সাদা পাপড়ির ন্যায় ফুল ফুটে।সূয্যি মামার আগমনেই ঝরে যায় মাটিতে।সাদা গালিচার ন্যায় মাটিতে বিছানো থাকে শুভ্র ফুলগুলো।শিউলি ফুল শরৎ আর হেমন্তকালে ফুটলেও কোন কোন গাছে সারা বছরই ফুটে।ছায়া গিয়ে শিউলি ফুলের গাছের নিচে দাঁড়ালো। নিচে পড়ে থাকা কিছু ফুল টুকাতে লাগলো।এক মুঠো ফুল নাকের কাছে নিয়ে গিয়ে গন্ধ শুকলো ফুসফুস ভরে।কি মিষ্টি গন্ধ!মনটাই কেমন যেন ভালো হয়ে গেলো।কয়েকটা ফুল কানের কাছে গুঁজে দিলো।কিছুক্ষণ গাছের নিচে বসে থাকলো।নেই কোন যানজট, মানুষের আনাগোনা।
তখনই কানে এলো,

“শিউলি তলায় ভোর বেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা।
শেফালি পুলকে ঝরে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা।”

ছায়া চমকে উঠে।তড়িৎ বেগে পিছনে ফেরে।সেই গাড়ির উইন্ডো খোলা।উইন্ডো দিয়ে মাথা বের করে আছে এক যুবক।অরন্য চৌধুরী?
গায়ে রাতের পোশাক।একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার।
ছায়া চোখ মুখ কুচকে ফেলে।এই ছেলে এইখানে কি করে?
তখনই আবার কানে আসে,

-“চপল বিদ্যুতে হেরি সে চপলার
ঝিলিক হানে কণ্ঠের মণিহার,
নীল আঁচল হতে তৃষিত ধরার পথে
ছুড়ে ফেলে মুঠি মুঠি বৃষ্টি শেফালিকা।”
(কাজী নজরুল)

ছায়ার হাতের ফুলগুলো পড়ে যায়। মনে তৈরী হয় শংকা।
অরন্য হাসে। সেই হাসি যে প্রাণখোলা হাসি।

-আপনি?

-আসতে পারি না?

-কোন বিশেষ কারণ?

-আপনি ছায়াকরী।

ছায়া দ্রুত বেগে বাসার দিকে পা বাড়ায়।অরন্য ছায়ার যাওয়ার পানে চেয়ে রয়।

-ছায়াকরী আপনার জন্য আমার মনে তৈরী হওয়া এই অনুভূতির কি নাম দেওয়া যায় বলুন তো?শুধুই কি ভালোলাগা অর ইজ ইট লাভ?

ছায়া ফ্লাটের দরজা খুব জোড়ে লাগায়।সেই আওয়াজে নীলার ঘুম ভেঙে যায়।নীলা চোখ কচলাতে কচলাতে ছুটে আসে।নীলার জামা কাপড় এলোমেলো।

-কি হয়েছে ছায়া?এতো সকালে কোথায় গিয়েছিলি?আর এতো জোড়ে আওয়াজ হলো?কিছু কি হয়েছে?
ছায়া চুপ করে থাকে।কিছু বলে না।কতোক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দেয়,
-কিছু হয় নি।

নীলাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।নীলা অবাক নয়নে চেয়ে রয়।
….
সকাল এগারোটা ছায়া, নীলা আর মেঘা ক্যান্টিনে বসে আছে।আলোচনার মুখ্য বিষয় হচ্ছে তাদের পারফর্মেন্স।ওদের প্র্যাকটিস আছে আজ।নীলা মেঘা নাচ দিবে।তাই তাদের আজ বিকাল ৫ টা অবধি থাকতে হবে।ছায়া গান দিবে।তাই ছায়ার রিহার্সেল ৪ টার দিকেই শেষ হয়ে যাবে।

-কি খবর ভাবী থুক্কু ছায়া?

ছায়া এইবার কিছুটা অবাক হয়ে স্নেহার দিকে তাকায়।সে কি আজকাল ভুল ভাল শুনছে?আজব
নীলা আর মেঘা ছায়াকে কনুই দিয়ে খোঁচা দেয়।
স্নেহা আবারও বন্ধুসুলভ হেসে এসে ছায়াকে জিজ্ঞেস করে

-শুনেছি তুমি অংশগ্রহণ করছো নবীন বরনে?
ছায়া মাথা দুলায়।

-হ্যাঁ আপু।

-গানে নাম দিয়েছো?

তখনই নীলা আর মেঘা দাঁতগুলো বের করে স্নেহার দিকে চেয়ে গড়গড় করে বলতে থাকে,

-আরে স্নেহা আপু আর বইলেন না।এই মেয়ে নাম দিতেই চায় না।আমরা জোড় করে দিয়েছি।

স্নেহা অমায়িক হাসে।

-খুব ভালো করেছো।যেকোন দরকার হলে আমাকে বলো কেমন!আমাকে তোমাদের বড় বোনের মতোই দেখবে। ঠিক আছে?

গোল গাল চেহারার শুভ্র স্নেহা তাদের ভরসা দেয়।
ছায়া সৌজন্য প্রকাশ করে স্নেহার প্রতি।
নীলা আর মেঘাও বলে,
-জ্বী আপু অবশ্যই।
স্নেহা ঘাড় ঘুরিয়ে একবার গাছের আড়ালে দাঁড়ানো অরন্যকে দেখে নেয়।অরন্য মুচকি হাসে।
…..
একটা হলরুমে ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টরা রিহার্সেল করাচ্ছে।ফার্স্ট আর সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্টরা প্রাকটিস করছে।
ছায়া নিজেও প্রাকটিস করছে গানের যদিও তার একদম ইচ্ছে নেই।ছায়া নিজের রিহার্সেল পুরো না করেই বাড়ির দিকে রওনা হয়।ছায়া মেইন গেইট পেরিয়ে সড়কের দিকে আসতেই কেউ পিছু ডাকে।

-ছায়াকরী!

ছায়া বুঝতে পারে কে ডেকেছে।কিন্তু জবাব দেয় না।
ছায়ার বিরক্ত লাগছে এইসব।সে তো মায়ায় জড়াতে চায় না।কেনো ছেলেটি তাকে পিছু ডাকে বারবার।সে আর কাউকে বিশ্বাসও করতে পারবে না।খুব শিক্ষা হয়েছে তার ভালো মানুষি করতে গিয়ে।জীবনে ঠকে গেলো ভীষণভাবে।
জিন্স আর নীল রঙা টি-শার্ট জড়ানো অরন্য একবার ছায়াকে ভালোভাবে দেখে নেয়। একটা হলুদ রঙা কূর্তি পড়া,চুলগুলো খোলা,উড়না সাইড করে রাখা।মাথার চুলগুলো উড়ছে হালকা বাতাসে।অরন্যের চোখে ঘোর লাগে।মেয়েটা এতো নরমালের মাঝেও খুবই স্পেশাল।
অরন্য হেঁটে গিয়ে ছায়ার পাশে দাঁড়ায়।

-চলুন আমি পৌঁছে দিচ্ছি।

-আমি বলেছি আপনাকে পৌঁছে দিতে?

-সব কি মুখ দিয়ে বলতে হয়?মুখে বলা কিছু শব্দই কি সব?

-হৃদয়ের ভাষা কয়জন পড়তে পারে?

-একবার সুযোগ দেওয়া যায় না?

ছায়া কিয়ৎক্ষণ নীরব থেকে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,

-আপনাকে যাতে আর আমার আশেপাশে না দেখি।
ছায়া চলে যেতে নিলেই অরন্য আবার পিছু ডাকে।

-চলে যাচ্ছেন?

-থাকার কথা ছিলো কি?

-আপনি চাইলেই হয়।

-আমি চাই না।

অরন্য দাঁড়িয়ে থাকে নির্বাক হয়ে।
ছায়া ব্যাগটা খামছে ধরে এগিয়ে যায় সামনের দিকে।তার থামলে চলবে না।এখনও অনেক পথ বাকি।তাকে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হবে।সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে যে।

প্রাণ এসে নীরবে দাঁড়ায় অরন্যের পাশে।

-ভালোবাসিস?

-জানি না।

-আসলেই?

-মন পুড়ে।এতোটুকু জানি এই মেয়েটার বিষন্নতা আমাকে পুড়ায়।মেয়েটার হাসি মুখ দেখলে আমার হৃদয়ে প্রেমের পবন বয়ে যায়।আমি তার হাসিমুখ দেখতে চাই।

-ব্যাটা তোর পিছনে পড়ে থাকা মেয়েরা জানলে নির্ঘাত হার্ট ফেইল করবে যে তুই প্রেমে পড়েছিস খুবই বাজেভাবে।

অরন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে।আদৌ মেয়েটার মন গলাতে সে পারবে তো?
প্রাণ তাকে সাহস দেয়।

-প্রেমে পড়লে মানুষ ভীতু হয়ে যায় শুনেছি।

-যাহ ব্যাটা আমি যথেষ্ট সাহসী।

-আচ্ছা তাই?তাহলে এগোতে ভয় পাচ্ছিস কেনো?

-তুই বুঝবি না।তার সম্পর্কে আমি কিছুই জানতে পারেনি।শুধু এতোটুকু জেনেছি কেউ ছিলো তার জীবনে।

-এখন তো নেই।তবে সমস্যা কোথায়?

-ছায়াকরী নিজেই।মেয়েটা পাথরের ন্যায়।

-তুই না হয় পাথরের বুকে ফুল ফুটাবি।ভালোবাসা দিয়ে সবই সম্ভব।

-আমিও এটাই ভাবছি।যাকে একবার ভালো লেগেছে তাকে আমি ছাড়ছি না দুনিয়া উলট পালট হয়ে গেলেও না।

প্রাণ অরন্যের কাধ চাপড়ে বলে,

-এই না হলে অরন্য চৌধুরী! বাঘের বাচ্চা।

অরন্য হাসে ঠোঁট এলিয়ে।এমন একটা বন্ধু পেয়ে সে আসলেই ধন্য।মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তাকে হাজারো শুকরিয়া জানায় এমন একটা বন্ধু উপহার দেওয়ার জন্য।ভালো বন্ধু জীবনের একটা আশীর্বাদ। ঠিক তেমন খারাপ একটা বন্ধু জীবন ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।আমাদের জীবনে বন্ধু নির্বাচনে খুব সতর্ক হওয়া উচিত।তারা আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে।
#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব_৩৮
(কপি করা নিষেধ)
….
বাহারি রঙের ফুল দ্বারা পুরো মেডিকেল ক্যাম্পাস সাজানো হয়েছে।শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত পুরো ক্যাম্পাস।প্রবীণরা বরণ করে নিচ্ছে নবীনদের ফুল দিয়ে।তাদের কন্ঠে জয়যাত্রার গান।উল্লাসিত আজ প্রতিটা প্রাণ।সবাই আজ নিজেকে সাজিয়েছে মনের সব মাধুরী দিয়ে লাল আর সোনালি রঙ দিয়ে।সব ছেলেরা লাল আর সোনালি কালারের পাঞ্জাবি পড়েছে।আর মেয়েরা সোনালি পাড়ের লাল শাড়ি।

-আরে ভাই তোকে কি সেই লাগছে রে!আমি মেয়ে হলে এখনই তোকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।
প্রাণের চোখ দুটো চক চক করছে উৎফুল্লতায়।
অরন্য চোখ মুখ কুচকে ফেলে প্রাণের কথায়।

-ছেহ!আমাকে কি গে পেয়েছিস?দূরে সর।একদম ঘেষবি না কাছে।

অভীক, শান্ত,আনফাল আর স্নেহা শব্দ করে হেসে ফেলে।অভীক হাসতে হাসতে আনফালের গায়ের উপর পড়ে যায়।শান্ত আর স্নেহার হাসতে হাসতে চোখের কোণায় পানি চলে আসে।
অভীক উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে বলে,

-ব্যাটা প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিলো তোর উপর।খালি ঘেষাঘেষি করতি অরন্যের সাথে কেনো আজ তা নিশ্চিত হলাম।
আরেকদফা হাসির রোল পড়ে গেলো বন্ধুদের মধ্যে।
প্রাণ মুখ ফুলালো।নাকের পাটাতন ফুলে ফেঁপে উঠলো।
প্রাণ নিজের পাঞ্জাবির কলারটা হাত দিয়ে ঠিক করার ভাব নিয়ে অপর হাত দিয়ে কপালের চুলগুলো আওড়ালো।
-এই নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে একা পেয়ে তোরা এইভাবে অত্যাচার করছিস?

আনফাল এইবার মুখ খুলে,
-তোর মতো বুইড়া দামড়া ব্যাটা যদি বাচ্চা দাবি করে নিজেরে তবে বাচ্চাদের অবমাননা হইবো।ঠিক সময়ে বিয়া করলে দুই চাইরটা বাচ্চার বাপ হইতি।

শান্ত এইবার মুখটাকে একটু লাজুক করে বললো,

-প্রাণ কি বাচ্চা পয়দা করবো আমার নিজেরই এখন বিয়া শাদি কইরা বাপ হইয়া যাইতে মন চাইতাছে।কি বলো বেবি?
স্নেহার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিয়ে বলে।
স্নেহা নিজের শাড়ির আঁচলটা হাতে নিয়ে তা আঙুলে পেচাতে পেচাতে গা দুলিয়ে দুলিয়ে বলে,

-আহা বেবি কি যে বলো না!যাও ইশ আমার লজ্জা করে না বুঝি?আসো আমরা আজই বিয়ে করে ফেলি। আমি তো এক পায়ে খাড়া।
শান্ত আঙুলে কিস করে তা উঁচিয়ে স্নেহার দিকে নিক্ষেপ করে।স্নেহা সেই উড়ন্ত চুমো এগিয়ে এসে চট করেই হাত দিয়ে ধরে তা নিজের গালে দেয়।

প্রাণ, অভিক,অরন্য আর আনফাল হা করে তাকিয়ে থাকে। ওদের এইসব নাটকে সবাই অতিষ্ঠপ্রায়।যখন তখন প্রেম শুরু করে দেয়।

-তোদের এইসব নাটক দূরে গিয়া করবি। একদম আমাদের সামনে করবি না।বুঝছিস?আমাগো জ্বলে বাপ।

প্রাণ মুখটা একদম কাঁদোকাঁদো করে ফেলে।
অরন্য এইসব দেখে গা দুলিয়ে হাসে।সেই সাথে তার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো নড়ে উঠে।

প্রাণ চোখ দুটো ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে অভীককে শাসায়।

-তলে তলে মামু তুমিও টেম্পু চালাও অরন্যের মতো।কি মনে করছো আমরা কিছু জানি না?চিপায় চাপায় খাড়াইয়া যে মেঘা রে লাইন মারো তা কি মাইক বাজাইয়া কইতে হইবো।
অভীক চিতাবাঘের বেগে এসে প্রাণের মুখ চেপে ধরে একটা শুকনো হাসি দেয়।

-হে হে হে কি যে বলিস না।যাহ দুষ্টু।

সবাই সমস্বরে বলা শুরু করে কথা সত্য।তাহলে আমরা দুইটা কাপল পাচ্ছি।
সবার মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।বন্ধুত্ব তো এমনই একে অপরের সুখে হাসে আবার একে অপরের দুঃখে কাঁদে।আবার একজন আরেকজনকে পঁচানোর একটা সুযোগও মিস করে না।আবার বন্ধুর বিপদে ঝাপিয়ে পড়তেও দুইবার ভাবে না।
শান্ত অরন্যকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে,

-ওই দেখ ভাই ভাবী আসে।

অরন্য ঘাড় ঘুরিয়ে সেই দিকে তাকায়।মুহুর্তেই তার শরীরে বসন্তের বাতাসের ঝটকা লাগে।বুকে উঠে অবাধ্য অনুভূতিদের উথালপাতাল ঢেউ।সুনামি আসলো এই বুঝি।তার বুঝি আর রক্ষে নেই।আশেপাশের কোন শব্দই কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো না।সব কিছু থেমে গেলো কিছু মুহুর্তের জন্য।বাতাসের গতি বাড়লো।বুকে চাপ অনুভব করলো।চোখ দুটো খালি চেয়ে রইলো সেই লাল রঙা এক মানবীর দিকে।সে এগিয়ে যায় ধীর পায়ে।আজ যেনো তার সমস্ত কায়া কাঁপছে।

-আমার জীবনের জরাজীর্ণতার বিদায়গাথা রচনার রমনীকে জানাই স্বাগতম। যার পদাচরণে অশোকের বন হলো চঞ্চল,বন কিশলয় নেচে উঠলো,উতলা হলো এই অতৃপ্ত মন,হৃদয় হলো অনুভূতির সমুদ্রে উত্তাল তাকে আমার প্রণয় রাজ্যে সু-স্বাগতম।
অরন্য পকেট হাতড়ে বের করলো একটি টকটকে লাল গোলাপ।একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো আশেপাশের সবাইকে।সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে অরন্য আর সেই লাল রঙা মানবীর দিকে।ক্যাম্পাস জুড়ে টানটান উত্তেজনা।
অরন্য একবার চাইলো প্রাণের দিকে।প্রাণ হাত বাড়িয়ে বেস্ট অফ লাক জানালো।
অভীক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ব্র্যাভো জানালো।
শান্ত আর আনফাল সিটি বাজানো শুরু করলো।
অরন্য এইবার চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আবার তাকালো ছায়ার পানে। লাল শাড়ি সোনালী পাড়, চোখে কাজল দেয়া,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক,চুলে গাজরা দেওয়া।চুলগুলো খোলা যা বাতাদের দরুন উড়ছে।কয়েকটা চুল মুখের উপর বারি খাচ্ছে।হাতের চুড়ির রিন রিন শব্দ তার কানের ঝংকার তুলছে।

-চৈত্র মাসের মন পাগল করা হাওয়ায় কাপা এই কুন্তল আমার হৃদয়ে দোলা দিচ্ছে ছায়াকরী। কি করা যায় বলুন তো?প্রলয় দাহের রৌদ্রতাপে আমি আজ জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ।এই তৃষিত মনে শ্রাবণ হয়ে আসুন প্রেম বারিতে মোরে সিক্ত করতে।এই পাগল প্রেমিকের আকুল আবেদন আপনি গ্রহণ করুন ছায়াকরী।

ছায়া নিজের শাড়ির আঁচল চেপে নীলা আর মেঘার দিকে তাকালো।নীলা আর মেঘা চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো।ছায়ার বুকের ভিতর কাঁপন ধরলো।ছায়া ঘামলো দরদর করে।এমন প্রেমিককে ফিরিয়ে দিতে হলে যথেষ্ট সাহসী আর কঠিন হৃদয়ের হতে হয়।সে কতটুকু হতে পেরেছে কে জানে?সে কি পারবে কোন একটা সম্পর্কে জড়াতে?তার আত্মা মন কলংকে জর্জড়িত।তার বিষ বাষ্পে সবার জীবন যে ধ্বংস হয়ে যাবে অরূপদার মতো।সে কি পারে কারো জীবন নষ্ট করতে?আর কোন মুখেই বা বাবা মাকে আবারো আরেকটা ছেলের বিষয়ে বলবে?তার মুখ কাঁপবে না?সে এ কোন অকূলপাথারে পড়লো।ছায়া একবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো।শাড়ির আচল দিয়ে গলদেশ আর মুখের ঘামগুলো মুছে নিলো অতি সন্তঃপর্ণে।চোখ বন্ধ করে অরূপদার মুখটা মনে করে নিলো।তাকে নরম হলে চলবে না।তাকে কঠোর হতে হবে যতটুকু কঠোর হলে কেউ তার কাছে আসবে না।সে নিশ্চিন্তে বাকি জীবন একা পার করতে পারবে।ছায়া চোখ খুলে দেখে নিলো অরন্যকে।একটা লাল পাঞ্জাবি পড়া সুদর্শন যুবক।হাতে ব্রান্ডের ওয়াচ,চুলগুলো কপালে পড়ে আছে,চোখে কি গভীর আকুলতা।
ছায়া হাত বাড়িয়ে ফুলটা নিলো।অরন্যের প্রানে যেনো প্রাণ আসলো।মুখে ফুটলো এক চিলতে হাসি।ছায়া সেইদিকে একবার নজর দিয়ে ফুলটা দুমড়ে মুচড়ে ছিড়ে ফেললো হাত দিয়ে পিষে ।

-আপনাকে বলেছিলাম না দূরে দূরে থাকতে? কোন সাহসে এইসব ফুল দিয়ে মেলোড্রামা করছেন আমার সামনে?

অরন্যের মুখে নেমে আসলো অন্ধকার।সে এগিয়ে এসে ছায়ার হাত ধরতে গেলে ছায়া সজোরে অরন্যের গালে থাপ্পর মারে।সবাই স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকলো।কারো মুখে রা নেই।উৎসবে মুখরিত পরিবেশ মুহুর্তেই যেন কালপুরীতে পরিণত হলো।

-খালি দেখতে একটু সুন্দর,সব মেয়েরা পিছন পিছন ঘুরে বলে কি ভেবেছেন আমি তাদের মতো?আপনার নাটকে আমার মন ভুলে যাবে?ভুল ভাবছেন আমাকে অরন্য চৌধুরী। আমি এতো সহজে ভুলার পাত্রী নই।ভবিষ্যতে আর কোনদিন আমার সামনে দাড়াবার আগে এই কথা মনে করবেন।প্রেম ভালোবাসা আমার জন্য নয়। এইসব দমবন্ধকরা অনুভূতির যন্ত্রণা যে আমার চাই না।শুনতে পাচ্ছেন?ধুকে ধুকে কে মরতে চায়?

অরন্য থমকালো।তার মন যেনো দুমড়ে মুচড়ে গেলো।পাগলপারা অনুভূতির সাথে যুক্ত হলো প্রত্যাখ্যানের যন্ত্রনা।মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসলো,

-ছায়াকরী!

ছায়া অরন্যের করুণ দৃষ্টি উপেক্ষা করে অরন্যকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।পেছনে পড়ে রইলো এক ব্যর্থ প্রেমিক।

ছায়া লুকিয়ে নীরবে কাঁদে।

-আমি কলঙ্কিত অরন্য চৌধুরী।আমাকে কেনো ভালোবাসলেন?ভালোবাসারা যে আজ ভালো নেই।অনুভূতিরা বিরহ মিছিলে নেমেছে।সব লণ্ডভণ্ড করে দিবে যে।একদিন ঠিক আমাকে ভুলে যাবেন যেমন করে জ্যোৎস্নারা হারিয়ে যায় সূর্যের উত্তপ্ত কিরনে।একদিন আমিও হারিয়ে যাবো সময়ের অপেক্ষা মাত্র।অনেক কাজ যে বাকি।আমাদের একসাথে পথ চলা হলো না আর।দেখে নিয়েন আপনার জীবনে আবারও বসন্ত আসবে।ফুলে ফুলে ভরে উঠবে।আমি তো মাত্র রিক্ততায় ভরা মাঘ মাস।
….
#চলবে
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here