কুঞ্জলতা পর্ব -০৩

#কুঞ্জলতা (পর্ব-৩)
লেখনীতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

কুঞ্জলতার ব্যবহারে সৌহার্দ্য হকচকিয়ে যায়। একটু আগেই সে কুঞ্জলতাকে মিথ্যে ভয় দেখিয়েছিল বিয়ে করার জন্য। আর এখন সেই কুঞ্জলতাই তাকে বিয়ে করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। সৌহার্দ্য বুঝতে পারছেনা কুঞ্জলতা কেন হঠাৎ বদলি খেল? এই যে পিস্তলটা বের করেছে সে পকেট থেকে কুঞ্জলতা এখন সেই পিস্তল দিয়েই তাকে খুন করার ভয় দেখাচ্ছে। আর বলছে সে সত্যিই শ্যুট করে দেবে যদি তাকে বিয়ে না করে। আজ যদি পিস্তলে বুলেট না থাকতো তাহলে হয়তো সৌহার্দ্যর কোনো সমস্যা বা ভয় হওয়ার কথা ছিল না। খুব সহজেই সে কুঞ্জকে মাত করে দিত। তবে আজ! আজ তো কুঞ্জলতার হাতে থাকা পিস্তলটায় সে নিজ হাতে ছয়টা বুলেট ভরেছে। যেহেতু তার চব্বিশ ঘন্টা সেফটি লাগে তাই সে সাথে করে এই লাইসেন্স করে রাখা পিস্তলটা সাথে রাখে। তবে সবসময় নয়! আজ রাখার বড় কারণ হলো সে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত এবং এখানে নানান মানুষের মধ্যে তার শত্রুও মিশে থাকতে পারে। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে সে আজ সম্পূর্ণ সুরক্ষা ও দেহরক্ষী বিহীন এসেছে। সে এবং তার পরিবার চায় নি যে আজও বড় বড় বন্দুক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আনসার আর পুলিশ তার সাথে আসুক, আর তাতে করে অনুষ্ঠানের ভাবমূর্তিও নষ্ট হোক। তাই!

“এতো কি ভাবছেন মি. ইউএনও!”

“ওহ, চুপ করবে তুমি? সেই কখন থেকে কান, মাথা খেয়েই চলেছ আর এখন তো এসেছ জীবনটাই খেতে!”

“কান খেলে জীবন যাবেনা বুঝলাম তবে মাথা খেয়ে থাকলে তো আপনার আরো আগেই মরার কথা। আপনি মরলেন না কেন বলুন তো?”

“হোয়াট! তুমি আমার মৃত্যু চাইছ?”

“ওমা! তা নয়তো কী? এই যে আপনার কপালের সাইডে পিস্তল ধরে রাখছি সেই কখন থেকে। এর কারণ কী? এর কারণ আমি আপনাকে গুল্লি করে আপনার খুল্লি উঁড়িয়ে দিতে চাইছি।”

“ইউ আর আ ক্রিমিনাল লতা!”

“লতা? বাহ্ আপনি আমার নিকনেইমও তো দিচ্ছেন দেখছি! কুঞ্জ বললেও কেউ আজ পর্যন্ত লতা বলে ডাকেনি। ইউ আর ফার্স্ট! চলুন তবে!”

“কোথায়?”

“বাঁচতে চাইছেন না? আমি তো বাঁচাতে নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে। আর আপনি কিনা মরতেই চাইছেন! আচ্ছা বেশ, তবে মেরেই দিচ্ছি। ট্রিগার চাপারই তো ব্যাপার তাই না? নো প্রবলেম! আমার না হওয়া স্বামীর জন্য এতটুকু আমি করতেই পারি।”

সৌহার্দ্য ঘাবড়ে যায় কুঞ্জলতার কথা শুনে। যে সবার সামনে তার গলায় ফাঁস দিয়ে মারতে পর্যন্ত যাচ্ছিল তাহলে তো সে নির্জনে তাকে গুলিও করে দিতে পারে। অগত্যা সে কুঞ্জর সাথে কাজী অফিস পৌঁছায়। ড্রাইভও সে নিজেই করে কুঞ্জও এর মধ্যে একবারও পিস্তল নামিয়ে নেয় নি। যদি একটু নামাতো তাহলেও হয়তো সে কিছু একটা করতে পারত। সৌহার্দ্য কুঞ্জর চেহারায় পৈশাচিক আনন্দ দেখতে পারছে। এই আনন্দটা কীসের? সৌহার্দ্যর মতো অপরিচিত ব্যক্তিকে বিয়ে করে নিশ্চয়ই তার এমন আনন্দ হওয়ার নয়! তার মনের গহীনে এখন কী চলছে? বিশেষ কিছু!

গাড়ি থেকে নেমে কাজী অফিসে ঢুকার আগ মুহূর্ত কুঞ্জ তার কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে রাখে। পরে যখন নামায় আর তা ওড়নার আড়াল করে তখন সে সৌহার্দ্যকে ফিসফিস করে বলে,

“দেখুন! একদম পালাবার চেষ্টা করবেন না। আপনি যদি দৌঁড়ে চলে যেতে নেন তো আমি শ্যুট করে দিব তখনিই। আর তারপর কী হবে জানেন? তারপর আপনার মৃত্যু হবে তাও কার হাতে! না হওয়া বউয়ের হাতে। চলুন, চলুন! দেরি করবেন না একটুও আমার আবার বেশি দেরি সয়না বুঝলেন! ঠুস করে কবুল বলে ঠাস করে করে বাসর ঘরে ঢুকে যাওয়ার মতো মেয়ে আমি। এই ব্যাপারে আপনি জিততে চলেছেন। আফটার অল! আই আম ভেরী রোমান্টিক!”

“রোমান্টিক না ডেয়ারিং তা আমি এখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি।”

সৌহার্দ্যের বিড়বিড়িয়ে বলা কথাটা কুঞ্জলতার কর্ণকুহরে পৌঁছায়না। হাঁটা ধরে সেই পথে যা এখন তার সঠিক মনে হচ্ছে। করবেনা সে ঐশ্বর্যকে বিয়ে সারাজীবন তো সে উঁড়ে উঁড়েই কাটাবে। এর থেকে ভালো সুন্দর চেহারার অধিকারী অসভ্য সৌহার্দ্যকে বিয়ে করা। সে ট্রান্সফার হবে এই অঞ্চল থেকে ঐ অঞ্চল। কখনো না কখনো তো পাহাড়ি এলাকাতেও তো যেতে পারে ট্রান্সফার হয়ে। তখন সে জম্পেশ হানিমুন করবে। একদম মনের মতো। যা সে অনেক আগেই পরিকল্পনায় সাজিয়েছে। আর এই পূর্বপরিকল্পিত ইচ্ছেতে পার্থক্য একটাই, জামাই বদল! মানে ঐশ্বর্যর বদলে সৌহার্দ্য!

কবুল বলা শেষ করে যখন কুঞ্জলতা সাইন করতে নিবে রেজিস্ট্রি পেপারে তখন কোথা থেকে ঐশ্বর্য এসে কুঞ্জর হাত চেপে ধরে। অবাক সুরে বলে ওঠে,

“এটা তুমি কি করছ কুঞ্জ? তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো না।”

কুঞ্জলতা মৃদু হেসে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলে,

“বিয়ে তো হয়েই গেছে শুধু আমার সাইনটা বাকি।”

আর কালবিলম্ব না করে সে সাইন করে দেয় দ্রুত। সৌহার্দ্যের দিকে তাঁকাতেই দেখে সে ভ্রু কুঁচকে ঐশ্বর্যকে পর্যবেক্ষণ করছে। হঠাৎ-ই কুঞ্জলতার পিলে চমকে ওঠে। সৌহার্দ্য কী তাদের নিয়ে কিছু উল্টা পাল্টা ভাবছে? পরমুহূর্তেই মনে হয়, ভাবলেই বা কি হবে? সে কি তাকে ভালোবাসে যে তার ভাবনাদের খেয়াল রাখতে হবে তাকে?

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here