কৃষ্ণ মেঘের প্রেম পর্ব -০২

#কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম
২.
রুপালী বেগম দেখলেন লাবনী লাল শাড়ি পরে ওই ভারী গয়নাগাটি পরে ওই অবস্থায়-ই ঘুমিয়ে আছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে। একদম বাচ্চা মেয়েদের মতন। মুখে সেকি নিষ্পাপ ভাব। ওকে দেখে রুশমীর কথা মনে পরে গেল রুশমীও একেবারে এভাবেই ঘুমাতো। মেয়েটার কথা মনে পরে গেল।

“আহারে মেয়েটা না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলো।
কেমন মা আমি! মেয়েটা খেয়েছে নাকি খায়নি খেয়াল করা উচিত ছিল আমার। ”

জোড়ালো শ্বাস ফেলে ম্লান হেসে এগিয়ে গিয়ে লাবনীর মাথায় হাত রাখে। লাবনী চোখ পিটপিট করে তাকায়। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়। মনে পরে যায় সে এই মুহুর্তে তার শ্বশুর বাড়ি আছে। শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে উনি ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

ও তাড়াহুড়ো করে ওঠে বসে এবং জিহ্বা কামড়ে বলে,

“সরি মা।আমার খেয়াল ছিল না। একটু টায়ার্ড থাকায় চোখ লেগে গিয়েছিল সরি। আপনি বোধহয় অনেক ডেকেছেন তাই না?”

“আরে না না। তুই সরি বলছিস কেন আমি বরং তোকে সরি বলছি। মেহমানদারি করতে করতে খেয়াল-ই ছিল না কত দেরি হয়ে গিয়েছে তোর খোঁজ খবর ও নেওয়া হয়নি। না খেয়েই তুই ঘুমিয়ে পরেছিস। তুই বোস আমি খাবার নিয়ে আসছি।

সত্যি বলতে লাবনীর অনেক ক্ষিদে পেয়েছে। তবে সেটা না বলে মিথ্যে বললো লাবনী,
” আরে না। মা আপনি চিন্তা করবেন না পরে খাওয়া যাবে আমার খিদে পায়নি।”

রুপালী বেগম তাও খুব সুন্দর করে লাবনীর মিথ্যে ধরে ফেললেন,

“বললেই হলো এতক্ষণে ক্ষিদে পায়নি। আমি খাবার আনছি আর ওয়াশরুম ওখান টায় আছে চাইলে ফ্রেশ হয়ে আয়। আর একটুও পরের বাড়ি মনে করবি। এই বাড়িটা তোর-ই আমার সন্তানের মতন। তুই বলছি বলে রাগ করিস না কিন্তু । আমি রোদ্রকেও তুই বলি। ও আমার ছেলে তুই আমার মেয়ে। আচ্ছা ওসব কথা পরে বলা যাবে তুই বোস আমি খাবার আনছি।”

বলে কোনো সময় ব্যয় না করে কক্ষ থেকে বিদায় নেন। নিচে যান লাবনীর জন্য খাবার আনতে। দোতলার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামবার সময় নিচে সিঁড়ির কাছেই রোদ্রকে ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রোদ্রকে ডাক দিলেন।রোদ্র মায়ের দিকে ঘুরে তাকিয়ে মায়ের কাছে আসলো। লাবনী বেগম বললেন,

“তোর বউ টা যে এতক্ষণ ধরে না খেয়ে আছে খেয়াল আছে তোর। মেয়েটাকে যে রুশমীর রুমে বসতে বলেছিলাম। রুমে গিয়ে দেখি বেচারি টায়ার্ড হয়ে ওভাবে খাটের ওপর বাচ্চাদের মতন হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমুচ্ছে। বিয়ে করেছিস এখন তো দ্বায়িত্ববান হতে হবে রোদ্র। যা আমি খাবার আনছি তোদের দুজনের জন্য দুজন কেই খাইয়ে দিব। চেঞ্জ করে আয়। তোর এই ভারী পাঞ্জাবী দেখে আমার অস্বস্তি হচ্ছে যা একটা সুতি পাঞ্জাবী পরে ফ্রেশ হয়ে বোস।রুশমীর রুমে যা। তোর রুমে যাবি না কিন্তু। ”

“কেন? আমার রুমে কেন যাবো না? আমার রুমেই তো আমার কাপড় চোপড় সব? চেঞ্জ করবো কিভাবে রুমে না গেলে?”

“না তোর দু সেট পাঞ্জাবী আমি রুশমীর রুমে আগে থেকেই রাখিয়ে দিয়েছে। সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। যা গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়। ”

“আচ্ছা। তবে রুমে তো লাবনী আছেন হ্যা না?”

“হুম। তো? লাবনী কি বাঘ না ভাল্লুক যে তোকে খেয়ে ফেলবে। যাহ্ চেঞ্জ করে বস লাবনীর সাথে কথা বল ফ্রী হ।”

রুপালী বেগম খাবার আনতে চলে গেলেন।

_____________
রোদ্র ও অনেকটা আদেশ পালন স্বরূপ রুশমীর রুমে গেল। গিয়ে রুম ফাঁকা দেখে অনেক অবাক হলো। কারণ ওকে মা বলেছিল যে লাবনী আছে রুমে। রোদ্র পরে ভেবে পেল যে, লাবনী হয়তো ওয়াশরুমে।
প্রথমে না খেয়াল করলেও এখন খেয়াল করলো নল থেকে পানি পরার শব্দ ও আসছে। তার মানে লাবনী ওয়াশরুমেই আছে।

আজব তো সে লাবনীর জন্য এতটুকু সময় এতখানি ভেবে ফেললো। যেখানে সাধারণ কোনো বিষয় নিয়ে মাথা খুব কম-ই ঘামিয়ে থাকে রোদ্র। আর কারোর প্রতি টান না থাকলে তো আর এভাবে তার জন্য বুক ঢক করে ওঠে না। রোদ্র ভাবলো সে কি লাবনীর প্রেমে পরেছে?

নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হয়ে মুখ থেকে ‘চ’ স্বরূপ শব্দ করলো।ফোন হাতে নিয়ে নিজের বিয়ের কিছু ছবি দেখতে লাগলো। রোদ্রের ফ্রেন্ড তাসিফ তুলেছিল ছবি গুলো। লাবনী মাথা নিচু করে আছে রোদ্র ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে, এরকম একটা ছবি। তারপর আরেকটাতে রোদ্র অন্যদিকে ফিরে, লাবনী রোদ্রের দিকে আর চোখে তাকিয়ে। রোদ্র এই ছবি দেখে আরেকটা ছবি চলে যাচ্ছিল ধারাবাহিক ভাবে।থেমে গিয়ে আবারও ওই ছবিটায় লক্ষ্য করলো তখনই খট করে ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ এসে ধাক্কা খায় রোদ্রের কর্ণকুহরে। চকিত তাকায় লাবনীর দিকে।

লাবনীকে কি স্নিগ্ধ লাগছে। হালকা আকাশী রং এর শাড়িতে। গলায় একা পাতলা সোনার চেইন চেইনটি তে
ছোট ডায়মন্ডের পাথর বসানো পেন্ডেন্ট। চিকচিক করছে রুমের শুভ্র লাইটের রশ্মি পরায়।চিবুক স্পর্শ করে টপ টপ করে স্বচ্ছ পানির বিন্দু গলায় টপকে পরছে। চোখের পাপড়িগুলোতে পানি জমে আছে। নাকের ডগা সামান্য গোলাপি আভা ধারণ করেছে।

হাতে মোবাইল টা থাকায় লুকিয়ে একটা ছবি তুলে নিল। লাবনী ওর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই রোদ্র মনে মনে ভাবলো,

“এ-ই রে! বুঝে ফেললো নাকি আমি যে চুরি করে ওর ছবি তুলেছি? আমি সেকেন্ড এক সেকেন্ড চুরি কিভাবে? বউ তো আমার। আমি ছবি তুলতেই পারি হাজার বার লক্ষ বার তুলতে পারি। হু! হুদাই ভয় পাচ্ছিস তুই রোদ্র! তুই পুরুষ এমন ছোট ছোট বিষয় ভয় পাওয়া তোকে মানায় না!”

লাবনী বললো,

“আপনি? আমি ভাবলাম মা এসেছেন।”

রোদ্র নিশ্চিত হয়ে জোড়ালো শ্বাস ফেলে বললো,
“মা আসছে খাবার নিয়ে। আমাকে চেঞ্জ করে ফেলতে বললো। আমাকে আমার রুমে যেতে মানা করা হয়েছে তাই এখানে আসতে বলেছে। আপনার ওয়াশরুম থেকে বের হবার অপেক্ষা -ই করছিলাম। ”

লাবনী ছোট করে প্রতিত্তোরে বললো,

“ও, আচ্ছা। ”

রোদ্র ওর ফোনটা ড্রেসিং টেবিলের কাছে রেখে পাঞ্জাবি পায়জামা নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
ততক্ষণে রুপালী বেগম এসে পরেছেন। উনি-ই দেখলেন লাবনীর হাতে মেহেদী গ গাঢ় লাল হয়ে ফুটে আছে। দু’হাতে ভরাই তো মেহেদী। এখন এই মেহেদীর হাত নিয়ে খাবে কি করে? তাই উনি নিজেই খাইয়ে দিতে লাগলেন। লাবনী নিজে খেতে পারবে বললেও রুপালী বেগমের জিদের কাছে হেরে গিয়ে বাধ্য হয়ে ও খুশি হয়ে ওনার হাতেই খেল। মায়ের অভাব টা বোধহয় আজকে লাবনীর আর নেই। ছোট কাল থেকে মা-বাবাকে ছাড়াই বড় হয়েছে। মা ওকে জন্ম দেওয়ার সময়ই মারা যান। আর লাবনীই ছিল একমাত্র সন্তান ওর মা -বাবার। মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা সবকিছুর প্রতি কেমন উদাসীন হয়ে পরেন। লাবনীর যখন ৪ বছর তখন তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। আর লাবনী ওর দাদি আর ডিভোর্সি ফুপুও তার এক মেয়ের সাথে বড় হতে থাকে। লাবনীর বাবার টাকার কোনো অভাব ছিল না। জীবনের প্রতি উদাস হলেও মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসতেন। তবে দেশে থাকা অবস্থায় স্ত্রী-য়ের মৃত্যুতে দেশের প্রতি দ্বিরুক্তি আসে। অন্যদিকে লাবনীর বাবার টাকা থাকায় সে মেয়ের জন্য টাকাও বিভিন্ন উপহার পাঠাচ্ছেন আর লাবনীর ফুপুর ডিভোর্স হওয়ায় তার মেয়ে বাবার আদালত পায়নি তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে আর চোখের সামনে লাবনীকে দেখে হিংসে হতো ওর ফুপুর। ছোট লাবনী তো আর বুঝত না সে তার ফুপুকে ভীষণ ভালো বাসতো। তবে বড় হওয়ার পর ধিরে ধিরে সে তার মুখোশধারী ফুপুর আসল রুপ দেখতে পায়। তখন লাবনীর বয়স বারো কি তেরো। এমন বয়সে সকলই সাধারণত অনেক আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে লাবনী আবেগপ্রবণ হয়ে নিজেকে একলা করে দেয় সবার থেকে দূরে সরে যায়।

-‘চলবে’
-ইশানূর ইনায়াত
#writer_ishanur_inayat

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here