কৃষ্ণ মেঘের প্রেম পর্ব -০৪

#কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম
৪.
দরজা খুলে দিতেই হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে বিচ্ছু কাজিনের দল। আর রোদ্র কে দেখে মুখ হা হয়ে যায়। ওদের মাথায় ব্যাপার টা ঢুকছেই না কি করে রোদ্র ঢুকলো রুমে? ওদের মধ্যে হাবিব রুমের সিলিং এর দিকে তাকাতে তাকাতে প্রশ্ন করলো,

“কোন দিক দিয়ে ঢুকলি তুই ভাইয়া?”

রোদ্র বাঁকা হেঁসে রহস্য জনক দৃষ্টিপাত করে।
তা দেখে ওর এক কাজিন ফুয়াদ বলে,

“ভাবি তুমি বলো? ভাই তো বলবো না মুখ বাঁকা করেই কূল পায় না।”

লাবনী হেঁসে বারান্দার দরজার দিকে ইশারা করে বলে,

“এইখান দিয়ে এসেছেন উনি। বারান্দার দরজা দিয়ে..”

কথাটা অর্ধেক শুনেই সামিয়া দৌড় লাগায় বারান্দার দিকে।বারান্দায় পৌঁছে ও হতভম্ব হয়ে যায় আরেকটা দরজা দেখতে পেয়ে। চেঁচিয়ে বাকিদের ও ডাকে।
ওরাও অবাক হয়ে হায় হতাশা করছে। ওই দরজা দিয়ে ঢুকতেই রুশমীর রুমে পৌঁছে যায়। কি যে কষ্ট তাদের মনে আগে জানলে ওই ঘরের দরজা আর এই ঘরের দরজা ভাগাভাগি করে দখল করে রাখতো। এই আকাশ সমান কষ্ট বুকে নিয়েই বিচ্ছু কাজিনের দলের প্রত্যেকটি সদস্য মুখ বেজার করে একেক রকমের বাক্য বিনিময় করে কষ্ট প্রকাশ করস শুরু করে। ওদের আলাপআলোচনা বাক্য বিনিময় সুদীর্ঘ হবে বলে টের পেতেই রোদ্র ওদের চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে এসব কথাবার্তা বলতে বললো। ওরা মুখটা ইদুরের বাচ্চার মতন ছোট করে চোখে কষ্ট প্রকাশ করার চেষ্টা করে দুঃখী দুঃখী ভাব এনে লাবনীর দিকে তাকালো। লাবনী যদি একটু রোদ্র কে গেট ধরার টাকা টা দিতে বলে সেটা বোঝাতে।

লাবনী নজরের অর্থ বুঝতে পেরে ইতস্তত বোধ করেই রোদ্র কে মিহি কন্ঠে বলে,

“ওনাদের টাকা দিয়ে দিন না..” আকুতির স্বরে।

রোদ্র অবশেষে বিচ্ছু’ দের দলের সাথে দেনাপাওনা শোধ করে বিদায় করলো। ওরা বের হতেই দরজা আঁটকে দেয় রোদ্র। তারপর লাবনীর দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকায়।

লাবনী ভেতরে ভেতরে নানা ভাবনায় ব্যস্ত। রোদ্র সামান্য আরো এগিয়ে আসলে লাবনী খেয়াল করে তাকায় ওর দিকে। রুম টা মোমবাতি দিয়ে সাজানো।
গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো পুরো বিছানা জুড়ে। বেলি ফুল টানানো মশারীর মতন করে। সারা ঘর সুবাসে ম-ম।রোদ্রের শীতল দৃষ্টি টা কেমন যেন লাগলো লাবনীর কাছে্। মনে একরাশ ভয় জড় হয়ে আছে। রোদ্র ও কি অন্য সব বাংলা সিনেমার নায়ক দের মত ওর সাথে হিংস্র ব্যবহার করবে? এই ভাবনা এলো। তবে রোদ্র ওর ধারণা ভুল প্রমাণ করে বললো,

” ঘুমিয়ে পরুন, রাত হয়েছে ”

লাবনীর বিছানায় গিয়ে একপাশ চেপে রোদ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার চেয়ে অধিক জায়গা রেখে শুয়ে পরে। রোদ্র শুয়ে পরে। লাবনী রোদ্রের বিপরীত মুখ হয়ে শুয়েছে, ওয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে।ওয়ালে একটি ছবি ছবিটার আর্টিস্ট ছবিতে যে ফুল গুলো আর্ট করেছে তা অতিরিক্ত আকর্ষণীয়, নিশ্চয়ই আর্টিস্টের তুলিতে জাদু আছে এসব চিন্তা করছে লাবনী। আর রোদ্র লাবনীর দিকে ফিরে শুয়ে আছে আর লাবনীর পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে।

লাবনীর ঘুম না পাচ্ছে না। যতই ঘুমকে কাছের টানার চেষ্টা করছে ততই ঘুম ওকে দূরে ছুঁড়ে ফেলছে। ১০০শ হাত দূরে। লাবনী বিরক্ত হয়ে বসে পরে। রোদ্রর দিকে তাকাতেই রোদ্র অপ্রস্তুত হয়ে পরে। কারণ রোদ্র জানতে না লাবনী যে জেগে। তাই ও চোখ ফেরায়-নি লাবনীর থেকে। লাবনী রোদ্র দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বারান্দার দরজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
বারান্দায় যাবার প্রচন্ড ইচ্ছে হয় লাবনীর। বারান্দার দিকে উদ্যক্ত হয় লাবনী।
লাবনী ফ্লোরে পা রাখতেই শীতল হাওয়া পা ছুঁইয়ে যায়।
রোদ্র ক্ষানিকটা অবাক হয় লাবনী উঠে বসতে দেখে। ভাবে হয়ত বা ওয়াশরুমে যাচ্ছে। ওর ভাবনা ভুল করে লাবনী বারান্দার দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজা খুলে দেয়। ভেতরে প্রবেশ করতেই রোদ্রের চোখে মিলিয়ে যায় লাবনী্। লাবনীকে বারান্দায় প্রবেশ করতে দেখে রোদ্র বেশ অবাক হয়ে উঠে বসে।
রোদ্র ও বারান্দায় গিয়ে লাবনীর পেছনে দাঁড়ায়। লাবনী আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। লাবনীর মতো আকাশের দিকে তাকাতেই রোদ্র দেখতে পায় চাঁদের জোছনার আলোয় পুরো শহর ঢেকে আছে্। লাবনীর মুখে ও এক ফালি জোছনা আছড়প পরে আছে। রোদ্র মুচকি হেঁসে জিজ্ঞেস করে,

“চাঁদ দেখতে ভালো লাগে আপনার?”

“হুম, ভীষণ…. ” মিহি কন্ঠে উত্তর দিল।

“আচ্ছা আপনি আজকে ছাদে গিয়ে ছিলেন কেন একা একা? সাধারণত তো নতুন বউরা এরকম ছাঁদে গিয়ে থাকে না বাড়ি ভর্তি মানুষের মাঝে। ”

“আমার মন খারাপ হলে আমি ছাঁদে যাই!”

“মন খারাপ?(বেশ অবাক হয়ে) আপনার মন খারাপ হয়েছিল? কিন্তু কেন? কেউ কিছু বলেছে?”

রোদ্রের কথা শুনে লাবনী হালকা হাসলো। তবে সেই হাসির অর্থ খুঁজে পেল না রোদ্র।

“আপনার কি মনে হয়? আমি জানি না আমাকে বিয়ে করায় লোকে আপনাকে কতরকমের কথা শোনাচ্ছে? আপনার মা’ এর পছন্দ প্রশ্ন তুলছে..” ম্লান হাসলো।

থেমে আবারও বললো,

“তবে দীদা আর বাবার কথা মনে পরছিল সেজন্য ও মন টা খারাপ ছিল। ”

“তোমার দীদা কে ফোন লাগিয়ে দিব? না মানে তুমি বললাম কিছু মনে করবেন না মানে…” কথা এলোমেলো হয়ে যায়।

লাবনী আবারও ম্লান হেসে বলে,

” তুমিই ভালো আপনি বললে নিজেকে বুড়ি বুড়ি মনে হয়”

রোদ্র হেসে ফেললো। এমন উত্তর শুনে।

“তাহলে এখন থেকে তুমি করই বলবো তোমাকে, বললে না যে দীদাকে ফোন লাগিয়ে দিব নাকি? ..”

“অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পরেছেন ওনারা্। বাবাও বোধহয় জেগে নেই বাবার ঘুমের সময়ের ঠিক নেই… ও এক সেকেন্ড আমার জন্য বোধহয় আপনার ঘুম ভেঙে গিয়েছে…. ”

“না আমারও ঘুম পাচ্ছিলো না। জেগেই ছিলাম আমি ”

“ও..” আর কিছু বললো না লাবনী। চুপ করে রইলো। পরিবেশ টা শান্ত। ঠান্ডা বৈরী হাওয়া গা ছুঁইয়ে দিয়ে যাচ্ছে। পিনপতন নীরবতা। রোদ্র লাবনী কি চুপচাপ ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কোথায় যেন চলে গেল।
লাবনী কিছু অতিক্রম হতে খেয়াল করে রোদ্র নেই।
আরেকটু খেয়াল করলে দেখলো রুমেও কোথাও নেই।

“কোথায় গেলেন উনি এত রাতে?” লাবনী বললো।
________________

(লাবনী-র অতীত -বাকি অংশ)

লাবনী ওর সব কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিয়ে রেডি হয়ে যায় বাসা ছেড়ে যাওয়ার জন্য। ওর বাবাকে জানায় ও বিদেশে না ঢাকায় হোস্টেলে থেকে পড়তে চায়। এখন কলেজ শেষ না করে কোথাও যেতে চায় না। ভর্তি হয় হলিক্রস স্কুলে। এই খবর সে ওর ফুপিকে আর দীদা কে জানাতে সম্পূর্ণ মানা করে দেয়। ওর বাবা প্রশ্ন করলে বলে, ও পরে সাপরাইজ দিবে ওনাদের। উনি রাজি হয়ে যান। ওর বাবা বিদেশে যাওয়ার দুদিন আগেই ঢাকায় গিয়ে সব ব্যবস্থা করে দিয়ে ঠিকঠাক করে ওকে হোস্টেলের রুম দেখিয়ে আনে। লাবনী ওর দাদি ফুপুর সাথে থাকতো সাভারে।

লাবনী হোস্টেলে গিয়ে ওঠার পর ওর সমস্ত খরচ ওর বাবা ওর কাছেই পাঠাতো। শান্তিতে বাঁচতে শুরু করে।

তবে সেই খুশিও ও যেন বেশিদিন টিকলো না।
ওইদিন…..
লেখিকা: -ইশানূর ইনায়াত
-“চলবে ”

#writer_ishanur_inayat

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here