কৃষ্ণ মেঘের প্রেম পর্ব -০৬

#কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম
৬.
লাবনী কিছু টা হেজিটেট ফিল করেই
রোদ্রকে ডাকে। রোদ্র ওর পা আরো জড়িয়ে ধরলো। এবার লাবনী কি করবে ভেবে না পেয়ে হাত দিয়ে রোদ্রকে ধাক্কা দেয়। কিছু টা নড়েচড়ে ওঠে রোদ্র তবে ওঠার নাম গন্ধ নেই রোদ্রের। বিরক্ত হবে নাকি এভাবে বসে থেকে মুগ্ধ হয়ে মানুষ টার ঘুমন্ত চেহারা দেখবে। “ওফ! কিসব ভাবছি আমি” মনে মনে আওড়ায় লাবনী।

“এতক্ষণ এভাবে রুমে বসে থাকা কেমন দেখায়। এমনে তে-ই কয়টা বাজে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। মোবাইল টা যে কোথায় মনেও পরছে না। মনে পরলেই বা কি? এখন এখান থেকে উঠতেই পারছি না আর মোবাইলে চেক-ই বা কি কিভাবে করতাম?” ( লাবনী ভাবছে)

বারবার চেষ্টায় যখন লাবনী ব্যর্থ তখন রোদ্রের ঘুম ভাঙলো। সে আড়মোড়া করে বসলো।নিজেকে লাবনীর পায়ের সামনে দেখে গতরাতের কথা মনে পরে গেল রোদ্রে’র। গতরাতে লাবনীকে ওভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিচেনে চলে যায় কিছু হালকা পাতলা স্ন্যাক্স আর কফি আনতে। বিয়ের প্রথম রাতে বউ কে নিজের হাতে বানানো কফি খাইয়ে মুহুর্তে টা’কে স্বরণীয় মুহুর্তে হিসেবে স্মৃতি পাতায় তুলে রাখতে চায় রোদ্র।

কফি আর সাথে কিছু কাপ কেক যা বাসায় আগেই থেকেই ছিল তা ট্রে তে করে সাজিয়ে নিয়ে আসে রোদ্র। রুমে আসলে লাবনী কে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখে।

লাবনী রোদ্রকে দেখে জিজ্ঞেস করতে নিবে যে রোদ্র কোথায় গিয়েছিল তখনই দেখে রোদ্রর হাতে ট্রে এবং ট্রে তে দুটো কফির মগ আর কিছু কাপ কেক।
লাবনী ভ্রু কুঁচকে তাকায় ট্রে’র দিকে। রোদ্র মুচকি হেঁসে লাবনী কে বলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতে। লাবনী তাই করে। বারান্দায় একটা ছোট দুজনের বসার জায়গা আছে। সেখানে গিয়ে লাবনী বসলে লাবনীর হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বারান্দার রেলিং এ হেলান দিয়ে নিজের কফির মগ হাতে নিয়ে দাঁড়ায় রোদ্র।

রোদ্র চুলে হাত বুলিয়ে বলে,

“আমি আমার খুব পছন্দ.., আমি কফি বানাতে এক্সপার্ট নই তবে আজকে হঠাৎ কফি বানাতে মন চাইলো। খারাপ হলেও আজকের দিনটায় আমার মন রাখার জন্য একটু কষ্ট করে খেয়ে নিয়েন…”

” কফি আমারও খুব পছন্দ! ” কাপের দিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই বললো লাবনী।

এই ছোট ছোটা রোদ্রের ছোট ছোট ভালোবাসা গুলোই মনে গেঁথে রইলো লাবনীর।

টুকটাক গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পরে।

………

রোদ্র উঠে দাঁড়াতেই লাবনী ও উঠে দাঁড়াল। বারান্দা থেকে বেরোতে নিলে কিছুতে হোঁচট খেয়ে পরে যেতে নিলে বারান্দার দরজা ধরে সামলে নিল নিজেকে।
নিচে কফির খালি এঁটো মগ দু’টো পরেছিল ট্রে’ টা আরো দূরে পরে আছে মানে, মাটিতে রাখা আছে।
লাবনী স্বযত্নে মগ দুটো ও ট্রে’টা তুলি নিয়ে নিচে চলে গেল।

নিচে কিচেন। নিচে নামতেই কিছু আন্টিদের জড় হয়ে কথা বলতে দেখতে পায় লাবনী। মনে মনে শুধএু প্রার্থনা করছিল যেন আন্টিরা ওকে ডেকে না বসে। দ্রুত পা চালিয়ে কিচেন এ চলে গেল। কিচেনে বাসার দুজন মেয়ে সার্ভেন্ট, একজন সবজি কাটছে আরেকজন থালাবাসন ধুচ্ছে।

ট্রে আর কফির মগ সেখানে রেখে বেরিয়ে আসছিলো তখনই ধাক্কা খেয়ে দু কদম পিছিয়ে পরে লাবনী।

“এই মেয়ে কানা নাকি? এই সাতসকাল রান্না ঘরে কি?”-রোদ্রের ফুপু

লাবনী কি বলবে খুঁজে পেল না। এমনে তেই দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে এখন কি রোদ্রের ফুপুর সাথে দেখা না হলে কি খুব খারাপ হত? লাবনীকে যেমন এই মেয়ে করে কথা বললেন উনি তাতে লাবনীর ওনাকে কিছু বলবার সাহস হচ্ছে না। একজন সার্ভেন্ট বললো,

” ম্যাম বড় ম্যাডাম কে খুঁজতে এসেছিলেন… ”

“তোকে জিজ্ঞেস করেছি আমি?হু!” তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাকিয়ে বললেন রোদ্রের ফুপু।
যে সার্ভেন্ট টা কথা বলেছে তার নাম মাহমুদা। সে জানে রোদ্রের ফুপু কেমন ভয়ানক পরে নতুন বউকে নানা কথার জালে ফাঁসিয়ে চরম অপমান করতে পারেন
রোদ্রের ফুপু তার মোটামুটি ধারণা মাহমুদার ছিল।
তাই নিজে থেকে বাঁচিয়ে দিল নতুন বউকে(লাবনী কে)

লাবনীর দিকে পুনরায় তাকালেন উনি চোখ গরম করে। যেন চোখ দিয়ে সব ভস্ম করে দিবেন। লাবনীর ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছিল লাবনী । রোদ্রের ফুপু কিছু বলছিল না বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসে লাবনী। ওখানে দাড়ালে না জানি উনি কত অপমান করে দিনটাই নষ্ট করে দিতেন লাবনীর।

________________

দুই দিন হয়ে গিয়েছে সবাই মোটামুটি চলে গিয়েছে যারা ছিল। বাসা এখন ফাঁকা প্রায়। রোদ্রের ফুপু
আজকে চলে যাবেন। এই দুইদিন প্রচুর জ্বালিয়েছেন এই মহিলা! তা লাবনী কে হোক রোদ্রেকে হোক বস রোদ্রের মা রুপালী বেগম কে হোক। এই সেই বলে খোঁচা মেরে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হোন নি।

রুপালী বেগম সব হাসি মুখে সামলে নিয়েই অপমানের সঠিক প্রতিত্তোর দিয়েছেন। লাবনী মুগ্ধ হয়ে যায় প্রতি পদে পদে নিজের শাশুড়ীর ব্যবহারে গুনে!এমন শাশুড়ী কে-ই বোধহয় দ্বিতীয় মা বলা যেতে পারে!

ফুপুকে এগিয়ে দিতে রোদ্র আর লাবনী গিয়েছে।
“শোনো মেয়ে! শাশুড়ির লা-ই পেয়ে মাথায় উঠে বসে থেকো না। আমি বেঁচে আছি এখনও। বেশি তেড়িংবেরিং করলে তোমাকে ঘাড় ধরে বের করে দেব। আমার মেয়ের মতন সুযোগ্য পাত্রী এখনও আছে… ”

ওনার কথা শুনে লাবনী বাকশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। মুখে একরাশ রাগ নিয়ে ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রোদ্রর দিকে তাকিয়ে ইয়া বড় হাসি মুখে জড়িয়ে রোদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

“শোন রোদ্র এই মেয়ে কে একদমই প্রশ্রয় দিবি না বলে রাখলুম। আমার মেয়েকে রেখে যে কি করে একে বিয়ে করলি…! যাইহোক এই কথা বাদ দেই! বাসায় যাবি কিন্তু। আর শোন এখনও কিন্তু ভেবে দেখার সময় আছে তোর মা’কে বুঝিয়ে শুনিয়ে দেখ যদি আমার কথাটা একবার ভাবে..”

লাবনী তাজ্জব বনে গেল লজ্জায় মাথায় নিচু করে রইলো। চোখ গড়িয়ে নোনা জল পরছে। রোদ্র এবার মুখ খুললো,

“এতক্ষণ শুধু দেখছিলাম তুমি কি কি বলতে পারো ফুপি। তোমাকে আমার শুধু একটা কথাই বলার আছে, তুমি মানসিক রোগে ভুগছে.., নিজের চারপাশের নেগেটিভিটি তে মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছো। লোভে দিশেহারা হয়ে গিয়েছো। নিজের মেয়েটাকে ও এর মধ্যে জড়িয়ে ওর জীবনও নষ্ট করছো। আর সাফ সাফ একটা কথা আমার মা তোমাকে বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন তাও তোমার মাথায় ঢোকে না। আমি আবারও বলছি, আমি তোমার মেয়েকে সব সময় বোনের মতন দেখেছি ওকে বিয়ে করসর ব্যাপারে আমার মত কোনোকালেই ছিল না আর না আমার মায়েরও। তবুও তোমার কেন যেন এই কথা মাথায় ঢোকে না। আর এই রাগের রেশ ধরে তুমি লাবনীকে যাচ্ছেতাই করে অপমান করছো। ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওর স্বামী কে ওর বিরুদ্ধে উষ্কাচ্ছো মনে কোনো মনুষ্যত্ব নেই? কমন সেন্স নেই হ্যা না?
আর তোমার এসব কথায় ওর মন টা বিষিয়ে দিচ্ছো! নিজের প্রতি থাকা সম্মান সমার্পনে মুছে দিচ্ছো। এরপর নিজেকে মনুষ্যত্ব আর কমন সেন্স ঠিক হলেই এসো নাহয় এসো না। ”

” আর আরেকটা কথা ঘাড়ধাক্কা দিয়ে এই বাসা থেকে বের করার ক্ষমতা তোমার না থাকলেও ওর কিন্তু অবশ্যই আছে বিকজ এই বাড়ির ছেলের অর্ধাঙ্গিনী ও! তাই আমার যেই অধিকার এই বাড়ি আর ওর প্রতি খাটে তা ওর ও আমার খাটে! চাচা এনাকে গাড়ি ঠিক মত উঠিয়ে দিও আমাদের এখানে দাঁড়ানোর রুচি আর নেই!”

” চল লাবনী ” লাবনীর হাত ধরে বাসার ভেতরে চলে যায়…

-“চলবে”
লেখিকা:- ইশানূর ইনায়াত
#writer_ishanur_inayat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here