ক্রাশ পর্ব -০১

ক্লাস নাইনের উপবৃত্তির ফর্মে মোহনা ভুল করে তার ক্রাশের নাম্বার দিয়ে এসেছে।
যাকে সে মনে মনে পছন্দ করে।
স্যার যখন উপবৃত্তির ফর্মে মোহনার নাম দেখলো তিনি হাসতে লাগলেন।
কারন উপবৃত্তি শুধুমাত্র গরীব আর মেধাবী স্টুডেন্ট দের দেওয়া হয়।
স্যার মনে মনে ভাবলো মোহনা আবার গরীব হলো কবে থেকে?
এ কেনো আবার উপবৃত্তির জন্য ফর্ম জমা দিয়েছে?
তাই উপবৃত্তির ফর্মে দেওয়া নাম্বার টায় স্যার কল দিলো। কিন্তু ওপাশ থেকে এক ছেলের কন্ঠ ভেসে উঠলো।

স্যার ভাবলো হয় তো এটা মোহনার ভাই হবে।
কিন্তু ছেলেটি ফোন রিসিভ করেই বললো,

হ্যালো স্যার?
আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন স্যার?
(ছেলেটিও মোহনার স্কুলেই পড়েছে।তাই স্যারের নাম্বার ফোনে আগে থেকেই সেভ করা ছিলো)

তখন স্যার বললো,
তুমি কি মোহনার ভাই?
ছেলেটি তখন বললো কোন মোহনা স্যার?
আমি তো মোহনা নামে কাউকে চিনি না।

স্যার বললো,
কি বলছো এসব?
তাহলে মোহনা তার উপবৃত্তির ফর্মে তোমার নাম্বার দিয়েছে কেনো?

ছেলেটি তখন বললো সেটা তো আমি বলতে পারলাম না।
স্যার আমাকে চিনতে পারছেন না?
আমি তো সাগর।

স্যার বললো,
কোন সাগর?
ছেলেটি বললো,
আপনাদের স্কুল থেকে এবার এস,এস,সি পরীক্ষা দিচ্ছি।
সেই কথা শুনে স্যার বললো ও,,,,,,,,,
চিনেছি চিনেছি।
সেটা আগে বলবে তো।
তা পরীক্ষা কেমন দিচ্ছো বাবা?
সাগর জানালো খুবই ভালো।

কিন্তু মোহনা তার উপবৃত্তির ফর্মে সাগরের নাম্বার দিলো কেনো স্যার এটা কিছুতেই মেলাতে পারছেন না।
স্যার তো অনেক বেশি অবাক হলো!!!
এটা আবার কেমন কথা?
সাগর মোহনাকে চেনে না অথচ মোহনার উপবৃত্তির ফর্মে সাগরের নাম্বার দেওয়া।

সাগর মোহনার স্কুলেই পড়াশোনা করতো।
কিন্তু সে স্কুল থেকে বিদায় নিয়েছে।
কারন সে এবার এস,এস, সি পরীক্ষা দিচ্ছে।
সবগুলো পরীক্ষা প্রায় শেষ।
শুধুমাত্র প্রাকটিকেল পরীক্ষাগুলো বাকি আছে।
ক্লাস সিক্স থেকেই সাগরের এক রোল ছিলো।
কেউ তাকে হারাতে পারে নি।
যার কারনে স্কুলের প্রতিটা স্টুডেন্ট এমন কি স্যার রা তাকে খুব ভালো করেই চিনতো।
বলতে গেলে সাগর অসম্ভব মেধাবী একজন স্টুডেন্ট।
ক্লাসের সকল মেয়েদের সে ক্রাশ।
শুধু ক্লাস না স্কুলের সকল স্টুডেন্ট রা তাকে অনেক বেশি পছন্দ করে।
সে দেখতে অনেক বেশি কিউট ছিলো।
চোখে সবসময় চশমা আর হাতে থাকতো বই।
সে পড়াশোনা করা ছাড়া কিছুই বুঝতো না।
ক্লাসের মেয়েদের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তাকিয়ে দেখতো না পর্যন্ত।
তার এই Attude এর জন্যই হয় তো সে প্রতিটা মেয়ের ক্রাশ।
স্কুলের অনেক বড় আপুরাই মনে মনে ভাবতো যদি সাগরের থেকে আমরা এক ক্লাস নিচে থাকতাম তাহলে খুব ভালো হতো।
অন্তত তাকে প্রপোজ করার একটা সুযোগ থাকতো।

টিফিন পিরিয়ড এ সবাই যখন আড্ডায় মেতে উঠতো সে তখনও বই হাতে নিয়ে বসে থাকতো।
সাগর তার নিজের ক্লাসেরও একটা মেয়েকেও ভালো করে চিনতো না।
শুধু ক্লাস করতে যেটুকু দেখা যেতো সেটুকুই।

প্রতিবছর স্কুলে ২৬ শে মার্চ উপলক্ষে প্রোগ্রাম হয়।
নাচ,গান,কবিতা আবৃতি,রচনা প্রতিযোগিতা এবং খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।
আর সাগর যদি কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন নাও করে তবুও সে পুরুষ্কার পেতো।
কারন তাদের স্কুলে যারা এক রোল করতো তাদের কে আলাদা একটা পুরুষ্কার দেওয়া হয়।
আর সেই পুরুষ্কার অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নিজের হাতে দিতেন।
যাতে করে সবাই ভালোভাবে পড়াশোনা করে।
আর এক রোল করার জন্য অনেক বেশি চেষ্টা করে।
আর সেই প্রধান অতিথি হলেন তাদের এলাকার এম,পি।
যার কারনে অনেক সাংবাদিক ও সেই প্রোগ্রাম এ আসে।
এবং তাদের কে নিয়ে নিউজ করে।
টিভিতে দেখা যাবে এই কৌতুহলে সবাই ফাস্ট হওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে।

সাগর নিজেও বাকি সকল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে।
আর ফাস্ট হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে।
কারন ফাস্ট হওয়া তার একটা পেশা।
যে করেই হোক তাকে ফাস্ট হতেই হবে এইরকম একটা মনমানসিকতা তার।

মোহনা সাগর কে ফাস্ট স্কুলের সেই প্রোগ্রাম এই দেখে।
সাগর যখন বার বার পুরুষ্কার নেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠছিলো তখনই তাকে ভালো লেগে যায়।
তখন মোহনা মাত্র ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়।
আর সাগর তখন এইটে ছিলো।
সেই দিনের পর থেকে সে সাগর কে সবসময় চোখে চোখে রাখে।।
তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেই।
যদিও তখন সে ভালোবাসা আর ভালোলাগার মধ্যকার তফাত টা পুরোপুরি বুঝতো না।
তবে সাগর কে দেখলেই কেমন জানি একটা অনুভূতি হতো সেটা টের পেতো।
তাকে দেখলেই তার মুখে হাসি চলে আসতো।
সে স্কুলে এসেই আগে সাগর কে খুঁজতো।
তাকে একদিন না দেখলে খুবই মন খারাপ হতো।
সে কেনো আজ স্কুলে আসলো না তা জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতো।
মোহনা তো প্রায় সময় ই পানি খাওয়ার অজুহাতে সাগরের ক্লাস রুমের সামনে গিয়ে তাকে দেখে আসতো।
স্কুলে জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য সাগর যে লাইনে দাঁড়াতো মোহনাও ঠিক সেই সোজায় দাঁড়িয়ে থাকতো।
কিন্তু সাগর একদিনও তার দিকে তাকাতো না।
কারন তার চোখ তো সবসময় বই এর দিকে থাকতো।
আর বাকি সময় মাটির দিকে।
কারন সে কারো সাথে কথা বলার সময় নীচ মুখ হয়ে কথা বলতো।
মোহনার এটাই সবচেয়ে বড় আফসোস যে সাগর তাকে চেনে না।

মোহনা আবার তেমন ভালো স্টুডেন্ট ছিলো না।
সে ছিলো পড়াশোনায় খুবই দূর্বল।
তবে খুবই চঞ্চল প্রকৃতির ছিলো সে।
এমনভাবে কথা বলতো কেউ বুঝতেই পারবে না পড়াশোনায় একদম গোল্লা সে।
তবে বাহির থেকে দেখলে মনে হয় অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট সে।
কারন ক্লাসের সকল মেধাবী স্টুডেন্ট দের সাথে তার বন্ধুত্ব।
মেধা দিয়ে নয় সে তাদের কে কথা দিয়ে আর নানা রকম খাবার খাইয়ে পটিয়ে ফেলেছে।।
মোহনার বাবা একজন কলেজের প্রফেসর।
সেই হিসেবে সবাই তাকে প্রফেসরের মেয়ে হিসেবেই চেনে।
আর মোহনাকে সবাই আরো একটা কারনে চেনে তা হলো তার বাবার একটা রিসোর্ট আছে।
যে রিসোর্ট টা সবাই পিকনিক, যেকোন বিয়ের অনুষ্ঠান বা পার্টির জন্য ভাড়া করে।
যেসব ছেলেমেয়েদের গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড আছে তারাও সেখানে গিয়ে কিছু সময় আড্ডা দেয়।।
বলতে গেলে এটা একটা পার্কও বটে।
যার বাহিরে আবার অনেক দোকান পার্ট।
যেগুলো বেশিরভাগই কসমেটিক আর খাবারের দোকান।
কারন পার্কে যারা আসবে তারা তো কিছু না কিছু কিনবে বা খাবে তাই এসব দোকানপাট গড়ে উঠেছে।

মোহনার পড়াশোনা করতে একদম ইচ্ছা করতো না।
সে নিজের ইচ্ছায় জীবনেও পড়তে বসতো না।
তার বাবা আর ভাই তাকে জোর করে হাতে বই ধরিয়ে দিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো।
তারা যতক্ষন তাকে পাহারা দিতো ততোক্ষন সেও বই হাতে নিয়ে বসে থাকতো।
যেই তারা চোখের আড়াল হয়ে যেতো মোহনা সাথে সাথে বই বন্ধ করে ফেলতো।
সে তো মাঝে মাঝে একা একা বকতে থাকে তাকে যে এই পড়া আবিষ্কার করেছে।
আর পরীক্ষার কথা শুনলেই মোহনার গায়ে জ্বর এসে যেতো।
সে মনে মনে ভাবে যদি পরীক্ষা না দিতে হতো?
পরীক্ষা না দিয়েই নেক্সট ক্লাসে ওঠা যেতো?
যদি এইসব রোল না থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো।

পরের দিন ক্লাসে এসে স্যার মোহনাকে ডাক দিলো।
মোহনা বেঞ্চে বসেই বললো yes sir বলেন।
স্যার তাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন তুমি সাগর কে চেনো?
কে হয় তোমার?

সাগরের নাম শোনামাত্র মোহনার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো।
কারন সাগর কে যে তার অনেক বেশি ভালো লাগে,
সাগর যে তার ক্রাশ সেটা শুধুমাত্র মোহনা আর মোহনার মন জানে।
এ ব্যাপারে সে কাউকে কিছু বলে নি?
তার বান্ধুবীরাও জানে না এ ব্যাপারে।
এটা সম্পূর্ণ তার মনের ব্যাপার।
কথায় আছে মেয়েদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে না।
তেমন ভাবেই সাগরের কথা সে গোপন করে রেখেছে।
তাকে যে তার ভালো লাগে এটা কারো সামনে প্রকাশ করে নি।
আজ তিন বছর ধরে সে এক তরফাভাবে সাগর কে তার মনের মধ্যেই রেখেছে।
সাগর স্কুল থেকে বিদায় নিয়েছে তবুও তার অনুভূতি তাকে সে জানায় নি।
সাগর তো মোহনাকে চেনেই না।
হয় তো দেখেছে কিন্তু সেভাবে খেয়াল করে নি।
আর এদিকে মোহনা সাগর কে তার মনের গভীরে জায়গা করে দিয়েছে।
সেখানে আর কাউকে বসাতে পারছে না।
আবার তাকে বেরও করতে পারছে না।

কিন্তু স্যার হঠাৎ সাগরের কথা জিজ্ঞেস করছে কেনো?মোহনা এটা ভেবে তোতলাতে লাগলো।
সে আস্তে আস্তে বললো কোন সাগর স্যার?
আমি তো সাগর নামে কাউকে চিনি না।
স্যার তখন বললো তোমার রিলেটিভদের মধ্যেও সাগর নামে কেউ নেই?
মোহনা সেই কথা শুনে বললো না স্যার।
আমার রেলাটিভদের মধ্যেও কারো নাম সাগর নয়।
এই কথাটা বলতেই মোহনার পুরো শরীর ঘেমে একাকার।
সে শুধু ভাবছে স্যার সাগরের ব্যাপারে জানলো কি করে?
আর তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস ই বা করছে কেনো?
তাহলে কি স্যার তার মনের খবর জানে????
স্যার হলো বাংলার টিচার,
তিনি আবার মনোবিজ্ঞানী হলেন কবে থেকে?

#ক্রাশ
#সূচনা_পর্ব
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

#চলবে,,,,,,,,,,,,,?????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here