ক্ষণিকের বসন্ত পর্ব ১১

#ক্ষণিকের_বসন্ত
#পাট:১১
#লেখিকা:Angel Frozen (Ñîşhì)

রাতের আধারে খোলা আকাশের নিচে বসে আছে ত্বায়িহা।।।
নিজের সাথে এমন কিছু হবে সে ভাবতে পারে নাই।।।
এভাবে মেঘার ফিরে আসাটা সে মেনে নিতে পারছে না,,,
আর যায় হোক নিজের ভালবাসার মানুষের ভাল অন্য কাউকে দেয়া যায় না।

এদিকে জুরাইন খামারবাড়ি এসে দেখে ত্বায়িহা মাঠের মাঝখানে দু হাটু ভাজ করে তার মাঝে মাথা নিচু করে বসে আসে।

জুরাইন :(আমি জানতাম তোমাকে আমি এখানে পাবো,,,কিন্তু এভাবে বিধ্বস্ত হয়ে থাকবে তা ভাবতে পারি নাই,,মনে মনে)

জুরাইন তারপর ত্বায়িহার সামনে দু হাটুর উপর ভর দিয়ে বসে,, ত্বায়িহার মাথায় হাত রাখে।

ত্বায়িহা :ভয় পেয়ে কে বলে সামনে তাকিয়ে দেখে জুরাইন বসে আছে।

জুরাইন :খুব কান্নাকাটি করছো বোঝায় যাচ্ছে,,
চোখ দুটা গাড়ো লাল হয়ে আছো,,
গোলাপি ঠোট জোড়া কান্নার কারণে লালচে হয়ে গেছে,,,মুখ চোখের যে ১২টা বাজিয়ে রাখছো।

ত্বায়িহা :তাতে আপনার কি??

জুরাইন : আমার বউ!!! তুমি পুরাটা আমার,,
তিনবার কবুল বলে,,,
রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে বিয়ে করছি মগেরমুল্লুক না কি??

ত্বায়িহা :বিয়ে করছেন তাতে কি,, আপনার ভালবাসা তো মেঘা সে চলে আসছে।
তার কাছে জান,,,আপনি তো তাকে ভালবাসেন।।

জুরাইন :আমি না হয় মেঘাকে ভালবাসি,,, তুমি কাকে ভালবাসা??

ত্বায়িহা :আমি আপনাকে ভালবাসি,,
আপনার মতো তো আমার গার্লফেন্ড নাই।
যে বউ সামনে থাকতে তাকে মেঘাকে জড়িয়ে ধরবো।

জুরাইন :আহারে আমার বউটা দেখছি মেঘাকে নিয়ে খুব জেলাস ফিল করছে।

ত্বায়িহা :মোটেই না,,,আমি কেনো ঐ পাটকাঠি কে দেখে জেলাস হবো,,,
আপনার যাকে ইচ্ছে জড়িয়ে ধরে থাকেন,, এখানে আমার কাছে কেনো আসছেন???

জুরাইন :আমি আমার বউয়ের সাথে রোমান্স করতে আসছি,,,কিন্তু বউটা আমার রাগ করে বসে আছে।

ত্বায়িহা :এই একদম বৌ বৌ করবেন না,,,
আমি মোটেই কারো বৌ না,,
যান যান মেঘার কাছে যান,,
আমি একা ভাল আছি,,
আমার কাউকে লাগবে না।

জুরাইন :তোমার আমাকে প্রয়োজন না হতেই পারে,,আমার তো বউ লাগবে,,,
তাই বলে ত্বায়িহাকে হঠাৎ করে কোলে উঠিয়ে নেয়।

ত্বায়িহা :আচমকা এমন করে কোলে নেওয়াতে ভয় পেয়ে জুরাইনের গলা জড়িয়ে ধরে।।

জুরাইন ;:যে মেয়ে একা ঐ মীরজাফরের মতো শয়তান কে বোকা বানিয়ে,,,
বর কে জেল থেকে বাহির করতে পারে সে মেয়ে এতো ভীতু ভাবা যায়।

ত্বায়িহা :আপনি কি আমাকে বলে কোলে নিয়েছেন যে??? নামিয়ে দিন আমাকে!!

জুরাইন :আগেই বলছি রোমান্স করবো,,
নামাবো কিসের জন্য,,বেশী হাত পা ছোড়াছুড়ি করলে গরুর খামারে নিয়ে গিয়ে গবরের উপর ফেলে দিবো মনে থাকে যেনো???

ত্বায়িহা :এ কথা শুনে চুপচাপ হয়ে যায় ।
(বিশ্বাস নাই,,,
মীরজাফরের ভাতিজা বলে কথ,,মনে মনে)

জুরাইন :এই তো আমার ভদ্র বউ।

ত্বায়িহা :এই লোকটা কি বোঝে না??
আমার তার বুকের সাথে এভাবে থাকতে নিজের মধ্যে কেমন কেমন একটা অনুভূতি কাজ করছে।এভাবে বেশী সময় থাকলে হয়তো তার নেশায় মাতাল হয়ে যাবো,,,
জুরাইনের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা গুলা ভাবতে থাকে।

জুরাইন :ত্বায়িহা কে কোলে করে,,
ওদের খামারবাড়ির গেস্ট হাউজের ভেতরে নিয়ে আসে।
একটা খুব সুন্দর রুমের ভেতর এনে নামিয়ে দেয়।

ত্বায়িহা :পুরা রুম দেখে অবাক,,,
আমরা এ রুমে কেনো,,
আর এটা কার রুম,,
এতো সুন্দর করে সাজানো??

জুরাইন :এটা আমার রুম,,,আমি আমার বউ কে নিয়ে এখানে এসে থাকবো তাই নিজের হাতে সাজিয়ে রেখেছিলাম।

ত্বায়িহা :মন খারাপ করে বলে,,,
মেঘার জন্য বুঝি সাজিয়ে রাখছিলেন???

জুরাইন :আমি বলছি মেঘার জন্য!???

ত্বায়িহা : না তো!!

জুরাইন :যে আমার বউ হবে তার জন্য,,আর এ বাড়ির কেয়ারটেকার চাচা এ বাড়ির দেখাশোনা করে,,,আমার সাজানো রুমের যত্ন সে নেয়।

ত্বায়িহা :ভাল তো,,,তা আমাকে কেনো রুমে আনছেন😒😒

জুরাইন :আর কিছু না বলে দরজা বন্ধকরে দিয়ে এসে ত্বায়িহা করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ভালবাসার জন্য আনছি।।।
তাই বলে সে
ত্বায়িহা দিকে নেশাময় চোখে তাকিয়ে ওর গলায় ঠোঁট বুলাতে বুলাতে থাকে।

ত্বায়িহা :এমন করে জুরাইন যতো বার ওর গলায় কিস করে ততো বার সে কেপে কেপে ওঠে।

তারপর আর কিছুই বলতে পারলো না ত্বায়িহা আর কিছু বলে ওঠার আগেই জুরাইন নিজের ঠোঁট দিয়ে ত্বায়িহার গোলাপি ঠোঁট জোড়া আবদ্ধ করে নেয়।
বেশ অনেকক্ষণ পরে ছেড়ে দেয় জুরাইন দুজনেই বেশ জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে।
আর হাসতে থাকে,,
ত্বায়িহা তো লজ্জায় মাথা উঁচু করে তাকাতেই পারছেন না।

তারপর আবার জুরাইন ত্বায়িহা কে কোলে করে বিছানায় নিয়ে যায়।।।
ত্বায়িহা কে হাজার ভালবাসার ছোঁয়াতে ভরিয়ে দিতে থাকে।
ত্বায়িহা নিজের ভালবাসার মানুষের কাছে আজ নিজেকে বিলিন করে দেয়।
আজ ওদের ভালবাসার পূর্ণতা পাবার রাত,,,
রাতের গভীরতার সাথে ওদের ভালবাসার গভীরতা বাড়তে থাকে।।
*
*
*
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ত্বায়িহা নিজেকে জুরাইনের বুকের মাঝে দেখে লজ্জা পায়,,
কিন্তু রাতের কথা ভাবতেই ঠোঁটের কোণায় হাসি চলে আসে।
তারপর বসে ঘুমন্ত জুরাইন কে চুপচাপ দেখতে থাকে,,আর ভাবে কে বলবে এ খুব রাগী।।
যে তার নিজের তিনটা বছর এভাবে নষ্ট হতে দেখছে।

ত্বায়িহানর: সব ভাবনার মাঝে জল ঢেলে জুরাইন চোখ বন্ধ করে বলে ওঠে,,,
সুন্দরি বৌ এভাবে দেখে না,,,
আমার নজর লেগে যাবে তো।
তাই বলে চোখ খুঁলে ত্বায়িহার হাত ধরে আবার নিজের বুকের মাঝে টান দিয়ে নিয়ে আসে।

জুরাইন :কি সারারাত দেখে মন ভরে নাই,,
এতো দূরে থেকে কে দেখা যায়,,
এভাবে বুকের উপর শুয়ে দেখতে হয়।

ত্বায়িহা :থাক এতো দেখাদেখির দরকার নাই আমার,,,
ছাড়ুন আমি ফ্রেশ হতে যাবো,,😏

জুরাইন :একসাথে যাবো,,,আর একটু আসো ঘুমাই😁

ত্বায়িহা :ভাল ভাবছিলাম এতো দেখি পুরা পাজি,,
তাই বলে জুরাইন কে ধাক্কা দিয়ে উঠে সোজা বাথরুমে চলে যায়।

জুরাইন :বাথরুমের দরজায় নক করে বলে,,,
বোকা বৌ আমার ফ্রেশ হয়ে কি ঐ ভাবে বাহিরে আসার শখ আছে।।।

ত্বায়িহা :বাথরুম থেকে বলে,,,একদম না,,,
লুচ্চামি করলে মাথার নাট বল্টু নষ্ট করে দিবো।

জুরাইন :লও ঠেলা নিজের বৌ যদি বলে লুচ্চা তাহলে হবে না কি।।।আচ্ছা এই ড্রেস নাও।

ত্বায়িহা হাত বাহিরে দিয়ে ড্রেস নিয়ে নেয়।।তারপর ফ্রেশ হয়ে বাহিরে চলে আসে।।

তারপর জুরাইন ফ্রেশ হয়ে,,,
বাহিরে বাগানে বসে চা নাস্তা করে,,,

ত্বায়িহা :তা মেঘার হঠাৎ এমন আগমন তোমার কী মনে হয়??

জুরাইন :সেদিন যে মেয়েটা মেঘা ছিল না তা,,
জানি কিন্তু মেঘা এতোদিন যে অসুস্থ ছিল তা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।।
ওকে খুন কর নি কিন্তু দূরে কেনো রাখছে তাই জানি না

ত্বায়িহা :হুম,,বিয়ে নিয়ে যদি সমস্যা হতো তাহলে তোমার আমার বিয়ে হতে দিতো না,,,
মীরজাফর কী চায় জানি না।।

জুরাইন :হুম সেটাই,, এখন কী করবো কিছু ভাবছ??

ত্বায়িহা :হুম,,,মীরজাফরের জন্য আমি যা ছিলাম তাই থাকবো,,,কিন্তু তোমার আমার সম্পর্ক্যটা বদলে যাবে।

জুরাইন :মানে,,,কি করতে চাও তুমি??
দেখো আমি তোমাকে হারাতে পারবো না,,,
মেঘাকে সব বলবো কিছুদিন পর,,,এখন না,,,
দেখো তুমি আবার মেঘাকে নিয়ে ভয় করছো না তো?

ত্বায়িহা :সরি স্যার আপনাকে কিছু বলতে পারছি না।

জুরাইন :what sir মানে।

ত্বায়িহা :উঠে দাড়িয়ে বলে,,অফিসের বস কে তো স্যার বলেই ডাকাবো না কি??

জুরাইন :কিছু বলবে তার আগেই মেঘা চলে আসে।

মেঘা :ঘুম থেকে উঠে পুরা বাড়িতে তোমাকে খুঁজেছি,,,যখন পায় নি,,
বুঝতে পারছি তুমি এখানে,,,
তাই তোমার প্রিয় স্থানে চলে আসছি।

জুরাইন :(ওহ ত্বায়িহা এই জন্য এমন করছে মনে মনে) তা ভাল করছো,,
কিন্তু তুমি না এসে অন্যকেউ আসলে ভাল হতো।।
অসুস্থ শরীর নিয়ে এতো দূর আসা ঠিক হয়নি।

মেঘা ;আরে তোমার কাছে অসার জন্য দূর লাগে না,,,তোমার সাথে থাকলে এমনি ঠিক হয়ে যাবো।

জুরাইন ;আচ্ছা ঠিক আছে এখন তাহলে বাড়ি যাওয়া যাক।

মেঘা :অবশ্যই,,কিন্তু ঐ মেয়েটা কে জুরাইন??

জুরাইন :ত্বায়িহা কে দেখে ভাবনায় পড়ে যায় কি বলবে।।।

ত্বায়িহা :জ্বি ম্যাম আমি সারের পি এ,,,Hello mem ,,, I am Tabyiha Ayman.

মেঘা :ওহ,,আমার পোষ্টে তুমি নতুন,,,
সমস্যা নেই আমাদের বিয়ের পর আর জব টা তো কন্টিনিউয়াস করতে পারবো না,,
তোমাকে রেখে ভালই করছে।

ত্বায়িিহা :জ্বি ম্যাম।( লুচ্চা বর,,,সামনে বৌ থাকতে তুই আবার বিয়ে করবি কর,,তাতে আমার কি আমিও মজা দেখাব,,,সত্যি না বলার..মনে মনে)

জুরাইন :আল্লাহ আমার বৌ এমনি দজ্জাল কম না তার মধ্যে আবার বিয়ে আমার,,
প্রথম সংসার শুরু করার আগেই,,,
বনবাসে কে পাঠাবার ব্যবস্থা রেডি।,,,
কেউ আমাকে বাঁচাও গো,,,মনে মনে😭😭)

তারপর তিনজন একসাথে বাড়িতে যায়।
বাড়িতে তিনজন কে একসাথে দেখে সবাই অবাক।
(বাকিটা কাল জানা যাবে,,
আমার কিছু বলার নাই😷😷)



চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here