ক্ষণিকের বসন্ত পর্ব ৯

#ক্ষণিকের_বসন্ত
#পাট:৯
#লেখিকা:Angel Frozen (Ñîşhì)

উকিলবাবু সে সময় বাড়িতে আসে,,,

তাকে দেখে সবাই ড্রয়িংরুমে চলে আসে,,,

তারপর উকিলবাবু সৈয়দ চৌধুরী বাড়ির
উকিলনামা বাহির করে পড়তে থাকে,,,

তাতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা আছে,,,
জুরাইনের বিয়ের পর তার সম্পত্তির অর্ধেকের মালিক তার বউ হবে।

সে উকিলনামা অনুযায়ী আজ থেকে সব সম্পত্তির মালিক ত্বায়িহা।

কিন্তু সে দলিলে এমন কিছু নিয়ম ছিলো যা উকিলবাবু ওদের বলে না।

উকিলবাবু ত্বায়িহাকে তার সব কিছু বুঝিয়ে দেয়।

তারপর আর কি?? মীরজাফর আর ত্বায়িহা হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে এমন ভাব করে।।

এরপর থেকে প্রতিদিন ত্বায়িহা অফিসে যেতে শুরু করে।।।
প্রথম যেদিন অফিসে জুরাইনের কেবিনে ত্বায়িহা যায়,,,,কেবিনের ভেতর থেকে দরজা লক করে দেয়।

ত্বায়িহা :জুরাইনের চেয়ারে বসে বলে,,,
তোমার আর মেঘা এ কেবিন থেকে প্রেমের শুরু,,
এই কেবিনে তোমাদের হাজার হাজার স্মৃতি তাই না??
তোমাদের এতো স্মৃতির মাঝে কি আমার কোনো জায়গা আছে???
নাহ তোমাদের দু জনের মাঝে আমার কোনো স্মৃতি নেই,,তাহলে কে আমি??
মেঘা তুমি হবু বউ ছিলে,,,বউ হওনি???
আমি জুরাইনের বউ কিন্তু আজ ও আমার কোনো অধিকার নাই জুরাইনের প্রতি।।
তাই যার প্রতি আমার কোনো অধিকার নাই তাকে কেনো আমি বাঁচিয়ে রাখবো বলতে পারো?? কোনো কারণ নেই তাই জুরাইন কেও মরতে হবে ফাঁসীর দড়ি পড়ে।

মীরজাফর দরজার বাহিরে দাড়িয়ে সব কথা শুনে তার সেক্রেটারি কে বলে দেখছো আমি ভুল কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করি নাই,,,
ওই যোগ্য আমার উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য।

সেক্রেটারি :জ্বি স্যার,, আজ বলছি ত্বায়িহা সত্যি আমাদের বিশ্বাসী,,,
আমরা ওকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি।

মীরজাফর :হুম,,,দেখছো,,এই পৃথিবীতে টাকা দিয়ে সব কেনা যায়,,,
আমি ওর আর জুরাইনের বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্ক টা কিনে নিয়েছি।।।
টাকার জন্য আজ সে নিজের বর কে ফাঁসির দড়িতে ঝোঁলাতেও রাজি।

সেক্রেটারি :জ্বি স্যার,,,টাকা দিয়ে তো সবাই কে কেনা যায় না,,তার প্রমাণ কিন্তু একজন ছিলো??

মীরজাফর :যারা টাকার কাছে বিক্রয় হয় না তাদের জিবীত টাকার কনো দরকার নাই,,
তাদের মৃতা একমাত্র কপালে লেখা থাকে,,,
এটা আমার কথা না এটা রাজনীতির নিয়ম।

সেক্রেটারি :স্যার তাহলে এখন আমাদের এখান থেকে যাওয়া দরকার।
তারপর মীরজাফর আর সেক্রেটারি সেখান থেকে চলে যায়।

ত্বায়িহা :কেবিনের দরজা খুঁলে বাহিরে এসে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,,
কি ভাবছিস মীরজাফর তুই একাই ধোঁকা দিতে পারিশ,,,
তোর থেকে বেশী রং আমি বদলাতে পারি,,,,
রক্ত কথা বলে তা ভুলে যাবি না।😏



এভাবে দিন কাটতে থাকে ত্বায়িহা মীরজাফরের সেক্রেটারির থেকেও বেশী বিশ্বাসী হয়ে গেছে।।

ত্বায়িহা :অফিস নাই,, তাই সে আজ বাড়িতে এসে,,
দাদাভাইয়ের রুমে গিয়ে তার সাথে কথা বলে।।

ত্বায়িহা :এই যে বুড়া দাদাভাই আপনার উইলের জন্য আজ এতো কিছু তা কি আপনি জানেন???।

দাদাভাই :নিরব..

ত্বায়িহা :কেন রে,,,তোর সম্পত্তি সব জুরাইন আর ওর বউরে কেন দিতে হয়ছে,,,
বড় ছেলেকে দিলেই তো পারতি,,,
তাহলে আমাকেও জুরাইনের জীবনে #ক্ষণিকের_বসন্ত হয়ে আসতে হতো না।
না জুরাইন কে জেলখানায় পঁচে মরতে হতো।

দাদাভাই :তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

ত্বায়িহা :এখন কেঁদে কোনো লাভ নাই,,,
এবার একটু সুস্থ হতে হবে,,
সুস্থ না হলে জুরাইনের ফাঁসি দেখা লাগবে।।
তা গলাটা একটু ঝেড়ে বলেন তো,,,
খুঁন কি আপনি করে এমন শুয়ে অসুস্থ হবার নাটক করছেন???

এমন সময় জিরান সেখানে এসে পড়ে সে বলে,,,

জিরান :এসব কোন ধরনের কথা বলেন দাদাভাইয়ের সাথে??

ত্বায়িহা :তাই,,,তা এ বুড়ার সাথে এমন কি কথা বলছি,,,,এটাই তো খুঁন হয়তো সে করছে??

জিরান : জোরে চিৎকার করে বলে,,ভাবী আমার দাদাভাই এমন কাজ করে নাই।।

ত্বায়িহা :ও আচ্ছা আপনার দাদাভাই খুঁন করে নাই,,বড় ভাই করে নাই,,,
তাহলে খুঁন আপনি করছেন??
এটা ক্লিয়ার আমার বর কে জেলে রাখার জন্য তো এবাড়ির মানুষ দ্বায়ী।

জিরান :ভাবী আমাদের বাড়ির কোনো মানুষ এমন জঘৃন্য কাজ কোনোদিন করবে না,,,
মেঘার সাথে কারো কোনো শএুতা ছিলো না।

ত্বায়িহা :তাহলে আমার সাথে ছিলো সেই জন্য মেঘা কে মেরে আমাকে এ বাড়ির বউ করে আনছেন।বলে সেখান থেকে চলে যায়।



ত্বায়িহা :জেলখানা তে গিয়ে জুরাইন কে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
আচ্ছা সত্যি করে বলেন আপনি কি আমাকে কখনো ভালবাসতে পারবেন না??

জুরাইন :তা হঠাৎ এমন কথা কেনো বলছো??

ত্বায়িহা :আমি যা বলছি তার উওর দিন আগে।।

জুরাইন :হুম ভালবাসি তো তোমাকে,,,
তোমার মতো করে,,,
তুমি আমার বউ তোমাকে না ভালবেসে যাবো কোথায়।।।

ত্বায়িহা :মেঘাকে কি তাহলে ভুলে গেছেন??

জুরাইন :একটু মাথা নিচু করে থেকে,,
তারপর মাথা সোজা করে বলে,,
মেঘা আমার অতীত তুমি আমার বর্তমান ,, মেঘাকে ভালবাসতাম,,,
এখনো মনের গহীনে সে আছে থাকবে।।।
আর আমার জীবনে,,,
তুমি বর্তমান,,
তুমি সারাজীবনের সাথী আমার সুখ দুখের সাথী তাই তোমার জায়গা একদম আলাদা হৃদয়ের গভীরে।

ত্বায়িহা :ও তাই বুঝি তাহলে তাড়াতাড়ি আমাকে কিস করো,,,কাজ আছে কাজে যাবো।

জুরাইন :অবাক এ মেয়ে পাগল হয়ে গেছে নাকি।

ত্বায়িহা :আমি পাগল হয়নি,,তাড়াতাড়ি করো।

জুরাইন : দেখো তোমার মাথা ঠিক নাই,,বাড়ি যাও।

ত্বায়িহা :জুরাইন কে আর কিছু না বলে সোজা ওর মুখট ধরে নিজের ঠোঁট জুরাইনের ঠোঁটের মাঝে ডুবিয়ে দেয়।
তারপর অনেক সময় পর জুরাইন কে ছেড়ে দিয়ে সোজা পেছনে আর না দেখে চলে আসে।।

জুরাইন :এটা কি বউ ছিলো না কি অন্য কেউ,,,এমন মেয়ে পাওয়া যায়,,
জেলখানাতেও রোমান্স করে😑😑😑



কিছুদিন পর মীরজাফর একটা জায়গাতে প্রেস মিটিং করতে যাবে যাবার সময় সেদিন সে ত্বায়িহা কে সাথে করে নিয়ে যায়।
সাংবাদিকরা মীরজাফর কে নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকে,,,
তারা হঠাৎ ত্বায়িহা কে প্রশ্ন করে,,

★তা মেম আপনি একজন ফাঁশির আসামী কে কেনো বিয়ে করছেন???

ত্বায়িহা :আবার কেনো তার সম্পত্তি জন্য।

মীরজাফর :বিষম খেয়ে ওঠে সেখানে।

আসে পাশের সবাই অবাক।।

ত্বায়িহা :আমি আমার স্বামী কে ভালবাসি তাই তাকে বিয়ে করছি।।
সে খুঁনি?? আপনি তাকে খুঁন করতে দেখছেন না কি??

★পুলিশের কাছে সব প্রমাণ আছে তার খুঁনের।

ত্বায়িহা :দেখুন যতোদিন না আদালত থেকে তাকে খুঁনি প্রমাণ করছে ততোদিন প্লিজ কেউ তাকে খুঁনি বলবেন না,,,
এতে করে চাচাজির সম্মানে আঘাত লাগে,,,
যতোই হোক তার ভাইয়ের ছেলে তো নিজেরি ছেলে হয়।খুঁনি খুঁনি করলে তার ইমেজে আঘাত লাগে।

★সাংবাদিক গণ এবার মীরজাফরের পিছনে লাগে।।
একজন বলো তা স্যার আপনার তো নিজের কোনো ছেলেমেয়ে নেই আপনার উত্তরাধিকার কে হবে???

মীরজাফর :আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে যদি জুরাইন বেচে থাকে তবে সে হবে উওরাধিকারি,,,
কিন্তু ওর কি হবে বলা যায় না,,
তাই আমার উত্তরাধিকারী কেউ হবে না,,
সব কিছু সমাজের গরীব মানুষ দের দান করে যাবো আমি।

ত্বায়িহা :(শয়তান একটা,,,নিজে জুরাইনের টাকাকড়ির জন্য এতো কাহিনী করছিস,,, জনগণের ভোট পাবার জন্য শালা কতো বড় মিথ্যা বলে গরিব দের দান করবে,,,
আরে তোর থেকে বড় গরীব এই দুনিয়াতে আর কেউ নাই।মনে মনে)


তা স্যার আপনি এ জীবনে বিয়ে কেনো করেন নি!আপনার নিজের ও তো পরিবার থাকতো আজ।

মীরজাফর :দেখুন আমার কাছে বিয়েটা সব কিছু না,,,বর বউয়ের সম্পর্কের থেকে আমার কাছে আমার দেশের মানুষ,,
সমাজের মানুষ আগে।

ত্বায়িহা :বলা শুরু করে।।
আসলে চাচাজি চিরকুমার থাকতে চান,,,
তার পরিবার বলতে আমারা তার সব,,,
সে যা কিছু করে সব কিছু তো আমাদের জন্য,,,
আমিও ভবিষ্যতে তার দেখানো পথে চলতে চায় সবাই আমার জন্য দোআ করবেন,,,
আর চাচাজির জন্য তো অবশ্যই,,,
যাতে করে আমি তার মতো একজন আদর্শ সৎ রাজনীতিবিদ হতে পারি।।।
জুরাইন যখন থাকবে না তখন,,
আমিও না হয় সাহসী নারীদের মতো শক্তিশালী হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়জিত রাখবো।।

সেখানে উপস্থিত সবাই ত্বায়িহার কথা শুনে বেশ খুশি হয়,,আর মীরজাফরের খুব বেশী জয়কামনা
করতে থাকে।।।
এতে মীরজাফর ও খুব খুশি।।
সে তো ভেবে নিয়েছে,,এখন থেকে
সে তার সব সিক্রেট ত্বায়িহা কে বলবেত্বায়িহা রাজনীতি করলে তার জন্য ভাল হবে তাই।

সে ত্বায়িহা কে বলে আজ আমি যদি বিবাহিত হতাম তাহলে তোমার মতো আমার একটা মেয়ে থাকতো।
সে এভাবে আমার রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতো।

ত্বায়িহা :ঠিক তখনও কি এমন সম্পত্তির জন্য নিজের মেয়েকে বিধবা করতে চায়তেন।

মীরজাফর :রাজনীতিতে কোনো সম্পর্কের দাম নেই,,,তাই নিজের মেয়ের খুশি কুরবানি দিতে দ্বিধা করতাম না।।

ত্বায়িহা :এই জন্য আপনার কোনো সন্তান নেই।
(তোর মতো শয়তানের ঘরে জন্ম নেওয়ার থেকে মরে যাওয়া অনেক ভাল,তাই তোর কেউ নেই মনে মনে)

এভাবে দেখতে দেখতে অনেক দিন পার হয়ে যায়
এদিকে জুরাইনের কেস আদালতে উঠবে,,,
তার শাস্তি চূড়ান্ত হবার জন্য।।।
সে নির্দোষ হলে মুক্তি পাবে না হয় সে ফাঁশির দড়িতে ঝুলবে।

জানি না তার নিয়তি কি লিখা আছে।
স্বার্থের কাছে বলি না,, কি সত্যের কাছে মুক্তি,,
না কি ষড়যন্ত্রের দড়ি গলায় ঝুলবে।

(ভালবাসা কমে গেছে তাই আমিও কমাই দিলাম,,,কেউ কিপটা বলবেন না
নায়কের জন্য পিয়াজ কেটে কান্না করেন😒)



চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here