ক্ষণিকের বসন্ত পর্ব ১

#ক্ষণিকের_বসন্ত
#পাট:১
#লেখিকা:Angel Frozen (Ñîşhì)

আমি মনে হয় প্রথম এমন এক মেয়ে যার বিয়ে হবে জেলখানাতে।।
ভাবতে অবাক লাগছে না,,
আমিও এমন অবাক হয়েছি।
সত্যি সব কিছু অবাক করার মতো,,
সব কিছু হটাৎ করে হয়ে যাচ্ছে,,
আমি মেনে নিচ্ছি সত্যি এটাই
যে ভাগ্যের উপর কারো জোড় নেই।

আমি ত্বায়িহা আয়মান।
নিজের পরিবারের জন্য এ বিয়েটা করছি,,,
পড়ে না হয় আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন।।



এখন লাল বেনারসি শাড়ী পড়া পা থেকে মাথা পর্যন্ত সোনার গহনাগাঁটি দিয়ে সাজিয়ে রাখা,,,সাথে বড় একটা ঘোমটা দিয়ে দিয়েছে।

আমি জেলখানার গেটের বাহিরে মা বোন ভাই এর সাথে দাড়িয়ে আছি।
তারা আমাকে জেলখানার বাহিরে আমাকে রেখে চলে গেছে,,,

মা যাবার সময় শুধু বলে গেছে ,,
যে বাড়িতে যাবো সেই বাড়িটা কে
যেন ভালবাসা দিয়ে জান্নাতের বাগান বানিয়ে রাখি বলে চলে যায়।

গেটের এখান থেকে বাকিটা আমাকে যেতে হবে,,
শুধু আজ নয়,,সারাজীবনের জন্য।

আমি একবুক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামনে একলা এগিয়ে যাচ্ছি।
চারপাশে জেলখানার অন্ধকার জগতের সেল গুলা দেখা যাচ্ছে।
আমি সেই সব অন্ধকার গলিতে হেটে যাচ্ছি।
মনে হাজর সংকোচ আর ভয়,,
তবুও কিছু করার নেই।

সবার মতো আমার জীবনে যে কোনো বসন্ত নেই।
হয়তো ক্ষণিকের জন্য কোনো বসন্তের আগমন কোনোদিন আর হবে না।

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ আমার নাম ধরে ডাক দিয়েছে,,
পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার হবু শ্বশুর মশাই।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :ত্বায়িহা আর যেতে হবে না এবার আমার সাথে আসো।

ত্বায়িহা :জ্বি হবু শ্বশুর আব্বু,, বলে তার পেছনে অনুসরণ করে যাচ্ছি।সে অন্যদের সাথে কথা বলছে।আমি শুনছি।

পুলিশ কমিশনার :চৌধুরী সাহেব যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এ বিয়ের কাজ টা কম্পিলিট করে চলে যান এখান থেকে।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :জ্বি অবশ্যই।কাজী সাহেব আর উকিলবাবু আছেন তো।

পুলিশ কমিশনার :জ্বি সবাই রুমের ভেতরে আছে।চলেন তাহলে যাওয়া যাক।

ত্বায়িহা :রুমের ভেতরে দেখি আগে থেকেই কাজী উকিলবাবু উপস্থিত আছেন,,,
তা আমার বর টা কোথায় তাকে তো দেখছি না,,
ইশ নিজের বর কে না দেখলে হয়,,
কেমন পোলা বিয়া করতাছি জানতে হবে তো না কি??? মনে মনে।

তারপর তারা একে একে আমাকে দিয়ে কাবিননামাতে স্বাক্ষর আর কবুল বলিয়ে নেয়।
ঐ দিকে ছেলেও বলছে,,
বিয়াটা এইভাবে হয়ে গেছে।

তারপর মোনাজাত চলার সময় কিছু পুলিশ আমার বর কে সে রুমে আমার সামনে নিয়ে আসে।।

ঘোমটার নিচ থেকে হালকা যা দেখছি তাতে আমি অনেক জোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠি।।।আল্লাহ এ কেমন বর আমার।।

আমার সামনে একজন জেলখানার আসামী,, যার হাতে পায়ে ও গোলায় লোহার বেড়ি আর শিকলে তার পুরা শরীল মুড়িয়ে রাখা।
চুল দাড়ি দিয়ে মুখ ভুতের মতো লাগছে,,
এ কোনো মানুষ না কি অন্য কিছু বোঝার উপায় নাই।
চেহার দেখার জন্য অনেক সাধনা করতে হবে।

আমি তাকে দেখে সোজা আমার শ্বশুর আব্বুর পেছনে গিয়ে দাড়ায়,,
সে আমার দিকে এগিয়ে আসছে,,
মনে হয় আমাকে খুন করবে।।।
আমার তাকে বিয়ে করায় সে হয়তো খুশি নয়।কিন্তু তাকে কি করে বোঝায় বিয়েটা আমার পরিবারের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।

তারপর সে কোনো কিছু করার আগেই তাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।
আমি চুপচাপ চোখেরজল ফেলছি নিরবে।
এমন একজন বর যার সাথে হয়তো কোনো বসন্ত আমার ভাগ্যে জুটবে নাহ।

সৈয়দ চৌধুরী :ধন্যবাদ আপনাদের সবাই কে আমাকে এভাবে সাহায্য করার জন্য।

উকিলবাবু :চৌধুরী সাহেব এবার আপনি আপনার নিদিষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে পারবেন।

পুলিশ কমিশনার :সত্যি চৌধুরী সাহেব অভিনন্দন,, ইনশাআল্লাহ আপনি এবার আপনার ফল হাতে পাবেন।

সৈয়দ চোধুরী :ধন্যবাদ আপনাদের,,
আপনাদের ছাড়া আমি এসব একা করতে পারতাম না,,ধন্যবাদ,,,
এবার সবার এখান থেকে যাওয়া উচিৎ।।
অনেক রাত হয়েগেছে।।
কেউ জানতে পারলে সমস্যা হবে।।

তাই সেখান থোকে বিদায় নিয়ে ত্বায়িহার হাত ধরে গাড়িয়ে বসিয়ে দেয়।গাড়ি চলছে আপন গতিবেগে,,নিরবতা ভেঙ্গে আমি আগে কথা শুরু করি।

ত্বায়িহা :আপনার বাড়ির আর সব মানুষ কোথায়??তারা কেউ তো বিয়েতে উপস্থিত ছিলো না।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :তারা সবাই বাড়িতে আছেন,,,তুমি গেলেই দেখতে পারবে।।

ত্বায়িহা : আপনি বিয়েটা এভাবে মাঝ রাতে সবার আড়ালে কেনো দিলেন,,
আমার পরিবার ছাড়া আর কেউ জানে না যে আমার বিয়ে তাও জেলখানাতে হয়ছে।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :কিছু কাজ থাকে যা সবার আড়ালে করতে হয়,তার মাঝে তোমার বিয়েটা একটা কাজ।
এই বিয়ে কবে কখন হয়ছে কেউ জানবে না,,
কিন্তু পুরা বাংলাদেশ ঠিক জানতে পারবে তুমি সৈয়দ চৌধুরী বাড়ির বউ।।



তারপর আমাদের আর কোনো কথা হয়নি,,
এরপর অনেক সময় পার করার পর আমাদের গাড়িটা একটা বিশাল বড় গেটের সামনে দাড়ায়।।
দারোয়ান গেট খুলে দেয় গাড়িটা ভেতরে এসে এক বিশাল বড় রাজমহলের মতো বাড়ির সামনে দাড়ায়।

তারপর আমার শ্বশুর আব্বু গাড়ি থেকে নেমে আমার সাইডের দরজা খুলে দেয়,,
আমি নেমে আসি গাড়ি থেকে।
তিনি আমার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে আনেন।

ত্বায়িহা : চারপাশে একবার ভাল করে তাকিয়ে দেখি এতো কোনো রাজমহলের থেকে কম না।।চার দিকে দামী দামি আসবাবপত্র,,
দামী দামী সব বিদেশি শোপিস দিয়ে সাজানো। এতো বড় বাড়ি না জানি এর মাঝে কয়েক হাজার মানুষ বাস করতে পারবে।
আমি তো সব কিছুর মাঝে হারিয়ে গেছিলাম।তারপর শ্বশুর আব্বু ডাকে আমার ঘোর কাটে।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :ত্বায়িহা তুমি আজ থেকে এবাড়ির বউ। সবার মতো এবাড়ির সব কিছুতে তোমার ও অধিকার আছে।আর তোমার থেকে শুধু এটাই আশা করবো তুমি এ বাড়ির মান মর্যাদারক্ষা করে চলবে। এখানে কোনো কাজে কারো পারমিশন নিতে হবে না তুমি তোমার মতো থাকবে।


তারপর বাড়ির কাজের মানুষ কে ডেকে বলে রহিম মিয়া বড় বউমা কে তার রুমে দেখিয়ে দিয়ে আসেন।


তার পিছনে আমি দোতালার পূর্ব পাশের একটা রুমের সামনে এসে থামি,,
তারপর রুমটা দেখিয়ে বলে মেম এটা আপনার রুম,,
কোনো দরকার হলে আমাকে ডাক দিবেন।
বলে চলে যায়।


ত্বায়িহা :রুমের ভেতর প্রবেশ করে আমি তো অবাকের আরো এক ধাপ উপরে।।
আল্লাহ এ রুম কার।।।
এতো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা।।
সব কিছু পারফেক্ট।
যে এ রুমে থাকে সে খুব সৌখিন।
সাথে খুব রুচিশীল। রুমের ভেতর সব কিছু আছে,,
কোনো স্বপ্নের থেকে কম না।
এবার আমার ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর দরকার।
রুমের লাইট বন্ধ করে বিছানায় শরীল টা ছেড়ে দেয়।
চোখ বন্ধ করতেই চোখের কোণা দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ছে।
হাজার প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,,,
কিন্তু কোনো উওর নেই।

যার সাথে বিয়ে হলো সে জেলখানাতে কেনো??
সে এমন কি করছে যে তাকে জেলে পচতে হচ্ছে??

আমি কি শুধু তার নামের বউ হয়ে থাকবো সারাজীবন??

তার আর আমার সম্পর্ক্যে কি আর পাঁচ টা স্বামী স্ত্রীর মতো হবে না।


হে খোদা এ কেমন জীবন বেছে নিলাম আমি।। সব সুখ কিনতে পারবো,, কিন্তু ভালবাসা কোথায় পাবো??ভালবাসা সে তো আর কিনতে পারবো না।টাকা দিয়ে খুশি থাকা যায় মনের শান্তি কেনা যায় না।হাজার সুখ নিজের আশে পাশে আনতে পারবো,,ভালবাসা নয়!!


এসব ভাবতে কথা চিন্তা করতে করতে কখন যে দু চোখ লেগে গেছে বুঝতে পাড়ি নাই।

সকালের মিষ্টি রোদের আলোয় পুরা রুম আলোকিত হয়েগেছে,,
সেই আলো চোখে এসে পড়াতে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার,,
বুঝতে পারছি অনেক দেড়ি হয়ে গেছে ঘুম থেকে উঠতে।


তারাতারি ফ্রেশ হয়ে একটা থ্রি পিস পড়ে নিচে চলে যায়।নিচে যেতেই শ্বশুর আব্বু সাথে দেখা।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :ত্বায়িহা শুভ সকাল!! রাতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো।??

ত্বায়িহা :না শ্বশুর আব্বু,, কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে গেছে,,,সরি মাফ করবেন।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :আরে এতে কোনো সমস্যা নেই এসো,,
তোমাকে বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
বলে ডাইনিং রুমে খবার টেবিলে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।

ত্বায়িহা :আল্লাহ এতো বড় বাড়িতে মানুষ মাএ এ কয় জন।।
খাবার টেবিলে সবাই আছে মনে হচ্ছে ,,
এরা কেউ কোনো কথা না বলে চুপচাপ খাবার খাচ্ছে ,,
আমি যে নতুন তাতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই মনে মনে।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :ত্বায়িহা উনি তোমার শ্বাশুড়ি মা।,,জারা তোমার ছোট ননদ,,

জারা :হাই ভাব…আর কিছু বলে না,,কথা অসম্পন্ন রাখে।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :সৈয়দ জিরান চৌধুরী তোমার দেবর,,

জিরান :হাই ভাবি,, ওর মায়ের চোখে চোখ পড়তেই চুপ হয়ে যায়।

সৈয়দ চৌধুরী : তোমার ঠিক সামনে যিনি বসে আছেন উনি তোমার বড় চাচা শ্বশুর তাকে তো চেনার কথা বড় রাজনীতিবিদ,,,
সমাজ সেবক,,
বড় সফল ব্যবসায়ী সৈয়দ মীর জাফর চৌধুরী।

ত্বায়িহা :আসসালামু আলাইকুম চাচাজি।

সৈয়দ মীর জাফর চৌধুরী :সৈয়দ জাবিন চৌধুরী আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন এ বাড়ির কিছু নিয়ম কায়দাকানুন আছে,,,
তাতে এই নিয়ম আছে খাবার টেবিলে কোনো কথা কেউ বলে না,,
যা পরিচয় করানোর তা পড়ে করবেন।এটা পরিচয় পর্বের স্থান না।ভুলে যাবেন না।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :সরি বড় ভাইজান ভুল হয়ে গেছে আর হবে না।


তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে,,
সবার আগে চাচাজি চলে যায় নিজের রুমে।
তারপর শাশুড়ি মা শ্বশুর আব্বুর সাথে ঝগড়া শুরু করে তা দেখে দেবর ননদ চলে যায় আমি সেখানে দাড়িয়ে আছি।

জেসমিন চৌধুরী :তোমার এতো সাহস তুমি এমন এক বস্তিবাড়ির মেয়ে কে সৈয়দ চৌধুরী বাড়ির বড় বউ করে নিয়ে চলে আসছো??আর আমাদের সাথে খবার টেবিলে বসাও কোন অধিকারে???

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :তুমি কাকে কি বলছো ভুলে যাবে না,,ও এখন আমাদের বাড়ির বড় বউ।
তোমার মতো ওর ওহ অধিকার আছে তাই ত্বায়িহাকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে শেখো জেসমিন।

জেসমিন চৌধুরী :কিসের সম্মান যখন সমাজের মানুষ ওর পরিবারের স্ট্যাটাস সম্পর্ক্যে জানবে তখন আমাদের সম্মান কোথায় নামবে ভাবতে পারো।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :সেদিন কোথায় ছিল তোমার উঁচু সমাজের মানুষ?? যখন আমার ছেলের জন্য তাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম।কেউ রাজি হয়নি।

জেসমিন চৌধুরী :তারা কেউ রাজী হয়নি বলে তুমি একটা মিডিল ক্লাস মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে।

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :হ্যা আমি আমার ছেলের জন্য যে মেয়েকে পেয়েছি সেই আমার ছেলের যোগ্য,,তুমি একদিন দেখবে যাকে আজ অপমান করছো সেই তোমার বাড়ির যোগ্যতম বউ হবে।

জেসমিন চৌধুরী :আমি এই মেয়েকে কোনো দিন আমার বড় ছেলের বউ বলে মেনে নিবো না,,আর না এই বাড়ির বড় বউ বলে মেনে নিবো।বলে সে নিজের রুমে চলে যায়

সৈয়দ জাবিন চৌধুরী :ত্বায়িহা বলে বউমার মাথায় হাত দিয়ে বলি প্লিজ জেসমিনের কথায় কিছু মনে করো না,,ও বাহিরে অনেক শক্ত ভেতরটা অনেক নরম।। সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না।বলে সে দোতালা তে যায়।

ত্বায়িহা :আমি যদি ইচ্ছা করতাম তাহলে শাশুড়ি মা কে উচিত জবাব দিতে পারতাম নতুন বউ বলে আজ চুপ আছি,, দ্বিতীয় দিন চুপ থাকবো না।।বলে পুরা বাড়িটা নিজে নিজে একাই ঘুরে ঘুরে দেখছি।
হঠাৎ একটা রুম থেকে জোড়ে কথা শুনতে পেয়ে সে রুমের বাহিয়ে গিয়ে দাড়িয়ে কথা গুলা শুনছিলাম।।
সে সব কথা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি এক নিমেষে সরে গেছে।।কথা গুলা শুনে তো ঘৃণা বোধ কাজ করছে।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here