ক্ষণিকের বসন্ত পর্ব ৭

#ক্ষণিকের_বসন্ত
#পাট:৭
#লেখিকা:Angel Frozen (Ñîşhì)

মেঘা :উফফ আর কতো সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আমাকে হাতে নাম লেখা সাইন বোর্ড নিয়ে,,,
আল্লাহ জানে এই সৈয়দ জুরাইন চৌধুরী কখন আসবে???
আচ্ছা তাকে তো দেখি নাই চিনবো কেমনে,,
ভাবার বিষয়।তাই মীরজাফর স্যার কে কল দিলাম।

মীরজাফর :হ্যালো মেঘা তোমার আবার কি সমস্যা হলো??

মেঘা :স্যার আসলে জুরাইন স্যার কে তো চিনিনা কি করে চিনবো??

মীরজাফর :কী ভাবে আবার হাতে তো সৈয়দ জুরাইন চৌধুরী নামের বোর্ড আছে,
আর বাহিরে থাকে সে ছেলে কে দেখলেই চিনতে পারবে,,
এবার আর ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবা না।

আমি আর কি করবো দেখি হঠাৎ সামনে দিয়ে একটা ছেলে বাহিরে আসছে,,,
সেই স্টাইলি,,,কানে হেড ফোন,,
হাতে কতো শত ব্রেসলেট,,
চুল গুলা সেই রকমের করে রাখা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে বাহিরে থেকে আসছে,,,
উনি হয়তো আমাদের স্যার,,,
তাই তারাতারি ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে স্বাগতম জানালাম। বললাম স্যার আমি মেঘা আপনাকে নিতে আসছি।।

ছেলেটা :what are you say?? আমি আপনার স্যার কি ভাবে,,আমার বাড়ির মানুষ তো ঐ যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

মেঘা :তারাতারি তার হাত থেকে ফুলের তোড়া নিয়ে বলে,,
আগে বলবেন না যতোসব,,
বলে পিছনে ঘুরতেই কারো সাথে ধাক্কা খায়।
কোন কানা রে,,,
ঐ বেডা চোখে দেখিশ না,,,
কানার মতো হাটাহাটি করিশ তাও এমন সুন্দর প্লেসে ।

লোকটা :What. .. .

মেঘা :একদম আজারে ইংরেজি তে পটর পটর করেন না,,I know English. ok.

লোকটা :So what.

মেঘা :উফফ কানের কাছে ঘেন ঘেন করেন না তো দূরে গিয়া মরেন,,,
বলে একটু দূরে গিয়ে আবার হাত নামের বোর্ড নিয়ে দাড়িয়ে থাকে।

লোকটা :মেঘার হাতে বোর্ড দেখে তার সামনে গিয়ে,,, বলে আপনি সৈয়দ জুরাইন চৌধুরী কে নিতে আসছেন???

মেঘা :কানা না কি?? চোখে তো চশমা নাই,,,
হাতে যখন তার নামের বোর্ড তাকে ছাড়া আপনাকে তো নিতে আসি নাই,,তাই না।

লোকটা :yes I know that,,,so আপনি জুরাইন কে নিতে আসছেন তাকে চেনেন তো???

মেঘা :আরে ভাই যদি চিনতাম তাইলে কি হাতে বোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম।।
আর এতো পেঁচাল না পাড়ে আপনি আপনার কাজে জানতো দেখি।।
আর আমাকে আমার কাজ করতে দেন দেখি।

লোকটা :আমি চলে গেলে কি আপনি আপনার স্যার কে খুঁজে পাবেন???

মেঘা : মানে কি,,কি বলতে চান,,,??

জুরাইন :আমি সৈয়দ জুরাইন চৌধুরী।
যাকে সাথে করে নিয়ে যেতে আপনি আসছেন।

মেঘা :এবার জুরাইনের পা থেকে মাথা অবধি ভাল করে একবার দেখে নিলো।
পুরা কম্পিলিট সুট বুট পড়া,,
দেখতে সেই রকমের ডেশিং লুকিং এর,,
আর এখন দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে।

মেঘা :তাড়াতাড়ি ওর হাতের বোর্ড নিচে ফেলে দিয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে বলে,,,
সরি স্যার বুঝতে পাড়ি নাই,,স্বাগতম স্যার,,

তারপর দু জনে বাহিরে এসে গাড়িতে।বসে,,
জুরাইন পিছনে একা বসে,,
মেঘা ড্রাইভারের পাশের ছিটে বসে।

মেঘা :স্যার আমার ভুলের জন্য আমার চাকরী টা খাবেন না প্লিজ!!!

জুরাইন :ওর সব কাজ কথা শুনে হাসে,,
হাসি চেপে একটা রাগী ভাব নিয়ে বলে,,,
গাড়িতে no more কথা,,
যা কথা বাড়িতে গিয়ে হবে।

মেঘা : সারা পথ ভয়ে টেনশনে পাড় করে,,
মনে মনে নিজেকে হাজার গালি দেয়।।
কেন যে উল্টাপাল্টা কথা বলতে গেছিলাম,,
এই জন্য আমাকে সবাই মাথা মোটা বলে।



এভাবে ওরা সৈয়দ চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছে যায়।
গাড়ি থেকে নামতেই দু পাশ থেকে ওদের উপর ফুলের বৃষ্টি হতে শুরু করে,,
এভাবে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতেই প্রথমে

মীরজাফর :জুরাইন কে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
আমর কলিজার টুকরা টা কতো বড় হয়ে গেলে আল্লাহ কতো বড় হয়েগেছে।

দাদাভাই :দেখি মীর জুরাইন কে ছাড়,,
জুরাইন এসে দাদাভাই কে সালাম করে,,
দাদাভাই জুরাইন কে মিষ্টি মুখ করাই।

জারা,জিরান :দুজনে বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরে,,,
বলে আমাদের তো ভুলেই গেছো।হুহ

জুরাইন :তাই বুঝি তাহলে তোমাদের জন্য যে গিফট আনছি সব ঐ মেয়েটা কে দিয়ে দেয় তাহলে ভাল হবে।

জারা :কোন মেয়েকে দিয়ে দিবা??

জুরাইন :দরজার পাশে মেঘা কে দেখিয়ে বলে ওকে।

জারা :মেঘা আপুকে কেন দিবা,,
থাক আমাদের জিনিশ আমরাই নিবো।

জেসমিন :তোদের বড় ভাইয়ে সাথে কথা বলার জন্য,, সারাদিন রাত পড়ে আছে,,
আগে ওকে ফ্রেশ হয়ে আসতে দাও।

জুরাইন নিজের রুমে চলে যায়।
এবার মেঘা ওখানে দাঁড়িয়ে কান্না শুরু করে।
তা দেখে জেসমিন আর জাবিন সমনে যায়,,,

জেসমিন :কি হলো মেঘা কান্না করছো কেনো???

মেঘা :মেম প্লিজ আমার চাকরি টা খাবেন না,,
আমার ভুলে জন্য আমি সরি বলছি,,,
প্লিজ মাফ করে দেন।

জাবিন :আরে কেউ তোমার চাকরী খাবে না।
আগে বলে কি ভুল করছো??

মেঘা :এয়ারপোর্টে যা যা করছে সব বলে দেয়।

মেঘার সব কথা শুনে জাবিন আর জেসমিন হাসতে হাসতে বলে পাগল মেয়ে,,
জুরাইন কিছুই বলবে না,,
তুমি টেনশন ফ্রি হয়ে বাড়িতে যাও,,
কাল থেকে জুরাইন অফিসে যাবে তুমি ওর পিএ সো না ভুলে ঠিক মতো কাজ করবা।

মেঘা :হুম,,বলে বাড়িতে চলে আসে।



পরেরদিন আফিসে যাবার পর সবাই ভাইয়াকে বরণ করে নেয়।

মেঘা :জুরাইন কে অফিসের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
তারপর জুরাইন কে তার কেবিনে সাথে করে নিয়ে যায়।

জুরাইন :মেঘা,,, যান আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসুন।

মেঘা :তারাতারি করে জুরাইনের জন্য কফি নিয়ে এসে মগটা টেবিলের উপর রাখে।

জুরাইন :কফির মগটা হাতে নিয়ে একটু খেয়ে বলে কফি তো দারুণ বানান,,তা শুধু কফি বানাতে পারেন না কি সাথে অফিসের কাজকর্ম করা হয়।

মেঘা :স্যার আমি আমার কাজ ঠিক মতো করতে জানি,,
আপনাকে আমার কাজে কোনো কোনো ক্ষুত ধরার সুযোগ দিবো না।

জুরাইন :গুড,,তো জান নিজের কাজ করুণ,,
আমার দরকার হলে আমি আপনাকে ডাক দিবো।

মেঘা :জুরাইনের কেবিন থেকে বাহির হয়ে সোজা নিজের কেবিনে বসে নিজের কাজ করতে থাকে।

এভাবে ওদের দিন গুলো কাটতে থাকে।জুরাইন যেখানে যে কাজে যায় মেঘাকে সে সাথে করে নিয়ে যায়।
মাঝে মাঝে তো দু জন কাজ ছাড়া ও ঘুরতে বাহিরে যায়।
জুরাইন মেঘার প্রতি খুব কেয়ারিং যা মেঘাকে জুরাইনের প্রতি আকৃষ্ট করে।
জুরাইন যখন কাজ করতে করতে বিরক্তিকর হয়ে যায় তখন সে তার সাথে মেঘাকে নিয়ে খামারবাড়ি তে চলে যায়।

জুরাইন :জানো মেঘা এটা আমার সব থেকে প্রিয় জায়গা,,যেখানে আমার খারাপ লাগা ভাল লাগা সব সময় আমি এখানে আসি।

মেঘা :জায়গা টা এতো প্রিয় কেনো আপনার??

জুরাইন :ছোট বেলা বাবা মা,,
দাদা দাদু সবাই বেশিরভাগ সময় এখানে ফ্যামিলি টাইম স্পেন্ড করতে আসতো,,,
সেই থেকে এ জায়গার প্রতি আমার টান বেশী।
আমি এখানে থাকলে নিজেকে সুখী মনে করি। যখন সময় পায় এখানে চলে আসি।

মেঘা :তা আজ কেনো এখানে আসছেন।??

জুরাইন :একটা আংটি বাহির করে মেঘার সামনে মাঠের মাঝে হাটু ভাজ করে বসে বলে,,আমি তোমাকে ভালবাসি বিয়ে করতে চায়।।তুমি কি বলো??

মেঘা :উঠে দাড়িয়ে বলে,,সরি স্যার আপনি মালিক আমি আপনার অপিসের সামান্য একজন কর্মচারী।। আমাদের মাঝে আমাক পাতাল তফাৎ তাই সম্ভব নয়।তাছাড়া আপনি বড় লোক আর আমি গরিব।

জুরাইন :তুমি কি আমাকে ভালবাসো না???

মেঘা :মিথ্যা বলবো না,,ভালবাসি কিন্তু আপনাকে বিয়ে করতে চায় না।

খামারবাড়ি ভেতর থেকে সবাই বাহিরে এসে ওদের সামনে দাড়িয়ে থাকে।

দাদাভাই :মেঘা তোমাকে আমাদের সবার খুব পছন্দ,,,
তুমি কিন্তু এভাবে আমার দাদুভাই কে রিজেক্ট করতে পারো না,,,আমি তোমাকে আমাদের বাড়ির নাতবউ করতে চায়।

সবাই একি কথা বলে তখন মেঘা তার হাত জুরাইনের দিকে আংটি পড়ার জন্য বারিয়ে দেয়।

জুরাইন আংটি পড়িয়ে দেয়।

তারপর ওদের engagement উপলক্ষে দাদাভাই একটা পার্টি রাখে ১৫ দিন পরে।



এদিকে অফিসের কাজে স্টোর রুমে কিছু পুরাতন ফাইলে জুরাইন এমন কিছু পায় যার জন্য সে খুব রেগে যায়।
সেদিন সোজা এসে সে বড় চাচাজির ঘরে গিয়ে দরজা দিয়ে অনেক সময় কথা বলে,,
জানি না তাদের মাঝে কি কথা হয়।
এরপর ভাইয়া বাহিরে এসে দাদাভাই কে বলে,,,
বড় চাচাজি কে তার ভাগ দিয়ে আলাদা করে দিতে।।
তারপর কিছু কথা কাটাকাটা হয়।
একটু পর চাচাজি এসে জুরাইন ভাইয় কে সরি বলে।
তারপর দেখতে দেখতে আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠানের দিন চলে আসে,,,
সবাই খুব খুশি।।
এ বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা।
সেদিন সেই পার্টী তে মেঘা আর জুরাইন ভাইয়ার বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়।



ত্বায়িহা :তোমার ভাইয়ের বিয়ে যখন ঠিক ছিলো,,,তাহলে সে কাকে খুন করে??? যার জন্য সে জেলে।??

জিরান :মেঘা আপু ভাইয়ার জীবনে #ক্ষণিকের_বসন্ত হয়ে আসে।
জানো সে নিজের ভালবাসার খুনের দায়ে জেলে??

ত্বায়িহা :কি বলছো এসব,,,কি ভাবে কখন তার জীবনে এ অন্ধকার নেমে আসে।

জিরান :নিজের চোখের পানি মুছে আবার বলতে শুরু করে,,,
সেদিন ভাইয়া আর মেঘা আপুর বিয়ের ডেট ফিক্সড করার কিছুদিন পরের কথা।
(কিছুদিন পরের কথা পড়ে জানতে হয়।
এতো তারাতারি জানতে নাই।।।।
এই গল্পটা খুব তারাতারি শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছা আছে😊)



চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here