খড়কুটোর বাসা ২ পর্ব -০৯

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam

আমি না বিশ্বাস করতে পারছি না আপনি সত্যি আসবেন।
” যুথির কথায় ইরহান হাসে তারপর বেক ক্যামেরা দিয়ে লাগেজ গুলো দেখায়।একটা অর্ধেক গোছানো হয়েছে সেটাও দেখায়।”

এবার তো আমার যুথি রানীর বিশ্বাস হয়েছে নাকি? তবুও যদি না বিশ্বাস হয় তাহলে সামনে পেয়ে আমার হাতে একটা চি’মটি কেটে নিও কেমন? তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্বাস হবে আমি সত্যি তোমার সামনে।
ভেবেছিলাম তোমাকে না জানিয়ে যাবো।হুট করে তোমার সামনে পরলে তুমি কি রকম রিয়েকশন দাও তা দেখবো।পরে আমার ই তর সইলো না।বলে দিলাম তোমায়।

আপনার আমাকে আরো আগে জানানো দরকার ছিলো। এটা আপনি একদম ঠিক করেন নি।ঠোঁট উল্টে বলে যুথি।

আগে জানালে কি করতে? সব পরিকল্পনা করে রাখতে নাকি কিভাবে বর কে ভালোবাসবে?.

ধ্যাত আপনিও না সব সময় শুধু মজা। সবকিছুর ই একটা প্রস্তুতি থাকে তাই না? বাড়ি,ঘর গোছগাছ করা লাগবে না। রুম গোছাতে হবে।

কিছু করতে হবে না। আমি মেহমান যাচ্ছি না ঐ বাড়িতে ঠিক আছে?

বাড়িতে সবাই কে বলেছেন?

দাদি কে জানিয়েছি একটু আগে। দাদি কাল বাড়ির সকলকে জানিয়ে দিবে। তোমার মামা,মামি কে ও জানানো শেষ। ওদের বলেছিলাম আসার জন্য কিন্তু কাজের জন্য নাকি আসতে পারবে না। তাই তোমার বোন দিনা কে কাল পাঠিয়ে দিবে।

আপনার সব দিকেই ন’জর আছে।

তা ঠিক তবে আমার যুথি রানীর দিকে একটু বেশিই আর স্পেশাল ন’জর।

যুথি ইরহানের কথায় মুচকি হাসে।

এবার ঝটপট বলে ফেলোতো যুথি রানী তোমার জন্য কি কি আনবো? আমি অবশ্য আমার পছন্দ মতো নিয়েছি।তোমার আলাদা করেও তো পছন্দ আছে তাই বলে ফেলো।

আমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস টা হলেন আপনি। আপনি আসতেছেন এর চেয়ে বেশি কিছু আর আমি চাই না। যা কিনেছেন তাই হবে।আলাদা করে আর কিনা লাগবে না।

আমার বউটা আজকাল বেশ রোমান্টিক হয়ে গেছে দেখছি।

খবরদার এখন কোনো বা/জে কথা বলে একদম আমায় লজ্জা দিবেন না বলে দিলাম।

ঠিক আছে বলে আর লজ্জা দিবো না, সামনে গিয়েই এবার বউকে লজ্জায় ফেলবো।

—————————————
পরের দিন ইরহানের দাদি বাড়িতে সকলকেই জানায় ইরহানের দেশে আসার কথা। বাড়িতে যেনো খুশির আমেজ পরে গেছে মুহূর্তের মাঝে।কেউ কেউ ইরহান আসছে এতে খুশি আর কেউ কেউ ইরহান বিদেশি জিনিস পত্র নিয়ে আসছে এতে খুশি।

দিনা ও এসে উপস্থিত হয়েছে দিনার বাবা একটা রিকশা ভাড়া করে পাঠিয়ে দিয়েছে । যুথি যতটুকু পেরেছে নিজের রুম টা গুছিয়ে নিয়েছে।

ইরহানের জন্য কি কি রান্না করবে সব ঠিক করে রেখেছে। দাদির কাছ থেকে আগেই ইরহানের পছন্দের খাবার কি কি জেনে নিয়েছে। যা যা লাগবে রান্না করতে ইশানের হাতে বাজার করে সব আনিয়ে রেখেছে।

যুথি আজ ভিষণ খুশি।মনের আনন্দে সব কাজ করে চলেছে।আর একটা দিন তারপর তার মানুষ টা নিজের কাছে থাকবে।হাত বাড়িয়ে ছুঁতে পারবে। এতোদিন যাকে মোবাইল স্ক্রিনে দেখে এসেছে তাকে সে সামনা সামনি দেখতে পারবে।মনে মনে যেমন আনন্দ হচ্ছে তেমন ভিতরে একটা জড়তা কাজ করছে। ইরহানের সামনে গিয়ে কি করে দাঁড়াবে সে।লজ্জায় অস্বস্তিতে সামনে বেশি সময় থাকতে পারবে বলেও মনে হচ্ছে না। ইরহান তার সামনে এসে দাঁড়াবে ভাবলেই কেমন হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় ।

পরের দিন ইরহান কে আনার জন্য এয়ারপোর্টে যাবে।সকলের আগে ইমনের বউ লিমা আর তৈরি হয়ে গেছে। ইমন অবশ্য যাবে না। লিমা সেজেগুজে সং সেজে আছে। তাছলিমা বানু ইরহানের বাবা,ইশান আর দিনা যাবে ইরহান কে আনার জন্য।

ইরহানের দাদি যাবে না। বয়স হয়েছে এতোটা পথ যেতে পারবে না। তারউপর তিনি আবার গাড়িতে চড়তে পারে না।

এরমধ্যে যুথি ও যাবে না। ইরহানের দাদি, দিনা,ইশান কেউ ই রাজি করাতে পারে নি যুথিকে এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য। তার এক কথা ইরহান যেনো সুস্থ ভাবে ও সহিসালামত আসতে পারে এর জন্য সে আজ রোজা রেখেছে। ইরহান কে আনার জন্য যাবে না। ওরা অনেক বলেও রাজি করাতে পারে নি। যুথি যাবে না বলে দিনা ও চায়নি যেতে কিন্তু যুথি জোর করে পাঠিয়েছে।

কেউ তো আর জানে না যুথি কি পরিস্থিতি তে আছে। ইরহানের সামনে সে কি করে যাবে এই ভাবনায় ভিতরে ভিতরে গুমরে ম’রছে।

সকলে ইরহানকে আনার জন্য এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। অন্য দিকে যুথি তার বর মহাশয়ের জন্য নানান ধরনের রান্না তে ম’ত্ত হয়।

—————————

ইরহান দেশের মাটিতে পা দিয়ে যাকে আগে দেখতে চেয়েছিলো।যেই মুখ টা সবার আগে দেখবে বলে বিমানে বসে ও কতো শতো কল্পনা সাজিয়ে ছিলো সেই বহু কাঙক্ষিত মুখটার দেখা সে পায়নি।এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে ও তার যুথি রানীর দেখা মিলেনি। ইরহান এটা জানতো তার দাদি তাকে নিতে আসবে না। কিন্তু যুথিও যে আসবে না সেটা সে জানতো না। তবুও ও ইরহান ভেবে নিয়েছে হয়তো গাড়িতে আছে যুথি।তাই সকলের সাথে কুশল বিনিময় করে তারাতাড়ি গাড়ির উদ্দেশ্যে যায়।

গাড়ির কাছে গিয়ে ও ইরহান নিরাশ হয়।তার যুথি রানী নেই। ইশানের কাছে জিগ্যেস করে জানতে পারে যুথি আসেনি।

ইরহান আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। লিমা,আর তাছলিমা বানু পারলে এখানেই সব লাগেজ খুলে ফেলে কিন্তু ইরহানের জন্য পারেনি।ইরহান ইশান কে নির্দেশনা দিয়েছে লাগেজ গুলো সাবধানে গাড়িতে তোলার জন্য।

যুথি সব কাজ সেরে দাদির রুমে বসে আছে। দাদির সাথে গল্প করছে।আর দাদি কিছু সময় পর পর কিলো কইতরি কয়টা বাজে? আমার বড় ভাই এখনো আসে না কেন? এতো সময় তো এসে পরার কথা আসতেছে না কেন?,
একটা ফোন দে না।দেখ ওরা কোথায় আছে।

এই নিয়ে কয়েকবার বলে ফেলেছে কথা গুলো। যুথি এসে পরবে বলে থামিয়ে দিচ্ছে। এদিকে সময় যতো যাচ্ছে যুথির ভিতরের উৎকন্ঠা আরো বেড়ে চলেছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না।

এর মধ্যে গাড়ির হর্ণ বেজে উঠে। যুথির কলিজা টা মোচড় দিয়ে উঠে। বুঝে গেছে ইরহান রা এসে গেছে।

কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে দাদি উনারা মনে হয় এসে গেছে। ইরহানের দাদি তারাতাড়ি যুথি কে আসতে বলে বেরিয়ে যায়। যুথি এই সুযোগে নিজের রুমে চলে যায়।

দাদির গলা শোনা যাচ্ছে। ইরহানের সাথে কতো কথা বলছে।আবার যুথি কে ও ডাকছে যাওয়ার জন্য।

যুথির বুকের ধুকপুকানি বেড়েই চলেছে। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে।

চোখ বন্ধ করে আলমারিতে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু সময় পর কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পায়।চোখ মেলে তাকায় যুথি।চোখের কোণ ঘেঁষে অবাধ্য নোনাজল গুলো বয়ে চলেছে। তার সামনে তার ভালোবাসার মানুষ টা দাঁড়িয়ে আছে। যেই মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে যুথি ঘুমিয়ে যেতো।যার কথা ভেবে মন ভালো হয়ে যেতো,মুচকি মুচকি হাসতো আজ এখন সে তার সামনে।

তার সামনে তার মানুষ টা দাঁড়িয়ে আছে। মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও ঠোঁটের কোণে হাসি।যুথির দিকে তাকিয়ে ব্রু নাচায়। যুথির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে,, চিমটি কে’টে দেখোতো যুথি রানী আমি সত্যি এসেছি কি ন,,,,,

ইরহান মুখের কথা আর সমাপ্ত করতে পারেনি।তার আগেই যুথি শরীরের সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়ে পরে যেতে নেয়।

যুথি বলেই ইরহান তারাতাড়ি যুথিকে নিজের সাথে আবদ্ধ করে আগলে নেয়। ইরহান হতভম্ব হয়ে গেছে। যুথির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

এটা কি হলো?

#চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here