খড়কুটোর বাসা ২ পর্ব -১৬

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ১৬
#Jhorna_Islam

দুই দিন যেতে না যেতেই পুরো বাড়ি আগের মতো হয়ে গেছে। কেউ দেখে বলতেই পারবে না দুই দিন আগে এই বাড়িতে কি ঘটেছিলো।একজন মানুষ এই বাড়ি থেকে পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। কারো চোখ মুখে শোকের ছিটে ফোটা ও নেই। যে যার মতো জীবন যাপন করছে। একটু খারাপ লাগা ও নেই তাদের মধ্যে।

শুধু ইরহান আর যুথি দাদিকে হারিয়ে ভিতরে ভিতরে কষ্টের দা/বানলে পুড়ছে। মানুষ টার স্মৃতি ক্ষনে ক্ষনে মস্তিষ্কে এসে হানা দেয়। মনে হয় এই তো রুমে আছে একটু পরই এসে ডাক দিবে। কতো শতো গল্প করবে। কিন্তু আবার কিছু সময় পরই সেই আশাটা নিভে যায়। মানুষ টা আর নেই। কোথা থেকে ডাক দিবে? আর আসবে না। কোনোদিন আসবে না।

ইরহান এখন বাড়ি থেকে বেশি বের হয় না। সারাক্ষণ নিজের রুমে নয়তো দাদির রুমে বসে থাকে। আর বিকেলে গিয়ে একটু বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে যুথি কে নিয়ে বসে।

যুথি এখন ইরহান কে হাসি খুশি রাখার অনেক চেষ্টা করে। কতো মজার, হাসির কথা বলবে।সারাক্ষণ ইরহানের সাথে বকবক করে। ইরহান অপ্রাসঙ্গিক কথা গুলো ও খুব মনোযোগ সহকারে শুনে।

নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এখনো দুইজন পুকুর পাড়ে বসে আছে। যুথি তার স্কুল জীবনের কতো শতো হাসির ঘটনা শুনাচেছ। ইরহান মনোযোগ দিয়ে তা শুনছে।

ইরহান পুকুরে একটার পর একটা ঢিল ছুঁড়তে থাকে। পুকুরের পানি ছিটকে কিছু টা দূরে গিয়ে পরে।

এই পুকুর টা ইরহানদের বাড়ির দেয়ালের ভিতরই। তাই আশে পাশে অন্য মানুষ থাকার কোনো চান্স নেই।

ইরহান পুকুরের দুই সিড়ি উপরে বসেছে যুথির থেকে।

ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে ডাক দেয়,,, যুথি রানী!

যুথি তার কথায় এতোটাই মশগুল ইরহানের ডাক তার কানে পৌঁছাতে পারে নি।

ইরহান এবার একটু জোড়েই ডাক দেয়। যুথি এবার কথা বাদ দিয়ে ইরহানের দিকে তাকায়।

ইরহান যুথিকে চোখের ইশারায় হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকে। যুথি বসা থেকে উঠে এসে ইরহানের হাত ধরে পাশে বসে। ইরহানের দিকে তাকিয়ে জানতে চায় কি হয়েছে,? খারাপ লাগছে?

উহু।

তাহলে?

ইরহান কথা না বলে যুথির একটা হাত শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে যুথির কাধে মাথা রাখে। যুথি ইরহানের গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে মাথা ব্যাথা করছে?

না গো।

যুথি আর কিছু জিজ্ঞেস করে না।চুপচাপ ইরহানের চুলের ভাঁজে নিজের হাত চালিয়ে চুলগুলো হালকা করে টেনে দেয়।

ইরহান আবেশে কতক্ষন চোখ বন্ধ করে রাখে।তারপর হুট করেই যুথির কাঁধে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে উঠে,,, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি!

হুট করে ইরহানের কথায় যুথি চমকায়। হার্টবিট বেড়ে যায়। এতোদিন ইরহান কাজে প্রমান দিয়েছে যে যুথি কে কতোটা ভালোবাসে। কিন্তু আজ মুখে বলল।যুথির যেনো নিজের কান কে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

ইরহান হয়তো যুথির অবাক হওয়ার ব্যাপারটা বুঝে নেয়। যুথির কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে যুথির দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মুচকি হেসে অধর ছোয়ায় হাতের উল্টো পিঠে।

দাদি যাওয়ার আগে তার মতো করে আমাকে আগলে রাখার মতো মানুষ দিয়ে গেছে। তুমি না থাকলে আমার কি হতো? আমি বেঁচে থাকার আশাটাই হারিয়ে ফেলতাম গো। তুমি আমার জীবনে এখন সবচেয়ে আপনজন। মানুষের জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বেঁচে থাকার জন্য কারণ লাগে কারণ ছাড়া ভালো ভাবে বাঁচা খুবই মুশকিল।আর আমার সেই কারণ টা তুমি।

যুথি ইরহানের গালে হাত রেখে বলে,,আপনার যুথি রানী ও আপনাকে খুব খুব খুব ভালোবাসে।

তুমি সব সময় আমার পাশে থাকবে। আমার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা ভাব্বে না।

ভাববো না।

সন্ধার আজান দেওয়ায় দুইজন ই উঠে দাঁড়ায় ঘরে যাওয়ার জন্য। যুথি উঠতে নিলে বাঁধে এক বিপত্তি। পা ফেলতে গিয়ে উল্টে পড়ে যেতে নেয়। ইরহান তখন দুই,ধাপ এগিয়ে গিয়েছিল। যুথি পড়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আল্লাহ গো বলেই এক চিৎকার দেয়। এখান থেকে পরলে ব্যাথা,তো পাবেই সাথে এই সন্ধায় পানিতে চু’বা খেতে হবে।

ইরহান যুথির গলা শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে যুথি পড়ে যাচ্ছে। তারাতাড়ি এসে ধরে ফেলে।

যুথি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। নাহ বেঁচে গেছে। তার বর মহাশয় বাঁচিয়ে দিয়েছে।

সাবধানে চলবেতো যুথি রানী। ভাবতে পারছো এখন কি হতো? ভিজে যেতে সেটা বড় কথা না কিন্তু ব্যাথাতো পেতে।

আমি বুঝতে পারি নি। আর আপনি তো বাঁচিয়ে নিলেন।আমি সাবধান হয়ে কি করবো?

সব সময় কি আমি তোমার পাশে পাশে থাকতে পারবো?

অবশ্যই।দরকার পরলে আপনাকে আমার আঁচলে বেঁধে রাখবো। বলে গুনগুন করে গান গায়,,,
“আঁচলে বাঁধিয়া রাখিবো গো তোমারে,আঁচলে বাঁধিয়া রাখিবো।”

ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে মলিন হাসে।তারপর যুথি কে সোজা করে দিয়ে হাত ধরে বলে চলো।

যুথিও ইরহানের সাথে ঘরে যেতে থাকে।

———————————–
প্রায় অনেক দিন ধরে ইশানের সাথে দিনার কোনো রকম যোগাযোগ নেই। কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছে না মেয়েটার সাথে। ভিতরে ভিতরে ছটফট করে ম/রছে।

দিনা কে তার মা চোখে চোখে রাখছে। কোনোভাবেই একা ছাড়ছে না। দিনা ও অনেক চেষ্টা করছে ইশানের সাথে একটু দেখা করার জন্য কথা বলার জন্য কিন্তু পারছে না।

যুথির মামি খবর পাঠিয়েছে যুথিকে ও বাড়িতে যাওয়ার জন্য। থাকতে না পারলেও যেনো যায় না হয় সন্ধার দিকে এসে পরবে। তাই ইরহান কে যুথি জানায় ইরহান ও সম্মতি দেয় যাওয়ার জন্য। নিজে গিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসে।

ইশান কোনো খবর না পেয়ে দিনার এক বান্ধবীর কাছে যায়।অনেক অনুরোধ করে যেনো দিনার একটু খবর এনে দেয়। ইশানের অনুরোধ ফেলতে পারেনি। দিনার বান্ধবী দিনার সাথে দেখা করতে যায়। তারপর জানতে পারে দিনার মা দিনাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। দিনার বাবার কথা ও শুনছে না।

এই কথা শুনার পর ইশানের মাথায় বা/জ পরে। এখন কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। হুট করেই ইরহানের কথা মাথায় আসে। ইরহান ছাড়া এখন কেউ তাকে সাহায্য করতে পারবে না।

ছুটে বাড়িতে ইরহানের কাছে যায়। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে একটু হলেই যেনো কেঁদে দিবে। মেয়েটা কে অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছে। কিছুতেই হারাতে চায় না দিনা কে।

ইরহানের হাতে ধরে সব খুলে বলে,, অনেক করে অনুরোধ করে দিনাকে তার জীবনে এনে দিতে। ইশান কেমন পা’গলের মতো করছে।

ইরহান প্রায় অবাক এমন রূপে ইশান কে দেখে। তাদের মধ্যে কিছু চলছে সে জানতেও পারলো না। ইশান কে ইরহান খুব স্নেহ করে। ইশান ছেলে হিসেবে খারাপ না। এখন অনেক টাই গুছালো হয়ে গেছে। আগে কেমন ছন্নছাড়া হয়ে থাকতো।ইরহান ইশানের পরিবর্তন টা অনেক আগেই খেয়াল করেছে।

ইরহান এটা ভেবেও অবাক হচ্ছে দিনা কে বিয়ে দিয়ে দিবে।এজন্যই হয়তো যুথিকে যেতে বলেছে। আজ দিনা কে দেখতে আসবে বলে।

ইরহান ইশান কে প্রশ্ন করে কিন্তু ইশান তোর কাছে ওরা মেয়ে দিবে কেন? তুই তো কিছুই করিস না।

কাজ করবো ভাই। সব করবো তুমি যা বলো সব করবো।তবুও আমার দিনা কে চাই।

বাড়িতে তোর মা ও মানবে না।

আমি সব সামলে নিবো ভাই।তুমি আগে ঐদিক টা ঠিক করে দাও।

ইরহান বুঝতে পারে ইশান দিনা কে সত্যি ভালোবাসে।তাই ইশান কে নিয়ে যুথির মামার বাড়ি যায়। যুথি তখন বাড়িতে না সীমার সাথে দেখা করতে গেছে। ইরহান গিয়ে যুথির মামীর কাছে ওদের ব্যাপারে বলে প্রস্তাব ও দেয়। সব দায় ইরহান নিবে বলে জানায় ওদের ব্যাপারে।দরকার পরলে দিনা পড়াশোনা করবে ইশান ততোদিনে নিজে কিছু একটা করতে পারবে। ইরহান নিজে ব্যবসা দাড় করিতে দিবে ইশানের জন্য।

অনেক ভাবে বোঝানোর পরও যুথির মামি বুঝছে না।উনার উত্তর না মানে না। অনে ভাবে রাজি করাতে চেয়েও ইরহান ব্যর্থ হয়। আর কি করার? ওদের মেয়ে ওরা দিতে রাজি না হলে কিছুই করার নেই।

ইরহান ও হা’ল ছেড়ে দেয়। ইরহান ইশানের নামে সাফাই গাইছে বলে,,ইরহান কে ও অনেক কথা শুনতে হয় যুথির মামির থেকে। এতোকিছু ঘটে গেলো অথচ যুথি কিছু জানতে ও পারলো না।

#চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here