খড়কুটোর বাসা ২ পর্ব -১৭

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ১৭
#Jhorna_Islam

ইরহান ইশান কে নিয়ে যুথির মামির বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পায় যুথি বাড়িতে ঢুকছে।

যুথি সীমার সাথে দেখা করে কিছু সময় আড্ডা দিয়ে মাত্রই বাড়িতে ঢুকে। ইরহান কে এই সময় এখানে দেখে বেশ অবাক হয়। কারণ ইরহানের সন্ধার পর যুথিকে নিতে আসার কথা।

ওমা এসে পড়েছেন? আমাকে একটা ফোন করবেন না? কখন আসলেন? আর আবার বাইরে যাচ্ছেন নাকি কোথাও?

ইরহান কিছু বলে না।

কি হলো? কিছু বলছেন না যে।কোথাও যেতে হবে না। আমরা একেবারে রাতের খাবার খেয়ে তারপর যাবো। ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে,, ইশান তুমি ও দাঁড়িয়ে আছো কেন? ঘরে আসো তোমরা।

ইরহান এবার মুখ খুলে।
যুথি যেতে চাইলে তারাতাড়ি তৈরি হয়ে আসো।আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি।

মানে এখনই যাবো? খালি মুখেই চলে যাবেন নাকি? আর বাইরে অপেক্ষা করবেন কেন? ঘরে আসেন।

নাহ্ তুমি যাও গিয়ে তৈরি হয়ে এসো। একটা কথা ও বলবে না। বাড়িতে গিয়ে সব বলবো।

যুথি ইরহানের দিকে ভালো করে তাকায়। তারপর ইশানের। মনে মনে ভাবে কি হলো এদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। তাই কথা বাড়ায় না যুথি। মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ তৈরি হয়ে মামির কাছ থেকে বিদায় নেয়। যুথির মামি তখন নিজের ঘরে চুপচাপ বসে আছে। যুথি বেরিয়ে আসতে নিলে তার মামি বলে উঠে,,, জামাই কে বলে দিস,ভাগনীর জামাই হিসেবে এই বাড়িতে আছে, সেই জায়গা টা তে যেনো থাকে। অন্য বিষয়ে নাক না গলায়।

মামির কথা টা যুথির কাছে একদম ভালো লাগে নি।তবুও কিছু বলেনি। মনে মনে ঠিকই আন্দাজ করে নিয়েছে কোনো বড় কিছু ঘটেছে।

পুরো রাস্তা একটা কথা ও বলে না কেউ। যুথি মনে মনে বেশ ঘা’বড়ে আছে। কি হয়ে গেলো তার অনুপস্থিতিতে?কিন্তু মামি যে ইরহান কে কথা শুনিয়েছে বেশ বুঝতে পারছে।

বাড়িতে এসে ইরহানের কাছে সব জানতে পারে। ইরহান সব খুলে বলে যুথিকে।এসব কথা শুনে যুথি অবাক হয়ে যায়।

এসব শুনে যুথি কি বলবে খুঁজে পেলো না।
যুথি কিছু সময় ভেবে তারপর বলে আপনি কেন বলতে গেলেন বলেন তো? আমাকে বলার দরকার ছিলো। আমি না হয় বলতাম।এখন শুধু শুধু মামী আপনাকে কথা শুনিয়েছে না?

ওসব বাদ দাও।

হু।

————————————
পরে আর ইশান,দিনা কাউকে নিয়ে কোনো কথা উঠে নি। আপাতত সবাই ই চুপ আছে। ইরহান ও ইশান কে বুঝিয়েছে ওদের মেয়ে ওরা রাজি না হলে তো কিছু করার নেই। তারচেয়ে ভালো এসব বাদ দিয়ে যেনো কাজ করার চেষ্টা করে। নিজের পায়ে দাঁড়ায়। ভাগ্যে থাকলে দিনা তার ই হবে। এমন কিছুই যেনো না করে যাতে দুই পরিবারই অসম্মানের মুখে পরে।

ঐদিকে দিনার বাবা ও দিনার মাকে আর দিনা কে অনেক করে বুঝিয়েছে। আপাতত বিয়ের বিষয় টা বাদ।অন্তত এস.এস.সি টা দিয়ে নিক।

সময় পেরিয়ে যায়।দেখতে দেখতে ইরহানের এই দেশে থাকার ছুটি ফুরিয়ে এসেছে। আগামীকাল তার ফ্লাইট। সময় যে এতো দ্রুত গতিতে যায় বোঝাই যায় না।

যুথি পুকুর পাড়ে একা একা বসে আছে। তার মন একটুও ভালো নেই। মনে হচ্ছে এইতো ইরহান দুই দিন আগে মাত্র এসেছে। কিন্তু না কতোগুলো মাস তো পেরিয়ে গেছে। আপন মানুষ ছেড়ে, আপন নীড় ছেড়ে দূরে পাড়ি দেওয়ার সময় হয়ে গেছে।

ইরহান একটু বাইরে গেছে।বন্ধু বান্ধব সকলের থেকে বিদায় নিতে। কাল সে চলে যাবে।

যুথি সেই বিকেলে পুকুর পাড়ে এসে বসেছে।মাগরিবের আজান দিয়ে দিবে,এখনো সে ঐখানেই বসে আছে। ভিতর টা তার হাহাকার করছে।

এই বাড়িতে সে কি করে থাকবে? এইখানে কেউ তো তার আপন না।ইরহান ছাড়া কেউ তার আপন না। আর সেই ইরহান ই ওকে রেখে চলে যাবে। যেই মানুষ টার হাত ধরে এসেছে সেই মানুষ টা তো আর নেই। দাদি থাকলে কোনো চিন্তা ছিলো না। যুথি অনেক বার বলেছে আপনা কে কোথাও যেতে হবে না। দরকার নেই আমার অতো টাকা পয়সার। আপনি আমার সাথে আমার পাশে থাকেন। দেশেই কিছু একটা করেন আর যাইয়েন না। কিন্তু ইরহান যুথির কথার প্রতি উত্তরে শুধু বলেছে আমায় যেতে হবে যুথি রানী। তুমি আটকিও না।আমার যেতে হবে।

যুথি আর কি বলবে শুধু করুন দৃষ্টিতে ইরহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো।

মাগরিবের আজানের ধ্বনিতে যুথি ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে। চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। যুথি উঠে দাঁড়ায় ইরহান হয়তো এসে পরবে।

বাড়িতে ঢুকে নিজের রুমে এসে দেখে ইরহান এসে গেছে। বেশির ভাগ গোছগাছ ই শেষ, তবুও যা বাকি আছে তাই করছে। যুথির এসব একদম সহ্য হচ্ছে না। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। হাত পা ছড়িয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। অনেক কষ্টে ঠোঁট কা’মড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টায় আছে সে।দরজার পাশে হেলান দিয়ে এক দৃষ্টিতে ইরহানের দিকে তাকিয়ে আছে।

ইরহান গোছানো রেখে চোখ তুলে যুথির দিকে তাকায়। কিছু সময় তাকিয়েই রয়। তারপর হাত বাড়িয়ে যুথি কে নিজের কাছে ডাকে।

যুথি রানী,,,

যুথি ইরহানের দিকে তাকিয়ে ছুটে আসে। ইরহানের বুকে নয়,পায়ের কাছে বসে পরে। এবার আর নিজেকে আটকাতে পারে না শব্দ করে কেঁদে দেয়।

কি করছো উঠো বলছি।যুথি একই ভাবে বসে আছে। ইরহান জোর করে তুলে যুথিকে। যুথি নিজের দুই হাত জোর করে বলে যাইয়েন না আপনি। আমি কি করে থাকবো আপনাকে ছাড়া। যাইয়েন না প্লিজ।

ইরহান যুথিকে নিজের বুকে আগলে নেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,, এই অনুরোধ টা করো না তুমি। আমি এটা রাখতে পারবো না। আমাকে যে যেতেই হবে।আমাদের ভালোর জন্য যাচ্ছি। কিছু দিন একটু কষ্ট করো প্লিজ। অন্তত আমার জন্য কিছু দিন কষ্ট করো।তারপর তোমার জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ আছে।

আমার কোনো সারপ্রাইজ চাই না। আমি শুধু সব সময় আপনাকে আমার কাছে আর পাশে চাই। যুথি অনেক করেও ইরহানের যাওয়া আটকাতে পারে না। সে যাবেই। আর কি করার হাড় মেনে নেয়। আর যাই হোক এমন করে লোকটা কে বিদায় দিতে চায় না। যাবে যখন যাক।

সারারাত ইরহানের বুকে চুপটি করে পরে ছিলো যুথি।ইরহান কতো কথা বলেছে সব শুনেছে। ইরহানের কথা মতো চলবে বলে জানিয়েছে।

সকালে সকলের থেকে বিদায় নেয় ইরহান। যুথি আর ইশান যাবে ইরহান কে এয়ারপোর্টে এগিয়ে দিয়ে আসতে। যাওয়ার আগে সকলকে সাবধান করে গেছে যুথি কে যেনো ভুলেও কেউ কিছু না করে আর না বলে।

গাড়িতে বসে ইশান কে অনেক করে অনুরোধ করেছে তার যুথি রানী কে যেনো একটু দেখে রাখে।

ইরহান কে জড়িয়ে ধরে অনেক সময় নিয়ে কেঁদেছে যুথি এয়ারপোর্টে গিয়েও। ইরহানের চোখ দুটোও তখন ছলছল করছে যেটা দেখে যুথির আরো বেশি করে কান্না পেয়েছে।

ইরহান যুথির কপালে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,, কয়েকটা দিন কষ্ট করো বউ। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার বর তোমার সব কষ্ট দূর করে দিবে। কিছু দিন। আমার জন্য একটু কষ্ট টা সহ্য করে নাও।

যুথি ছলছল চোখে হাসি মুখে ইরহান কে বিদায় দেয়। যাওয়ার আগে দাদির দেওয়া চিঠি টা ইরহানের হাতে দিয়ে বলে,, এটা আপনাকে দাদি দিয়েছে। বলেছে দেশের বাইরে গিয়ে খুলে দেখতে।ইরহান চিঠি টা হাতে তুলে নেয়। যুথিকে কিছু সময় জড়িয়ে ধরে রাখে।

সময় হয়ে গেলে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে। ইরহানের মুখ দিয়ে যে কথা বের হচ্ছে না যুথি বেশ বুঝতে পারে।

ইরহান চোখের ইশারায় যুথি আর ইশানের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

যুথি ইরহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে কলিজা টা কেউ টেনে হি’চড়ে ছিঁড়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে।

নিজের কান্না কিছুতেই থামাতে পারে না। কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পরে।

#চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here