#গোপনে_দেখা_হবে
#পর্ব:৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“একটা কথা আছে।মানুষ যেমন তার অপর জীবন সঙ্গীও ঠিক তেমন হয়।আমি চুপচাপ মানুষ দেখে সৃষ্টিকর্তা ভাগ্যে তোমার মতো নির্জীব মানুষ পাঠিয়েছে।কিন্তু রেগে গেলে তোতা পাখি হয়ে যাও।”
আয়মানের কথায় বিরোধিতা করে অধিশ্রী বলল,
“এই, এই আপনি আবার আমাকে রাগী বলছেন।কখনো ওরকম কিছু দেখেছেন আমার মধ্যে?”
“সে-কি!কয়বার দেখলাম।এইযে মাঝেমধ্যে বাক্যের শুরুতে দ্বিরুক্তি করো।যেমন-এই এই,আপনি আপনি।এসব কী হ্যাঁ?”
“কিছুনা।আমি খুব শান্ত মেজাজের মেয়ে।কদর করছেন না তো।সময় আসুক বুঝবেন।”
অধিশ্রীর কথায় হেসে উঠলো আয়মান।নিস্তব্ধ আঁধারে দুটো প্রাণ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।বিল্ডিং থেকে অনেকটা দূর চলে এসেছিল তারা।রাত হয়ে আসছে দেখে ফেরার পথ ধরলো আয়মান।অবশ্য পথিমধ্যে এক জায়গা থেকে স্ত্রীকে আইসক্রিম কিনে দিয়েছে।শুধু মাত্র তার জন্য জিনিস ক্রয় করায় অধিশ্রীর মন জুড়ে শান্তির বাতাস বয়ে গেলো।লিফটে এসে আইসক্রিমের ওয়েফার চিবুতে চিবুতে মেয়েটা শুধালো,
“আমার ব্যাপারে রাগী ছাড়া অন্য কোনো খেয়াল আছে আয়মান?”
“যেমন?”
“কেমন মেয়ে?ভালো নাকী মন্দ।”
নববধূর পা থেকে মাথা অবধি চোখ বুলিয়ে নিলো আয়মান।মেয়েটা অনেক সুন্দরী।হয়তো পৃথিবীর সব স্বামীর কাছে তার স্ত্রী সুন্দরী একজন মানুষ।অধীর আগ্রহে নেত্র মেলে তার পানে তাঁকিয়ে আছে অধিশ্রী।আয়মান ফিসফিস করে বলল,
“এখনও তো লজ্জা ছাড়ালাম না।গভীর সুবাস নেওয়া হলো না।তবে ভালো কী মন্দ কীভাবে বলবো?”
“মানে?”
“কথাগুলো বুঝতে হলে গভীর শব্দটির গভীরে যেতে হবে।বুঝেছেন বউ।”
লিফটের দরজা খুলে গেলো।অধিশ্রী কিছু জবাব দিতে যাবে এর পূর্বে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে চোখ গেলো তার।রেহনুমা চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।আয়মানের হাতে থাকা হাতটি আরো শক্ত করে ধরলো মেয়েটা।অন্য হাতে আধখাওয়া আইসক্রিম।রেহনুমা তাদের দেখে এগিয়ে এলো।উত্তেজিত হয়ে শুধালো,
“এতোক্ষণ কোথায় ছিলে আয়মান?বিস্কুট নিয়ে আসতে এতো সময় লাগে?”
“কেন ভাবী?কোনো দরকার ছিল?”
“নাহ।কিন্তু এতোসময় লাগছে দেখে চিন্তিত ছিলাম।অধিশ্রী তোমার সঙ্গে গিয়েছিল?”
“হ্যাঁ।”
রেহনুমার মুখবিবরে পানসে মেঘের দেখা মিললো।সে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,
“ওহ।আগে বলতে আমিও তোমাদের সঙ্গে ঘুরে আসতাম।কতোদিন ঠিকঠাক বাহিরে যাওয়া হয়না।আচ্ছা সমস্যা নেই।ভেতরে চলো।আর অধিশ্রী শুনো,খাওয়া শেষ হলে চট জলদি রান্নাঘরে এসো তো।কাজ আছে।”
“জি ভাবী।”
এতোসময় পরিবেশের ফলে মনের মধ্যে যতোটা শান্তি বিরাজ করছিলো সেটির কানাকড়িও এখন অধিশ্রী পাচ্ছে না।উল্টো মিষ্টি আইসক্রিমটাও তিক্ত লাগছে।আয়মানের হাত ছেড়ে হনহন করে রুমের ভেতর প্রবেশ করলো সে।খাওয়া শেষ করে বেসিনে হাত ধুয়ে বাহিরে যেতে নিবে এমন সময় বাঁধাপ্রাপ্ত হলো।আয়মান তার আঁচল ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এলো।দুটো প্রাণের নিশ্বাসের মিলনে ঘর জুড়ে আলাদা মোহনীয়তার বাতাস ভেসে বেড়াচ্ছে।অধিশ্রী নিচু কণ্ঠে বলল,
“ভাবী ডাকছে আমাকে।”
“ডাকুক।বিয়ের পর তাকে যখন মা ডাকতো সহজে খবর পাওয়া যেতো না।”
“আপনি এসবও খেয়াল রাখতেন?ভারী অ স ভ্য মানুষ তো।”
হাসতে হাসতে নববধূর আঁচল ছেড়ে দিয়ে আয়মান বলল,
“এসব খেয়াল রাখতে হয়না।নিজ থেকে বোঝা যায়।তুমি এখন রান্নাঘরে যেও।ভাবী এমন একটা লুক দিবে যেন বছর বছর রুমে অতিবাহিত করে যাচ্ছো তুমি।”
“ভাবীকে এতো বেশী চিনেন আপনি?”
“আমার থেকে বেশী তো ভাইয়াও চিনে না।আমাদের সম্পর্ক খুব গভীর।”
গভীর শব্দটি শুনে লিফটের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো অধিশ্রীর।এতোক্ষণ পরে অর্থ উপলব্ধি হলো তার।ক্ষণপূর্বে ঠান্ডা ঠান্ডা আইসক্রিম খেলেও এখন মনের ভেতর আগ্নেয়গিরির দাবানল ছুটতে লাগলো।তবে তার সন্দেহ কী ভুল নয়?একদম নয়।ধুপধাপ পা ফেলে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে চলল সে।পিছনে আয়মান একটিবারও টের পেলো না নববধূর মনে চলা সন্দেহের উত্তাপ।
(***)
“ভাবী ডেকেছিলেন?”
“বাহ,মনে আছে সেটা তোমার?”
“না থাকার কিছু নেই।”
রেহনুমা শব্দ করে কড়াইটা হাত থেকে রেখে দিলো।গলার সুর সামান্য উঁচু করে বলল,
“একটু বেশী মুখ চলে তোমার।আমার সামনে তেজ দেখাবে না।”
“আপনি ভুল ভাবছেন ভাবী।”
“একদম না।ইদানীং খুব তর্ক করো।ছোট আর এতিম দেখে কিছু বলিনা।এর মানে এটা নয় যে যা খুশি করবে।”
“ভুল ভাবছেন ভাবী।আচ্ছা বাদ দেন।কোন কাজের জন্য ডেকেছিলেন সেটা বলেন।”
অধিশ্রীর কণ্ঠে বিরক্তিকর ভাব চট জলদি ধরে ফেলতে পারলো রেহনুমা।বিষয়টা এবার যেন তার আত্ন অ হ ং কারে আঘাত করলো।
“অধিশ্রী,আমি তোমার কেনা গোলাম যে যেটা অর্ডার দিবে সেটা করবো।তোমার কিছুই করতে হবেনা এখন।যাও এখান থেকে।”
“কেন যাবো?আপনি কাজে ডেকেছিলেন। ঠিক সেটা পূরণ করবো এরপর ভাববো যাবো।”
“দেখো মেয়ে আমার রাগ উঠাবে না।”
“আমিও খুব সহ্য করেছি।ফুপুর বাড়ীতে কারো কথার জবাব দেইনি কারণ সেটা আমার বাড়ী ছিলনা।কিন্তু এখানে আমার শক্ত খুঁটি আছে।স্বামী নামক মানুষ আছে।এসেছি থেকে দেখছি খুব তাচ্ছিল্ল্য করে যান সবকিছুতে।”
ঘটনার মধ্যিখানে উচ্চসুরে হেসে উঠলো রেহনুমা।তার বয়স ত্রিশের উপরে।দুই সন্তানের জননি।মোটা গালে ভাজ পড়লো।হাসতে হাসতে চোখের কোণায় জমে থাকা পানি মুছে বলল,
“তোমার স্বামী?সে আমি যা বলবো সেটাই করবে।”
“এতোদিন করেছে।সেদিন বাঘে খে য়ে ছে বলে ভাববেন আজ থেকে।”
রেহনুমাকে তোয়াক্কা না করে পাশ থেকে পানির পাতিল নিয়ে চুলায় বসালো অধিশ্রী।শ্বশুর,শ্বাশুড়ীর ওযুর জন্য পানি গরম করছে।রেহনুমা কথা বাড়ালো না।নিজের কাজ করতে লাগলো।অধিশ্রী আনমনে বহু কথা চিন্তা করছে।হুট করে চুলা থেকে পাতিলটা উল্টে তার গায়ে পড়ে গেলো।সে খেয়ালও করেনি কখন পানি ফুটতে শুরু করেছিল।যার স্বরুপ গা জ্ব লে গেলো তার।চিৎকার করে উঠলো।কয়েক মুহুর্ত বাদেই আয়মান হন্তদন্ত করে রান্নাঘরে এলো।অধিশ্রীকে নিচে বসে থাকতে দেখে বলল,
“কী হয়েছে?এভাবে বসে আছো কেন?”
শান্ত কণ্ঠে রেহনুমা জবাব দিলো,
“চুলায় ভালোভাবে পাতিল বসিয়েছিল না।পানি ফোটার সময় নড়াচড়া করছিলো।তাই পাতিলটা উল্টে ওর শরীরের উপর পড়ে গেছে।”
আয়মান আক্ষেপ করে বলল,
“খেয়াল রাখবে তো মেয়ে।চলো ঠান্ডা পানি দিতে হবে।”
অধিশ্রী যন্ত্রণার মধ্যেও রেহনুমার নির্লিপ্ত মুখখানায় অবাক হয়ে তাঁকিয়ে রইলো।চুলা থেকে পাতিল এমনি এমনি পড়ে যায়।এতোটাও সাধারণ বিষয় এই জটিল পৃথিবীতে আদৌ ঘটে?
চলবে।