গোপনে দেখা হবে পর্ব -০৩

#গোপনে_দেখা_হবে
#পর্বঃ৩
#লেখাঃসামিয়া_খান_প্রিয়া
“তোর বউ আস্ত একটা পাগল।রোজ বারান্দা থেকে আমার দিকে তাঁকিয়ে থাকে।”

মলিন চাদর গায়ে জড়ানো লোকটির দিকে শান্ত ভঙিতে তাঁকালো আয়মান।লোকটার বহু দিনের না কামানোর দাড়িতে শুকনো একটা পাতা লেগে আছে।এইমাত্র অধিশ্রীকে বলা কথাগুলোকে সে খুব একটা পাত্তা দিলো না।এমনকি আশেপাশের লোকদেরও কোনো পুরুষের মুখে অন্য আরেকজনের স্ত্রীর সমন্ধে এমন হীন কথাতে গায়ের উত্তাপ বাড়লো না।পাগল লোকটি পুনরায় গম্ভীর হয়ে বলল,

“বউকে সামলাতে শিখে নে আয়মান।মেয়ে মানুষ বারান্দায় এতো যাতায়াত করে কেন?”

“গ্রামের মেয়ে।রুমে দম বন্ধ হয়ে আসে এজন্য।”

“এসব মিথ্যা কথা।বারান্দায় আসে নিজেকে দেখাতে।”

দোকানদার লোকটির কানে একথা ঢুকতে ধ মকে উঠে বলল,

“আয়মান ভাই তুমি এই ব দ মা শকে কিছু বলছো না কেন?ভাবীর সম্পর্কে এগুলো সব জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে।নিজে তো বউ ছাড়া হয়েছে।অন্য মানুষের সংসার ন ষ্ট করার ফন্দি।”

আয়মান বিরস মুখে বলল,

“আপনারা কী এমন একজন লোকের কথা বিশ্বাস করবেন যে নিজের স্ত্রীকে অতিরিক্ত সন্দেহের বশে ডিভোর্স দিয়ে পাগল হয়েছে?”

দোকানদার মাথা নাড়িয়ে বলল,

“না।বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসেনা।”

“তবে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে জাকির ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক করে লাভটা কী?আমার বউ যথেষ্ট ভালো।”

স্মিত হাসলো দোকানদার।আয়মানের ক্রয় করা সব জিনিস এগিয়ে দিয়ে বলল,

“নতুন বিবাহিত জীবন অনেক ভালো চলছে তাইনা আয়মান ভাই?”

“খারাপ চলছেনা।”

পলিথিন হাতে দোকান থেকে বের হয়ে এলো আয়মান।তাদের বিল্ডিং এর সামনে এই দোকানটি।যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস এখান থেকে নেওয়া হয়।রাস্তায় নেমে এলে পিছন থেকে পাগল ধরণের জাকির নামের লোকটা ডেকে উঠলো।

“আয়মান।বিশ্বাস করলি না তো আমার কথা।যখন বউ চলে যাবে তখন বুঝবি।মেয়ে মানুষ তারা।খুব ভ য় ং কর।”

হেসে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো আয়মান।জাকির এক সময় হাসিখুশি একজন মানুষ ছিল।তার থেকে বছর চারেকের সিনিয়র।কিন্তু অতিরিক্ত সন্দেহ বাতিক লোক।বিয়ের পরের দিন থেকে বউকে এটা ওটা নিয়ে বলতো।রাগারাগি করতো।একসময় বিষয়টা গায়ে হাত লাগানো অবধি চলে গিয়েছিল।অবশেষে একদিন মেয়েটার বাবা মা প্রতিবাদ করে।এবং নিজেদের মেয়েকে নিয়ে চলে যান।ডিভোর্সের পাঁচ মাস পরে মেয়েটার নতুন করে বিয়ে হওয়া জাকির মেনে নিতে পারেনি।সেই সুবাধে ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তার মধ্যে।এখন কী বলে?কী করে?সেই বিষয়ে কোনো হুঁশ থাকেনা।আয়মানের হঠাৎ মনে হলো সন্দেহ জিনিসটা খুব খারাপ।যদি একবার মাথায় ঢুকে যায় তবে গভীর বিপদ। হাঁটতে হাঁটতে আরো একটি বিষয় খেয়াল হলো আয়মানের।অধিশ্রীর মধ্যে বিয়েটা নিয়ে কিছু দ্বিধা কাজ করছে।যদি মেয়েটির জীবনে অন্য কেউ থেকে থাকে আয়মান কী পদক্ষেপ নিবে সেটা ভাবার বিষয়।লিফটের দরজা খুলতে চমকে গেলো সে।কপালের রেখাগুলো আপনা-আপনি কুঞ্চিত হয়ে এলো।অধিশ্রী বেশ দ্বিধা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অপ্রস্তুত ভঙিতে হেসে বলল,

“আমার রুমে বেশ খারাপ লাগছিলো।এজন্য আপনি নিচে এসেছেন দেখে পিছন পিছন পাঠিয়ে দিলো মা।”

“ওহ।নিজে থেকে এসো নি তাহলে।”

“সেটাই তো।আপনি প্লেইন পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।সেটা চড়ে এলাম।”

অধিশ্রীর মুখটা গম্ভীর হতে দেখা গেলো।মেয়েটা ভীষণ রাগি।আয়মান চাপা হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“রাস্তায় হাঁটতে যাবে?হাতটা ধরো।”

স্ব-ইচ্ছায় নিজ স্বামীর হাতটা প্রথমবার আঁকড়ে ধরলো অধিশ্রী।পুরো শরীরে মৃদু কম্পন হলো তার।পুরুষ মানুষের উষ্ণতা এতো মধুময় হয়।তা জানা ছিলনা অধিশ্রীর।হয়তো এরকম মধু স্পর্শ আরো কতশত পাবে সে।

(***)

সন্ধ্যার সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে।এলাকার ভেতরের রাস্তা হওয়ায় গাড়ির পরিমাণ খুব কম এখানে।নববধূর হাতটি পাঁচ আঙুলের ভেতর ভরে রেখেছে আয়মান।নরম তুলতুলে হাত।পাশ দিয়ে একটা রিক্সা টুংটাং শব্দ করে চলে গেলো।

“তুমি সত্যিই আমার সমান প্রায় লম্বা।ছোট কেউ নয়।”

আঁধারে নিমজ্জিত অধিশ্রীর মুখখানা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।স্বামীর সন্নিকটে চলে এলো।

“আমাকে কখনো ছোট ভাববেন না।সব কিছু পারি।”

“তাই নাকী?তা শুনি কী কী?”

“অন্যের বাড়ীতে থাকতে যা যা শিখতে হয়।”

“বাবা-মা মা’রা যাওয়ার পর থেকে তুমি ফুপুর বাড়ীতে থাকতে তাইনা?তারা কেমন ব্যবহার করতো?”

“খুব বেশী ভালো কিংবা খুব খারাপ নয়।ধরেন আমি রাতে খাইনি তো ডেকে খাওয়ানোর কিংবা তরকারির ভালো অংশটুকু রাখবে এমন ছিলনা।”

“আমাদের বাসায় এমনটা পেয়েছো কখনো?”

অকপটে জবাব দেয় মেয়েটা,

“কয়েকবার পেয়েছি।”

“সত্যি?আমি এমন কিছু খেয়াল করিনি।”

“করেননি এতোদিন।শুধু আজ দুপুরে খেয়াল করেছেন যে খাইনি।”

আয়মান খেয়াল করলো কথাটি বলতে গিয়ে মেয়েটার কণ্ঠটা একটু কেঁপে উঠলো।হয়তো দুঃখ পেয়েছে অনেক কিছু নিয়ে।হুট করে ভীষণ খা’রাপ অনুভব হলো তার।এক হাত দিয়ে নববধূকে আলিঙ্গন করে বলল,

“সরি বউ।প্রথম বিয়ে তো।অনেক কিছু ভুল হয়ে যাচ্ছে।”

“ইশ।আপনি আরো বিয়ে করবেন?”

“দেখো বিয়ে একটা জটিল বিষয়।ভালোভাবে বোঝার জন্য দুই চারটে তো করতেই হবে।”

“শ য় তা ন লোক।ছাড়েন আমাকে।”

“এই এই দাঁড়াও প্রেয়সী।পথ হারালে বাড়ী ফিরবে কীভাবে?আমি যে তোমার একমাত্র অবলম্বন।”

অধিশ্রী থমকে দাঁড়ালো।দুচোখ ভর্তি অজস্র প্রশ্ন তার।আসলেও আয়মান ব্যতীত অন্য কোনো অবলম্বন নেই তার।কিন্তু এই পুরুষটিকে নিয়ে ভয় তো মনের ভেতর থেকে যাচ্ছে না।এ কেমন য ন্ত্র ণা?

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here