গোপনে দেখা হবে পর্ব -০৬+৭ ও শেষ

#গোপনে_দেখা_হবে
#পর্ব:৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“বছর দুয়েক আগে থেকে ভাবীকে আমি একজন ভালোবাসার নারী হিসেবে দেখি।মানে তার প্রতি আকর্ষিত ছিলাম আমি।এ কারণে দুজনের এতো বেশী কথা হতো।মেলামেশা হতো।ভাবীর দিক থেকেও পজেটিভ কিছু ছিল।যদি আমার বিয়ে না হতো তোমার সঙ্গে তবে হয়তো দুজনে খা’রা’প পথে পা বাড়াতাম।”

জীবনের কিছু প্রশ্নের উত্তর থাকে যা না শোনা শ্রেয়।কথাটি বহু বছর পূর্বে অধিশ্রীর বাবা তাকে বলেছিল।আজ কথাটির গভীরতা উপলব্ধি হলো তার।আয়মান কথাগুলো তার হাতখানা গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বলছিলো।অধিশ্রী ছাড়িয়ে নিতে চাইলে সে আরো শক্ত করে ধরলো।

“প্লিজ অধিশ্রী।আমি বুঝতে পারছিলাম বিষয়টা খুব খা রা প।ভাবীকেও কয়েকবার জানিয়েছি।সে বলতো এটাতে কোনো পাপ নেই।ভালোবাসা কোনো খা রা প কিছু না।”

চিল্লিয়ে উঠলো অধিশ্রী।হিসহিসিয়ে বলল,

“ভালোবাসা ভুল মানুষের সাথে হওয়া কোনো ভালো কিছু না।ছি: ঘৃণা হচ্ছে আমার।তবে আমাকে কেন বিয়ে করলেন?দেখলেন আমি একজন এতিম মানুষ।কেউ নেই দুনিয়াতে।সারাজীবন এখন স্বামীর প র কী য়া বয়ে বেড়াতে হবে?”

“অধিশ্রী,অধিশ্রী।এতো প্যানিক হবেনা।তুমি খুব অসুস্থ।শুনো আমার কথা।আমার অনুভূতি ছিল।কিন্তু অন্য কিছু ছিলনা।”

“তবে কীভাবে জানলেন আপনার ভাবী মোটা নাকী চিকন?”

মৃদু অন্ধকারে আয়মানের মুখখানা রক্তিম হয়ে উঠলো।সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

“আমি পুরুষ মানুষ।বিয়ের বয়স হয়েছিল।”

“এজন্য চাহিদা ছিল তাইতো?”

“নাহ শুনো আগে।এমন কিছু হয়নি।আমার অপরাধবোধ কাজ করতো।কিন্তু কল্পনায় কারো হাত থাকেনা।রেহনুমাকে নিজ স্ত্রী হিসেবে কয়েকবার ভেবেছি।”

আয়মান কথার মধ্যে বিরতি দিয়ে বলল,

“প্লিজ অধিশ্রী।আমার কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করো।যখন দেখলাম কল্পনা লাগামছাড়া হচ্ছে।ঠিক তখন মাকে নিজের বিয়ের সমন্ধে বললাম।ভাবীর সঙ্গে কথাবার্তা কমাতে পারছিলাম না।নিজেকে সংযত করার জন্য রোযাও রেখেছি অধিশ্রী।সৃষ্টিকর্তা সহায় হলেন এরপর তোমার সাথে কয়েকদিন আগে বিয়ে হলো।কিন্তু সহজ হতে পারছিলাম না।অপরাধবোধ কাজ করতো।তাছাড়া রেহনুমা অনেক সিরিয়াস।”

আয়মানের মুখ থেকে কথাগুলো শুনে গা গুলিয়ে আসছে অধিশ্রীর।প্রাণপণে নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করছে।কিন্তু দুঃখিত,ব্যথিত মন পুরোপুরি ভে ঙে গিয়েছে।

“আপনার সো কল্ড ভালোবাসা আমাকে গতরাতে পু’ড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল।এরপর কী কী করবে জানা নেই।”

“আমি এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলবো।তুমি শুধু স্বাভাবিক হও আমার সঙ্গে।দেখো অনুভূতি তৈরী হয়েছিল।কিন্তু বেশী বেড়ে যাওয়ার পূর্বে নিজেকে সামলে নিয়েছি আমি।অধিশ্রী আমি নিজেকে তোমার সামনে ভালো প্রমাণ করার জন্য বহু চেষ্টা করেছি।কারণ হারিয়ে ফেলতে চাইনা।”

অধিশ্রী মলিন হাসলো।শীতল বাতাস এসে তার পো’ড়া জায়গাগুলোতে য ন্ত্র ণা তৈরী করলো।আয়মান এগিয়ে এসে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো তাকে।মেয়েটা ফুঁপিয়ে উঠলো।

“এক সঙ্গে থাকার দরুণ রেহনুমার সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরী হয় আমার।মা,বাবা, ভাইয়া সকলের চোখে যা স্বাভাবিক ছিল।ধীরে ধীরে দুজন নিজেদের গোপন কথা গুলো একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করতে লাগলাম।ভাইয়া একজন পার্ফেক্ট হাজবেন্ড।তবে কী হয়ে গেলো জানিনা।রেহনুমার প্রতি তীব্র অধিকারবোধ কাজ করতো।মাঝেমধ্যে ভাইয়াকেও হি ং সা করতাম।নারী মনের কারণে রেহনুমা বিষয়টা ধরতে পারলো।ধীরে ধীরে সায় দিতে লাগলো।আমাদের মধ্যে শারীরিক কোনো সম্পর্ক হয়নি।তবে এক মাস আগে এমন কিছুর ইঙ্গিত পেয়েছিলাম রেহনুমার তরফ থেকে।আমার ভয় লাগা আরম্ভ হলো।এ কারণে নিজের জীবনে তোমাকে নিয়ে আসা।যদি মনে কিন্তু থাকতো তবে এখনও স্বীকার করতাম না অধিশ্রী।নিজের ভুলকে শুধরে তোমার সঙ্গে স্বাভাবিক সংসার করতে চাই।ওয়াদা করতে পারি ভবিষ্যতে এমনটা কখনো হবেনা।প্লিজ মাফ করে দাও।আমি সত্যি বলছি জীবনে কখনো গোপনে দেখা হবার মানুষ রাখবো না।”

কান্না এখনও থামেনি মেয়েটির।স্বামী নামক পুরুষটির আলিঙ্গন যা আজ সকালে পরম শান্তি ও বিশ্বস্ততার জায়গা হিসেবে অনুভব হচ্ছিলো সেটাই এখন বড্ড বি ষা ক্ত লাগছে।নারী,পুরুষ একত্রে থাকলে কী প্রেম ছাড়া তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হয়না?নাহ অধিশ্রী থাকবেনা এই লোকের সঙ্গে।এমন বিয়ের কোনো মানে হয়না।এখুনি নিজের ফুপুকে কল করে বিষয়টা বলবে।আয়মানকে সর্বশক্তি দিয়ে ধা ক্কা দিলো সে।নববধূর মনের ভেতরের সিদ্ধান্ত অনুমান করতে পেরে আয়মানের গলা শুকিয়ে এলো।মেয়েটাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে।ছেড়ে থাকার কষ্ট সে কীভাবে নিবে?তাছাড়া এখন বিষয়টা লুকানো থাকবেনা।মা,বাবা,ভাই জানবে।আসন্ন ভবিষ্যতের নি র্মমতা তাকে ঘামিয়ে তুললো।দূর্বল কণ্ঠে বলল,

“আমি সব দোষ স্বীকার করেছি।ছেড়ে যেওনা অধিশ্রী।কাওকে বলো না।আমার খুব অসম্মান হবে।”

অধিশ্রী অবশ্য এসব কথা কর্ণকুহর করলো না।দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

(***)

আয়মানের মা একান্তে নিজের বোনের সঙ্গে ফোনে আলাপ করছিলো।এমন সময় অধিশ্রী হন্তদন্ত হয়ে তার রুমে প্রবেশ করে বলল,

“মা একটু ফুপুকে ফোন করবো।”

গলা কাঁপছে মেয়েটির।আয়মানের মা বোনকে রাখছি বলে কল কেঁটে দিলো।উঠে এসে দুহাতে নিজ পুত্রবধূকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“কী হয়েছে মা?”

“আমি চলে যাবো মা।”

“কেন?কী হয়েছে?”

মাতৃস্নেহে গদগদ হয়ে অধিশ্রী নিজের শ্বাশুড়ীকে সবটা জানিয়ে দিলো।আয়মানের মায়ের শ্বাস বেড়ে গেলো যেন।পুত্র বধূকে স্বান্তনা দিয়ে বলল,

“যদি বিষয়টা সত্যিই হয় তাহলে তোমাকে নিজ উদ্যোগে বাড়ী রেখে আসবো।কারণ ভুল পথে পা বাড়ানো মানুষেরা কখনো ঠিক হয়না।”

অধিশ্রী জবাব দেওয়ার পূর্বে আয়মান হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে বলল,

“মা এরকম বলো না।আমার বউকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো আমি।যা বলবে যেভাবে বলবে সব করবো।কিন্তু যে অ ন্যায় পুরোপুরি হয়নি আমার দ্বারা সেজন্য শাস্তি হিসেবে নিজ স্ত্রীকে হারাতে পারবো না। পায়ে ধরি মা ক্ষমা করে দাও।”
#গোপনে_দেখা_হবে
#পর্ব:৭(শেষ পর্ব)
#লেখা:সামিয়া খান প্রিয়া
“তোমার স্বামী তাও সম্পর্ক বাঁচাতে সত্য বলেছে।আর এই অধম আমাকে দেখো।টানা তৃতীয়বার নিজ স্ত্রীর এসব শুনলাম।কী করতে পারি বলো তো?দুটো বাচ্চাও তো আছে।”

আয়মানের বড় ভাই কামালের মুখে কথাগুলো বেশ স্বাভাবিক শোনালো।যেন খুব সহজ বিষয়ে পরামর্শ চাচ্ছে অধিশ্রীর কাছে।লোকটা সবেমাত্র কাজ থেকে বাসায় এসেছিল।ওমনি মায়ের রুমে ডাক পড়ে।পুরো বিষয়টা শুনে একটিও বারও সে রেহনুমাকে ডাকেনি।এমনকি আয়মানকেও কিছু বলেনি।শুধু অধিশ্রীকে আলাদা ডেকে প্রশ্নগুলো শুধালো।

“ভাইয়া,আপনার উচিত ছেড়ে দেওয়া।”

“এটা সমাধান?”

“অবশ্যই।যেহেতু তিনবার একই কাজ করলো।”

“আর আমার দুটো বাচ্চা?তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা?সমাজের চোখে রেহনুমা একজন ভালো স্ত্রী,ভালো মা,ভালো পুত্রবধূ।”

“দায়বদ্ধতা কী সব?”

কামাল দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।বড্ড তেষ্টা পাচ্ছে তার।

“প্রত্যেকের নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য ফল ভোগ করতে হয়।কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক কর্ম থাকে যেগুলো ফল আশেপাশের মানুষেরও ভোগ করতে হয়।আজকে রেহনুমাকে ছেড়ে দিবো আমি।দুদিন পর বাচ্চা দুটোর কী হবে?তবে তুমি আয়মানকে ছেড়ো না।ও নিজ থেকে ভুল স্বীকার করেছে।একটা সুযোগ পাওয়া দোষের কিছু নয়।”

ঠোঁট কামড়ে দুঃখ গিলে নিলো অধিশ্রী।কী এক য ন্ত্র ণা তৈরী হয়েছে জীবনে।বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলল,

“আমার ফুপু এসব শুনলে কখনো এখানে রাখবেনা।”

“নিয়ে চলে যাবে?”

“হ্যাঁ।”

“এরপর কী হবে?”

“মানে?”

“তুমি এতিম একজন মেয়ে।দুনিয়া খুব কঠিন।যেখানে আপন মেয়ের ডিভোর্স হলে বাবা-মা শত্রুতে রুপান্তরিত হয় সেখানে তুমি তো ভাইয়ের মেয়ে।তেমন পড়াশোনা জানো না।ভবিষ্যত কী খুব ভালো হবে?তাই যে ক্ষমা চায়,যে ভালো হতে চায় তাকে সুযোগ করে দাও।অসীম ক্ষমতাধর সৃষ্টিকর্তাও কিন্তু চরম থেকে চরম পাপ মাফ করে দেন।সেখানে আমরা মানুষ কী?জীবনে কিছু মানুষ শুধরে যায় দ্বিতীয়বার ভুল করার জন্য নয়।বরং সোজা পথে চলার জন্য।পুরো বিষয়টা নিয়ে আয়মানের সাথে আরো কয়েকবার আলোচনা করো।পারলে ফ্ল্যাট থেকে চলে যেতাম আমি।কিন্তু রা ক্ষু সে শহর।দুটো বাচ্চা নিয়ে তো পারবো না।ওদিকে আয়মানের ইনকাম অনেক ভালো।”

অধিশ্রী মনোযোগ দিয়ে নিজের ভাসুরের কথাগুলো শুনলো।পুরো বিষয়ের সারমর্ম দাঁড়ায় কম্প্রোমাইজ করে নেওয়া।সে তৎক্ষনাৎ বিরোধ করে বলল,

“আমি কম্প্রোমাইজ করবো না।পুরুষ ছাড়াও এতোদিন ছিলাম যখন সামনেও পারবো।”

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কামাল বলল,

“যতোটা বলাতে সহজ মনে হয় আসলে ঠিক ততোটা সহজ নয়।রাস্তাঘাটে যেখানে সন্ধ্যার পর বাসে সেইফ না সেখানে একা কীভাবে থাকবে?তাছাড়া চারিধারে সবকিছুর যা দাম।নিজের একা পেট চালাতে ইন্টার পাশ করা মেয়ের লড়াইয়ের শেষ থাকবেনা।সব বাদ।এরপর যে জীবনে আসবে সে যদি ভালো না হয়?ধরে নাও আয়মানের বিয়ের আগে একটি সম্পর্ক ছিল।বিষয়টা সহজ লাগবে।”

“আমার মন যে মানছেনা ভাইয়া।”

“আয়মানের সাথে কথা বলো।দেখবে ভালো লাগবে।আমি আসছি।খুব ক্লান্ত লাগছে তো।”

কপালে লেপ্টে থাকা ঘামগুলো মুছে নিলো কামাল।মেকী হাসি হেসে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তখন অধিশ্রী শুধালো,

“ভাবীর প্রতি শুধুই কী দায়বদ্ধতা আপনার ভাইয়া?”

কামাল মলিন হেসে বলল,

“ওকে আমি ভীষণ ভালোবাসি।”

অধিশ্রী সহসা কোনো জবাব দিতে পারলো না।নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।পো ড়া জায়গাটিতে জ্বা লা করছে।রুমে ফেরত যাওয়ার শক্তিটুকুও যে নেই।

(**)

কামাল রুমে ফিরে এসে দেখলো রেহনুমা বিছানায় বসে আছে।কিছু একটা নিয়ে খুব চিন্তিত সে।নিজ স্বামীর ক্লান্ত মাখা মুখটা দেখেও দয়া হলো না তার।সহজ ভঙিতে শুধালো,

“অধিশ্রীর সাথে এতো কী আলাপ করছিলে?”

“কেন?”

“নাহ।তেমন কথা বলতে দেখিনি তো দুজনের।”

কামাল অতীব ধীর কণ্ঠে বলল,

“রেহনুমা,একটা কথা মনে রেখো।দুনিয়ার নেশা যেন এতোটা পেয়ে না বসে যে নিজের ঘরের পানিতে শ্যাওলা জমা শুরু করে।”

“বুঝিনি।কী বললে?অধিশ্রী কিছু বলেছে?”

“নাহ আয়মান বলেছে।”

বাক্যটি শুনে রেহনুমার মুখটা তৎক্ষনাৎ বিবর্ণ হয়ে উঠলো।স্বামীর দিকে চোখ তুলে তাঁকানোর সাহস পাচ্ছে না।একটু বিব্রত হয়ে বলল,

“আয়মান কীসব ভুলভাল বলে বেড়ায়।”

“রেহনুমা, আমার ভাই যে সঠিক বলে সেটা তুমিও জানো।এবং আমিও জানি।তাই এভাবে বলে লাভ নেই।আজকের পর থেকে আমার আর তোমার স্বাভাবিক সম্পর্কগুলো হয়তো ততোটা সজীব থাকবেনা কখনো।শুধু দুটো বাচ্চা।এক মিনিট।বাচ্চা দুটো আমার তো?”

ঈষৎ হেসে পুনরায় কামাল বলল,

“ডিএনএ টেস্ট করতে হবে?”

স্বামীর এহেন হীন কথায় একটিবার প্রতিরোধ করতে পারলো না রেহনুমা।তার মাথা হেট হয়ে গেলো।হয়তো আজীবন এমনই লজ্জা নিয়ে বাঁচতে হবে।অতি কষ্টে বলল,

“বাচ্চা দুটো আমাদের।এভাবে বলো না।”

“যাক বাঁচা গেলো।”

ওয়াশরুমে পা বাড়ানোর পূর্বে কামাল পুনরায় বলল,

“বুঝলে রেহনুমা।যে অন্যায় করেও না শুধরায় সে মানুষ নয়। আসলে কুকুর কারণ মনে করে আর্বজনা এক উৎকৃষ্ট বস্তু।আর যে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসে কিংবা বাঁধা দেয় সে নি:সন্দেহে উত্তম কেউ।তুমি দেখো এখন নিজেকে কী বানিয়ে রাখতে চাও।সবসময় যে শা স্তি পেতে হবে এমনটা নয়।”

রেহনুমা স্বামীর যাত্রাপানে উদাস হয়ে তাঁকিয়ে রইলো।সংসার আর সুখের রইলো না তার।

(শেষ অংশ)

গভীর রাতের কোনো এক মুহুর্তে নববধূ অধিশ্রীকে তার স্বামী আলিঙ্গন করে বলল,

“অধিশ্রী,আমার মন পঁ চে গিয়েছিল।তুমি স্নিগ্ধ গোলাপ।হালকা একটু সুবাস দেবে?”

তন্দ্রা ছুঁটে গেলো অধিশ্রীর।তবে আজ সে চমকালো না।ভয় পেলো না।বরং ভালো মন্দ লাগায় উল্টো ঘুরে স্বামীকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে বলল,

“আপনি সত্যি আমার হয়ে থাকবেন?গোপনে দেখা হবার মতো কেউ তো থাকবেনা?”

“একবার বিশ্বাস করবে বউ?কোনো অভিযোগের অবকাশ দিবো না।”

“বিশ্বাস করলে যে ঠকতে হয়।”

“কেউ কেউ জিতে যায়।শুধু সঠিক মানুষটা হতে হয়।”

অধিশ্রীকে সোজা করে শুইয়ে দিলো আয়মান।তার বুকে নিজের দৃঢ় মাথা ঠেকালো।কানের পর্দায় প্রেয়সীর হৃদপিন্ডের লাব-ডাব শব্দ শোনা যাচ্ছে।মৃদু কণ্ঠে বলল,

“ভয় পাচ্ছো কেন সিদ্ধান্ত নিতে?এতোটা ঠকে যাওয়ার আশংকা করছো?যদি বলি ভয় না করে শক্ত হয়ে দেখো।অপার ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবো।”

“আচ্ছা বলেন তো আয়মান।কেন কাঁদা গায়ে মাখতে গিয়েছিলেন?”

“মতিভ্রম হয়েছিল প্রেয়সী।এখন সোজা পথে হাঁটছি।”

স্বল্প পরিচিত স্বামীর মসৃণ চুলে হাত বুলাতে লাগলো অধিশ্রী।পুরো রুম অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে।ফিসফিস করে বলল,

“আমি বিশ্বাস করলাম।কিন্তু ঠকে যাওয়ার তেঁতো বি ষ গ্রহণ করতে চাইনা।”

নববধূকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আয়মান।ফিসফিস করে বলল,

“আমরা অনেক দূরে চলে যাবো।যেখানে ঠকার কেউ থাকবে না।গোপনে দেখা হবার একমাত্র মানুষ হবে তুমি।তোমার ক্ষেত্রে আমি।একটা সুযোগ দাও।”

গাঢ় অন্ধকারে তাঁকিয়ে অধিশ্রী ভাবছে ঠকে যাওয়ার ভয়ে একটা সুযোগ দেওয়া কী খুব ক্ষতি হবে?কে জানে এই প্রশ্নের উত্তর।

(সমাপ্ত)

এডিট ছাড়া পর্ব।রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের সংজ্ঞা জানেন পাঠক?

ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখকথা
নিতান্তই সহজ সরল,
সহস্র বিস্মৃতিরাশি, প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু -চারিটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ননার ছটা, ঘটনার ঘনঘটা,
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে , সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইলো না শেষ।
-[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]

তেমনই শেষ হয়েও হলো না শেষ।এমন লেখা লেখার ইচ্ছে অনেক দিন ধরে ছিল।যা শেষ হয়ে বহু প্রশ্ন রেখে যাবে।রেহনুমার আত্মগ্লানি হলো কীনা,অধিশ্রীর সুযোগ দেওয়া সঠিক কীনা।এসব জীবনের ভবিষ্যতের মতোন উজ্জ্বলহীন।কী হবে কে জানে?কেমন লাগলো পুরো গল্পটা অবশ্যই পাঠক কমেন্ট বক্সে জানাবেন।আগামীকাল থেকে #মিঠা_রোদ আরম্ভ হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here