গোপনে দেখা হবে পর্ব -০৫

#গোপনে_দেখা_হবে
#পর্ব:৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
অধিশ্রীর ঘুমন্ত মুখটা দেখে বড় মায়া লাগছে আয়মানের।আজ অফিসে যেতে একটুও মন সায় দিচ্ছে না তার।একে তো মেয়েটার শরীর বেশ অনেকটা পু ড়ে গিয়েছে।দ্বিতীয়ত যন্ত্রণার ফলে কান্নাকাটিও করছে।আয়মান ছুটির জন্য ফোন করেছিল।কিন্তু লাভ হয়নি।অবশেষে দীর্ঘ শ্বাস ফেলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে সে।পুরো রুম জুড়ে নারী শরীরের মিষ্টি একটা গন্ধ বিরাজমান।আয়মান যখন একা এই রুমে থাকতো তখন এমন গন্ধ কখনো পায়নি।প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিলো।হাতে ঘড়ি পরতে পরতে নিচু হয়ে ঘুমন্ত নববধূর কপালে অধর স্পর্শ করলো।তৎক্ষনাৎ ঘুম ভেঙে গেলো মেয়েটার।ঘুম ঘুম কণ্ঠে শুধালো,

“কয়টা বাজে?”

“সকাল সাড়ে আটটা।”

“আপনি এখন অফিসে চলে যাবেন?”

“হ্যাঁ।তুমি শুয়ে থাকো।ঘুমিয়েছো একটু আগে।”

গতকাল রাতে অধিশ্রীর খুব একটা ঘুম হয়নি।তার শ্বাশুড়ী সারারাত সাথে ছিল।সকালে দুধ সাগু নিজ হাতে অধিশ্রীকে খাইয়ে দিয়েছিল।তখন থেকে মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।এমন মাতৃস্নেহ বহুদিন পর পেলো এতিম মেয়েটা।আয়মান লোকটাও ভালো।ভীষণ ভালো কীনা সেই কথাটি এখনও অধিশ্রী ধরতে পারেনি।মেয়েটাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আয়মান শুধালো,

“ব্যাথা কমেছে?”

“হালকা।আপনি এতো চিন্তা করবেন না।”

“সে-কী?আমার ঝগড়া করার মানুষ অসুস্থ তো আমি চিন্তা করবো না।এটা কখনো হয়?”

অধিশ্রী অধরযুগলে মৃদু হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো।আয়মান তার এলেমেলো চুল হাত দিয়ে নাড়িয়ে দিলো।

“আসছি আমি।নিজের খেয়াল রেখো নববধূ।”

“জলদি আসবেন।”

“চেষ্টা করবো।কিছু খেতে মন চাচ্ছে?নিয়ে আসবো?”

“নাহ।”

আয়মান চলে যাওয়ার পর অধিশ্রীর ঘুমটা গাঢ় হয়ে উঠেনি।তন্দ্রার মধ্যে খেয়াল করলো আয়মানের মা তাকে ডাকছে।

“নতুন বউ।ঘুমিয়েছো?”

তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো মেয়েটা।নিজেকে গুছিয়ে বলল,

“নাহ জেগে আছি।”

“ধরো।তোমার ফুপু ফোন করেছে।কথা বলো।”

অধিশ্রী হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো।হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভদ্র মহিলা ব্যস্ত হয়ে শুধালো,

“শুনলাম অসুস্থ তুই।সারাজীবন ফুপুর বাড়ীতে কাজ করলি কিছু হলো না।মাত্র কয়দিন আগে বিয়ে হলো ওমনি শরীর পু ড়ে গেলো?ওরা কী অ ত্যাচার করছে?”

“নাহ ফুপু।বিষয়টা ঘটে গিয়েছে।তারা খুব ভালো।”

“সত্যি করে বল আমাকে।এতোটাও ফেলনা না যে অ ত্যাচার সহ্য করতে হবে।”

“সত্যি বলছি আমি।তোমার শরীর কেমন আছে?”

“ভালোই।তোর শ্বশুর বাড়ীর লোকেরা সত্যি ভালো?”

“অনেক ভালো ফুপু।আয়মান তো পড়াশোনা করাবে বলেছে।বাবা,মা খুব আদর করে।অসুস্থ দেখে মা নিজ হাত খাইয়েও দিয়েছে।”

ওপাশ থেকে অধিশ্রীর ফুপুর স্বস্তির নিশ্বাসের শব্দ শোনা গেলো।ভদ্রমহিলা ধরা গলায় বলল,

“ভাই-ভাবী যাওয়ার পর আমার সংসারে বড় হয়েছিস।অনেক সময় অ ব হে লা করেছি।ওসব মনে রাখিস না মা।তোর জীবন গুছিয়ে দেওয়ার জন্য কতো চিন্তা করেছি।আয়মান ছেলেটা ভালো।মোটা অংকের বেতন পায়।পরিবার ভালো।যতোটা সম্ভব খোঁজ নিয়েছি।যদি কোনো খুঁ ত থাকে তবে মা ফ করে দিস।”

বিরোধভাস করে অধিশ্রী বলল,

“আরে ফুপু।এভাবে বলছো কেন?বাড়ীর সকলে ভালো আছে?ফুপার শরীর কেমন?”

“সবাই ভালো আছে।শুন কিছু কথা বলি।সম্পর্ক তো দুদিক দিয়ে হয়।যদি কখনো আয়মানের ব্যাপারে মনে স ং শয় আসে তবে সরাসরি ওর সঙ্গে আলোচনা করবি।তা না হলেও শ্বাশুড়ীকে বলবি।কারণ ছেলেটা তার।নিজ থেকে ভু ল ধারণা মনে রাখলে কী হয় আমার মেয়েকে দেখে শিখিসনি?কতো সুন্দর সংসার ছিল।জামাইয়ের সামনে মাথা নিচু করেনি কখনো।ফল কী হলো?নিজের দোষগুলো মেনে চলবি।সংসারে আয়মান ব্যতীত তোর আহ্লাদ করার মানুষ নেই।তাছাড়া দেওর,ভাসুরদেরও সম্মান দিয়ে চলবি।ঠিক আছে?”

“আচ্ছা ফুপু মনে থাকবে।”

“ঠিক আছে।রাখছি ঠিকমতো ঔষধ খেয়ে নিবি।”

“ভালো থেকো।”

ফোনটা পাশে রেখে দিলো অধিশ্রী।পো ড়া জায়গা গুলোতে পানি জমেছে।ঠিকঠাক নড়াচড়া করতে কষ্ট হচ্ছে।তবুও উঠে বসলো।জ্বরে মুখ তেতো হয়ে থাকার দরুণ কীনা মুখটায় বিতৃষ্ণা জমে আছে।মাথায় তার গতকালের ঘটনা ঘুরছে।সত্যিই কী রেহনুমা কিছু করেনি?নাকী গভীর কথা আছে?

(***)

ক্লান্ত পরিশ্রান্ত আয়মান ফিরে এলো সন্ধ্যায়।দুহাত ভর্তি ফলমূল।সবগুলো মায়ের হাতে তুলে দিয়ে রুমের দিকে ছুটলো।অধিশ্রী অল্প সময়ের মধ্যেই তার তৃষ্ণা হয়ে উঠেছে।রুমের ভেতর ফাঁকা দেখে বারান্দায় উঁকি দিলো আয়মান।উদাস চোখে নববধূ দূর আকাশপানে তাঁকিয়ে আছে।

“অধিশ্রী।”

স্বাভাবিক কণ্ঠে মেয়েটি জবাব দিলো,

“নিজেকে বন্দি পাখির মতোন লাগে জানেন।ফ্ল্যাটে একা একা ভালো লাগেনা।”

আয়মান উপহাস করে বলল,

“তবে দুজন না তিনজন বানিয়ে দেই?”

“তিনজন?”

“সে,তুমি,আমি ও বিড়াল।”

অধ্রিশ্রী হেসে ফেললো।পিছন ঘুরে আয়মানের বলিষ্ঠ বুকে মাথা ঠেকালো।নিজ থেকে কাছে আসার প্রথম উদ্যোগ তার।আপন মানুষের বুকে আলাদা রকমের শান্তি থাকে।

“একটা কথা জিজ্ঞেস করি অধিশ্রী?গতকাল রাত থেকে খুব করে আমার মাথায় চলছে।”

“বলেন।”

“রাতের ঘটনায় ভাবীর কোনো হাত আছে?কারণ এতোটা কাকতালীয় হয়না।”

কিছুসময় নিশ্চুপতার চাদরকে অবলম্বন করলো অধিশ্রী।এরপর ফিসফিস করে বলল,

“আমাকে বিশ্বাস করবেন?”

“অবশ্যই।তুমি আমার স্ত্রী।”

“সত্যি কিন্তু।”

“তুমি সংকোচবিহীন বলো অধিশ্রী।”

“আপনার গোপনে দেখা হবার মতো মানুষ আছে তাইনা?আর সেটা ভাবী।ঠিক বলেছি?”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here