গোপনে দেখা হবে পর্ব -০২

#গোপনে_দেখা_হবে
#পর্বঃ২
#লেখাঃসামিয়া_খান_প্রিয়া
ভেজা চুলে অধিশ্রীকে বেশ দেখতে লাগছে আয়মানের নিকট।দুপুরের কাঠফাটা রোদে এক পশলা বৃষ্টি ঝড়ে গেলো মনে।হাত থেকে কাগজ গুলো সরিয়ে রেখে ধীরে ধীরে নিজের নববধূর দিকে অগ্রসর হলো আয়মান।এক পা দুই পা।নিজের পিঠে পুরুষের উষ্ণতা পেয়ে মৃদু আন্দোলিত হলো অধিশ্রীর শরীর।নিচু কণ্ঠে শুধালো,

“আপনি এখন বাসায়?”

“দুপুরের খাবার খেতে এসেছি।”

“এই কয়দিন তো দেখিনি আসতে।আজ হঠাৎ?”

আয়মান সহসা জবাব দিতে পারলো না।একটু দ্বিধা নিয়ে সরে দাঁড়ালো।

“ভাবী বলল স্পেশাল কী যেন করেছে।তাই লাঞ্চটা বাসায় করতে।”

“ওহ।”

বহু কষ্টে কান্না দমন করার চেষ্টা করলো মেয়েটা।কিন্তু বেহায়া অশ্রুগুলো বাঁধা মানলে তো।আয়মানের আড়ালে চোখের কার্ণিশ ছুঁয়ে টুপ করে পড়ে গেলো।

“অধিশ্রী।”

“জি?”

“পড়াশোনা করবে না আর?কোন ক্লাসে যেন?”

“এবার এইচএসসি দিয়েছি।রেজাল্ট হয়নি।”

“রেজাল্ট হোক।সেই অনুযায়ী পড়াশোনা চালিয়ে যাবে কেমন?আমার সাথে তোমার তেমন একটা কথা হয়না।বিয়ের সাতটা দিন চলে গেলো।এটা নিয়ে কী তুমি আপসেট?”

অধিশ্রীর বলতে মন চাইলো সে খুব দুঃখবোধ করে ব্যাপারটা নিয়ে।স্বামী ব্যতীত আপন বলতে যার কেউ নেই।সে তো স্বামীর ভালোবাসা আদর চাইবে।স্বাভাবিক নয় কী সেটা?কিন্তু আয়মানের তার প্রতি খেয়াল আছে নাকী?

আয়মান অধীর আগ্রহে নিজ নববধূর পানে তাঁকিয়ে আছে।মেয়েটা দেখতে সুন্দর।গ্রাম্য বলে কোনো অবহেলা নেই তার মনে।কিন্তু কোথাও একটা কিন্তু কাজ করছে।আনমনে সে পকেটে হাত দিয়ে দেখলো।ডান হাত মুঠো করে কয়েকটি সেন্ট্রার ফ্রুট বের করে মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“বউ এগুলো তোমার জন্য।”

অধিশ্রী অবাক হয়ে শুধালো,

“আমার জন্য?”

“তো আমার বউ আছে নাকী আরো?ও হ্যাঁ সেদিন রাতে তো জিজ্ঞেস করেছিলে আপনার আরো বউ আছে নাকী।ধরে নাও তার জন্য এনেছিলাম।পথিমধ্যে তোমাকে দিয়ে গেলাম।”

হাসিমুখে কথাগুলো উচ্চারণ করলো আয়মান।কিন্তু অপর মানুষ কথার মধ্যিখানের উপহাস তো বুঝলো না।উল্টো অভিমানে মুখটা বিষিয়ে তুললো।প্রচন্ড রাগে বলল,

“আপনার কিছু লাগবে না আমার।”

“কেন?রাগ করলে?কতোটুকু মেয়ে যে তুমি রাগ করতে জানো।”

তেড়েমেড়ে আয়মানের দিকে এগিয়ে এলো অধিশ্রী।ছেলেটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো।

“আমি কতোটুকু দেখেন।ভালো করে দেখেন।প্রায় আপনার সমান লম্বা।কোন মুখে বলেন কতোটুকু মেয়ে।”

“এই মেয়ে।শান্ত হও।এমনভাবে রে গে আসে কেউ?ভয় পেয়েছি আমি।”

“আপনার কিছুই লাগবেনা আমার।একটা জিনিস দিলে খবর আছে।”

“রিলাক্স অধিশ্রী।আমি মজা করেছি।রিয়াক্ট করো না।”

“আপনি আপনি আমার সাথে কোনো কথা বলবেন না।”

আয়মানের মুখে এতোক্ষণ লেপ্টে থাকা হাসি এখন মিলিয়ে গেলো।থমথমে মুখে বলল,

“এরকম করছো কেন?মজা বুঝো না?”

“না বুঝিনা।”

“ভারী ঝগড়াটে তো তুমি।”

“তো বিয়ে করলেন কেন?বলেন কেন বিয়ে করলেন।”

“বিয়ের বয়স হয়েছিল করেছি।কোনো সমস্যা?”

আয়মান নিজ স্ত্রীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথাটি বলল।স্বভাবে সে বেশ চাপা ধরণের।এজন্য কথা কম বলে।কিন্তু অধিশ্রীকে কিছু কড়া কথা না শুনিয়ে দিলে চলছেনা।দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

“শুনো,আমার বড় ভাবীকে কখনো দেখিনি ভাইয়ার সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে।সে এতোটা শান্ত একজন মানুষ।তোমার কাছে তেমন জি হুজুরি আশা না করলেও অন্তত নূন্যতম সম্মানবোধের আশা রাখতে পারি।মজাকে মজা হিসেবে নিতে শিখো।”

অধিশ্রী কঠিন মুখে জবাব দিলো,

“পারবোনা।”

আয়মান হাল ছেড়ে দিলো।হাতে থাকা সেন্ট্রার ফ্রুটগুলো বিছানায় ছুঁড়ে মেরে বাহিরে চলে গেলো।অধিশ্রীর চোখ থেকে ক্রমাগত পানি ঝড়ছে।ডান হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে বাহিরে চলে গেলো।

(***)

অধিশ্রী পুরোটা বিকেল নিজের রুমে কাঁটিয়ে দিলো।এমনকি দুপুরের খাবারটুকুও খায়নি।নিজ ভাগ্যের উপর বেশ রাগ উঠছে তার।কেন এমনটা হতে হলো?একজন ভালো স্বামী পাওয়ার যোগ্যতা কী সে রাখে না?উল্টো এমন মানুষের সঙ্গে জীবন জড়িয়ে গিয়েছে যার গোপনে দেখা হওয়ার মানুষ রয়েছে।দরজায় শব্দ হলো।সে অলস ভঙিতে উঠে বসলো।

“নতুন বউ।দরজা খুলো।”

শ্বাশুরীর কণ্ঠ শুনে অলসতা ছুটে গেলো তার।মাথায় কাপড় দিয়ে বের হয়ে এলো।

“জি মা কিছু বলবেন?”

“কী ব্যাপার দুপুরে খেলে না।আবার এখন অবেলায় শুয়ে আছো।”

আয়মানের মা সৌখিন মানুষ।বয়স হয়ে গেলেও কুঁচি দিয়ে শাড়ী পরে।বেশ মা মা অনুভব হয়।অধিশ্রী নিচু সুরে বলল,

“মা শরীরটা একটু খারাপ।”

“তোমার মনে হয় শহরের আবহাওয়া ভালো লাগছেনা।অসুস্থ থাকছো বেশী।”

“তেমন কিছু নয় মা।”

“বাহিরে এসো।রেহনুমা চা আর আলুর চপ বানিয়েছে।মুখে স্বাদ পাবে।”

রেহনুমার নামটা শুনে আবারও মন খারাপ হয়ে গেলো অধিশ্রীর।শ্বাশুড়ীর পিছনে নরম পায়ে ড্রয়িং রুমে এলো।সেখানে শ্বশুর ও বাড়ীর অন্যসব সদস্যরা বসে আছে।তাকে দেখে রেহনুমা শুধালো,

“তুমি মেয়ে ভারী চাপা তো।একটুও কথাবার্তা বলো না।পাশে এসে বসো না।”

“এমনি ভাবী।”

“নাও চা খাও।”

অধিশ্রী হাত বাড়িয়ে কাপটা নিলো।বেশ অস্বস্তি লাগছে তার।রেহনুমার সঙ্গে আয়মানের সখ্যতা কোনো সময় চোখ এড়ায়না তার।কলিং বেলের শব্দ শোনা গেলে রেহনুমা দৌড়ে দরজা খুলে দিলো।আয়মান হাসি মুখে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে বলল,

“ভাবী তোমার জন্য রসমালাই এনেছি।ধরো।”

রেহনুমা ছোঁ মেরে রসমালাই হাতে তুলে নিলো।হাসিমুখে বলল,

“তুমি বুঝলে কীভাবে আমার রসমালাই খেতে মন চেয়েছিল?”

“আমি বুঝবো না তো কে বুঝবে বলো?”

আয়মানের অন্য হাতে আরো একটি হাঁড়ি দেখে রেহনুমা শুধালো,

“ওটা কী?”

সোফায় বসে থাকা শুভ্র রঙা মেয়েটির পানে তাঁকিয়ে আয়মান জবাব দিলো,

“আমার ঝগড়াটে বউয়ের জন্য দই।সে দুপুরে খায়নি।ঝগড়া করার শক্তি কমে গিয়েছে হয়তো।সেটা বাড়ানোর জন্য পছন্দের দই নিয়ে এলাম।”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here