গোপনে দেখা হবে পর্ব -০১

(১)
গভীর রাতে নববধূ অধিশ্রীকে তার স্বামী নিবিড় আলিঙ্গন করে শুধালো,”রেহনুমা, আজকে তোমাকে খুব বেশী চিকন লাগছে।”

থমকে গেলো অধিশ্রী।এতোক্ষণ তন্দ্রায় নিমজ্জিত ছিল সে।চট করে চোখ খুলে আয়মানের থেকে দূরে সরে গেলো।সে তো অধিশ্রী!রেহনুমা নয়।তবে এ কেমন ভিন্ন ডাকে ডাকলো।

“শুনুন।চোখ খুলুন।”

আয়মান কথাটি ঘুমের মধ্যে বলেছে। এজন্য এখনও সজাগ হয়নি।অধিশ্রী তাকে গা দুলিয়ে জাগিয়ে দিলো।

“কী হয়েছে অধিশ্রী?এভাবে ডাকছো কেন?”

“রেহনুমা কে?আপনি আমাকে এই নামে ডাকছিলেন।”

“ওহ।কেউ না।ঘুমিয়ে যাও।ভুল শুনেছো।”

“না।আমি শুনেছি আপনি রেহনুমা নামে আমাকে ডাকছিলেন।সে কে?আপনি কী আগে থেকে বিবাহিত ছিলেন?”

আয়মান বিরক্ত হলো।পাশ ফিরে কানের উপর অন্য বালিশ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।অষ্টাদশী অধিশ্রী এখনও তার স্বামীর পানে জবাবের আশায় চেয়ে আছে।কিন্তু অন্ধকারের নির্জনতা ভেঙে কোনো জবাব এলো না।খাঁটের একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো মেয়েটি।সরু চিকন লম্বাটে দেহ তার।পা ভাজ করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে।ঘুম ভেঙে যাওয়ায় পেটে বেশ খুদা অনুভব হচ্ছে।সেই সন্ধ্যায় শ্বাশুড়ীর অনুমতি নিয়ে ভাত খেয়েছিল।এরপর রাতে তাকে আর খেতে ডাকেনি কেউ।অবশ্য এতে অধিশ্রীর বিশেষ আক্ষেপ নেই।অনাথ হওয়ার দরুণ ফুফুর বাড়ীতে খাবার এই উপায়েই মিলতো।এখন ভিন্ন কিছু ভাগ্যে জুটেনি এটাই যেন স্বাভাবিক বিষয়।বেশ কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করলো সে।কিন্তু রেহনুমা নামটা মাথা থেকে যাচ্ছে না।তার বয়স কম হলেও গ্রামে থাকার দরুণ অনেক গভীর গোপন সম্পর্কের কথা শুনেছে।সেসবের ঘটনা জেনেছে।এবং মাঝেমধ্যে নি ষি দ্ধ হাত ধরাধরিও দেখেছে।সেই হিসেবে রেহনুমার শারীরিক গঠণের হিসেব রাখা স্বাভাবিক বিষয় নয় নিশ্চয়।অধিশ্রীর ভীষণ খারাপ লাগতে আরম্ভ হলো।আয়মান গুণে গুণে তার থেকে দশ বছরের বড়।ভালো চাকরি করে।এজন্য তো ফুপা পাত্র হাত ছাড়া করতে চায়নি।চার দিন আগে খুব সাধারণভাবে বিয়ে হয়েছে তাদের।বিবিধ কথাবার্তা চিন্তা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে গেলো মেয়েটা।রাতের পরবর্তী সময়ে ভুলেও একবারও তাকে কাছে টেনে নেয়নি আয়মান।

ঠিক ভোর সাড়ে চারটেতে ঘুম ভেঙে গেলো অধিশ্রীর।আয়মান এখনও ঘুমাচ্ছে।পরিবেশের উষ্ণতায় বড্ড হাসফাস লাগছে তার।পা টিপে টিপে সে বারান্দায় এলো।অনাদরে পড়ে থাকা শাড়ীর আঁচলটিও গায়ে জড়াতে ভুললো না।ক্ষণবাদে ভোর আরম্ভ হবে।গ্রামে এসময়টিতে উঠে পড়তো সে।তাই ব্যাপারটা নতুন নয় একদম।শহরে এসে মটেও ভালো লাগেনা অধিশ্রীর।বিশাল বিশাল বিল্ডিং এর আড়ালে মাত্র কয়েকদিনে হাঁপিয়ে উঠেছে।হঠাৎ একটা কুকুর বিকট শব্দে ডেকে উঠলো।সঙ্গে একটি লোকের কণ্ঠ ভেসে আসছে।পায়ে ভর দিয়ে নিচে তাঁকালো সে।একজন যুবক লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।গরমেও দেহ চাদরে আচ্ছাদিত।তার সামনে শুয়ে আর্তনাদ করছে একটি কুকুর।অধিশ্রীর ভীষণ মায়া হলো প্রাণীটির জন্য।নিজের সঙ্গে বলল,

“শহরের মানুষগুলোও কীরকম নি র্দ য়।এতো সকালে কুকুরটাকে কেমন মা র ছে।”

দরজায় করাঘাতে হুঁশ ফিরলো তার।মাথায় আরো বড় করে ঘোমটা দিয়ে খুলে দিলো।ওপাশে আয়মানের বড় ভাইয়ের স্ত্রী হাসনা দাঁড়িয়ে আছে।গম্ভীর সুরে অধিশ্রীকে বলল,

“মা,বাবাকে সকালে ওযুর জন্য হালকা গরম পানি দিতে হয়।সেটা গরম বা শীতকাল হোক।এতোদিন এ কাজ আমি করতাম।আজ থেকে তুমি করবে।মনে থাকবে?”

“জি ভাবী।আজকে দিবো?”

“নাহ।আমি দিয়ে দিয়েছি।আয়মান ঘুমাচ্ছে?”

“জি।”

“উঠিয়ে নামাজে পাঠাও।”

“আচ্ছা ভাবী।”

হাসনা চলে গেলে বিছানার কাছে ফিরে এলো অধিশ্রী।মৃদুসুরে আয়মানকে ডাকলো।

“শুনছেন,আপনি নামাজ পড়বেন না?”

ক্ষণবাদে ঘুমঘুম কণ্ঠে জবাব দিলো আয়মান,”রেহনুমা পাঁচ মিনিট পরে ডাক দিও।”

পুনরায় এক সম্বোধন।এবার রাগ উঠে গেলো অধিশ্রীর।নিশ্চয় স্বামী লোকটা উপহাস করছে তার সঙ্গে।তার বান্ধুবী বলেছিল মাঝেমধ্যে স্বামী অন্য নারীর নাম নিয়ে স্ত্রীকে রাগানোর চেষ্টা করে।এটা নাকী ভালোবাসা বাড়ানোর মাধ্যম।বিষয়টি ভাবতেই অধিশ্রীর অধরযুগলের হাসি বিস্তৃত হয়ে গেলো।

(২)

“কী ব্যাপার তুমি গোসল করোনি কেন?সকালে এই শাড়ী পরনে দেখলাম দরজা খুলে দিলে।এখনও তাই পরে আছো।”

হাসনার প্রশ্নে দৃষ্টি ঈষৎ উঁচু করে পরক্ষণে সেটা নামিয়ে নিলো অধিশ্রী।সে কীভাবে বলবে অহেতুক গোসল করা তার দ্বারা হবেনা।সে কোনো অভিনেত্রী নয়।কিন্তু কোনো একটা জবাব তো দিতে হবে।গলাটা একটু পরিষ্কার করে বলল,

“ভাবী,আমি অসুস্থ।”

বিরস মুখে হাসনা পুনরায় বলল,”বিয়ে হতে না হতে অসুখ বাঁধিয়ে ফেললে?”

“এখানে কারো হাত থাকে?”

“নতুন বউ ভালো কথা জানো দেখছি।”

অধিশ্রী নিশ্চুপ হয়ে রুটি বেলতে লাগলো।সাতটা বেডরুম সম্বলিত এই ফ্ল্যাটটি তার শ্বশুর মশাইয়ের।তাই চার ছেলে এখনও একসাথে থাকে।বয়স বাড়লে পরিবার ভেঙে যায়।সেই হিসেবে এতোদিনে বেশ ভালো ফাঁটল ধরেছে ভাইদের মধ্যে।কিন্ত ওইযে এরকম বিনা ভাড়ার আশ্রয় কেউ হাত ছাড়া করতে চায়না।নিজের রুম থেকে আয়মান জোরে জোরে ভাবী ভাবী বলে চিল্লিয়ে যাচ্ছে।এখন সাড়ে সাতটা বাজে।একটু পর অফিসে যাবে লোকটা।অথচ অধিশ্রী একবারও রুমে যাওয়ার অনুমতি পায়নি।হাসনা চট জলদি হাতের কাজটা ফেলে রুমের দিকে ছুঁটলো।উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে এলো অধিশ্রীর ভেতর থেকে।

বিয়ে উপলক্ষে আয়মানের দাদী হাবিবা গ্রাম থেকে এসেছে।মহিলাটি ভীষণ মেজাজে চলে।কোনে এক বিষয় নিয়ে রাগে গজরাতে গজরাতে রান্নাঘরে ঢুকলো।বয়সের ভারে বৃদ্ধার শরীর ঈষৎ বেঁকে গিয়েছে।

“আমার চা কই নতুন বউমা?”

চায়ের কাঁপ এগিয়ে দিলো অধিশ্রী।

“এইযে দাদু।”

“কী বউ হইলা যে জামাই একবারও ডাকেনা?সেই তো রেহনুমারে ডাকতেছে অফিসে যাওয়ার আগে।”

ঈষৎ বিস্ময়ে অধিশ্রী শুধালো,

“রেহনুমা?”

“ক্যান বড় বউমা হাসনার আরেক নাম হলো রেহনুমা।”

“সত্যি?”

হামিদা খেঁকিয়ে উঠে বলল,”তো আমি মিথ্যা কইতাছি?তোর জামাইয়ের সঙ্গে কী যে ভাব তার।কে বলবো দুজন দেওর ভাবী।আমার তো জামাই বউ লাগে।”

চলবে।
#গোপনে_দেখা_হবে
#লেখাঃসামিয়া খান প্রিয়া
#পর্বঃ১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here