চডইপাখির অভিমান পর্ব -১৫+১৬

##চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_১৫
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

বিকেলে স্পর্শ এলো মাংস নিয়ে। এপাশে থেকে আব্বু ও গেছিল দিতে তারপর আপুর বাসায় গেছে। স্পর্শের সাথে সীফা এসেছে। স্পর্শ শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরে এসেছে।এটা আমরাই দিয়েছি। খুব মানিয়েছে। সীফা এসে আমাকে বলল শাড়ি পরতে। স্পর্শ নাকি তাই বলেছে। আমার গলা শুকিয়ে আসে শাড়ি পরার কথা শুনলেই। আজো তাই হলো। কিন্তু সীফা শাড়ি পড়াতে দক্ষ সেই হাতে শাশুড়ি মার পছন্দ করা মেরুন রঙের শাড়িটা পরিয়ে দিল। এখন আমায় ওদের সাথে ওই বাসায় যেতে হবে। স্পর্শ বাইরে বসে আছে আম্মু তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে আমার শাড়ি পড়া হতেই সীফা কেও ধাক্কিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। আম্মু দুজনে খাওয়াচ্ছে। আমি সাজগোজ করতে লাগলাম।

স্পর্শ কে দেখলাম খাবারের সামনে অসহায়ভাবে বসে আছে। তিনি আর খেতে পারছে না বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু আম্মু তো তা মানছে না জামাইকে পেয়েছে তো আর কি লাগে তিনি স্পর্শের প্লেট ভরে ফেলছে। আমি গিয়ে আম্মুকে থামালাম। স্পর্শ প্লেটের খাবার আর গিলতে পারলো না। আমি তাকে হাত ধুয়ে উঠতে বললাম। আর মাকে বললাম,

‘ তুমি তো দেখি খাইয়েই মেরে ফেলবে।’

মা লজ্জা পেল একটু। আমার কথায় না স্পর্শকে এমন নাকানিচোবানি খেতে দেখে।

লজ্জা আমতা আমতা করতে লাগলো স্পর্শের সামনে।

তিনজন এই বাসায় চলে এলাম। বিকেলের সময় টা এই বাসায় ই কাটলো। আরেকটা জিনিস ঠিক হলো দুইদিন পর একটা ফ্যামিলি ট্যুরে যাওয়া হবে। আমাদের বাড়ির সবাই স্পর্শ দের বাড়ির সবাই, আর আপুদের বাড়ির আপী ভাইয়া। এই ট্যুরের কথা শুনে আমার আনন্দের সীমা র‌ইল না। বেড়াতে যেতে কে না পছন্দ করে আমিও করি। আর তা যদি হয় আপন মানুষদের সাথে তাহলে তো কথাই নাই।

বাড়িতে এসে আব্বু এসেছে দেখলাম। তাদের কথাটা বললাম। তারা রাজী না বলল আমরাই যাব তারা যাবে না। আমি স্পর্শ কে ফোন করে জানিয়ে দিলাম সব। স্পর্শ বলল,

‘ ডোন্ট ওয়ারি। আমি সবাইকে রাজি করিয়ে নিয়েই যাব টেনশন করো না।’

‘ আচ্ছা।’

.
আপুরা তিন দিনের আগে ফ্রি হতে পারেনি।তাই আমাদের তিনদিন পরেই ট্যুরে যাওয়ার বন্দোবস্ত হলো। আমার আব্বু আম্মু কে রাজি করাতে স্পর্শের অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। অবশেষে সফল হয়েছে। তাই তো আজ তিনদিন পর আমরা সবাই হৈ হল্লা করতে করতে বেড়াতে যাচ্ছি। আমরা সবাই যাব স্পর্শের নানু বাড়ি সিলেট। এত দূরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আমার নানা শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমাকে আর আমার পরিবারকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাগল করে দিচ্ছে। কারো সময় ও সুযোগের অভাবে আর যাওয়া হয়নি। এবার ট্যুরে যাওয়ার কথা শুনতে সেখানে যাওয়ার কথা বলছে। বেড়ানো ও হবে তাদের দাওয়াত রক্ষা করা হবে এজন্য সেখানেই যাচ্ছি সবাই।
আব্বু আম্মু আর আমার শশুর শাশুড়ি এক গাড়িতে। আপু ভাইয়া আর আমি স্পর্শ এক গাড়িতে। মোহিনী ভাবি ভাইয়া আর সীফা এক গাড়িতে।
স্পর্শ ড্রাইভ করছে আমি পাশে বসা। পেছনে আপু আর মাহিন ভাইয়া। আমরা চারজনেই টুকটাক কথা বলেছি। আপু তার শশুর বাড়ি, ননদ, নানা শশুরবাড়ি সবার গল্প করছে।

আমি তাই মনোযোগ সহকারে শুনছি। আপু আর আম্মু আমাকে এখানে আসার আগে প‌ইপ‌‌ই করে বলেছে আমি যেন খুব ভদ্র হয়ে থাকি‌। আর কথা যেন কম বলি। সবার সাথে ভদ্রতার সাথে কথা বলি আর বুঝে শুনে যেন বলি। আমিও মাথা নেড়েছি।

অর্ধেক রাস্তা আসতেই মাহিন ভাই আর আপু সামনে এলো জোর করে আমাদের পেছনে পাঠিয়ে। কারণ স্পর্শ একা সম্পুর্ণ রাস্তা ড্রাইভ করলে অনেক ক্লান্ত হয়ে যাবে। তাই ভাইয়া করছে এখন।
পেছনে আসতেই স্পর্শ খপ করে আমার হাত ধরে হাতের পিঠে একটা চুমু খেল আমি বিস্মিত নয়নে স্পর্শের দিকে তাকালাম। স্পর্শ হাত নিজের হাতের মুঠোয় রেখেই চোখ বন্ধ করে আছে সিটে। আমি ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে করতে সামনে তাকালাম আপুরা আমাদের ধ্যানে নাই। আমি নিচু স্বরে স্পর্শ কে বললাম,

‘ হাত ছাড়ুন।’

স্পর্শ আমার কথার প্রতি উত্তর করল না। অন্য কথা বলল, ‘ আমার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রাখো। যেতে আমাদের আরো অনেক সময় লাগবে। একটু ঘুমাও তাহলে মনে হবে তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।’

আমি বড় বড় চোখ করে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছি। এই লোকটার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কি সব বলছে। সামনে আপু আর ভাই আছে তাড়াতাড়ি কি ভুলে গেছে নাকি।

‘ আপুদের সামনে আপনি এসব কি বলছেন? তাদের সামনে আমি আপনার এত কাছাকাছি থাকবো। তারা কি ভাববে? আপনার লজ্জা লাগছে না।’

স্পর্শ বন্ধ চোখ খুলে আমার দিকে তাকাল সরাসরি এবার‌। তারপর বলল,

‘ কি ভাববে? আমরা যে হাসবেন্ড ওয়াইফ সেটা কি ভুলে গেছো? কাছাকাছি থাকলেই কি? আমাদের সম্পর্কে বৈধতা আছে! আর আমি জাস্ট আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাতে বলেছি। চুমু খেতে বলিনি যে লজ্জা পাবো।’

স্পর্শের এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে আমি চুপ করে গেলাম। আপু আর ভাইয়া নিজেদের মত কথা বলছে আমাদের দিকে তাদের খেয়াল নাই। স্পর্শের কাছে হার মেনে আমাকে তার কাঁধে মাথা রাখতেই হলো।

অনেকক্ষণ জার্নিতে আমার চোখে ঘুম তাড়াতাড়ি নেমে এলো।
সবার আগে এই বাসায় আমরা পৌছালাম। আমার ঘুম ভেঙে গেছে এখানে আসার আধা ঘণ্টা আগেই। আমি ঘুম থেকে চোখ মেলে দেখেছি স্পর্শ জাগ্রত। তিনি আমার ঘুমন্ত মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ মেলে তার চোখের গভীরতা দেখে থতমত খেয়ে গেলাম।

স্পর্শ আমার চোখের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল, ‘ ঘুম ভেঙেছে আপনার তাহলে। সম্পূর্ণ রাস্তা শেষ করেই আপনার ঘুম ভাঙলো।’

আমি স্পর্শের কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে সরে বসলাম। জানলা দিয়ে বাইরের দৃষ্টি ফেলে বললাম ঘুমঘুম কন্ঠ,

‘আমরা কি চলে এসেছি আর কতদূর!’

‘তাকিয়ে থাকো আর পাঁচ মিনিট তাই পুরনো কালের দুতালা বাড়ি দেখতে পাবা। সেটাই তোমার মামা শ্বশুর বাড়ি!’

‘ সত্যি এত তাড়াতাড়ি চলে এলাম!’অবাক গলায় বললাম কারণ আমার মনে হচ্ছে আমি এইমাত্র ঘুমিয়েছি এত তাড়াতাড়ি চলে এলাম এমনটাই মনে হচ্ছে।

‘জি না ম্যাডাম। আপনি পাক্কা তিন ঘন্টা ঘুমিয়েছেন।’

আমি অবাক স্বরে বললাম, ‘ এত সময়! আমার তো মনে হচ্ছে এইমাত্র ঘুমালাম!’

‘ভালো। চলে এসেছে ওই দেখো!’

বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আমার মনে হলো না এটা আদিম কালের। মডেল আদিম কালের হলেও চকচকে একদম।পুরনো বাড়ি এটা দেখলে কেও বলবে না শুধু ডিজাইন টাই পুরোনো। এত সুন্দর করে যত্ন করে রেখেছে এটা যে পুরনো বাড়ি বুঝার উপায় নাই। চকচকে রঙ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাজাদের বাড়ি মনে হচ্ছে!

আমরা সবার আগেই পৌঁছেছি তাই সবার আগে ভেতরে গেলাম আমরাই। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চারপাশ দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছি। আদ বয়স্ক একটা লোক আমাদের দেখে স্পর্শ মনে হয় চিনতে পারল আমাদের তিনজনকে তো আর চিনবে না। চিনতে পেরে ভেতরে চলে গেল।একটু পরে একদল লোক বেরিয়ে এল চিৎকার-চেচামেচি করতে করতে সেখানে একজন বয়স্ক মহিলা স্পর্শ কে জাপ্টে ধরলো স্পর্শ তাকে নানু বলেছে। এটাই স্পর্শ এর নানু আমি তাকে চিনি তার সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। আরো অনেক ছেলেমেয়ে ছোট বাচ্চা অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। মোটামুটি সবাইকে আমি চিনি। স্পর্শের মামা দুই জন, মামি দুই জন আর তাদের ছেলে মেয়ে পাঁচজন‌‌।সবার সাথে আমার আগেই সাক্ষাৎ হয়েছে শুধু এই বাসায় আসা হয় নাই। আমি মামা মামী দের কে সালাম দিয়ে তাদের সাথে দুই একটা কথা বললাম। নানু স্পর্শকের ছেড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল। সালাম দেয়ার সুযোগ পেলাম না তিনি খুবই মিশুক। স্পর্শের মামাতো পাঁচ বোন। এক মামার দুই মেয়ে এক মামার তিন মেয়ে। তাদের দুজনের একজনেরও ছেলে নাই।

স্পর্শের চার মামাতো বোন‌ই খুব ভালো শুধু একজন বাদে‌।সেও ভালো কিন্তু সে নাকি আগেই স্পর্শ কে পছন্দ করত মনে মনে নাকি স্পর্শের বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে। তাই আমার সাথে স্পর্শের বিয়ে হয়েছে। আমাকে ভালোবেসে! এসব জানার পর থেকে নাকি তার মন ভেঙেছে! তাই সে এই একটা কারনে আমাকে সহ্য করতে পারে না! কিন্তু আমার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করে নি। কিন্তু সে একটা কারণেই আমার সাথে মিশতে পারে না দূরে থাকে। আমি জারার দিকে অসহায় মুখ করে তাকালাম। জারা এক দৃষ্টিতে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছে। স্পর্শে তার ছোট মামাতো বোন ফারজানা ও মাইশার সাথে কথা বলছে ওদের চকলেটের দুইটা বক্স দিল।

সবার সাথে আমরা ভিতরে গিয়ে বসলাম তখনই বাবা-মা মোহিনী ভাবীরা সবাই চলে এলো। সবাই ক্লান্ত তাই ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে যে যার জন্য ঠিক করে রাখা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সারারাস্তা আমি ঘুমিয়ে এসেছি তাই আমার চোখে ঘুম নাই। আমাকে আর স্পর্শকে এক রুমে থাকতে দেওয়া হলো।স্পর্শ রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝলাম না। তিনি আমার সাথে ঘুমিয়েছেন তাহলে তিনি আবার এখন ঘুমাচ্ছে কেন? অদ্ভুত আমি একাই জেগে থাকবো। এই বাসার সবার সাথে আগে কথা হলেও একটু ইতস্ত বোধ করি সবার সাথে কথা বলতে। যতই হোক মামা শ্বশুর বাড়ি। শ্বশুরবাড়ি নামটা আসলে কেমন যেন নিজে গুটিয়ে যায়। চঞ্চল ফিলিংসটা ভেতর থেকে ঘুমিয়ে যায়।আবার এটা আমার বাড়ি আমার নানু বাড়ি থাকতো তাহলে আমি কিছুতেই আমার শান্ত স্বভাবের হয়ে থাকতে পারতাম না। লাফালাফি চঞ্চলতা তো আমার রক্তে রক্তে মিশে আছে। কিন্তু নিজের শ্বশুরবাড়ি গেলে আর এখানে এসে আমি একদম শান্ত স্বভাবের ভদ্র হয়ে যায়। গালে হাত দিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি কোন দিকে যাবো বুঝতে পারছি না।সেই মুহূর্তে যারা এসে আমার হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেল । আমি বিস্মিত হয়ে জারার দিকে তাকিয়ে আছি। জারা আমার থেকে এ ক্লাস নিচে পড়ে এজন্য আমি নাম ধরে সম্মোধন করি। জারা আমার ছোট থাকলেও আমাকে নাম ধরে ডাকে ভাবি বলে না। ওকে যেদিন আমি প্রথম জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি আমাকে ভাবি বলোনা কেন? আমি যে তোমার ভাবি হই আর তুমি তো আমার বয়সে বড় না তাহলে আমাকে এভাবে বলতে সমস্যা কি? সেদিন অকপটে বলে দিয়েছিল,

‘তুমি সম্পর্কে আমার ভাবি হলেও আমি তোমাকে ভাবি কোনদিন বলব না!আর তোমাকে যে আমি ভাবি বলি না সেটা কেউ জানবেও না! কারণ আমি কখনো কারো সামনে তোমার কথাতে কথাই বলব না। তোমাকে চিনি না এমন করেই থাকবো।’

‘অদ্ভুত মেয়ে!’

#চলবে….চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_১৬
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

জারা আমাকে ওর রুমে এনে বসিয়ে গল্প শুরু করল। আর ফোনে একটা খুব সুন্দর ছেলেকে দেখালো। বলল এই ছেলে না কি ওকে ভালোবাসো ওর পেছনে ঘুরঘুর করে। ওর পেছনে কতো ছেলের লাইন লেগে আছে। ও নাকি ওদের কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী। সবাই ওর জন্য পাগল। নিজেকে নিয়ে আরো কতকিছু যে বলল। গর্ব করে। আমি বিরক্ত মুখে ওর এই আজাইরা প্যাচাল শুনতে লাগলাম। এক ঘন্টা ওর সামনে বসে রইলাম এত কথা বলতে পারে এ তো দেখি আমার থেকেও বাঁচাল।মনে মনে ভাবছি কেউ আমাকে এখানে তো থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাও। এই মেয়ে তো আমার কান খেয়ে দেবে দেখছি।
আমাকে বাঁচানোর জন্য আমার উনি চলে। মানেই স্পর্শ। স্পর্শ ঘুম থেকে উঠে আমাকে আশেপাশে না দেখে। অপরিচিত জায়গা কোথায় আছি চিন্তা করে খুঁজতে চলে এসেছে। স্পর্শের ডাকটা যেন আমাকে স্বস্তি ফিরিয়ে দিলো। আমি থপ করে দাঁড়িয়ে পড়লাম বিছানা থেকে,

‘ আমি যাই আমাকে ডাকছেন উনি।’

আমাকে দাঁড়াতে দেখে জারা ও দাঁড়িয়ে পড়ল আর আমার হাত টেনে ধরলো।

‘আরে কোথায় যাচ্ছো? সব সময় তো তোমার উনির সাথে থাকবে। এখন না হয় একটু আমার সাথে গল্প করো।’

‘না মানে কোন দরকার কিনা আবার পরে গল্প করবো নি!’

‘না এখন কত সুন্দর গল্প করছি আমার আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে! এখনই গল্পটা শেষ করে যাও আমার অনেক কথা বলার বাকি আছে! তুমি যে কোন দিক দিয়ে আমার নখের যোগ্য না সেইসব তো বলাই হল না। ভাইয়া যে তোমাকে কি দেখে তোমার জন্য পাগল হলো। সেটা ভেবে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায়।আমার আম্মুর ও ইচ্ছে ছিল জানো আমাকে স্পর্শ ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেবে। কিন্তু তোমার জন্য সব নষ্ট হয়ে গেল। ফুপি আম্মাকে কিছু বলার আগেই তিনি জানান। তারা নাকি স্পর্শ ভাইয়ার জন্য মেয়ে ঠিক করে ফেলেছে। মেয়েটা নাকি স্পর্শ ভাইয়া নিজে পছন্দ করেছে। আমাদের মা-মেয়ে দুজনের মন ভেঙ্গে দিয়েছো তুমি। তোমার কি একটুও গিলিটি ফিল হচ্ছে না।’

‘ কেন হবে! এখানে আমার কি দোষ? আমি কি তোমার স্পর্শ ভাইয়ার জীবনে জোর করে এসেছি না তো। স্পর্শ নিজে আমাকে নিজের জীবনের জন্য চুজ করেছে। তাই তোমার যত অভিযোগ আছে সব স্পর্শের কাছে প্রদান করো।আমাকে না বলে।’

আমি আর না দাঁড়িয়ে জারার থেকে হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম রুমে থেকে। একটু এগুতেই স্পর্শের সাথে দেখা হলো স্পর্শ এদিকে আসছিলো। আমাকে দেখে থেমে গেল। আমি কাছাকাছি যেতেই জিজ্ঞেস করল,

‘কোথায় ছিলে?’

‘ জারার সাথে গল্প করলাম।’

‘ও তোমার সাথে গল্প করল? আজ অবধি তো কথা বলতে দেখলাম না।’

‘ আজ নিজে থেকে আমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়েছিল। আর অনেক গল্প করল।’

‘ ভালোই তো। এখন ওদের বাড়িতে আসছ এখন তো গল্প করবেই‌‌। আগে যতই না বলুক।’

‘হ্যাঁ তাই বোধহয়! আপনার ঘুম শেষ?’

‘ হ্যাঁ ওই আর কি এখন আর ঘুমাবো না।’

‘ ওহ।’

‘ চলো নানুর কাছে যাই‌!’

‘ চলুন।’

স্পর্শ আমাকে নানুর কাছে নিয়ে গেল। সেখানে কিছু সময় গল্প করলাম দুজন। নানু খালি আমাকে লজ্জা দিল। বলল,

‘ নানাভাই এবার তোমাগো ঘরে একটা পোলাপাইন দেইখা মরতে পারলে খুব শান্তি পাইতাম। ব‌উটারে‌ এহন বাড়ি আনো তারা তারি। আমি কবে জানি ম‌ইরা যামু তহন আমার লিগা কানবা। মরার আগে আমার ইচ্ছা টা পূরণ কইরা দে নানাভাই‌‌!’

আমি লজ্জা মাথা নিচু করে ছিলাম। এমন কথা নানু বলবেন কল্পনাও করিনি।
আমি পরের সময় টা চুপচাপ করেই ছিলাম। তাদের লাগামছাড়া কথায় আমি কি বলবো খুজেই পাই নি।
নানু ঘুমাবে তাই আমি আর স্পর্শ চলে এলাম রুম থেকে। মামিরা খেতে ডাকলো। আম্মু আপুরাও সবাই উঠে গেছে। সবাই খেতে এলাম। এদের আন্তরিকতা এতো সুন্দর। খাবার ও খুব টেস্ট ‌। সবাই খাওয়ার সময় অনেক প্রশংসা করলো। স্পর্শের বড় মামির হাতের রান্না নাকি খুব ভালো তিনিই রান্না করেছে।
তৃপ্তি করে খেলাম খাওয়া-দাওয়া শেষে আমি মামীকে বললাম,

‘আপনার মত রান্না আমাকে শেখাবেন মামি?’

আমার কথা শুনে মামি সে কি হাসি। সেই কথা সবাইকে বলল কেন যে কথা বলতে গেলাম নিজের মাথা নিজে বাড়ি মারতে মন চাচ্ছে। কিন্তু বলা যেহেতু শেষ এখন আর কিছু করার নাই।
আমি মামি টাকে রান্না শেখানোর কথা বলে খুব ভুল করেছি কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম তিনি মজার ছলে আমাকে চরম অপমান করল। তিনি যে জারার মা আমি তো ভুলেই গেছিলাম তিনি আমাকে সহ্য করতে পারে না।

সবার সামনে বড় মামী বলল,
‘আমাদের স্পর্শ কি মেয়েকে বিয়ে করল সে নাকি রান্নাই পারে না আমাকে বলছে শেখাতে।’

আমার মায়ের দিকে ইশারা করে বললো,’বিয়ান আপনি দেখি মেয়েকে কিছুই শেখাতে পারেন নি। আমার মেয়ে জারা মারিয়ার থেকে ছোট তাও সব পারে এক হাতের রান্না বান্না সমস্ত কাজ পারে‌।’

ছোট মামী তখন বড় মামি কে টেনে বললো,’ থাক না বুবু ও তো তোমার রান্না ভাল লেগেছে বলেই বলেছে।রান্না শিখতে হবে কেন? আমরা না হয় আমাদের স্পর্শের বউকে সবকিছু শিখিয়ে পড়িয়ে নেবো তাইনা।’

‘ এখন পর্যন্ত সামান্য রান্না শিখতে পারেনি এই মেয়ে ধারা রান্না শেখা হবে না। এর রান্না তো কখনো খাওয়া যাবেনা। ভবিষ্যতে আমাদের স্পর্শের কপালে দুর্গতি আছে বুঝতে পারছি। শুধু মেয়ের রুপ দেখে গলে গেল গুন দেখলো না।’

আমাদের বাসায় সবাই আমরা লজ্জায় চুপ করে আছি। আম্মু আমাকে চোখ রাঙানি দিয়েছে। আমাকে আগেই পই পই করে বলে দিয়েছিল আমি যেন পাকনামো করে বেশি কথা না বলি কারও সাথে। সেই উলটাপালটা কথা বলে দিলাম আমার জন্য সবাইকে কত কথা শুনতে হচ্ছে।

বড় মামি কে কেউ থামাতে পারল না তাকে থামাতে সক্ষম হলো স্পর্শ। সেই মুহূর্তেই স্পর্শ এখানে ছিল না স্পর্শ ছিল রুম। কারণ স্পর্শর আগে খাওয়া শেষ করে চলে গিয়েছিলো। তাই সে চলে গিয়েছিল এখন নিচে এসে এসব দেখে স্পর্শের শ্যাম বর্ণ মুখটা লাল হয়ে গেল‌। সরাসরি মামীর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমার বউ কি পারে আর না পারে সেসব আপনাকে দেখতে হবে না মামি। সেসব আমি বুঝবো। আপনি এসব মাথা না ঘামালেই আমরা খুশি থাকবো।’

সবাই সামনে স্পর্শের কথা শুনে মামির মুখ হয়ে গেল বাংলার পাঁচের মতো। তিনি চুপ করে এক কোনে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।
আমি জানি মামি এমন কেন করেছে তাই মামির কথায় আমার কষ্টের থেকে রাগ হয়েছে বেশি। কিন্তু আব্বু আম্মু খুব কষ্ট পেয়েছে আমি বুঝেছি। তাই আমার ও কষ্ট হয়েছে। তাদের আমার বোকামোতে কষ্ট পেতে হলো।

পরদিন আমরা সবাই বেড়াতে গেলাম। সাথে স্পর্শের পাঁচ মামাতো বোন আসলো। আমি গাড়িতে আপুর পাশে বসে ছিলাম। সেই সুযোগকে জারা এসে স্পর্শ এর সাথে বসে পড়লো। আমি চোখ বড় বড় করে সেদিকে তাকিয়ে আছি।

স্পর্শ জারা কে বলল,’ তুই এখানে বসলি কেন এখানে মারিয়া বসবে। তুই নীতির পাশে বস।’

জারা গাল ফুলিয়ে বলল, ‘ ভাইয়া একদিন না হয় আমাদের পাশে বসেন। সব সময় আপনার বউয়ের সাথে থাকবেন একদিন না হয় আমাদের সাথে থাকেন।’

স্পর্শ কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।
আমি দূর থেকে তারা যে কিছু বলাবলি করছে বুঝতে পারছি।আমার মনে হয়েছিল স্পর্শ জারা কে নিজের পাশ থেকে উঠিয়ে আমাকে নিজের পাশে বসাবে। নাহলে নিজে আমার পাশে বসবে এসে বসবে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। দুইজনের একজন ও উঠলো না। আমি গাল ফুলিয়ে দুজনকে দূর থেকে দেখতে লাগলাম। জারার মুখে শয়তানী হাসি সে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো মুখে কি যেন বলে বোঝাতে চাইল আমি কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু স্পর্শের উপর আমার রাগ হলো। অভিমান হল খুব। কিন্তু প্রকাশ করতে পারলাম না। সারা রাস্তা আমার গোমরা মুখে থাকতে হলো।
#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here