চন্দ্রবাহার পর্ব -শেষ

#চন্দ্রবাহার (অন্তিম পর্ব)
বাড়ি থেকে বরযাত্রীরা বিদায় নিতেই বিয়ে বাড়ির সকল অতিথিরাও একে একে বিদায় নিতে আরম্ভ করে। কলহলপূর্ণ বাড়ি জনমানবহীন হয়ে পড়তেই দবীর উদ্দিন ধপ করে মেঝেতে বসে পড়েন। মনে তার অঝোর ধারায় কালবৈশাখীর ঝ*ড় বয়ে চলেছে। নাহ কালবৈশাখীর ঝ*ড় না এটা অনুতপ্ততার ঝ*ড়। অতটুকু মেয়ের মুখে অমন ভারী কথা শুনে যেন দবীর উদ্দিনের টনক নড়ে গিয়েছে মুহূর্তের মাঝেই। নাজিয়া খাতুন ছুটে যান স্বামীর কাছে। দোয়েল এতক্ষণে কাদতে কাদতে নিজের ঘরে গিয়ে দোর দিয়েছে।
“হ্যা গো কি হইল তোমার? শরীর খারাপ লাগছে?” (নাজিয়া খাতুন)
“না শরীর ঠিক আছে। নাজিয়া!” (দবীর উদ্দিন)
“হুম বলো?” (নাজিয়া খাতুন)
“আমি মেয়েটার সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলছি। কিন্তু আমি একজন বাবা হয়ে কিভাবে আমার সন্তানকে একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতাম বলো? ছেলেটা ছিল বেকার। একবেলা খাওয়াতেও তো পারতো না। যেখানে ও একবেলার খাবারের পদ পছন্দ না হলে না খেয়ে থাকতো। সেখানে কিভাবে ও সরফরাজের সাথে মানিয়ে নিতো? তাই আমি সরফরাজকে বলছিলাম যেন বিয়ে করে নেয়। ওরা পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমি তা শুনে নিয়েছিলাম সেদিন রাতে। পরে অনেক অনুরোধ করি সরফরাজকে যেন ও চন্দ্রের জীবন থেকে সরে যায়। একটা বিয়ে করে নেয়। কিন্তু ছেলেটা যে এভাবে চলে যাবে ভাবিনি আমি। মেয়েটা ভাবতেছে আমিই সরফরাজকে খু*ন করছি। কিন্তু আমি তা করিনি নাজিয়া বিশ্বাস করো! মেয়েটার চোখে আমি ভালো বাপ হতে পারলাম না। আমি মেয়েটার সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলছি নাজিয়া।” (দবীর উদ্দিন)
বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন নাজিয়া খাতুন।
“আহা তুমি শান্ত হও তো। বুঝছি আমি ব্যাপারটা। মেয়েকে বুঝাইয়া বলব আমি। ও দোয়েল তোর আব্বার জন্য পানি নিয়া আয় তো তাড়াতাড়ি।“ (নাজিয়া খাতুন)
দোয়েল চোখ-মুখ মুছে জলদি খাবার পানি নিয়ে বারান্দায় ছুটে আসে।


হেলে-দুলে চলা পালকিতে বসে চন্দ্রবাহার শাড়ির আচলের মধ্যে থেকে একটা গন্ধরাজ ফুল বের করে এক ধেয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আচমকা চোখের কোণ হতে এক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। এতক্ষণের চাপিয়ে রাখা কান্না আর নিয়ন্ত্রণে থাকেনা চন্দ্রবাহারের। আস্তে করে ফুলখানায় একটা চুমু খেয়ে তারপর খোপায় গুজে নেয় তা।
সন্ধ্যার কিছু মুহূর্ত পূর্বেই পালকি এসে থামে তালুকদার বাড়ির সদর দরজার সামনে। চন্দ্রবাহার পালকি হতে বাইরে মাথা বের করতেই চমকে ওঠে। শাহীর তালুকদার ঠোটে এক প্রশস্ত হাসি ফুটিয়ে রেখে তার চন্দ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আছে।
-বেরিয়ে এসো। (শাহীর তালুকদার)
চন্দ্রবাহার আস্তে করে হাত বাড়িয়ে দেয় শাহীর তালুকদারের বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে। পালকি হতে বেরিয়ে আসতেই চন্দ্রবাহারের দুই হাত দখল করে নেয় শাহীর তালুকদারের ছোট বোন শাহিদা ও বড় ভাবি রূপা। চন্দ্রবাহারকে নিয়ে সদর দরজা হতে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই শাহীন তালুকদারের মা এগিয়ে আসেন। মোর্শেদা বেগমকে দেখে চন্দ্রবাহারকে ছেড়ে ক্ষানিকটা দূরে সরে দাঁড়ায় শাহিদা ও রূপা। উপস্থিত সকলের মাঝে এত নীরবতা দেখে ক্ষানিকটা ভ*য় এসে হানা দেয় চন্দ্রবাহারে মনে। এই ভদ্র মহিলাই তাহলে তার শাশুড়ি! মোর্শেদা বেগমের মুখের গাম্ভির্য্যতা দেখে ভ*য়ে দুটো ঢোক গেলে চন্দ্র। মোর্শেদা বেগমের একটা মুচকি হাসিতেই চন্দ্রবাহারের মনের সকল ভ*য় মুহূর্তের মাঝেই উধাও হয়ে যায়। মোর্শেদা বেগম তার ডান হাতটা দিয়ে চন্দ্রবাহারের বাম গালখানা আস্তে করে ছুয়ে দিয়ে বলে ওঠেন,
“রূপা আজ থেকে এই মেয়েটা কিন্তু তোমার আরেকটা ছোট বোন। এখন তুমি আর শাহিদা গিয়ে চন্দ্রবাহারের জন্য হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করো আর একখানা শাড়ি আর কিছু গহনা বের করে এগুলো পালটে দেওয়ার ব্যবস্থা করো। মেয়েটাকে অনেক ক্লা*ন্ত দেখাচ্ছে। দ্রুত যাও।“
“আচ্ছা আম্মা যাচ্ছি। শাহিদা দ্রুত চলো।“ (রূপা)
মোর্শেদা বেগম চন্দ্রবাহারকে টেনে নিয়ে একটা নরম গদি ওয়ালা কেদারায় বসান। অতঃপর নিজেও তার পাশের কেদারায় বসে চন্দ্রবাহারের দিকে তাকিয়ে বলতে আরম্ভ করেন,
“আমার ছেলেটা খুব ভালো মানুষ মা। এখনের সময়ে এমন মানুষ দুটো খুজে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ওর খেয়াল রেখো। একটু ব*দ-মে*জা*জি কিন্তু একটু ক*ষ্ট করে মানিয়ে নিও দেখবে তোমার থেকে সুখী কেউ হবেনা। তোমাকে ও অনেক পছন্দ করে মা। আচ্ছা চলো তো ওদিকে। মনে হয় সব কিছু প্রস্তুত। হাত-মুখ ধুয়ে নেবে চলো। ওরে কে আছিস! শাহীরের জন্য চা বানিয়ে আন। ছেলেটা এই সময়ে চা খায়।“
চন্দ্রবাহার মুখে একটা টু শব্দ পর্যন্ত করেনা। শুধু চুপচাপ অবাক চোখে মোর্শেদা বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে। মানুষটাকে বাহির থেকে যেমনটা মনে হয়ে আসলে ভেতর থেকে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির একটা মানুষ। অত্যন্ত ভালো মনের একজন মানুষ তিনি।
রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ হতেই চন্দ্রবাহারকে সাজিয়ে গুছিয়ে শাহীর তালুকদারের ঘরের খাটের ওপর বসিয়ে দিয়ে যায় রূপা। সারা ঘর হরেক পদের কাচা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। ফুলের সুগন্ধে মৌ মৌ করছে চারদিকটায়। ক্ষানিক বাদেই শাহীর তালুকদার হাসি-খুশি মুখ নিয়ে ঘরের মাঝে প্রবেশ করে দরজার ছিটকিনি তুলে দেয়। ধীর পায়ে হেটে এসে খাটের ওপর বসে চন্দ্রবাহারের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। চন্দ্রবাহার লজ্জায় ইতস্ততবোধ করে মাথা নুয়ে নিয়ে শাহীর তালুকদারকে সালাম দেয়। মুচকি হেসে সালামের জবাব দিয়ে শাহির তালুকদার বলে ওঠে,
“তোমার নাম কেন চন্দ্রবাহার রাখা হয়েছে তা কি জানো তুমি?”
দুপাশে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ সূচক ইঙ্গিত দেয় চন্দ্রবাহার। আবারও মুচকি হেসে ওঠে শাহীর তালুকদার।
“তুমি ঠিক চন্দ্রের মতো সুন্দর। তাই তোমার নাম দিয়েছে চন্দ্রবাহার। বুঝেছ?“ (শাহীর তালুকদার)
শাহীর তালুকদারের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে চন্দ্রবাহার। কিসব আ-বো-ল তা-বো-ল ব*ক*ছে লোকটা! এর মাঝেই দরজায় হঠাৎ ঠক ঠক আওয়াজ হতেই দ্রুত পায়ে গিয়ে দরজা খুলে ঘরের বাইরে চলে যায় শাহীর তালুকদার। মিনিট তিনেক পরে পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে দরজা আটকে দেয় সে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় যেমন প্রফুল্লতা নিয়ে বেরিয়েছিল,কিন্তু পুনরায় ঘরে ঢোকার পরে তার ভাবমূর্তি যেন একদম বদলে গেছে। সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। চন্দ্রবাহার চমকে ওঠে শাহীর তালুকদারের এমন রূপ দেখে। দৌড়ে গিয়ে ঘরে থাকা টেবিলের উপরের পানি ভর্তি জগ হতে গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে আসে। শাহীর তালুকদারের সামনে গ্লাসটা ধরতেই দেরি না করে মুহূর্তের মাঝে গ্লাসের সব পানিটুকু খেয়ে নেয় সে।
“কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন? কোনো অ-ঘ-ট-ন ঘটেছে?” (চন্দ্রেবাহার)
চন্দ্রবাহারের প্রশ্নে নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে শাহীর তালুকদার বলে ওঠে,
“না না। আমি ঠিক আছি আর সব ঠিকঠাক আছে। তুমি শান্ত হয়ে বসো।“
চন্দ্রবাহার পুনরায় খাটের ওপর বসতেই শাহীর তালুকদারও গিয়ে বসে পড়ে তার পাশে। মিনিট চারেক পরে শাহীর উপলব্ধি করে হাত-পা কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে তার। শরীরের বাম সাইড আস্তে আস্তে করে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। বসে থাকতে না পেরে সে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
“চন্দ্রবাহার আমার কেমন যেন লাগছে। বাম পাশটা ধরে অবশ হয়ে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।“(শাহীর তালুকদার)
“কি বলছেন? সবাইকে ডাক দেব?” (চন্দ্রবাহার)
“না। কাউকে ডেকো না। দেখি কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি দেখি ঠিক হয় কিনা!” (শাহীর তালুকদার)
আর কোনো জবাব দেয় না চন্দ্র। শুধু ক্ষণে ক্ষণে মুচকি হেসে ওঠে। দশ মিনিট পেরোতেই শাহীর তালুকদারের মুখ বেঁকে আসে। আর গলা গিয়ে আওয়াজ বেরোয় না। সাথে পাল্লা দিয়ে শুরু হয় বুকে ব্য*থা। য*ন্ত্র*ণা*য় ছটফট করতে আরম্ভ করে শাহীর। চন্দ্রবাহার এক হাতের ওপর মাথা ভর দিয়ে বাম কাত হয়ে শাহীর তালুকদারের দিকে ফিরে শুয়ে পড়ে। প্রখর দৃষ্টিতে শাহীরের দিকে তাকিয়ে চন্দ্র বলতে আরম্ভ করে,
“তুই তো আমার সরফরাজ ভাইয়ের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলি। তবে কেন মা*র*লি তাকে? তাও এত ক*ষ্ট দিয়ে! বন্ধু হয়ে কিভাবে পারলি তুই বল? তোর ভালো মানুষের পেছনে লুকিয়ে থাকা আসল রূপটা তার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিল বলে? তোর সব কু-ক-র্মে-র সাক্ষী হয়ে গিয়েছিল বলে মে*রেছিস তাকে?”
চন্দ্রবাহারের কথায় পিলে চমকে ওঠে শাহীর তালুকদারের। শত চেয়েও মুখ হতে একখানা শব্দও বের করতে পারেনা সে। ক্ষানিক দম নিয়ে আবার চন্দ্রবাহার বলে ওঠে,
“বিভিন্ন গ্রাম হতে বাচ্চাদের অ-প-হ-র-ণ করে এনে যে তোর গুপ্ত কারখানায় নিয়ে তাদের দিয়ে জোরপূর্বক ঝুঁ*কিপূর্ণ কাজ করাস তাতো সব সরফরাজ দেখে নিয়েছিল। তুই যখন জনতে পারিস সরফরাজ ভাই সবকিছু জানতে পেরে গেছে তখনই তাকে মে*রে ফেলার হু-ম-কি দিতে শুরু করিস। সরফরাজ ভাই বুঝে গিয়েছিল যে তাকে ম-র-তে হবে। কিন্তু তারপরেও বাচ্চাগুলোকে তোর কবল হতে মুক্ত করে একটা সুরক্ষিত জায়গায় রেখে যায়। তুই বারবার হু-ম-কি দিয়েছিস বাচ্চাকেগুলোকে কোথায় রেখেছে তা জানার জন্য। কিন্তু সরফরাজ ভাই মুখ খোলেনি। তারপর সেদিন রাতে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে টেনে মাঠের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ওভাবে হ*ত্যা করলি। বাচ্চাগুলোকে এতক্ষণে পুলিশ তাদের বাড়িতে পৌছে দিয়েছে। তোর লোকজনকে তো পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে তাইনা? এজন্য এতো ঘা*ব*ড়ে গেছিস! তোর আম্মা তোকে একজন আদর্শ ছেলে হিসেবে জানে। কিন্তু তুই যে আসলে কি তা যদি সে জানতে পারে তবে তো মানুষটা শেষ হয়ে যাবে। তোর মুখোশ যদি আমি এখন খুলে দেই তাহলে শুধু তোর একার জন্যই পুরো পরিবারটা ধূ*লি*স্যা*ৎ হয়ে যাবে। আমি চাই তুই থেকে যা তোর মায়ের প্রিয় আর আদর্শ হয়ে। তোর উপরের রূপটা সকলে অনুসরণ করবে কিন্তু ভেতরের রূপ যেন মানুষের চোখে না পড়ে তারই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সা*পের বি*ষ মিশিয়ে দিয়েছিলাম পানিতে। একটু আগে পানি খেয়েছিস না? সাথে কিন্তু বি*ষা*ক্ত সা*পের বি*ষও খেয়ে নিয়েছিস। খুব দেরি হয়ে গেছে এখন। আর তোর হাতে বেশি সময় নেই সময় নেই।“
চন্দ্রবাহারের কথা কর্ণোগোচর হতেই শাহীর তালুকদারের চোখ বড় বড় হয়ে আসে। চন্দ্রবাহার হাসতে হাসতে পুনরায় বলে ওঠে,
“এসব কিছু কিভাবে জেনেছি জানিস? আমার সরফরাজ ভাই সবকিছু তার রোজনামচায় লিখে রেখে গেছে। শুনবিনা সরফরাজ ভাইয়ের হয়ে সব শো*ধ আমি কেন তুলছি? তুই আমার সরফরাজ ভাইয়ের মুখ থেকে একটাবার “ভালোবাসি” কথাটা শুনতে দিলিনা আমাকে। দিলিনা আমার সরফরাজ ভাইকে আমার হতে। আমার কল্পনায় সাজানোর সংসারটাকে দিলিনা বাস্তবে রূপ দিতে। তোর পা*প ঢাকতে তুই তোর বন্ধুর সাথেই বিশ্বাস*ঘা*ত*ক*তা কিভাবে করতে পারলি? তুই যখন আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলি আমিতো মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গিয়েছিলাম। সেধে এসে তুই আমার ফাঁ*দে পড়লি। তোর বিশ্বাস অর্জন করেই কিভাবে তোর পেছনে ছু*রি মে*রে দিলাম দেখলি? বুঝতে পারছিস বিশ্বাস ভা*ঙ্গার য-ন্ত্র-ণা ঠিক কতটা ভ-য়া-ব-হ হতে পারে! তোর নানা বাড়ি আর সরফরাজ ভাইয়ের নানা বাড়ি তো একই জায়গায়। সরফরাজ ভাই যে তার নানা বাড়ির ওখান থেকে আঁখি নামের মেয়েটাকে বউ সাজিয়ে নিয়ে এসেছিল আমাকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে। আমি বো*কাও বুঝিনি আমার সরফরাজ ভাই যে বিয়ে করতেই পারেনা অন্য কাউকে। তার সবটা জুড়েই যে শুধু তার চন্দ্রবাহার। কিন্তু বেচারা যে আগে জানতো না ওই আঁখি তোর গোপন প্রেমিকা। আঁখিকে পুলিশ ধরে ফেলেছে। তুই যে আমাদের পাশের বাড়ির হাসনা মেয়েটার সতীত্ব হ-র-ণ করেছিলি তা মেয়েটা আ*ত্ম*হ*ত্যা করার আগে সরফরাজ ভাইকে জানিয়ে গিয়েছিল। তুই আস্ত একটা অ*মা*নু*ষ। শুধুমাত্র তোর মা-বোনের দিকে তাকিয়ে আমি সব গোপনেই করে যাচ্ছি। তোর মৃ*ত্যু রহস্য শুধুমাত্র আমার আর তোর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে। পুলিশকে অনেক অনেক করে অনুরোধ করেছি যেন তোকে গ্রেফতার না করে। তোকে যে আমি নিজ হাতে মা*র*তে চাই। তুই যে হৃদরোগে আক্রান্ত এটাই আমার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সকলে জানবে তুই হৃদরোগের কারণে মা*রা গেছিস। এই গ্রামে যে একজন বাচ্চা অপহরণকারী ও ধ-র্ষ-ক রয়েছে তা মানুষ জানবে। কিন্তু তোর ছদ্মনামে চিনবে তোকে সবাই। শাহীর হিসেবে নয়। নইলে যে তোর পরিবারের ওপর সবাই হা-ম-লে পড়বে।“
চন্দ্রবাহারের কথা শুধু চুপচাপ শুনেই গেল শাহীর তালুকদার। এক ফোটা নড়চড়া করার ক্ষমতা তার মাঝে আর নেই। বাকশক্তি তো সে কখনই লোপ পেয়েছে। ধীরে ধীরে দেহ নিস্তেজ হয়ে যায়। চন্দ্রবাহার বুঝতে পারে রুহ দেহ ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। এমন অ-মানুষদের যে বেঁচে থাকারই অধিকার নেই। কিছুক্ষণ বাদেই চন্দ্রবাহার চিৎকার করে কান্না আরম্ভ করে দেয়। আস্তে আস্তে বাড়ির সকলে এসে উপস্থিত হয় শাহীর তালুকদারের ঘরে। সারা ঘর ফেটে পড়ে কান্নার আওয়াজে। মোর্শেদা বেগম চিৎকার করে করে কান্না করছেন। চন্দ্রবাহারের ক্ষানিক মায়া হয় মোর্শেদা বেগমের জন্য। চন্দ্রবাহার এক কোণে বসে কান্নার অভিনয় করে যাচ্ছে সেই হতে। আশেপাশের মানুষজন এর মধ্যেই বলতে আরম্ভ করেছে, “ইশ মাইয়াটার ভাগ্যটায় কি এমনটা ছিল? বিয়ের প্রথমদিনই স্বামীটা মা-রা গেল।“ আচমকা রূপা এসে চন্দ্রবাহারের কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে আরম্ভ করে,
“আমি জানি তুমিই মে*রেছো এই অ-মানুষটাকে। তুমি চিন্তা করোনা আমি সব সামলে নেব এদিকটা। তুমি শুধু পুলিশের বিষয়টা সামলে নিও।“
রূপার দিকে বি*স্ফো*রিত নয়নে চেয়ে থাকে চন্দ্রবাহার। চন্দ্রবাহারকে ছটফট করতে দেখে রূপা আবারও বলে ওঠে,
“আমি সব জানি। আমি সরফরাজের মামাতো বোন। ও সব আমাকে বলে গেছে। এটাও জানি ও তোমাকে কতোটা ভালোবাসতো। ও আমার কাছে তোমার জন্য একটা জিনিস রেখে গেছে যাওয়ার দিন নিয়ে যেও কেমন?“
মাথা নাড়িয়ে “হ্যা” সূচক সম্মতি দেয় চন্দ্রবাহার।


কেটে গেছে প্রায় দুটো বছর। সরফরাজের দেয়া গন্ধরাজ ফুলগাছের নিচে বসে সরফরাজের রোজনামচাটা বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে চোখ বুজে আছে চন্দ্রবাহার। চন্দ্র পিটপিট করে বলতে আরম্ভ করে,
“জানেন সরফরাজ ভাই আব্বা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন আমার চেয়ে আব্বা আমার মনটাকে বেশি ভালো করে বোঝেন। আমাকে আর বিয়ের জন্য জোর করেনা। আপনার চন্দ্রবাহার ঠিক আপনার মতো সাহসী হয়ে গেছে সরফরাজ ভাই। জানেন! আমি রোজ কলেজে যাই আর নিয়মিত পড়াশোনাও করি। আমি একদিন অনেক বড় ডাক্তার হবো। আপনিতো আপনার রোজনামচায় লিখে রেখে গেছেন যে, আপনার চন্দ্র একদিন অনেক বড় ডাক্তার হবে। আপনি শুধু আমার সরফরাজ ভাই হয়েই থেকে যাবেন সারাজীবন। আর আমার কিছুই চাইনা। একটা আফসোস সারাজীবন থেকে যাবে, আপনার মুখে একটাবার “ভালোবাসি” শুনতে পেলাম না। সরফরাজ ভাই দেখেন রূপা ভাবির কাছে রেখে যাওয়া চেনটা আমি পড়েছি। সুন্দর লাগছেনা আমাকে? এই চন্দ্রবাহার শুধু আপনার হয়েই থেকে যাবে সারাজীবন। ভালোবাসি সরফরাজ ভাই।“
~সমাপ্ত
আফিয়া অন্ত্রীশা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here