চাতকের_তৃষ্ণা_তুমুল_বর্ষা পর্ব ৭

#চাতকের_তৃষ্ণা_তুমুল_বর্ষা-৭

পিউ আপার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হলো বেশ ভালোরকমভাবে। হিন্দি সিরিয়ালের বাতাস লেগে কয়েকশরকম অনুষ্ঠানের আবদার পিউ আপার। পানচিনি, মেহেদি, সঙ্গীত, গায়ে হলুদ, বিয়ে, বউভাত ; এতোগুলো আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান। তার উপর সব অনুষ্ঠানে আলাদা আলাদা থিমের কস্টিউম।
পরিবারের প্রথম বিয়ে। এই কথাটা যখন সবাই বলে আমার বুকে এসে একটা ধাক্কার মতো লাগে। আমাকে না গুনুক মিতাভাইকেও এরা গোনে না কেউ? নাকি শুধু আমাদের বিয়েটাকেই ভুলে থাকে? অদ্ভুত তো! ভুলে থাকলেই কি সেটা মিথ্যে হয়ে যায়, নাকি?

বিয়ের কয়েকদিন আত্মিয়স্বজনরা থাকবে, ওইকয়দিন দোতলায় না থেকে তিনতলায় থাকার হুলিয়া জারি হয়েছে মাথার উপরে। পিউ আপার উপর রাগ হয় আমার। এতোগুলোদিন ধরে এতো এতো অনুষ্ঠানের কী দরকার বাপু? কতটা দিন নিজের ঘরে থাকা হবে না আমার! রাতে ঘুমপাড়ানির আঁধার নেমে আসলেই মিতাভাই আমার হয়ে যায়। তখন তাকে আদর করি আমি, বকি, ভালোবাসি। সে বিরক্তও হয়না, রাগেও না, বকেও না। সেই রাতের কিছুটা সময়ই তো আমার দাম্পত্যবিলাস; একার হোক, তবুও!

আচ্ছা, এই এতোগুলো দিনেও একসাথে থেকেও কি আমার জন্য মনের ভিতর একটু জায়গা তৈরি হয়নি মিতাভাইর। আমার এতো এতো চেষ্টা একেবারেই বিফল? নাহ, একটু তো ভাবেই সে আমার কথা। একেবারে মুছে দেওয়া কি যায়? যেমন শান্ত মানুষ, তেমনি গোপনেই আমার কথা, আমার মুখ, আমাকে ভাবে নিশ্চয়ই। একটু একটু করেই অনেকখানি হবে একদিন। আমার অপেক্ষা একটু লম্বাই নাহয় হোক!

পিউ আপার বিয়ে উপলক্ষে নিজের ঘর ছাড়া নিয়ে আমি অসম্ভব বিরক্ত ছিলাম। সেসব কেটে গেলো মেহেদি অনুষ্ঠানে। এইদিন বরের বাড়ির লোকেরা নীলে সাজবে আর আমরা কনেপক্ষ সাজব সাদায়, এটাই ঠিক করা হয়েছিল। শপিংও করেছি আমরা সবাই। কিন্তু আমার ব্যাগ খুলে আমি অবাক হলাম। নীল সাদার মিশেলে সুন্দর গাউন বানিয়েছে পিউ আপা, ওর বরের জন্যও সেইম ফেব্রিকসের গলাবন্ধ ব্লেজার। আমার ব্যাগেও ঠিক সেইরকম আমার আর মিতাভাইর জন্য। একই ডিজাইন, একই রঙ, একই ফেব্রিকস! এ পিউ আপারই বুদ্ধি। আনন্দে আমার চোখে পানি এসে গেলো। এই গেটআপে আমাকে আর মিতাভাইকে কাপলই দেখা যাবে। আমি দৌঁড়ে চারতলায় উঠে পিউ আপাকে জড়িয়ে ধরলাম।
‘থ্যাঙ্কিউ, থ্যাঙ্কিউ, থ্যাঙ্কিউ পিউ আপা!’

‘ইশ, ছুটি? দমবন্ধ হয়ে যাবে তো!’

‘যাক।’

‘মরে যাব তো!’

‘তুমি না আপা, আমি মরে যাবো।’

‘তোকে ভালোবাসিতো। আমরা সবাই তোকে ভালোবাসি।’

‘শুধু তুমি ভালোবাসো। বুবু, মিজাভাই, মিতাভাই, কেউ তো আমাকে দেখতেই পারে না?’

‘মিতাভাইও পারে না?’

‘উহু, পারেনা।’

‘তবে এতোগুলো দিন কী করলি বল? নিজের করে নিতে পারলি না?’

‘চেষ্টা তো করেই যাচ্ছি।’

‘এতোদিনে হয়নি, কবে হবে? আর ছেলেমানুষি করিস না, ছুটি। ছোটচাচা আর ছোটমা তোর জন্য ভেবে ভেবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’

‘হবে আপা। একদিন হবে। আমি ততদিন অপেক্ষা করব।’

‘ততদিন মানে কতদিন?’

‘অনন্তকাল!’

পিউ আপা আর কিছু বলে না আমাকে। আমি নাচতে নাচতে মেহেদি অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি হলাম। হাতভরে মেহেদি দিলাম। সব গানে নাচলাম। বড়চাচাকেও আমাদের সাথে নাচালাম।

মা, বাবা আমাকে নিয়ে এতো কেন চিন্তা করে আমি বুঝিনা। এইযে একইরকম জামায় সাজলাম আমি আর মিতাভাই, মিতাভাইর নাম লিখে দিলাম মেহেদিসাজা হাতের এককোনায় – এইটুকুই আমার সমস্ত সুখ!

আমি ছাদে চলে আসি। দোলনায় দুলতে থাকি। মাথার উপরে মস্ত চাঁদ। ঝিরিঝিরি বাতাসে চুল উড়ছে আমার। পাতলা ওড়না বাতাসে ভাসছে। ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ মুভিতে ঐশ্বরিয়া রাই এইভাবেই চুল উড়িয়ে, ওড়না ভাসিয়ে ‘চান্দ ছুপা বাদলমে’ গেয়েছিল, এইরকমই নীল লেহেঙ্গা পরে। ওই ছবিতেই তো, বিয়ে করেই স্বামীকে ভালোবাসে ও, আগের প্রেম ভুলে যায়। মিতাভাই কেন পারে না আমাকে ভালোবাসতে! মিতাভাইর ওরকম এক্সিডেন্ট হলে তো আমিও ওভাবে তার যত্ন করতাম। আমিতো এমনিতেই অনেক যত্ন করি, অনেক ভালোবাসি। এক্সিডেন্ট না হোক, একটু আধটু জ্বর তো হতে পারে মিতাভাইর, আমি দাঁত ব্রাশ করিয়ে দেব, মুখে দিলে খাইয়ে দেব, শরীর স্পঞ্জ করে দেব। ওষুধ খাইয়ে দেব, আমার কাঁধে তার ভর নিয়ে ধরে ধরে বারান্দায় বসিয়ে দেব। তার সামনে থাকবে দুধের গ্লাস, আমি চায়ের কাপে সিপ নেবো। ডাক্তার এসে বলবে ‘আপনার স্ত্রী ছিলো বলেই, এযাত্রা প্রাণে বেঁচে গেছেন। নিজের আর আপনার স্ত্রীর খেয়াল রাখবেন।’ মিতাভাই কৃতজ্ঞ হয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে৷ আমি বলব ‘প্রাণটা তো আমারই, আমার গরজেই আমি তার প্রাণরক্ষা করেছি।’

পায়ের দিকে চাপ দিয়ে দোলনা দুলাই আমি আর আনন্দিত চোখে চারিপাশ দেখি। ছাদে পিউ আপার লাগানো এলোভেরাগুলো নাতিপুতি দিয়ে ভরে ফেলেছে, ওদেরকেও ভালো লাগে। বাতাসটা চুলগুলোকে এলোমেলো করে অবাধ্য করে দিচ্ছে তাও ভালো লাগে। নকল আলোয় সামনের বাড়িটার ক্যাটক্যাটে হলুদ রঙ মিষ্টি লাগে। আমার সব ভালো লাগে। গুণগুণ করে গান গাই-

“আমার মাঝে নেই এখন আমি
স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে স্বর্গে নামি
যেন অন্য রকম এক ভালোবাসাতে
ডুবে আছি তুমি কাছে আসাতে …

মন যেন এক উদাসি কবি
ভাল লাগে রাত, ভাল লাগে চাঁদ,
ভাল লাগেরে সবই, হই…..হই…হই…
ভাল লাগে ফুল, কিছু কিছু ভুল
ভাল লাগেরে সবই”

আমার ভুলগুলোও ভালো লাগে। এই ভুলেই যদি স্বর্গের রাস্তাটা পেয়ে যাই? কাঁটার আঘাত না সয়ে পদ্ম কিভাবে পাবো আমি? অবহেলা হাসিমুখে সইলেই তো ভালোবাসা পাব। মিতাভাই, আপনার একটুখানি ভালোবাসার জন্য আমি অনেকদিন অপেক্ষা করে থাকব। সেই অপেক্ষার শেষে শুধুই আনন্দের দিন আমার।

*****
দোতলায় মিতাভাইর ঘরটা এখন আমার ঘর। একটা বাগানবিলাস গাছ আছে জানালা বরাবর। আসল নাম বোগেনভিলিয়া। ছোটবেলায় আমরা বলতাম কাগজ ফুলের গাছ। ঘুড়ি বানাতে যে পাতলা কাগজ লাগে ঠিক সেইরকম এর বেগুনি রঙের পাঁপড়ি। কোনো ঘ্রাণ নেই। কাগজের তৈরিই মনে হয়। অনেক বয়স গাছটার। বেড়েছেড়ে আমার জানালা দখল করে ফেলেছে আধাআধি। এপাশে দাঁড়ালে ফুলের আড়ালেই থাকা যায়। রাস্তা থেকে বা ওপাশের বাড়ি থেকে জানালা দেখা যায় না। কিন্তু আমার জানালা থেকে ওপাশ ঠিকই দেখা যায়। কনক আপার জানালা, বারান্দাও স্পষ্ট দেখা যায়। মেহেদি অনুষ্ঠানের আনন্দ নিয়ে আমি রাতে বুবু আর পিউ আপার সাথে ঘুমিয়েছিলাম। আজ সঙ্গীত অনুষ্ঠান হবে সন্ধ্যের পরে। গান হবে, গানের সাথে নাচবে কেউ কেউ, সবাইকেই কিছু না কিছু পারফর্ম করতেই হবে। গানের কলি খেলব, অন্তাক্ষর খেলা হবে। এতো এতো মজা, আনন্দ চারিদিকে। মেহেদি অনুষ্ঠানে আমি আর মিতাভাই একইরকম সেজেছিলাম। মা আর বড়চাচির মুখ কালো হলেও সবাই ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছিল আমার দিকে। কনক আপা, পিউ আপার বান্ধবী সোমা আপা তো জিজ্ঞেসই করল ‘কী ব্যাপার?’ সত্যিটা সবাইকে বলতে মন আঁকুপাঁকু করে আমার কিন্তু বাড়িভরা আত্মিয়স্বজন; মা আর বড়চাচির চোখরাঙানো মনে করে গিলে ফেলি আগ্রহ আর এড়িয়ে যাই সোমা আপাকে। আমি কিছু না বললেও তো সোমা আপার বুঝে যাওয়া উচিত! বোঝেই তো সবাই। পিউ আপার মামার ছেলে অনিক, অনেকক্ষণ ফ্ল্যার্ট করছিল আমার সাথে, যেইনা মিতাভাই এলো ছাদে, অনুষ্ঠানের জায়গায়, অমনি চুপ করে ফিসফিস করে জানতে চাইল ‘তুমি বিবাহিত? উনি তোমার বর?’ আমি ওদের কৌতুহল আরও উসকে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে এসেছিলাম। এইযে সবাই বুঝে যাচ্ছে আমরা স্বামী-স্ত্রী এই আনন্দেই বিভোর আমি। আনন্দ রাখার জায়গা পাচ্ছি না। আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে সময় লাগে না মনে হয়। ললাটের লিখন যিনি লেখেন আমার বেলায় তিনি এতো কার্পণ্য কেন করেন। আমার ঝুলিতে আনন্দ লিখতে তার কি কলমের কালি ফুরিয়ে যায়? আনন্দ না লিখুক তবে কষ্ট কেন লেখে?

বিকেলে দোতলায় আমার ঘরে গিয়েছিলাম সঙ্গীতের জন্য জামা পরতে। আজকে যে যার ইচ্ছেমতো সাজবে। কালারফুল হবে পুরো অনুষ্ঠান। আমি একটা লাল রঙের সালোয়ার কামিজে সাজব ভেবেছিলাম। তাই নিতে দোতলায় এসেছিলাম। আমার সবকিছুইতো এখন আমার গোলাপ আলমারিটাতে। আমি ঘরে ঢুকেই দেখলাম, মিতাভাই বাগানবিলাস গাছটার আড়াল নিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কনক আপার জানালা, ব্যলকনিতে। আপা এখানেই আছে। মাসখানেক হয়েছে থাকছে। শ্বশুরবাড়িতে কিসব সমস্যা হচ্ছে বলে এলাকায় কানাকানি চলছে। বিদেশে এক বউ আছে নাকি কনক আপার স্বামীর। কনক আপা
আসার পরে সেই লোকটাও বড় বিএমডব্লিউ গাড়িতে করে দুবার এসেছে দেখেছি। কিন্তু কনক আপা তার সাথে দেখাই করেনি। আমাদের সাথেও দেখা করেনা।

মিতাভাইকে জানালায় দেখে আমার সকল অপেক্ষা যেন এইমূহুর্তে শেষ হয়ে গেলো। আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম। আবার যদি আগের প্রেম শুরু হয় দুজনের? এতোদিন আমি যে এতো এতো স্বপ্ন দেখলাম, তার কী হবে? কনক আপা যদি আসবেই মিতাভাইর জীবনে তবে সে ছেড়ে গিয়ে অন্য একজনের বউ হলো কেন? আর মিতাভাইও কি বুঝবে না? আমিই যে তার জীবনের একমাত্র সত্যি, তাও কি সে মানবে না? কনক আপাতো অনেক আগেই তাকে ছেড়ে গেছে, আমিতো ছাড়িনি কখনো। ওই লোকটার যদি আরেকটা বউ না থাকত, কনক আপা যদি খুব সুখি হতো, তবে কি কখনো সে ওই জানালায় ফিরে আসত? এখন ফিরে এসেছে বলেই মিতাভাই তাকে নিয়ে নেবে? কেন নেবে? কনক আপা তো আরেকজনের বউ। মিতাভাই আরেকজনের স্বামী। এভাবে অন্য কারো স্ত্রীকে ভালোবাসা কি উচিত? আর অন্য কারো স্বামিকে এভাবে ছিনিয়ে নেওয়া কি অন্যায় না? জামা না নিয়েই সিঁড়ি ডিঙোলাম। তিনতলায় আমার যে ঘরটা ছিলো, সেই ঘরে ঢুকে খিল দিলাম।

মিতাভাই এটা কেন করল আমার সাথে? ফুঁপিয়ে কান্না পেলো আমার। এমন হয় না, এমন হতে পারে না! মিতাভাই আমার হয়ে গেছে, সে আমার, আমারই থাকবে। আমারই ভুল হয়েছে, তাকে নিজের করে নিতে আমার অপেক্ষাটা অনেক লম্বা হয়ে গেছে। আরও আগেই, অনেক আগেই আমার কিছু একটা করার দরকার ছিলো।

দরজায় কতজন ধাক্কা দিয়ে গেলো, পিউ আপাও এলো ডাকতে। ডাকুকগে, আজ আমি কোথাও যাবো না। সবাই আনন্দ করুক। বাড়ির ছোটমেয়েটা এতো কষ্ট পাচ্ছে, কারো কোনো খেয়াল নেই, সবাই বিয়েবাড়ি পাতিয়ে বসেছে। মরুকগে সবাই…

আজ সেই দিনটা এসে গেছে যার জন্য আমি অনেকদিন অপেক্ষা করে আছি। দরজা খুলে চুপচাপ দোতলায় নেমে এলাম। শ্রীতানাবানার একটা প্লেইন লাল শিফন শাড়ি আছে আমার- মেজোচাচা ইন্ডিয়া থেকে এনেছিল; খুব বিশেষ কোনো দিনে পরব বলে রেখে দিয়েছিলাম। আজ সেই বিশেষ দিন। বিশেষ রাত।

খুব যত্ন করে শাড়িটা পরলাম আমি। মিহি সুতো জড়িয়ে আয়নায় তাকালাম। ভাঁজহীন সূক্ষ্ম শাড়ির নিচে উন্মুক্ত উনিশের নারীশরীর স্পষ্ট দৃশ্যমান। কড়া লাল লিপিস্টিকে রাঙানো ঠোঁট আয়নার মেয়েটিকে আরও উত্তেজক করে তুলেছে। ভিক্টোরিয়ার সিক্রেট পিওর সিডাকশন বডি মিস্টে নিজেকে ভরিয়ে দিলাম৷ গুগল করে এটার নাম জেনে এক বান্ধবীর ভাইকে দিয়ে ইউএস থেকে এটা আনিয়েছি আমি। খুব সিডিউসিং স্মেল দেয় বলে!

আর কিছু না। কোনো প্রসাধন না। একদম র আমি, নিজেকে নিজের থেকে সমর্পণ করব মিতাভাইকে। সে আমাকে আজ আর ফেরাতে পারবে না। আমার গহীনে তাকে আজ ডুবতেই হবে। কখনো ভাসবে, কখনোবা ডুবসাঁতার কাঁটবে।

চুপ করে প্রতীক্ষা করতে থাকলাম আমি। মিতাভাই এলো তখন দশটা বেজে গেছে। তার জন্য রাত অনেক। সে আর্লি স্লিপার, আর্লি রাইজার। ছাদে এখনও গানের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমাকে রেখেই আনন্দ করছে সবাই। আমার কান্না পেলেও আটকে দিলাম। মন ভালো করে নিলাম। আজ আমার সব পাওয়ার রাত। নিজেরটা জোর করেই নেবো আমি। মিতাভাই ঢুকল, আমি নিঃশ্বাস আটকে রইলাম। সে বাতি জ্বালালো, আমি বিছানার চাদরটা মুঠোয় আঁকড়ে নিলাম। মিতাভাই আমাকে এরকম দেখে বিস্মিত হয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। আমি তাকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই বাতি বন্ধ করে পারফিউমড ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে দিলাম সারা ঘরে। সে অবাক হয়ে বলল ‘ছুটি? কী করছিস?’

ইশ এমন সুন্দর সময়ে কেউ এভাবে ধমক দেয় নাকি? মোবাইল প্লেলিস্টে কুনাল গাঞ্জাওয়ালা গাইছে –

“ভিগি হোঁট তেরে… পিয়াসা দিল মেরা…”

আসলেই পিপাসার্ত আমার মন। সারা শরীর। আমি মিতাভাইর সামনে দাঁড়িয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম, নামমাত্র আঁচলটাও খসিয়ে নগ্নবক্ষা হয়ে তাকে টেনে নিলাম নিজের ভেতর। ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম তার দুঠোঁটের ভিতর। ভয়ংকর আক্রোশ যেন আমার ভেতর, আমি যেন তাকে খেয়ে ফেলতে শুরু করলাম! নিজের মাঝে নেই আমি একেবারেই। এতো আনন্দ, এতো সুখ…

‘ছিঃ! নির্লজ্জ?’ খুব কটু করে বলল মিতাভাই আর আমার দুইকাঁধ ধরে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে। আমি ব্যথিত চোখে তাকালাম, জেদ চেপে গেলো, আবার জড়িয়ে ধরতে চাইলাম তাকে। মিতাভাই আমার কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিলো এবার ‘সেন্স নাই নাকি তোর?’ বলে, অবমানিত, অপমানিত আমাকে সরিয়ে দিয়ে এমনভাবে তাকাল যেন আমি একটা নোংরা মেয়ে, গর্হিত কিছু করে ফেলেছি। তার চোখের তারায় একরাশ ঘৃণা দেখতে পেলাম শুধু। তার মুখে উচ্চারণ করা ‘ছিঃ’ কথাটা আমার কানের ভেতর নানারকম করে বাজতে থাকল। নির্লজ্জ শব্দটার রঙ আর আকার নিয়ে ভাবতে বসলাম। ভেবে না পেয়ে ‘আমার ঘর’ ছেড়ে বেরিয়ে একছুটে বসার ঘরের সোফায় এসে বসলাম।

কেউ নেই বাসায়। সবাই ছাদে। অন্ধকার ঘরে বসে আমি ভাবতে থাকলাম, ভালোবাসা ফিরিয়ে দিলে, সেই আঘাতে খুব কষ্ট হয়, কিন্তু সমর্পিত শরীর প্রত্যাখ্যান করলে তাতে চাপ চাপ কষ্টের সাথে মিশে থাকে ফেণিত অপমান! সেই গ্লানিতে গলা রুদ্ধ হয়ে আসে! আমারও আর শ্বাস নিতে ইচ্ছে হলো না। দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললাম আমি, ‘ছিঃ, কী লজ্জা!’

চলবে…

(১৮+ ট্যাগ দেব নাকি? 😬)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here