#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৫
🍂🍂🍂
দুপুর সময়। সূর্যের তেজ যেনো অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ একটি বেশি বেড়ে গেছে। নুর চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বিরক্তি সহিত একবার সিলিং ফ্যানের দিকে তাকালো। আজ যেনো ফ্যানের বাতাস গায়েই লাগছে না। রাজু কে ডাক দিয়ে বললো আজ চা না দিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কস দিতে। রাজু মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো কোল্ড ড্রিঙ্কস আনার জন্য।
~এই তো এক সপ্তাহ আগে বৃষ্টি হলো। কি সুন্দর ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব হচ্ছিলো। এই বেটা সূর্য আবার এত চটে গেলো কেনো? কি লেভেলের গরম লাগতেছে রে ভাই! আল্লাহ গো!
শুভ্রতা ফোনের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে বললো,
বক বক না করে দেখতো এটা কেমন?
সেকেন্ডেই সকলের ফোনে একটা মেসেজ এলো। নুর ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করতে করতে বললো,
কি দিয়েছিস?
~নিজেরাই দেখ।
মেসেঞ্জার গ্রুপে ঢুকে দেখলো একটা কালো জামদানি শাড়ি, কালো রেশমি চুড়ি আর কিছু অলংকারের ছবি। রিদিতা বললো,
শাড়িটা খুব সুন্দর রে শুভি। আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে।
উপমা হেসে বললো,
রিদির একমাত্র শুভির পছন্দ করা জিনিসই প্রথম দেখায় পছন্দ হয়। আমাদের পছন্দ দেখলেই কেমন করে নাক কুচকায়!
~মানতেই হবে তোর পছন্দ আছে বটে। (রূপা)
~এই শাড়ি, চুড়ির ছবি দিলি যে? (তিলোত্তমা)
~হ্যাঁ! এই শাড়ির ছবি কেনো দিলি? (নুর)
শুভ্রতা ভ্রু নাচিয়ে বললো,
পছন্দ হয়েছে?
~আলবাত হয়েছে। তোর পছন্দ তো বরাবরই বেস্ট হয়।
শুভ্রতা এক হাসি দিয়ে বললো,
অর্ডার করেছি। কাল আসবে।
নুর ভ্রু কুঁচকে বললো,
তোর জন্য? ভালোই মানাবে তোকে।
শুভ্রতা ঠোঁটের হাসি আরেকটু চওড়া করে বললো,
আমাদের জন্য। সবাই টাকা রেডী রাখবি। ফ্রী তে আমি আবার কিছু দেই না।
~মানে কি! অর্ডার দেওয়ার আগে আমাদের জানালি না কেনো? (রিদিতা)
~তুই যেই লেভেলের কিপটা! অর্ডার দিতে দিতি? তাই আগে অর্ডার দিয়ে তবেই জানালাম। (শুভ্রতা)
~যদি আমাদের পছন্দ না হতো?(নুর)
শুভ্রতা হাসি হাসি চোখে চেয়ে বললো,
~একটু আগেই না বললি শুভির পছন্দ বরাবরই বেস্ট?
~শাড়ি দিয়ে কি করবি? (উপমা)
~তোর বিয়ে তে স্টেজ সাজাবো। (শুভ্রতা)
~হ্যাহ্? (রূপা)
~আরে ধুর! ঘুরতে যাবো এক সাথে। অনেক ছবি তুলবো। (শুভ্রতা)
~এটা কি তোর নতুন ইচ্ছা? (নুর)
শুভ্রতা দ্রুত বেগে মাথা নেড়ে বললো,
হ্যা। কাল সন্ধ্যায় এমন ইচ্ছা হলো। আর সাথে সাথেই অ্যাকশন। ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে নেই জানিস না!
নুর এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছবি গুলো আবারো মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো। মেয়েটার মনে হুটহাট একেক ইচ্ছা এসে হানা দেয়। কেউ কল দিলে ভীষণ ক্ষেপে যায় আবার নিজেই মাঝে মধ্যে হুট করে রাতে গ্রুপ কল করে আড্ডা দেওয়া শুরু করে, কখনো শাড়ি পড়ে প্রকৃতি বিলাস করতে ব্যস্ত হয় আবার কখনো বৃষ্টি এসব অপছন্দ বলে নাক কুচকায়, তার ঘর তার প্রিয় জায়গা আবার নিজেই হুটহাট গ্রামের বাড়ি চলে যায় “শান্তিময় পরিবেশ মিস করছি” বলে। এই মেয়ের মাথায় কখন কি চলে বুঝে উঠা মুশকিল।
~তুই কি সত্যিই অর্ডার করেছিস শুভি?
রিদিতার প্রশ্নে শুভ্রতা চোখ পিট পিট করে বললো,
আমাকে মিথ্যাবাদী মনে হয় তোর রিদি?
শুভ্রতার এমন প্রশ্নে রিদিতা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো।
~আমি মোটেও তোকে মিথ্যাবাদী বলছি না। (রিদিতা)
~সন্ধ্যায় যার যার বাসায় পার্সেল যাবে। কাল তো এমনিও ক্লাস নেই। ভিডিও কল করে জানাস কেমন লেগেছে। আমি গেলাম বাড়িতে। টাটা।
শুভ্রতা চলে যেতেই রিদিতা ফুঁসে উঠে বললো,
এই মেয়ের মাথায় কখন কি চলে বুঝি না আমি। হুটহাট ওর মনে ইচ্ছা তৈরি হয় কেমনে! নিজের জন্য অর্ডার দিলো তো দিলো। আমার জন্য কেনো দিলো?
নুর আড়চোখে রিদিতার দিকে তাকালো। খিটখিটে মেজাজে বললো,
শুভি ঠিকই বলে। তুই আসলেই একটা কিপটা।
~তোর একার জন্য তো অর্ডার করেনি। আমাদের জন্যও করেছে। তোর না ভীষণ পছন্দ হয়েছিল? এখন কেনার বেলায় মুখটা বাংলার পাঁচের মত করছিস কেনো?
উপমার কথায় দমে গেল রিদিতা। এক লম্বা শ্বাস নিয়ে বললো,
যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। আফসোস করে আর কি করবো? বাড়ি যাচ্ছি আমি।
________________________________
মাগরিবের নামাজ শেষ করতেই নুরের ফোনটা স্বশব্দে বেজে উঠলো। বিরক্তিতে ‘চ্’ শব্দ করে ফোন হাতে নিলো নুর। ফোনের স্ক্রিনে “বন্ধুমহল” নামটা জ্বলজ্বল করছে দেখতেই বিরক্তি কাটিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। ফোন রিসিভ করতেই দেখলো শুভ্রতা বাদে সকলেই আছে। রূপা বললো,
পার্সেল পেয়েছিস?
~না তো। কেনো? তোরা পেয়েছিস? (নুর)
~হ্যা। মাত্র পেলাম। (রিদিতা)
নুর বিদ্রুপের কণ্ঠে বললো,
কিরে রিদি? সকালে না ফোঁস ফোঁস করলি? এখন হটাৎ এত খুশি?
~পার্সেল এলে তুইও খুশি হয়ে যাবি। (উপমা)
~ছবির থেকেও বেশি সুন্দর নাকি? (নুর)
~নুর তোর জন্য কিসের পার্সেল এসেছে যেনো। ডেলিভারি ম্যান বললো শুধু তোর হাতেই দিবে। (নুরের মা)
~আসছি (নুর)
নুরের মা আবারো রান্না ঘরের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন। নুর ডেলিভারি ম্যানকে জিজ্ঞেস করলো,
ভাইয়া কত টাকা বিল?
~ম্যাম পেমেন্ট তো ক্লিয়ার। জাস্ট গিফটটা আপনার হাতে দিতে বলেছেন।
নুর কপাল কুঁচকে বললো,
ইজ ইট আ গিফট্?
~জ্বি ম্যাম।
নুর পার্সেলটা নিয়ে ঘরে চলে এলো। কল এর ওপাশে সবাই চুপচাপ নুরের কার্যকলাপ দেখছে। নুর বক্স খুলতেই দেখলো সকালে শুভ্রতার দেখানো সেইসব জিনিস। সাথে কালো একটা চিরকুট পেলো যাতে সাদা কালি দিয়ে গুটি গুটি অক্ষরে লেখা,
“সময় আর টাকা সবসময় আমাদের হাতে থাকে না। সময় সে তো বহমান। আর টাকা? সে সারাজীবন আমাদের হাতে থাকে বলে আমার মনে হয় না। ঐযে বলে না! সকাল বেলার ধনী রে তুই, ফকির সন্ধ্যা বেলা। আমি ফকির হয়ে গেলে? তখন তোদের গিফট্ দিতে পারতাম না তাই হাতে টাকা থাকতেই দিয়ে দিলাম। তোর অগ্রিম বার্থডে গিফট। একদিন আমরা সবাই এইগুলো পড়ে একসাথে ঘুরবো। ঠিকাছে?”
নুর হেসে উঠলো। মেয়েটা এতো অদ্ভুত কেন!
~সকালে অকারণে রাগিয়ে দিলো কেনো? ওরে পেয়ে নেই আমি। (রিদিতা)
~কই ও? কল এ আসে নাই কেন? (উপমা)
~অনলাইনে নেই দেখছি। আসলে সবাই কথা বলবোনে। (তিলোত্তমা)
~দোস্ত! ওর পছন্দ আসলেই অনেক বেশি সুন্দর। (রিদিতা)
~ইহ! পেমেন্ট নিজের করা লাগলে তখন এই হাসি মুখে তারিফের বদলে উল্টা দুইটা গালি দিতি। (নুর)
নুরের কথা জোরপূর্বক হাসলো রিদিতা। হয়তো সত্যিই সে এমন কিছুই করতো।
~~~
চলবে~