#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৬
🍂🍂🍂
টানা দুদিন কারো সাথেই যোগাযোগ করেনি শুভ্রতা। আর না অনলাইনে এলো। ফোনে কল দিলেও ধরলো না কেউ। হয়তো প্রকৃতি বিলাসে ব্যস্ত হয়ে আবারো দুনিয়াদারি ভুলে বসে আছে মেয়েটা। এ তো তার নিত্যদিনের অভ্যাস। মাসে একবার গায়েব না হলে যেনো তার চলে না। বেশ চঞ্চল মনের হলেও তার কাছে তার একান্ত সময়টা বেশ প্রিয়। এ সময়ে কারো সাথেই কথা বলতে পছন্দ করে না সে। তাই বন্ধুমহলের কেউই বার বার কল করে আর ডিস্টার্ব করলো না।
রাতে কারো কল আসায় ঘুম ভেংগে গেলো নুরের। এ সময় তাকে কারো কল দেওয়ার কথা না। ঘুম ঘুম চোখেই ফোনের দিকে তাকালো। বন্ধুমহল থেকে কল? চোখ কচলে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো রাত দুইটা বেজে নয় মিনিট। এ সময় তো কোনো বিপদ হওয়া ছাড়া কল করার কথা না। তবে? দ্রুত কল রিসিভ করলো নুর। দেখলো একজন মানুষই কল এ উপস্থিত। তাও চেহারা দেখা যাচ্ছে না, সম্পূর্ণ অন্ধকার। নুর নাম চেক করে দেখলো শুভ্রতা কল এ। নুর কপাল কুঁচকে বললো,
কিরে শুভি? এতো রাতে কল যে? আর অন্ধকারে কেনো তুই? লাইট জ্বালা!
নুরের কথার মাঝেই কল এ জয়েন করলো রিদিতা, রূপা, উপমা আর তিলোত্তমা।
~কিরে এতো রাতে কল করলি কেন? আমার সাধের ঘুমটা ভেঙে গেলো। (রিদিতা)
~শুভি? ফাইনালি তোর প্রকৃতি বিলাস শেষ হলো?(উপমা)
~কিরে কথা বলছিস না কেন? (রূপা)
~তুই অন্ধকারে কেনো শুভি? (তিলোত্তমা)
শুভ্রতার মৌনতায় ঘাবড়ে গেলো ওরা। নুর ধমকে বললো,
~কথা বলছিস না কেন? এই দুদিন কোথায় ছিলি? (নুর)
ওপাশ থেকে অস্পষ্ট এক দীর্ঘশ্বাস এর শব্দ এলো। অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এই কুচকুচে কালো অন্ধকারে শুভ্রতাকে দেখার উপায় নেই। দীর্ঘক্ষণ পর মৌনতা ভেঙে শুভ্রতা বললো,
~সম্পর্কে বিচ্ছেদের রেখা টানা কি খুব সোজা? অনেক বছরের সম্পর্ক হুট করে ভেঙে দিতে কষ্ট হয় না? (শুভ্রতা)
শুভ্রতার হটাৎ এমন কথায় সবাই অবাক হলো। কি বলছে তা কেউ বুঝলো না। উপমা বললো,
বুঝলাম না। কি নিয়ে কথা বলছিস?
সকলেই শুভ্রতার উত্তরের অপেক্ষায় বসে রইলো কিন্তু শুভ্রতা জবাব দিলো না। চুপ করে বসে রইলো। কিছু মুহূর্ত পরই খিল খিল করে হেসে উঠলো। হাসির শব্দে সকলেই চমকে উঠলো। তিলোত্তমা উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,
কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন?
হাসি থামিয়ে শুভ্রতা নির্মল কণ্ঠে বললো,
~কিছু না। মিস করছিলাম তোদের।
~তোর কি মন খারাপ?(রিদিতা)
ওপাশ থেকে আবারো হাসির শব্দ শুনা গেলো। নুর ধমকে উঠে বললো,
~অন্ধকার এ কেনো তুই? তোর না অন্ধকার ভয় লাগে? লাইট অন কর! আর হাসছিস কেনো? (নুর)
~লাগতো। আজ ভয় লাগছে না বরং ভালো লাগছে। এই অন্ধকারকে কেমন যেনো আপন মনে হচ্ছে।
নুর এবার ঘামতে লাগলো। শুভ্রতাকে সে অনেকবার বাইরের মানুষের সাথে এভাবে সিরিয়াস মুডে দেখলেও অন্তত তাদের সাথে এতোটা ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে শুনেনি সে। তিলোত্তমা, রিদিতা, রূপা আর উপমার ও ঠিক একই অবস্থা। আবারো ওপাশ থেকে শুভ্রতার হাসির আওয়াজ ভেসে এলো। নুর এবার ভীষণ রেগে গেলো। অকারণে হাসছে কেনো মেয়েটা?
~এই দুইদিন কোথায় গায়েব ছিলি তুই?(নুর)
~বাড়িতেই ছিলাম। নিজেকে একটু সময় দিচ্ছিলাম। (শুভ্রতা)
~সবাই এত কল দিলাম দেখিসনি? (উপমা)
~দেখেছি। ধরতে ইচ্ছে করছিলো না।
শুভ্রতার নির্লিপ্ত জবাব। রিদিতা ফুঁসে উঠে বললো,
এটা কি ধরনের কথা? অন্তত একটা মেসেজ করে তো বলতে পারতি যে তুই ঠিক আছিস। আমাদের তো টেনশন হয় নাকি!
শুভ্রতা চুপ করে রইলো। বন্ধুরাও সব চুপ। একদম পিন পতন নিরবতা। বেশ অনেকক্ষণ পর শুভ্রতা আবারো মৌনতা ভেঙে বললো,
তোদের খুব মিস করছি। কাল ভার্সিটি জলদি আসিস। রাখছি।
শুভ্রতা কল কাটলেও ওরা সবাই থম মেরে বসে রইলো।
~শুভ্রতার মন খারাপ এতে কোনো সন্দেহ নাই। তবে মন খারাপের কারণ কি? (রিদিতা)
~ও তো কথা লুকায় না। সঠিক সময় হলে ও নিজেই বলবে। ওকে একটু সময় দে। (তিলোত্তমা)
~হু। কাল তোরা আসবি ভার্সিটিতে? (উপমা)
~শুভি দুইদিন ধরে আসছে না বলে ভেবেছিলাম যাবো না। এখন তো ও বললোই যে ও আসবে। (রূপা)
নুর গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল “ঘুমাবো আমি রাখছি।” এ কণ্ঠে প্রখর রাগ বিদ্যমান।
__________________________________
~আমাকে ছাড় শুভ্রতা!
শুভ্রতা ছাড়লো না। নুরের পায়ের ওপর এক পা তুলে দিয়ে নুরকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
~রাগ করে আছিস কেনো?
শুভ্রতার প্রশ্নে তেতে উঠলো নুর। শুভ্রতাকে ধাক্কা দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
ফাইজলামি করতে আসছো তুমি?
~তোদের সাথে ফাইজলামি না করলে কি ওই টাকলা প্রিন্সিপালের সাথে ফাইজলামি করতে যাবো নাকি?
~যার সাথে ইচ্ছা যা। আমাকে ছাড়।
~না!
~সমস্যা কি তোর?
~আমার আবার কিসের সমস্যা?
~জানিস না তুই?
~রাগ কমেছে?
শুভ্রতার পাল্টা প্রশ্নে আরো গম্ভীর হয়ে বললো নুর,
~কথা ঘুরাবি না শুভ্রতা। সোজা সোজা জবাব দে।
~কেনো দেবো?
~কেনো দিবি মানে? আমরা ফ্রেন্ড না? আমাদের মধ্যে কথা ঘুরানো বা লুকানো লাগবে কেনো?
~ওহ আমরা ফ্রেন্ড? আমি ভাবছিলাম বন্ধুত্ত্ব শেষ।
~বন্ধুত্ত্ব শেষ হবে কেনো? বন্ধুত্ত্ব শেষের কথা আবার কোথা থেকে এলো?
~এই যে শুভি থেকে শুভ্রতা ডাকছিস! আমি তো ভাবলাম বন্ধুত্ত্ব শেষ করে দিলি।
~পাগল হয়েছিস! আমি কেনো বন্ধুত্ত্ব শেষ করতে যাবো!
শুভ্রতা নুরকে ছেড়ে দিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। নুর বুঝলো না শুভ্রতা কৌশলেই কথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। রূপার হাতে থাকা বইটা কেড়ে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো। বললো,
অন্য কারো থেকে নিকনেম ভালো না লাগলেও; তোদের মুখে শুভ্রতা নামটা শুনতে ভালো লাগে না।
পরের বার থেকে খেয়াল রাখবি। শুভি যেনো শুভ্রতা না হয়।
~হলে কি করবি?
উপমার কথায় শুভ্রতা বই থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তার দিকে তাকালো। গালে হাত ঠেকিয়ে লহু স্বরে বললো,
~বেশি কিছু না। জাস্ট যেমন আচরণ বাইরের মানুষের সাথে করি তোদের সাথেও তেমনি আচরণ করবো। পরে অভিযোগ যেনো না আসে যে শুভ্রতা পাল্টে গেছে।
একটু থেমে আবার বললো,
আমার পরিবর্তন, আমার আচরণ নিতান্তই নির্ভর করে আমার সামনের মানুষটার ওপর। তোরা পাল্টে গেলে আমিও পাল্টে যেতে সময় নিবো না।
~মানে? আমরা চলে গেলে কখনো আটকাবি না?
রূপার কথায় তাচ্ছিল্য হাসলো শুভ্রতা। নিস্প্রভ কণ্ঠে বললো,
~যে থাকতে চায় তাকে আটকানোর কি প্রয়োজন? যদি না থাকতে চায় তাহলে আটকে রাখা লাগে। আর আমার জোর করে কাউকে নিজের সাথে রাখা অপছন্দ।
~মানুষ তো রাগের বশেও চলে যায়। তাই বলে ফিরাবি না? (নুর)
~ফেরানো আর আটকে রাখা আলাদা জিনিস। ফেরানো মানে তাকে নিজের সাথে রাখার চেষ্টা। যদি তার মনে টান থাকে তবে এই চেষ্টায় সে অবশ্যই থাকবে। (শুভ্রতা)
~আর আটকানো? (তিলোত্তমা)
~যে থাকতেই চায় না তাকেও নিজের সাথে রাখা কিন্তু জোর করে। যাকে জোর করে রাখা লাগবে! বুঝে নিতে হবে ওই মানুষটার মনে মায়া, টান নেই। তাই আমি জোর করে কাউকে নিজের কাছে রাখতে পছন্দ করি না।
সকলে হটাৎই চুপ করে বসে রইলো। শুভ্রতা আড় চোখে চেয়ে বললো,
রাগ কমে গেলে বল। না কমলেও বলে দে। রাগ না কমা পর্যন্ত ভার্সিটি আসবো না।
~সে কি? রাগ না ভাঙিয়ে উল্টো ভার্সিটি আসা বন্ধ করে বসে থাকবি? (রিদিতা)
~অলরেডী মানানোর চেষ্টা করেছি। আর না মানলে দেখা যাবে উল্টা আমি রেগে বসে আছি। তাই তোদের রাগ ঠান্ডা হলে তবেই আসবো। (শুভ্রতা)
~থাক! থাক! আমার রাগ শেষ। এমন ভাবে রাগ ভাঙাতে দেখিনি কখনো।
নুরের কথায় শুভ্রতা মুচকি হাসলো। ওদের কথার মাঝে হটাৎ ই রাজু দৌড়ে এসে বললো,
আপনাদের ক্যান্টিনে এক ভাইয়া ডাকছে। জলদি যেতে বলছে।
~কোন ভাইয়া? (নুর)
~নাম বলছিলো কিন্তু আমি ভুলে গেছি। আপনারা চলেন। (রাজু)
~কিরে যাবি? (রিদিতা)
~এদিকে দাড়িয়ে চিন্তা করতে করতে মাথার চুল সাদা না করে গিয়ে দেখলেই তো হয়। (তিলোত্তমা)
____________________________________
ক্যান্টিনে এসে এমন কাউকে দেখবে তা কল্পনায়ও ভাবেনি নুর বা তার বন্ধুমহলের কেউ। নুর বিস্মিত হয়ে বললো,
আপনি? আপনি এখানে?
~~~
চলবে~
(লাইক কমেন্টস করেন না দেখছি ইদানিং। আমাকে এত দ্রুত ভুলে গেলেন সবাই! হাউ রুড! আচ্ছা… গল্পের কোন চরিত্রকে ভালো লাগে আপনাদের কাছে? কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং~)