চিত্তদাহ #লেখিকা:শুভ্রতা_আনজুম_শিখা পর্ব ৪

#চিত্তদাহ
#লেখিকা:শুভ্রতা_আনজুম_শিখা

পর্ব ৪

🍂🍂🍂

বৃষ্টি আসার আগ মুহূর্তটা বরাবরই খুব প্রিয় নুরের। এসময় চারদিকে কেমন এক থমথমে ভাব বিরাজ করে। রাস্তায় চলাচলকৃত প্রতিটা মানুষের মধ্যেই তখন কেমন এক তাড়া কাজ করে। চারদিকে চেয়ে তখন মানুষের গতিবিধি দেখতে বেশ ভালোই লাগে নুরের। রাস্তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এবার আকাশের দিকে তাকালো নুর। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। সকাল হলেও মনে হচ্ছে এখন যেনো সন্ধ্যার সময়। যখন তখন বৃষ্টি নামবে ভেবেই রিকশাচালককে বললো,
মামা একটু দ্রুত চলুন।
রিকশাচালক ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকালো। চোখে মুখে তার ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো,
জ্বি আপা।
নুর কতক্ষন লোকটার দিকে চেয়ে থেকে আবারো আকাশ দেখায় মনোযোগ দিলো। রিকশাচালকদের মামা ডাকলেও প্রায় রিকশাচালকই তাকে আপা ডাকে। সে বুঝে উঠতে পারে না যে তারা নিজেদের বয়স কম বুঝাতে চাইছে নাকি তার বয়স বেশি বুঝাতে চাইছে। গেটের সামনে রিকশা থামতেই নুর দ্রুত ভাড়া মিটিয়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে। বৃষ্টি হবে দেখে ক্যাম্পাসে আজ সকলের চোখেই কেমন উৎফুল্ল ভাব বিরাজ করছে। আসলেই সকলে উৎফুল্ল নাকি তার নিজের বৃষ্টি পছন্দ দেখে সকলেরই বৃষ্টি ভালো লাগে বলে মনে হয় তা নুরের জানা নেই। ক্যান্টিনে প্রবেশ করতেই দেখলো কর্নারের জানালার পাশের টেবিলটা ঘিরে বসে আছে উপমা, রিদিতা, রূপা আর তিলোত্তমা। দুর থেকে দেখেই বুঝা গেলো তারা কোনো সিরিয়াস বিষয়ে গবেষণা করছে। নুর আলতো হেসে তাদের কাছে গেলো। উপমার পাশের খালি চেয়ারটা টেনে বসতে বসতেই প্রশ্ন করলো,
কি নিয়ে সভা বসেছে আজ? শুভি আসেনি এখনও?
নুরকে দেখে রিদিতা একটু নড়েচড়ে বসলো। চোখগুলো বড় বড় করে উৎকণ্ঠ হয়ে বললো,
না, আসছে বললো। জানিস কি হয়েছে?
নুর গালে হাত ঠেকিয়ে এক ভ্রু বাঁকিয়ে বললো,
~না বললে জানবো কি করে?
রিদিতা আরো উৎকণ্ঠ হয়ে বললো,
কেয়া আর লিপি আছে না? ওই যে সব সময় এক সাথে ঘুর ঘুর করতো। গত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এক সাথে “মায়া বন বিহারিনি” গানেও নেচে ছিল।
~হ্যাঁ রে বাবা চিনেছি। হয়েছে কি সেটা বল। (নুর)
~ওদের বন্ধুত্বের সমাপ্তি ঘটেছে। একদম তুলকালাম ঝগড়া করে বন্ধুত্ত্ব শেষ করেছে। (তিলোত্তমা)
~সে কি! কেনো? (নুর)
~কে জানি কেয়ার নামে লিপিকে কি বলেছে। আর লিপিও তা বিশ্বাস করে সে কি তুলকালাম ঝগড়া! (উপমা)
~ইশ! ওদের তো স্কুল লাইফ থেকে বন্ধুত্ত্ব! ভাঙলো কেন! (নুর)
~বাড়ির খুঁটি মজবুত ছিল না তাই বাড়ি ভেঙে ধপাস করে পড়েছে।
শুভ্রতার কণ্ঠ শুনে তার দিকে তাকালো সবাই। শুভ্রতা গায়ের বিন্দু বিন্দু পানি হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তেই তিলোত্তমার পাশের চেয়ারে বসলো। নুর জানালার বাইরে উকি দিয়ে দেখলো ইতিমধ্যে বৃষ্টি পড়া শুরু করেছে। রূপা কপালে বলিরেখা টেনে বললো,
তোর কথার মানে বুঝলাম না।
~সম্পর্ক ঠিক একটা বাড়ির মতো। আর বিশ্বাস ওই বাড়ির পিলারস অর্থাৎ খুঁটি। সম্পর্কে বিশ্বাস থাকা উচিত অসীম। বিশ্বাস কম মানেই খুঁটি দুর্বল। খুঁটি দুর্বল হলে যেমন বাড়ি টিকে থাকা মুশকিল। তেমনি বিশ্বাস না থাকলে সম্পর্কও টিকিয়ে রাখা মুশকিল।
শুভ্রতা কিছুটা দূরে থাকা এক টেবিলের দিকে তাকালো। টেবিলটি ঘিরে কিছু ছেলে মেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ওদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নুরের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে আবারো বলতে লাগলো,
ওদের সম্পর্কে বিশ্বাস এর অভাব দেখা দিয়েছিল তাই এত বছরের সম্পর্ক মুহূর্তেই শেষ।
~ইশ! ওদের বন্ধুত্ত্ব দেখলে তো ভার্সিটির অনেকেই হিংসে করতো। ওদের বন্ধুত্ত্ব ভাঙায় আমাদেরই কষ্ট হচ্ছে তবে ওদের মনের ওপর দিয়ে কি এক ঝড় যাচ্ছে আল্লাহ জানে। (উপমা)
রাজু অর্থাৎ ক্যান্টিনের কর্মরত ছেলেটি এসে নুরদের টেবিলে প্রতিদিনের মতো আজও ৫ কাপ দুধ চা আর এক কাপ ব্ল্যাক কফি দিয়ে গেলো। শুভ্রতা কফিতে এক চুমুক দিয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত কণ্ঠে বললো,
~আমাদের বন্ধুত্ব টিকবে তো?
শুভ্রতার কথায় সকলেই চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো কিন্তু শুভ্রতার দৃষ্টি এখনও জানালার বাইরেই আবদ্ধ। নুর রাগ দেখিয়ে তেজপূর্ণ কণ্ঠে বললো,
টিকবে না কেনো? অবশ্যই টিকবে।
~কেউ ছেড়ে যেতে চাইলে ডিরেক্ট ঠেং ভেঙে রেখে দিবো। ভাঙ্গা পা নিয়ে যাবে কিভাবে? (রিদিতা)
~একদম তাই। বন্ধুত্ব ভাঙার প্রশ্নই উঠে না। কখনো এমন পরিস্থিতি এলেও আমরা একে অপরের সাথে থাকবো। (রূপা)
~একে অপরের সাথে ঝগড়া করে থাকতে পারবো কেউ? অবশ্যই না। তবে বন্ধুত্ত্ব টিকবে না কেনো? (উপমা)
~বন্ধুত্ত্ব শেষ করা কি এতই সহজ? (তিলোত্তমা)
বান্ধবীদের কথায় নির্বোধ হাসলো শুভ্রতা। অদ্ভুত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সকলের দিকে চেয়ে থেকে বললো,
ছোট একটা প্রশ্নতে এত রেগে যাচ্ছিস কেনো তোরা? ঠান্ডা হ। ভাগ্যের কথা তো আর বলা যায় না। যাই হোক, বৃষ্টির দিনে আসাটা কি জরুরী ছিল? মাথাটা পুরো ধরে গেছে।
~বৃষ্টি তোর এত বিরক্ত লাগে কেনো বলতো!
শুভ্রতা কফিতে এক চুমুক দিয়ে আবারও জানালার বাহিরে তাকালো।
~রাস্তায় অনেক কাদা থাকে। আমার এমন মৌসুমে বাহিরে বের হতে ভালো লাগে না।
শুভ্রতার দৃষ্টি অনুসরণ করে এবার নুরও সেদিকে তাকালো।
একজন মহিলা তার কোলে দুই বা আড়াই বছরের ছোট বাচ্চা, হাতে একটা ছাতা নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। বেশভূষা দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে তিনি হয়তো ভিক্ষা করেন। মহিলার হাতের ছাতাটা অনেকটাই চেনা লাগলো নুরের কাছে। এটা সে শুভ্রতার কাছে দেখেছে বেশ কয়েকবার। শুভ্রতাকে বললো,
ওটা তোর ছাতা না?
~কোনটা?
শুভ্রতার পাল্টা প্রশ্নে ভ্রু কুচকালো নুর। ওদের কথা শুনে উপমা, রিদিতা, রূপা আর তিলোত্তমাও জানালার বাইরে উকি দিলো।
~আরে হ্যা! ওটা তো শুভির ছাতা। (রিদিতা)
~কিরে এজন্যই ভিজে ভিজে এসেছিস নাকি? (উপমা)
~পৃথিবীতে একই রকম দেখতে অনেক ছাতাই আছে।
শুভ্রতার নির্লিপ্ত জবাবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সকলেই চেয়ে রইলো তার দিকে। গতবার শুভ্রতার ছাতায় মজা করে মার্কার দিয়ে বড় একটা স্মাইলি একে দিয়েছিল রূপা আর রিদিতা। শুভ্রতা হয়তো তা আর খুলে দেখেনি। ওই মহিলার হাতে থাকা ছাতাতেও ওদের আকা স্মাইলিটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নুর ও তার বন্ধুরা বুঝলো যে শুভ্রতা প্রতিবারের মতই সাহায্য করে স্বীকার করতে চাইছে না। নুর শুভ্রতার দিকে চেয়ে রইলো। এই মেয়েটা সাহায্য করেও কখনোই তার ক্রেডিট নিতে চায় না। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে “আমার ভালো লাগে না”। মানুষের সাহায্য তো তার বন্ধু মহলের সবাই ই কম বেশি করে তবে শুভ্রতার মতো অস্বীকার করে বসে না। শুভ্রতার মতো মানুষ সে আর দুটি দেখেছে কিনা তা আপাতত তার মনে পড়ছে না। মনে করার চেষ্টা করতেই তার মস্তিষ্ক যেনো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বললো “না নুর! এমন ধরনের মানুষ তুই আর দেখিসনি”।
~~~
চলবে~
(ভেবেছি লেখিকার মানে আমার নামটা পাল্টে দেবো। যেহেতু এটা ছদ্মনাম, এর আকিকাও হয়নি। তাই পাল্টে দিলে তেমন সমস্যা হবে না। তাই “শুভ্রতা আনজুম শিখা” নামটা ঠিক করেছি। সুন্দর না!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here