চিত্তদাহ #লেখিকা: শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ৩

#চিত্তদাহ
#লেখিকা: শুভ্রতা আনজুম শিখা

পর্ব ৩

🍂🍂🍂

বিকেলের সময়। মানুষজন একে একে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। সকলের চোখে মুখেই এক প্রকার ক্লান্তিভাব বিরাজ করছে। ভার্সিটির মাঠে বসে সবার যাওয়া দেখছে নুর। পাশেই বসে একে অপরকে খোঁচাখুঁচি করছে তিলোত্তমা আর শুভ্রতা। ছোটবেলায় স্কুলের বাথরুমে যাওয়ার সময় ভয় পেতো বলে যেমন সাথে কোনো বান্ধবীকে নিয়ে যেতো! আপাতত ঠিক তেমনটাই মনে হচ্ছে নুরের। বান্ধবীদের থেকে মনোযোগ সরিয়ে আবার বাদাম এর খোসা ছাড়াতে মনোযোগ দিলো সে।
~চল না রে দোস্ত দেখা করে আসি।
তিলোত্তমার একই কথায় প্রচন্ড বিরক্ত হলো শুভ্রতা। চোখ দিয়ে নুর কে ইশারা করলো যেনো সে তিলোত্তমাকে বুঝায়। ইশারা বুঝতে পেরেও সেদিকে কোনো ভাবান্তর না দেখিয়ে সে বাদাম মুখে পুরে নিলো। শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে নুরকে ধাক্কা দিতেই নুর ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
বাদাম খাবি নাকি?
শুভ্রতা রেগে বললো,
ফাইজলামি রাখ ঝাড়বাতি! রিদি, উপ আর রুপ তো চলে গেলো। তোরা দুটো আমাকে বসিয়ে রেখেছিস কেন?
~তিলো তো বললোই যে ওইদিন যাকে সাহায্য করেছি তার সাথে দেখা করতে যাবো। (নুর)
~তবে তোরা যা! আমাকে ঠেলছিস কেনো? (শুভ্রতা)
~তুইও চল। হেল্প তো আর আমরা একা করিনি। তুইও তো রক্ত দিয়ে সাহায্য করেছিস। (তিলোত্তমা)
~ঢঙ্গের খেতা বালিশ! সাহায্য তো উপ, রুপ আর রিদিও করেছে। ওদের আটকালি না কেন? এমনিতেও তোরা তো কত মানুষকে এই পর্যন্ত রক্তদান করেছিস। একজনের সাথেও তো জীবনে দেখা করতে যেতে দেখলাম না।
শুভ্রতার কথা শুনতেই চোখ মুখ কুচকালো নুর। তিলোত্তমা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।
~সবাইকে তো আর টেনে ধরে হসপিটালে নিয়ে যাইনি। এই প্রথম কারো সাহায্য করলাম। ওইদিন দেখলি না কেমন ক্ষেপে ছিল! তাই ওদের নিচ্ছি না। চল না শুভি দেখা করে আসি। (নুর)
নুরের কথায় আড় চোখে তাকালো শুভ্রতা। ঠোঁটে হাসি টেনে বললো,
হাসপাতালের কারো ওপর ক্রাশড?
শুভ্রতার কথায় নুর যেনো আকাশ থেকে পড়লো। চোখ বড় বড় করে বললো,
তওবা তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ! ছি! ছি! আমি অত্যন্ত ভদ্র একটা মেয়ে। আমি কোনো ছেলের ওপর নজর দেই না। আমি কেনো ক্রাশ খেতে যাবো!
শুভ্রতা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
ভদ্র না ছাই! আমি ড্যাম সিওর তুই ঐ বেচারাকে স্বপ্নে বিয়ে করে নিয়ে অলরেডী বাসর ঘরে ঢুকে গেছিস।
আবারো হু হা করে হেসে উঠলো। নুর শুভ্রতার পিঠে এক চর দিয়ে বললো,
তুই আসলেই একটা ফাজিল। চল না যাই!
শুভ্রতা হেসে মাথা দুলিয়ে সায় দিলো।
_____________________________

অনেকগুলো ফল আর নাস্তা নুরদের সামনে দিয়ে বসিয়ে রেখেছেন চিত্রা। ছেলের জীবন বাঁচিয়েছে তাই তিনি ওদের কাছে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। তিলোত্তমার হাত ধরে ধন্যবাদ দিতে দিতে সে ক্লান্ত না হলেও তার ধন্যবাদ বাণী শুনতে শুনতে আপাতত নুর আর শুভ্রতা বেশ হাপিয়ে উঠেছে। তাদের কথায় জানতে পারলো ওরা যাকে সাহায্য করেছে তার নাম ‘আমির মাহতাব’। আপাতত পারিবারিক ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি বাবার বিভিন্ন কাজে সাহায্য করছে সে। এটা মাহতাবের বড় ভাই আহনাফ চন্দ্র’র হাসপাতাল। চন্দ্র পেশায় একজন হার্ট সার্জন।
~এই ঝাড়বাতি! শহরে আর হাসপাতাল পাসনি?
~আমরা কি জানতাম নাকি এটা তার ভাই এর হাসপাতাল।
শুভ্রতা বিরক্তি নিয়ে নুরের দিকে তাকালো। ক্ষিপ্ত হয়ে ফিসফিস করে বললো,
~তোর কিছুই জানা লাগবে না। কাল ডাক্টার অরণ্যের ওপর ক্রাশ খেয়েছিস, এখন বসে নাস্তা খা।
শুভ্রতার কথা শুনে করুন চোখে তাকালো নুর। ওর দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই শুভ্রতা উঠে দাঁড়ালো। চিত্রা বাঁধা দিয়ে বললো,
সে কি? উঠে দাঁড়ালে কেনো? কিছুই তো খেলে না! হাসপাতাল দেখে তেমন কিছু করতে পারছি না। আমার বড় ছেলে শুনলে খুব রাগ করবে।
নুর শান্ত চোখে তার দিকে তাকালো। মানুষটা অত্যন্ত নম্র আর বিনয়ী মনের তা আর বুঝার বাকি নেই। আসার পর থেকে বেশ কয়েকবার শুনেছে তার বড় ছেলে এমন তেমন। বড় ছেলের গুন গান শুনতে শুনতে তার এবার মাথা ঘুরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। শুভ্রতার দিকে তাকাতেই সে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
আপনি ব্যস্ত হবেন না আন্টি। আমরা শুধু মাহতাব ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছি। নাস্তা এসবের কোনো দরকার নেই।
নুর আর তিলোত্তমার দিকে তাকাতেই তারা দ্রুত বেগে মাথা নেড়ে “হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক, ঠিক” বলে উঠলো।
~তার পরও একটু কিছু একটু মুখে দাও। মাত্রই তো এলে।
মাহতাবের কথায় তার দিকে চেয়ে নুর বললো,
আসলে আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে ভাইয়া। আজ যাই। আবার অন্য একদিন আসবো।
চিত্রার সম্মতি নিয়েই শুভ্রতা, নুর আর তিলোত্তমা সকলকে বিদায় জানিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে এলো। কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই দেখা মিললো কালকের সেই ছেলেটি অর্থাৎ মাহতাবের বড় ভাই চন্দ্রর সাথে। আজকে চন্দ্রর গায়েও সাদা এপ্রোন জড়ানো। চন্দ্রকে ওদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই শুভ্রতার মুখের হাসি উড়ে গেলো। শুভ্রতাদের কাছে এসে মুচকি হেসে চন্দ্র বললো,
চলে যাচ্ছেন নাকি আপনারা?
~হ্যাঁ, সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এখন না গেলে নির্ঘাত বাড়িতে বকা খাবো।
চন্দ্র শুভ্রতার দিকে একবার চেয়ে আবার মাটির দিকে দৃষ্টি রেখে কিছু একটা ভেবে বললো,
আচ্ছা, সাবধানে যাবেন। আল্লাহ হাফেজ।
নুর মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। শুভ্রতা নুরের সাথে হাঁটতে হাঁটতেই একবার পিছন ঘুরে চন্দ্রর দিকে তাকালো।
~কিরে চুপ কেনো?
নুরের কণ্ঠ কর্ণপাত হতেই শুভ্রতা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
মন ডা চাইতাছে দুইটা রে এক লাত্থি দিয়া চোখের সামনের তে বিদায় করি। কে বলেছিল এখানে আসতে!
~আমি আবার কি করলাম? তিলো ই তো জোর করছিল আসার জন্য।
নুরের কথা শেষ হতেই তিলোত্তমা নুরের পিঠে এক থাপ্পর মেরে বললো,
তুই নিজে আমাকে বলেছিলি যেনো আমি শুভিকে রাজি করাই। এখন আমার দোষ দেস কেন? পল্টিবাজ মহিলা!
তিলোত্তমার কথায় শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে নুরের দিকে চেয়ে বললো,
আমি বলছিলাম এই বেটি কারোর ওপর ক্রাশড্। আমি খেয়াল করছি এই বেটি রোগী মানে মাহতাব ভাইয়ের দিকে যতবার না তাকাইছে তার থেকেও বেশি এখানে এসে ডাক্টার অরণ্যের দিকে তাকাইছে।
নুরের গালে রক্তিম আভা দেখা দিলো। দ্রুত পায়ে যেতে যেতে বললো,
~বাজে বকা বন্ধ কর। জলদি চল আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
~লজ্জা লুকাতে পালাচ্ছে এখন। ওই ঝাড়বাতি! আমার ট্রিট চাই!
বলেই নুরের পেছনে দৌড় লাগলো শুভ্রতা। ওদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তিলোত্তমা। এ যুগে এসেও এমন বন্ধু পেয়ে বরাবরই ভাগ্যবানদের দলে নিজেকে খুজে পায় সে। সময়ের সাথে সাথে এই বন্ধুত্ত্ব না হারিয়ে যায়। মাঝে মাঝে এমন কথা ভাবনায় এলেও বুক কেপে উঠে তার।
~~~
চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here