ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর পর্ব ৫

#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-৫

পুতুলের ভয় আর কাঁপা কাপি দেখে সূর্য সেকেন্ড ফ্লোরেই পুতুলকে জাপটে ধরে নেমে যায়।অনেকক্ষণ হলো লিফট থেকে বের হলেও পুতুল এখনো তাকে জাপটে ধরে দাড়িয়ে আছে।
-“পুতুল! এই পিচ্চি! কী হয়েছে?এমন ভয় পাচ্ছো কেন? ”
সূর্যের কথায় পুতুল ফট করে চোখ তুলে তাকায়।সূর্য তার দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে আছে।আচ্ছা ছেলেটার চিন্তিত চোখটাও এতো সুন্দর কেন? পুতুলের হঠাৎই মনে হলো সূর্যের শুধু চোখই সুন্দর নই, ঠোঁট জোড়াও মারাত্মক মোহনীয়।
-” পুতুল আর ইউ ওকে? এমন ভয় পাচ্ছো কেন?
সূর্যের কথায় পুতুলের ধ্যান ভাঙে, চট করে সূর্যকে ছেড়ে একটু দূরে দাঁড়ায়।এতক্ষণ সে সূর্যের জ্যাকেট এর ভেতর দিয়ে দু’হাতে জাপটে ধরে ছিল সূর্যকে।ভেবেই লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে পুতুল।সূর্য পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” তোমার কি লিফটে ভয় লাগে?”
পুতুল মাথা নেড়ে হ্যা জানালো।সূর্য একটু রেগে বলল,
-” তাহলে আগে বলোনি কেন?
-“আমি তো বলতেই চেয়েছিলাম ভা…. না মানে ক্যাপ্টেন।”
পুতুলের কথায় সূর্য ফোঁত করে একটা নিশ্বাস নেয়।তারপর বলল,
-“ঠিক আছে। এক্সিলেটরে এ প্রবলেম নেই তো?”
পুতুল দ্রুত মাথা নেড়ে না জানালো।উত্তরে সূর্য পুতুলের হাত ধরে সামনে হাটা শুরু করে।

এক্সিলেটরে দাঁড়িয়ে পুতুলের মনে হলো সূর্যের হাত ধরা তাকে নিরাপদের আস্থা দিচ্ছে।মাম্মার সাথে থাকলে যেরকম নিরাপদ মনে হয়,এখনো ঠিক সেরকম অনুভব হচ্ছে।কেমন যেন অন্যরকম ভালো লাগছে।এরকম কেন হচ্ছে, তার কি ছেলেটাকে ভালো লাগছে? সিট, ইউ স্টুপিড কি ভাবছিস? ছিছিছি। মনে মনে নিজেকে আরো কিছু শক্ত কথা শোনালো পুতুল।

সূর্য প্রথমে পুতুলকে নিয়ে কিছু জামা কাপড় কিনলো।তারপর মোবাইল শপে গিয়ে নিজের পছন্দ মতো একটা ফোন কিনে পুতুলকে নিয়ে সোজা বের হয়ে আসে।পুতুলকে গাড়িতে বসিয়ে ব্যাগ গুলো ব্যাক সিটে রেখে নিজেও উঠে বসে।গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
-” তোমার বয়স কত?”
পুতুল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সূর্যের দিকে তাকায়, এই ছেলে টা হঠাৎ হঠাৎ এমন উদ্ভট প্রশ্ন করে কেন? পুতুল উত্তর না দেওয়ায় সূর্য আবার বলল,
-” কি হলো বলো।”
পুতুল ভ্রু কুঁচকে বলল,
– ” কেন?”
-” আমার প্রশ্নের উত্তর দাও আগে।” (ধমকে)
-“স সতেরো।”
-” হুম সতেরো বছর চার মাস ছয়দিন। আর মাত্র সাত মাস ছাব্বিশ দিন পরে তোমার বিয়ে দেওয়া যাবে।”
পুতুল অবাক হয়ে বলল,
-” মানে?”
পুতুলের কথায় সূর্য গাড়ি থামিয়ে কঠিন চোখে তাকিয়ে ধমকে বলল,
-” মানে আর আট মাস পরে তোমার বিয়ে, আর তুমি কিনা বাচ্চাদের মতো ফ্রক পড়ে ঘুরো,হুয়াই?”
পুতুল আরো অবাক হয়ে বলল,
– ” আ আআমার বিয়ে!! ”
-“হ্যা বিয়ে, আর যদি ফ্রক পড়ে লোকজনকে তোমার ফর্সা পা দেখিয়ে ঘুরো যতটুকু দেখাবে সেটুকু একদম কামড়ে দেবো।” পুতুলের দিকে ঝুকে বলল সূর্য।”
সূর্যের কথায় পুতুল কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে দ্রুত নিজের জামা টেনে পা ঢাকবার চেষ্টা করল।

ছন্দ বাসায় না থাকায় পুতুলের সময় কাটছে না।দুপুরে খেয়ে আর রুম থেকে বের হয়নি। একবার অবশ্য বড় আম্মুর কাছে যাওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল কিন্তু সূর্যের ভয়ে যায়নি।তার এই ড্রেস দেখে যদি আবার রেগে যায়।ড্রেসের কথা মনে হতেই সূর্যের দেওয়া ড্রেস গুলোর কথা মনে পড়ে।সূর্য তার জন্য একগাদা ড্রেস কিনে দিয়েছে সেগুলো তো দেখা হয়নি।যদিও সে নিতে চায়নি কিন্তু সূর্যের ধমকে নিয়েছে।সূর্য বলেছে এগুলো সে নই বড় আম্মু কিনে দিয়েছে তাই পুতুল আর না বলেনি।ড্রেস গুলো থেকে একটা সাদা থ্রি পিস পড়ে আয়নার সামনে দাড়ায়।বেশ সুন্দর লাগছে, ছেলেটার পছন্দ বেশ ভালো ভেবেই ফিক করে হেসে বিড়বিড় করে বলল,
-” ছেলে নয় ক্যাপ্টেন, রাগী ক্যাপ্টেন।”

অনেকক্ষণ হলো ডাইনিং এ বসে আছে সূর্য কিন্তু কারো আসার খবরই নেই। সকাল আর রাতে সবসময় সবাই একসাথে খাবার খেতে বসে।কিন্তু আজ কারো আসার নামই নেই।সূর্য বিরক্ত হয়ে কাজের মেয়ে টাকে ডাকলো,
-” স্বপ্না,,,,,,মা,টুকটুকি কোথায় রে?
-” সককলে নতুন আপা মনির ঘরে ভাইজান।”
-” কেন?”
-“জানিনা ভাইজান, তবে নতুন আপা মনির কিছু হইছে মনে হয়।”
স্বপ্নার কথা শুনে ফট করে উঠে দাড়ায় সূর্য।পুতুলের কি হয়েছে? ভেবেই দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে।ছোট বাবার রুমে ঢুকতেই দেখতে পায় বাবা ফোন হাতে নিয়ে অস্থির হয়ে হাটছেন আর কাউকে কল করছেন। আর পুতুল মায়ের কোলে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ যাবত কেঁদেছে চোখ মুখ ফুলে গেছে, নাকটা একদম লাল হয়ে গেছে।টুকটুকি তার পাশে কাঁদো কাঁদো হয়ে বসে আছে।
-” বাবা,,,,কী হয়েছে? কোনো সমস্যা? পুতুল কাঁদছে কেন?”
মি.মাহবুব ছেলের কথা শুনে একবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে আবার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” সকাল থেকে তোমার ছোট মায়ের ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।এদিকে পুতুলের খালামনি বা কারো সাথেই কন্টাক্ট করা যাচ্ছে না।”
সূর্য ডিভানে বসে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” এতে এখানে বসে কাঁদলে তুমি কী ছোট মায়ের খোঁজ পেয়ে যাবে?”
প্রতিত্তোরে পুতুল আগের মতোই কাঁদতে থাকলো।মিসেস মধুমিতা রাগী স্বরে বললেন,
-” অবাক,,,,,,মেয়েটা কাঁদছে আর তুমি ওর সাথে রসিকতা করছো?”
-” মা ওকে বলো ওর কোনো ফ্রেন্ড বা প্রতিবেশিকে ফোন দিতে।তাহলেই তো জানতে পারে ছোট মা কোথায়।”
মিসেস মধুমিতা পুতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-” দিয়েছিল তো, তারপর থেকেই মেয়ে টা একভাবে কাঁদছে।কি বললো কিছু বলছে না, শুধু কাঁদছে। এদিকে তোর বাবাও তো ওই নাম্বার টাই কল দিচ্ছে কিন্তু কেউ তুলছে না।”

সূর্য ভ্রু কুঁচকে একবার মায়ের দিকে আরেক বার পুতুলের দিকে তাকিয়ে ফোঁত করে একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ায়।বিছানার কাছে এসে পট করে পুতুলকে সোজা করে বসায়।পুতুল তার দিকে টলটলে চোখে তাকিয়ে আছে।উফফ এই মেয়ে এত্তো কিউট করে কাঁদে কেন? ভেবেই মাথাটা একটু ঝাড়ি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বেশ রেগে বলল,
-” এই মেয়ে বলো কী হয়েছে?এভাবে কাঁদছো কেন?”
সূর্যের ধমকে পুতুল হেঁচকি তুলে বলল,
-” ওই মা..মাফিয়া টা মাম্মাকে আট..আটকে রেখেছে।” বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে পুতুল।সূর্য ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” মাফিয়া!,,,,কোন মাফিয়া?”
উত্তরে পুতুল দ্বিগুণ ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে।সূর্য এবার ভীষণ জোরে ধমক দিয়ে বলল,
-” চুপ, একদম চুপ। কান্না বন্ধ করে বলো কি হয়েছে?”
সূর্যের ধমকে কেঁপে উঠে পুতুল।মি. এন্ড মিসেস মাহবুব একসাথে বলে উঠেন,
-” অবাক কি হচ্ছে? ওকে ধমকাচ্ছো কেন?”
বাবা- মায়ের কথা শুনে সূর্য চট করে পুতুলকে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

চলবে
নেক্সট অবশ্যই পাবেন।মাঝে মধ্যে বাদ যেতে পারে কিন্তু গল্প শেষ হবার আগ পর্যন্ত নেক্সট অবশ্যই পাবেন রিডার্😒।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here