টুকরো স্মৃতির অতলে পর্ব -০৯

#টুকরো_স্মৃতির_অতলে❤
#পর্ব_০৯
লেখনীতেঃআহানিতা

ভার্সিটি ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি আর মেঘা। মাঠে তখন চকচকে রোদের আভা।আর সেই রোদের উত্তাপেই ঘেমে একাকার হয়ে সামনে এসে দাঁড়াল রায়হান।আমি আর মেঘা ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকাতেই ও বলে উঠল দ্রুত,

‘ দোস্ত উঠ উঠ।এক জায়গায় যেতে হবে।প্লিজ।’

আমি আর মেঘা থম মেরে বসে রইলাম।ওর দশা দেখে আমি বলে উঠলাম,

‘ এত তাড়া নিয়ে বলছিস যেন হাসপাতালে গিয়ে কোন মুমূর্ষ রোগীকে রক্ত দিয়ে আসতে হবে?’

‘ তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।চল না দোস্ত।’

আমি সরু চোখে তাকালাম। মেঘা কপাল কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

‘ আহির কাছে? ‘

রায়হান অসহায় চোখে তাকাল।তারপরই বলল,

‘হু,প্লিজ।বন্ধুর জন্য এটুকু করতে পারবি না তোরা?কি স্বার্থপর রে!’

আমি আর মেঘা হাসলাম।তারপর দুজনই একসাথে বলে উঠলাম,

‘ কিন্তু আমরা গিয়ে ওখানে কি করব?’

‘ কিছুই করতে হবে নাহ।জাস্ট যাবি।কি হল। যাবি না?’

আর কোন উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন হলো নাহ।উঠে দাঁড়িয়ে ছুটতে হলো ওর পিঁছু পিঁছু।তারপর রিক্সায় চেপে আহিদের বাসার সামনে এসেই থমকে গেলাম।ওখানে তো নিশ্চিত অর্কভাই থাকবে। উনার সামনে পরে গেলে?আমি শুকনো ঢোক গিলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম।মেঘা কানের সামনে হাজার বকবক করলে ও আমার চিন্তা কেবল ঐ এক জায়গায়।অর্কভাইয়ের চোখের সামনে কোনভাবে পড়া যাবে নাহ।কোনভাবেই না।সেই চিন্তায় জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে দরজান সামনে যেতেই দরজা খুলল আহি।আহির গায়ের রং ধবধবে ফর্সা।তার উপর খোলা চুল।বেশ সুন্দরই লাগছিল।রায়হান কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ও রায়হানকে উদ্দেশ্য করে চটফট বলে উঠল,

‘ দেখুন, আপনি যে বিষয়ে কথা বলতে এসেছেন সেই বিষয় নিয়ে আমার বাসার এক কিলোমিটারের মধ্যেও কোন কথা বলবেন না বলে দিচ্ছি।তাহলে কিন্তু ভালো হবে না একদম।’

রায়হানের মুখ এবার চুপসে গেল।বেচারা বেশ ভালোই জব্দ হয়েছে দেখা যাচ্ছে।আমি আর মেঘা তা দেখেই হেসে উঠলাম।পেছন থেকে আন্টি এগিয়ে আসতে আসতেই বলে উঠল,

‘ ওমাহ।মেহুল? তুই?হঠাৎ কি মনে করে আসলি মা?’

আন্টির প্রশ্নের উত্তরে আমি কিছু বলার আগেই আহি বলে উঠল,

‘ ভাইয়া কোথায়?ভাইয়াকে খুঁজতে এসেছে।এটাও বুঝো নাহ তুমি আম্মু।কি যে করি তোমায় নিয়ে।’

আমি চোখ বড়বড় করে তাকালাম।আহি কি মিথ্যা বলেরে!এরা ভাই, বোন, বাবা সবাই দেখি একদলের সদস্য।কি সাংঘাতিক রে।আহি আমার দিকে ফিরেই চোখ টিপল।মুচকি হেসে বলল,

‘ ভেতরে এসো।ভাইয়া শাওয়ার নিচ্ছে। বেরিয়ে দেখা করবে।এখন বসো।’

তার পরপর আন্টিও বলল,

‘ এতদিন পর আসলি , আয় বস মা।তোকে অনেকদিন দেখিনি।’

আমি পা বাড়ানোর আগেই মেঘা পা বাড়িয়ে ডুকে গেল।রায়হান ইশারায় বাই বলে চলে গেল হতাশ মন নিয়ে।আমি সেদিকে একবার তাকিয়ে পা বাড়ালাম অর্কভাইদের বাসায়।আন্টিকে সালাম দিয়ে সোফায় বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম।বেশ কয়েকমিনিটি বসে আহি, মেঘার সাথে বকবক করার মধ্যেই হঠাৎ পেঁছন থেকে কেউ বলে উঠল,

‘ আম্মু আজকে দুপুরে বাসায় খাব।অফিসে যাব নাহ।’

আকস্মিক সেই কন্ঠ কানে আসতেই আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।অতি কষ্টে তাকে দেখার লোভ সামলে পেছন না ফিরে সামনে সেভাবেই তাকিয়ে রইলাম।তবে তার কন্ঠ শুনেই অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে।কিসের আনন্দ জানা নেই।আমি সেই আনন্দে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেললাম।তার পর পরই মেঘার হাত ধরে ফিসফিসিয়ে বললাম,

‘ মেঘা, চল।চলে যাই।যে কাজের জন্য এসেছিলি সেই কাজ তো হয় নি।এখন তাহলে চল?’

মেঘা আমার কথায় কেমন যেন বিরক্তি প্রকাশ করল।আমি চুপচাপ সেভাবেই বসে রইলাম।তার পরপরই আন্টি আমাদের সামনে হাজির করল নাস্তার ট্রে।আমি আগেভাগেই বলে উঠলাম,

‘ আন্টি ক্যান্টিনে খেয়ে মাত্রই আসলাম।পেট একেবারেই ভর্তি।’

উনি কথাটাকে কানে না নিয়েই বললেন,

‘ অতো কিছু তো জানি নাহ।খেতে হবে।’

আমি অসহায় চোখে তাকালাম।উনি আবারও পিঁছু হেঁটে কিচেনে গেলেন।মেঘাকে খেতে ইশারা করেই উঠে দাঁড়ালাম।এভাবে কি বসে থাকা যায়? উফস!সম্ভব নাহ।ছোট ছোট পা ফেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলাম।আহি মৃদু হেসেই বলল,

‘ মেহুল আপু?তোমার জন্য একটা গিফ্ট আছে আমার রুমে। দেখে আসো।’

আমি সরু চোখে তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়লাম,

‘ কিসের গিফ্ট?’

‘ কি জানি,ভাইয়ার দেওয়া গিফ্ট।আমার রুমে বিছানার এক কোণে আছে। দেখো গিয়ে পেয়ে যাবে।’

‘ মানে?’

আহি কিছুটা বিরক্ত নিয়েই বলল,

‘ সবকিছুতে এমন মানে মানে করো কেন তুমি? যাও গিয়ে দেখো।’

আমি ওর দিকে ছোটছোট চোখ করে তাকালাম।তারপর শুকনো ঢোক গিলেই বললাম,

‘ গিফ্টের দরকার নেই আমার। মেঘা তোর হয়েছে?যেতে হবে তো।’

আহি এবার ঠাই উঠে দাঁড়াল।আমার হাত ধরে টানতে টানতে ওর রুমের দিকে নিয়ে যেতে যেতেই বলল,

‘ তুমি নাহ, একদম ত্যাড়া মেহুল আপু।কত সুন্দর করে বললাম।রাজি হলে নাহ তো।এখন জোরে করেই গিফ্ট দিব তোমায়।আচ্ছা আমায় বলো তো,গিফ্ট কি কখনো জোর করে দেয়?কি একটা বিচ্ছিরি কান্ড।’

আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম কেবল।আহি ওর রুমে নিয়ে গিয়েই তড়িগড়ি করে একটা গিফ্টের প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়েই বলল,

‘ এটাই।তুমি এসে নিলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো আপু?যায় হোক।এটার ভেতর কিছু আছে।মন দিয়ে দেখবে সেটা।ওকে?’

কথাটা বলেই ও রুম থেকে বেরিয়ে গেল।আমি গিফ্টের প্যাকেটটার উপর তীব্র অনীহা প্রকাশ করে ঠিক সেখানেই আবার রেখে দিলাম যেখানে ওটা ছিল।গিফ্ট দেওয়ার হলে উনি এসে কি দিতে পারতেন নাহ?আহিকে দিয়ে এত আদিক্ষ্যাতা দেখানোর তো কোন মানেই হয় নাহ।কথাগুলো ভেবেই ছোট ছোট পা ফেলে পা বাড়ালাম।আহির রুমের পাশের রুম পাশ কাঁটিয়ে যাওয়ার আগেই আবারো সেই কন্ঠেই কিছু কথা কানে এল,

‘ দোস্ত!ইমিডিয়েটলি হসপিটাল যেতে হবে মনে হচ্ছেরে।নিঃশ্বাস যেন আমার বেরই হচ্ছে নাহ।হৃৎপিন্ডের চলাচল থেমে যাচ্ছে।হুটহাট যে কোন সময় মারা যাব আমি।’

আমি অবাক হয়ে পাশ ফিরে চাইলাম।পর্দার এক ফাঁকেই অর্কভাইয়ের খালি আর হালকা ভেজা বুক চোখে পড়ল প্রথমেই।কোমড়ে তোয়ালে পেঁছানো ছাড়া আর কিছুই নেই শরীরে।আমি শুকনো ঢোক গিললাম।উনাকে এভাবে কখনো দেখা হয় নি।ভেজা চুল থেকে টপাটপ পানি পড়ছে কপালে।মুখের খোচা দাঁড়ি গুলোও ভেজা।বুকের বা পাশটা এক হাত দিয়ে চেপে রেখেই কথা গুলো কাউকে বললেন উনি।আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম কেবল।উনি আবারও বললেন,

‘ এতদিন দূরে ছিল বেশ ছিল।এখন যে একেবারে কাছাকাছি।কি এক মুশকিল ভাই!’

আমি চোখ বড়বড় করে চাইলাম।উনাকে এতদিন পর হুট করে দেখেই খু্ব যে আনন্দ হচ্ছে নাহ তাই নয়।তবে সেই আনন্দের প্রকাশ ঘটাতেই বোধ হয় হৃৎপিন্ডটা এমন তীব্র গতিতে লাফাচ্ছে।কান পেতে উনার আর বাকি গুলো কথা গুলো শোনার জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলাম।হঠাৎ পর্দার ওপাশ থেকে বলে উঠলেন উনি,

‘ লুকিয়ে লুকিয়ে কথা শুনছিস?’

আমি কেঁপে উঠলাম উনার কথা শুনে। ধরা খেয়ে গেলাম অবশেষে?শুকনো ঢোক গিলেই কাঁপা কন্ঠে বললাম,

‘ ক্ ক্ কই নাহ তো আহির রুম থেকে যাচ্ছিলাম আ্ আর তখন্, তখ্ তখন্…’

উনি বাকিটা বলার সুযোগ না দিয়েই পর্দা সরালেন।আমার দিকে একনজর তাকিয়েই চোখ রাঙ্গিয়ে বললেন,

‘ আর তখন কি?’

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপরই একটা মিথ্যে বলে বসলাম,

‘ আপনার পর্দায় একটা প্রজাপতি ছিল।ওটা দেখতেই দাঁড়িয়েছিলাম।’

উনি ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকালেন।খাটের উপর থেকে শার্টটা নিয়ে পরতে পরতে এগিয়ে এসেই পর্দার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে পর্যবেক্ষন করলেন।ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে বললেন,

‘ এখন কোথায় তবে প্রজাপতিটা?’

আমি শুকঁনো ঢোক গিললাম। মিনমিনে চোখে এদিক সেদিক তাকিয়ে বা পাশে একটা জানালা দেখেই বলে উঠলাম,

‘ ঐ যে, ঐ যে জানালা দিয়ে বাইরে চলে গেল ওটা।’

উনি বাঁকা হেসে বললেন,

‘ আই নো দ্যাট, তুই মিথ্যে বলছিস।এবার সত্যিটা বল।কেন দাঁড়িয়েছিলি?’

আমি কপাল কুঁচকে অসহায় চোখে তাকিয়েই বললাম,

‘ এর জন্যই অর্কভাই।আর কোন কারণ নেই।সত্যিই!’

উনি আনমনে কিছু ভাবলেন।তারপরই আবারো বাঁকা হাসলেন।ফিসফিস করেই বললেন,

‘ ভালো টালো বেসে ফেলেছিস নাকি আমায়?’

এবার আরেক ধপা কেঁপে উঠলাম আমি।ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়।হাত পায়ে মৃদু কম্পন বইতেই গলা শক্ত করে বলে উঠলাম,

‘ কক্ষোনই নাহ।জীবনেও নাহ।’

উনি উল্টো প্রশ্ন ছুড়লেন,

‘ বাট ইউ নো হোয়াট মিস মেহুলতা?চোখজোড়া অন্য কথা বলছে তোর।’

আমি আর এক পা ও দাঁড়ালাম না ওখানে।দ্রুত পা ফেলে মেঘার সামনে এসেই বলে উঠলাম,

‘ মেঘা?হয়েছে তোর?প্লিজ চল।আমায় যেতে হবে।’

মেঘা ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়েই বলে উঠল,

‘ যাব মানে? কোথায় যাব?ইহান ও আসবে।ওর সাথে একসাথে বাসায় যাব।আন্টি লাঞ্চ করে যেতে বলেছে। ‘

আমি এবার রেগে তাকালাম ইচ্ছে করছে ওর চুলগুলো টেনে ছিড়ে নি।তবুও নিজেকে সংযত রেখেই বলে উঠলাম,

‘ ওকে!তাহলে তুই থাক।আমি আসছি। বাই।’

কথাটা বলেই কাঁধের ব্যাগটা ভালোভাবে কাঁধে নিয়ে পা বাড়িয়ে চলে যেতে নিতে লাগলেই কেউ বলে উঠল,

‘ আরেহ আরেহ, ভাবি এন্ড শালি সাহেবা।যাচ্ছেন কোথায় আপনি?’

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকলাম।ইহান ভাই।বলতে না বলতেই চলে আসল এত তাড়াতাড়ি?কি অদ্ভুত!উনার অফিস আর এখানের দূরত্ব কি দুই মিনিটের? দুই মিনিট বললেও ভুল।মেঘা আমাকে কথাটা বলেছে এক মিনিটও হয় নি।আর ইহান ভাই এসে হাজির হয়ে গেল মুহুর্তেই?আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকার মাঝেই উনি জুড়োজোড়া খুলে ভেতরে ডুকলেন।মুচকি হেসে বলে উঠলেন,

‘ এত তাড়া কিসের যাওয়ার আপনার?’

আমি উনার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বলে উঠলাম,

‘ আপনি এত তাড়াতাড়ি কিভাবে পৌঁছালেন ইহান ভাই?’

উনি হাসলেন। তারপর বললেন,

‘ কেন গাড়িতে করে।’

আমি ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে বললাম,

‘ আমরা এখানে আসলাম বিশ কি পঁচিশ মিনিট।এরমধ্যে আপনি এত ফার্স্ট চলে আসলেন?জানতেন আগে থেকে আমরা এখানে আসব?’

‘ বাহ!ট্যালেন্টেড ভাবি।’

‘ প্রশ্নের উত্তর তো দিলেন নাহ।’

উনি হালকা হেসেই বললেন,

‘ থাক ওটা না জানা।’

আমি অসহায় চাহনিতে তাকালাম।মেঘা তো এখন আরো যাবে না শিউর।আমি মিনমিনে চোখে তাকিয়ে আন্টির কাছে গেলাম উদ্দেশ্য সালাম দিয়ে, বিদায় জানিয়ে ফুস করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়া।কিন্তু তা হলো নাহ।আন্টি আমায় দেখেই বলে উঠলেন,

‘ শোন? দুপুরে খেয়ে যাবি।বুঝলি?তোর বাসায় বলে দিয়েছি তোর ফিরতে দেরি হবে।’

আম অসহায় চোখেই চেয়ে রইলাম। বললাম,

‘ কিন্তু আন্টি আমাকে… ‘

উনি আমার কথা শেষ না হওয়ার আগেই বলে উঠলেন,

‘ বড়দের কথা শুনতে হয় জানিস তো?যা গিয়ে চুপচাপ বসে থাক।বাসায় ভালো না লাগলে ছাদে গিয়ে ঘুরে আয়।কিন্তু আমি এক্ষুনি তোকে ছাড়ছি নাহ।’

আমি হতাশ হলাম।কিচেন থেকে বেরিয়ে এসেই ব্যাগটা রাখলাম সোফায়।তারপর পা বাড়ালাম ছাদের উদ্দেশ্যে।ওখানে গেলে অন্তত অর্কভাইয়ের থেকে দূরেই থাকা হবে।আমি মৃদু নিঃশ্বাস ফেলর একের পর এক সিঁড়ি গুনতে গুনতে উনাদের ছাদে পৌঁছালাম।দুপুরের উত্তপ্ত রোদ ছাদের পুরোটাই।ছাদের গাছগুলোও রোদের উত্তাপে কিছুটা নেতিয়ে পড়েছে।খসখসে ফ্লোরটা গরম হয়ে আছে।যেন পা ফেলা মাত্রই পায়ের পাতা পুড়ে যাবে।তবুও আমি পা রাখলাম ছাদের গরম খসখসে জমিনে।

.

বেশ অনেক্ষন ছাদে থাকার পরই হঠাৎ ঐ মনে হলো আমার পেঁছনে যেন কেউ আছে।কেউ যেন আমাকে পেছন থেকর দেখছে।এই সন্দেহে বার কয়েক পেছন ঘুরে তাকালেও আমি কাউকেই দেখতে পেলাম নাহ।ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে স্থির সেভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেই কেউ পেছনে এসে দাঁড়াল।এবার বুঝতে বাকি নেই এটা অর্কভাই।এতক্ষন কি উনার উপস্থিতিই টের পাচ্ছিলাম?মিনমিনে চোখে উনার দিকে তাকিয়েই বললাম,

‘ আপনি এখানে চলে আসলেন আবার?’

উনি বাঁকা হেসেই জবাব দিলেন,

‘ আমি তো নিজেকে সামলেই নিয়েছিলাম।এখন যখন তুই এসে দেখা দিলি তখন তো আর সামলানো যায় নাহ।’

আমি দ্বিধা ভরা চাহনিতে তাকিয়ে রইলাম।উনার কথার কিছু বুঝতে না পেরেই বললাম,

‘ মানে?কি বলছেন?বুঝলাম নাহ।’

উনি বুকে হাতজোড়া গুঁজে ছাদের রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালেন।তারপর গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘ কিছুই নাহ।’

আমি তার দিকে এক নজর তাকালাম কেবল।কালো রংয়ের চেইকের শার্ট আর টাইজার।ঘন চুলগুলো কিছুটা কপালে ঝুকেছে।মুখের খোচা দাঁড়িতে অপূর্বই বোধ হচ্ছিল উনাকে।এক নজরে উনাকে পর্যবেক্ষন করতেই মনে পড়ল রিহান ভাইয়ের কথাটা মনে পড়তেই প্রশ্ন ছুড়লাম,

‘ রিহান ভাইয়ের সাথে কি করেছেন?উনাকে এভাবে মেরেছেন কেন?হোয়াই?’

উনি হাসলেন।যেন আমার কথাটার মধ্যে কোন সিরিয়াসন্যাস ই নেই।হাসতে হাসতেই বলে উঠলেন,

‘ আমি মেরেছি?কে বলল?’

আমি শক্ত কন্ঠে বললাম,

‘ জানি আমি।বলুন কেন মেরেছেন উনাকে?এভাবে কেউ কাউকে মারে? হৃদয় বলে কিছু থাকলে এভাবে মারা যায় না কাউকে।’

‘ তোর কাছে তো আমি চিরকালই হৃদয়হীন মানুষই রইলাম। থাকলাম না হয় হৃদয়হীন মানুষ।তোর সেই ঘৃণা টুকু নিয়ে বিবেকহীন, হৃদয়হীন মানুষ হয়ে বাঁচলাম না হয়।ক্ষতি কি বল?’

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন।আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম কেবল।

#চলবে….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here