ডাকপাড়ি পর্ব -১৩+১৪

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_১৩
#আফনান_লারা
________
সারথির মুখে হাসি ফুটলো অর্কর কথা শুনে।ফারাজ সচরাচর মেয়েদের এড়িয়ে চলে।কিন্তু আজ এমন কি হলো যে একটা মেয়েকে সে কোলেই তুলে নিয়েছে।মনে আনন্দ লাগলো ওর।অর্ককে বললো সেই রুমে নিয়ে যেতে যেখানে ফারাজ গেছে।

ওদিকে ফারাজ পূর্ণতাকে রুমে এনে দুহাত ছেড়ে দিলো আর ওমনি পূর্ণতা শক্ত মেঝেতে চিটপটাং হয়ে পড়েছে।
শেষে কোমড়ে হাত দিয়ে রেগে- মেগে বললো,’আপনি একটা জঘন্য লোক!!’

‘ধন্যবাদ’

‘যার সাথে বিয়ে হবার স্বপ্ন দেখছেন, আমি বদদোয়া দিচ্ছি ওর সাথে আপনার বিয়ে হবেনা’

ফারাজ মুখ বাঁকিয়ে চলে গেছে,কিছুক্ষণ পর সারথি আসলো পূর্ণতার রুমে।দেয়ালে হাত রেখে হাসি মুখে বললো,’তোমার নাম বুঝি পূর্ণতা?’

পূর্ণতা মেঝেতে বসে হাত ঝেড়ে বালি ঝরাচ্ছিলো,সারথিকে দেখে হা করে চেয়ে রইলো।যেন ফারাজের কার্বন কপি।কি সুন্দর চেহারা।মনে হয় যেন ফারাজ দাঁড়িয়ে আছে।এত মিল!
পূর্ণতা কিছু বলছেনা দেখে সারথি আরেক পা এগিয়ে বলে,’আমি সারথি।ফারাজের বোন।বলতে পারো জমজ বোন।আমরা একই দিনে পৃথিবীতে এসেছি।ফারাজ আমার দুই মিনিট পরে এসেছে।তাই আমিই বড়।’

এটা বলে সারথি হাসলো।ওকে দেয়াল,চেয়ার,টেবিল ধরে হাঁটতে দেখে পূর্ণতার মুগ্ধ চোখ অন্য কথা বলে উঠলো।এই সুন্দর মেয়েটা কি চোখে দেখেনা?
সারথি নিজে নিজে বিছানা খুঁজে তাতে উঠে বসে বললো,’কতদিন হলো এসেছো?’

পূর্ণতা উঠে দাঁড়িয়ে খাটের স্ট্যান্ড জড়িয়ে ধরে বলে,’দুই দিন’

‘আমি এই বাড়িতে আসিনা দুই বছর।সব বদলে গেছে।আগে সোফা ছিল বাম পাশে,আর এবার এসে বুঝলাম ডান পাশে।উপরের তলায় উঠলে আগে সায়না চাচির রুম পড়তো।এখন পড়ে তোমার রুম।আরও কত কি যে বদলে গেছে’

‘আপনি এত বছর পর এলেন কেন?আপনি কোথায় থাকেন?’

‘আমি শ্বশুর বাড়িতে থাকি।এই তো সাভারে’

‘সাভারে?তাহলে তো কাছেই।তবে এত বছর পর কেন আসলেন?’

সারথি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কথা এড়িয়ে বলে,’আচ্ছা আমি দাদাজানের সাথে দেখা করে আসি বরং’

সারথি আবার দেয়াল ধরে ধরে চলে গেলো।পূর্ণতা কোমড়ে হাত দিয়ে ঘঁষে ঘঁষে রুম থেকে বেরিয়ে ফারাজকে খুঁজছে।ফারাজ তার রুমে বসে একটা চিঠি লিখছিল,তার অঙ্গীকারিণীকে।
অনেকক্ষণ যাবত উঁকি দিয়েও পূূর্ণতা বুঝলোনা চিঠিতে ফারাজ কি লিখছে।দেখে মনে হয় গভীর বার্তালাপ চলছে।লেখাগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না,কি মুশকিল!
ফারাজ চিঠিটার উপরে কলম দিয়ে চাপা দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলো।
পূর্ণতা এই সুযোগে পা টিপে টিপে কাছে এসে চিঠিটা হাতে নিছে।

“”””জানিনা কেন এমন করো আমার সাথে।আমার আর অপেক্ষা সহ্য হয়না।জলদি এসো,আর কতদিন এই যুবকের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেবে?তোমার জন্য তো কেবল অগ্নি পরীক্ষা টাই দেয়া বাকি।বললে সেটাও দিতে রাজি,তাও আমার এই মন নিয়ে আর ছলনা করোনা।বয়স হয়ে গেছে অনেক আগেই।একটা মানুষ চাই বিছানার বাম পাশটায়।মনের চাহিদা বলেও তো কিছু আছে?হাত ধরে ঘুমাবো কবেই বলেছিলাম।সেটা কি আর পূর্ণ হবেনা?’

এই টুকু পড়ে পূর্ণতার চোখ কপালে উঠে গেছে।এই ছেলে দেখি গভীর প্রেম করে।ওমা!কি সাংগাতিক!একেবারে শোবার কথা বলছে।চরিত্রহীন প্রেমিকপুরুষ!!ছেঃ!!’

‘কে চরিত্রহীন?’

ফারাজের কথা শুনে পূর্নতা চিঠিটা আগের জায়গায় রেখে পেছনে তাকালো ওর দিকে।তারপর তোতলাতে তোতলাতে বললো,’ঐ আসলে একটা ছেলের কথা বলছিলাম।আপনাকে বলছিনা’

‘আমি তো বলিনি আমাকে বলেছেন।তা আমার রুমে কি করছিলেন আপনি?’

‘ আপনার রুমে আসলে পৈশাচিক আনন্দ হয় আমার।মনে হয় এই এই রুমটা বিশুদ্ধতায় ঘেরা।সব পরিষ্কার’

‘থাক,আর প্রশংসা করতে হবেনা।আপনি এখন যেতে পারেন’

পূর্ণতা চুপচাপ চলে আসলো।বাইরে বের হয়ে দম ফেললো সবার আগে।
একটুর জন্য ধরা খেতো।ফারাজ যদি জানতো সে ঐ চিঠি গোটা পড়ে নিয়েছে সে, তাহলে আজ ঝাড়ির উপর ঝাড়ি খাওয়াতো ওকে।
———
সজীব নতুন ফোন কিনে সিম ঢুকাতেই উর্মির কল আসলো।এদিকে লেভেন ডিনার করতে যাবার জন্য বাড়াবাড়ি করছে।বাধ্য হয়ে উর্মির কলটা কেটে সে ওকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে।
উর্মি বারবার ফোন করছিল সারথির চলে যাবার খবর দেয়ার জন্য।সজীব তো এখনও জানেওনা সেটা।
এদিকে সজীবের মা তৈরি হয়ে সারথিদের বাসায় যাবার জন্য বেরিয়েও পড়েছেন।উর্মিকে রেখে গেছেন বাসায়।
আনাফ দুপুর থেকে সারথিকে বারান্দায় না দেখে ওর একটু চিন্তা হলো।মনে প্রশ্ন জাগলো সে কেন বারান্দায় আসেনি।পরে মনে হলো হয়ত ইচ্ছে করেই আসেনি।এসব ভাবছিল সে তখন উর্মিকে বারান্দায় দেখে।
সে ওর উড বির সাথে ফোনে কথা বলছে।

‘আপু শুনছেন?’

আনাফের কথা শুনে উর্মি কল হোল্ডে রেখে আনাফের দিকে তাকায়।আনাফ বলতে চাইলো সারথি কোথায়।পরে ভাবলো এই প্রশ্ন শুনে উর্মি যদি অন্য কিছু ভাবে।তাই আর কিছু না বলেই সে চলে আসলো ওখান থেকে।
উর্মির কাছে আনাফ ছেলেটাকে কেমন যেন অদ্ভুত লাগে।মনে হয় সবসময় কিছু একটা বলতে চায়,পরে ভাবনার সাথে যুদ্ধ করে আর কথাটা বলেনা।

উর্মির সাথে যার বিয়ে হবে আগামী মাসে, সেই ছেলেটা পেশায় একজন ডাক্তার।নাম জাবেদ।
সজীবের বন্ধু সে,সজীবের সাথে তারপরিচয় দীর্ঘ বারো বছর ধরে।সেই পরিচয় থেকেই উর্মিকে চেনা।উর্মিকে দেখা যেকোনো অনুষ্ঠানে।এমন করে দুজন দুজনকে পছন্দ করে ফেলে কিন্তু তখন ওর ইন্টার্ন চলছিল যখন সজীব মালেশিয়াতে চলে যায়।সাহস করে কথাটা সে বলতেও পারেনি। একদিন হঠাৎ ওরা দুজন বলার আগেই সজীব নিজ থেকে জাবেদের কাছে প্রস্তাবটা দেয় উর্মিকে বিয়ে করার।এ যেন মেঘ না চাইতেই জল।
জাবেদ রাজি হয়ে যায়।উর্মি তো রাজি আছেই।পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়েটা ঠিক হয় আগামী মাসের সতেরো তারিখে।উর্মির খুশি আর ধরেনা।তার প্রেমের কথা ভাইয়া জানলো ও না।এভাবে লাভ ম্যারেজ এরেঞ্জে পরিণত হবে কে জানতো।এটা একটা দারুণ ব্যাপার বটে।
——–
পূর্ণতা বাবার কাছে চিঠি আরেকটা লিখবে বলে নতুন কাগজ নিয়ে বিছানায় গোল হয়ে বসে পড়েছে।লিখতে লিখতে হঠাৎ ফারাজের চিঠির কথা মনে আসায় ব্যঙ্গ করে বললো,’আমার একজন চাই,বিছানার পাশে।হাত ধরবো!!হিহি!’

বাইরে থেকে কথাটা ফারাজ শুনে ফেলে।সে তখন পর্দা সরিয়ে বললো,’আপনি আমার লেখা চিঠিটা পড়েছেন?’

পূর্ণতা এত ভয় পেয়েছে যে হাতের কলমটা যেদিকে পেরেছে ছুঁড়ে ফেলে চুপ করে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে।ফারাজ আরেক কদম এগিয়ে এসে বললো,’আপনার স্বভাব খুব বাজে সেটা জানেন?’

‘জানি’

‘উঁকি দিয়ে কথা শোনা,ডাকবাক্সে হাত ঢুকিয়ে চিঠি বের করা,কারোর গোপন পত্র পড়া।আপনার মাঝে আর কি কি খারাপ আছে?’

‘আমি মানুষটাই খারাপ।একেবারে খারাপ দিয়ে পরিপূর্ণ বলে আমার নাম পূর্ণতা’

‘আপনি আজকের পর থেকে আমার থেকে পাঁচ হাত দূর ডিসটেন্স মেইন্টেন করে চলবেন।যদি আমি চার হাত কাছেও দেখি তবে আমার চেয়ে খারাপ আপনি নিজেকেও ভাববেননা’

ফারাজ চলে গেছে এরপর।পূর্ণতা যেন কথাটা মাথাতেই নেয়নি।আবারও বাবার কাছে চিঠি লেখাতে মন বসিয়েছে খাটের তলা থেকে কলমটা খুঁজে বের করে।
———
দাদাজান বাগানে গেছেন একটু বাতাস খেতে।ওখানে ধ্যানটাও ভাল হবে।সারথিকে মতিন বলেছে দাদাজান বাগানে, তাই মতিনকে সাথে নিয়ে বাগান অবধি এসে ওকে চলে যেতে বললো সে।তারপর ধীরে ধীরে হেঁটে কাছে এসে বললো,’দাদাজান??’

সারথির গলা শুনে দাদাজান যেন হারানো ধন ফিরে পেয়েছেন।চট করে ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকালেন তিনি।
সারথি হাত বাড়িয়ে দাদার হাত ধরার চেষ্টা করছিল,দাদা ওর হাত দুটো ধরে নিজের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বললেন,’আমার সারুর তবে আমার কথা মনে পড়লো?’

সারথির চোখ জুড়ে অশ্রুতে ঝলমল করছে।এই বাড়িতে যদি ওর সবচাইতে আপন বলে কেউ থেকে থাকে তবে সেটা দাদাজান।কারণ একমাত্র তিনিই সারথিকে বুঝতেন।বিয়েতে তিনি না করে দিয়েছিলেন কেবল সারথির মনের কথা ভেবে।কিন্তু মানিক আর সোনালী তার কথা শুনেনি।
দাদা নিজেও কাঁদছেন,বারবার করে বলছেন সারথি যেন না কাঁদে।

‘কিরে সারু,কাঁদিস কেন?সজীব সহ এসেছে কিনা সেটা বল’

‘নাহ,উনি বিদেশে’

‘তুই একা এলি?আর কেউ আসেনি?’

‘হ্যাঁ একা এসেছি।কেন?আমি একা আসলে সেটা দোষের?’

‘নাহ দোষের না।বোস এখানে। সজীবের কি খবর?কেমন আছে?দেশে আসবে কবে?’

সারথি সজীবকে নিয়ে কারোর সাথে কথা বলতে চাইছিল না,কিন্তু সে নিরুপায়। দাদাজান তো কিছুু না জানা অবধি ছাড়বেন না।
সারথি চুপ করে আছে দেখে দাদাজান ওর হাত আবার ধরে বলেন,’কিরে ভালো আছিস তো?মুখ শুকনো কেন?’
#ডাকপাড়ি
#পর্ব_১৪
#আফনান_লারা
________
সজীব ভেবেছিল আজকের দিনটা লেভেনকে সময় দেয়াতে ও খুশি হয়ে দিনশেষে চলে যাবে।কিন্তু নাহ,সজীবের ধারণা ছিল সম্পূর্ণ ভুল।লেভেন আজ পুরো দিন কাটিয়েছে তো কাটিয়েছে,এখন সে চায় সারা রাত সজীবের সাথে থাকতে।সজীব আর ও সন্ধ্যায় একটা পার্কে এসেছিল।এখন সেই পার্কের বাইরেই ওদের তর্কবিতর্ক চলছে।লেভেন চাইছে আজকের রাতটা সে সজীবের সাথে থাকবে।সজীবের ভালোবাসার উপহার হিসেবে সে রাতটাকে চায়।সজীব কিছুতেই মানছেনা।কথায় পেরে উঠতে না পেরে সজীব চুুপচাপ কারের বাইরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।লেভেন সজীবের হাতটা জড়িয়ে ধরে তাতে মাথা রেখে বলে,’একটা মেয়ে অসহায়ের মতন ভালবাসা ভিক্ষা চাইছে,আর তুমি বারবার সেটা ইগনর করছো সজীব?সেই মেয়েটা তিন বছর ধরে তোমায় ভালো বেসে এসেছে।এটার কি কোনো প্রতিদান হয়না?’

‘হয়।আমি বিয়ে করবো তোমায়।কিন্তু তোমার বাবা তো বিয়েটা মেনে নিচ্ছেনা’

‘বাবা একদিন না একদিন তো মেনে নেবেই।আমরা তো ম্যাচিউর।লিভ ইনে থাকলে কি সমস্যা সজীব?তোমার ওয়াইফকে তো ডিভোর্স দিবাই।তাহলে আমার সাথে থাকতে কি সমস্যা তোমার?’

‘আমি বিয়ের আগে তোমায় ছুঁতে চাইনা লেভেন!’

সজীবের মানা করা নিয়ে লেভেন কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেনা।সে কারে গিয়ে বসে পড়েছে আগেভাগে।সজীব আর কি করবে বাধ্য হয়ে সেও গাড়ীতে বসেছে।
———
ফারাজ এখনও জানেনা সারথি এসেছে বাসায়।সে চিঠিটা পুরো লিখে খামে ভরে ব্যাগে রেখে আসলো কাল পোস্ট করবে বলে।এরপর বের হলো বাইরে যাওয়ার জন্য,চা খেতে।বাড়ির চা তো বিষ।

পূর্ণতা চা খেতো দু বেলা।এখানে এসে তার চা খাওয়া উঠে গেছে।পানিই খেতে পারেনা ঠিকমত।আবার চা খাবে কি করে।মাথা ধরে সে রুমের ভেতরে -বাইরে পায়চারি করছিল চোখ বন্ধ করে।ওমন করতে করতে একটা সময় তার সাথে ফারাজের জোরেশোরে একটা ধাক্কা লেগে গেছে।ফারাজ বিরক্ত হলো কিন্তু কিছু বললোনা,চুপচাপ পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো তখন পূর্ণতা ওকে থামিয়ে বললো,’বাজারে যাচ্ছেন?’

‘যেখানেই যাই।আপনার তাতে কি?’

‘আহা বলুন না,শুনি’

‘দোকানে যাচ্ছি’

‘আমাকে এক কাপ চা খাওয়াবেন?

‘মগেরমুলুক পেয়েছেন?আপনি আমার বান্ধবী নন।হতে পারেন চোখের শত্রু।আপনাকে আমি চা কেন খাওয়াতে যাবো?’

‘আপনাকে আমি চায়ের দাম দিবো।প্লিজ প্লিজ’

‘জ্বী না,আল্লাহ হাফেজ’
————
আনাফের কিছু ভালো লাগছেনা। আগে কি সুন্দর সে বারান্দায় অথবা ছাদে আসলেই সারথির দেখা পেতো আর আজ সারা দিন ধরে ওর মুখও সে দেখেনি।ওমন একটা চেহারা না দেখলে ভাত হজম হয়?মেয়েটা কি বাসায় নেই?
হয়ত নেই।একবারও গলার আওয়াজ তো সে শুনলোনা।কোথায় যেতে পারে!
আনাফ গালে হাত রেখে ভাবছিল সারথির কথা, সেসময় আবার দেখলো উর্মিকে।সে বারান্দায় বসে বসে গান শুনছে।আনাফ হাত নাড়িয়ে ইশারা করলো ওকে।আনাফকে দেখে উর্মি ইয়ারফোন খুলে কাছে এসে বললো,’আপনার কি হয়েছে বলুন তো?সবসময় কিছু একটা বলতে চান কিন্তু বলেন না।আজকে বলতেই হবে আপনাকে নাহলে আমি ছাড়ছিনা’

আনাফ হাত ভাঁজ করে এদিক ওদিক তাকালো।ভেতরে ভেতরে ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে।উর্মিকে দেখলে কেমন যেন ভয় ভয় লাগে।মনে হয় ও কিছু বললেই উর্মি দুষ্টু ননদের মতন করে ভেজাল সৃষ্টি করবে।এই ভয়ে সে এতদিন কিছু করেওনি,বলেওনি।এখন তো বলতেই হয়।
মাথা চুলকে দম ফেলে শেষে আনাফ বললো,’সারথি আপুকে দেখছিনা,জানেন কোথায় উনি?আদৌ বাসায় আছেন?’

‘নাহ,ভাবী তো তার বাবার বাড়ি গেছে।আম্মু গেছে ভাবীকে নিয়ে আসতে,আমি যাইনি।জার্নি সহ্য হয়না আমার’

‘ওহ।হঠাৎ গেলো?ওই বাড়ির সবাই ভাল আছে তো?একা গেছেন নাকি উনি?’

‘ড্রাইভার দিয়ে এসেছে।ভাবী তো একা যেতে পারতোনা’

‘ওহ আচ্ছা’

আনাফ আর কি বলবে।কি বললে উর্মি সন্দেহ করবেনা ওসব ভেবেচিন্তে আবার বললো,’সজীব ভাইয়া কবে আসবে জানেন?’

‘আমার বিয়েতে আসতে পারে,সিওর না।আপনি কিন্তু আমার বিয়েতে আসবেন,সারথি ভাবীর সাথে।আপনাদের পুরো পরিবারের দাওয়াত’

‘হঠাৎ আমায় দাওয়াত দিলেন?’

উর্মি ফিক করে হেসে ফেললো।হাসি থামিয়ে বললো,’ভাইয়া আপনি ভাবছেন আপনাকে আমি চিনি নাই?আমি কিন্তু আপনাকে চিনেছি।জাবেদের সাথে একই মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেছেন,আপনাকে চিনবোনা?অনেকবার দেখেছি ছবিতে।হয়ত আপনি আমায় দেখেননি কারণ আমি কখনও ওর কলেজে যেতাম না।কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।জাবেদের আশেপাশে সর্বদা আপনাকে দেখতাম।তা জাবেদ আপনাকে দাওয়াত দেয়নি?’

‘ওহ মাই গড! আপনি জাবেদের হবু বউ?আমাকে সে দাওয়াত করেছে,ইভেন কার্ড ও পাঠিয়েছে।কিন্তু আপনি সেই উর্মি ওটা আমি জানতাম না’

উর্মি হাসতে হাসতে বললো,’আমি দেখতে চাইছিলাম আপনি ঠিক কতদিন না চিনে থাকেন। আমি কিন্তু ১মদিনই আপনাকে চিনেছি’

আনাফ জিভে কামড় দিয়ে হাসছে।ভীষণ লজ্জা পেলো সে।তার ক্লাসমেটের উড বি বউয়ের ভাবীকে কিনা সে দেখার আগ্রহ দেখাচ্ছে।উর্মি কি ভাবছে কে জানে।
———-
সারথি দাদাজানকে সজীবের বিষয় নিয়ে কিছু বলেনি।শুধু বলেছে হালকা- পাতলা ঝগড়া হয়েছে এর বেশি কিছুইনা।সেসময়ে সজীবের মা এসে পড়লেন ওখানে।তিনি রাগ দেখালেন কেন সারথি কাউকে কিছু না জানিয়ে একা একা চলে এসেছে। পরে বেয়াইনদের খাতিরে তার রাগটা চাপা পড়ে গেলো।
————-
ফারাজ দোকানে বসে চা খাচ্ছিল।হঠাৎ মা ফোন দিয়ে বললো আসার পথে দুইটা মুরগী নিয়ে আসতে,সারথির শাশুড়ি এসেছেন রাতের জন্য রান্না করবে।মতিনকে ব্যাগ সহ পাঠিয়েছেন ওদিকে।
ফারাজ ভাবছে সারথি এসেছে কিনা।মা বললো কবেই এসেছে।ফারাজ যেন আকাশ থেকে পড়লো।সারথি এসেছে আর সে জানেনা।কোথায় ছিল!
এগুলোই ভাবছিল ফারাজ সেসময়ে পূর্ণতা চায়ের কাপ হাতে ওর পাশে বসেছে।
ওকে দেখে ফারাজের এত রাগ হলো কিন্তু সব সময়কার মতন রাগটা সে দমিয়ে রাখলো।পূর্ণতা বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসছে আর চা খাচ্ছে।

ফারাজ ও সবে চা খাওয়া শুরু করেছিল নাহলে শেষের দিকে হলে কাপটা রেখে চলে যেতো।

‘ আচ্ছা আপনি যাকে ভালবাসেন সে কোথায় থাকে?’

‘আপনাকে বলবো কেন?’

‘বলুন না।আমি তো নাম শুনে খেয়ে ফেলবোনা’

‘আপনাকে বলতে চাইছি না।সরে বসুন।গায়ে লেগে বসছেন কেন?এটা কেমন চরিত্র?’

‘এই পাশে একজন অপরিচিত পুরুষ বসে আছে।আর সেখানে আপনি আমার চেনা পুরুষ।আপনার সাথে ঘেঁষে বসবোনা তো কি পরপুরুষের সাথে ঘেঁষে বসবো?’

‘আমি আপনার চেনা হলাম কবে?’

‘সেইদিন থেকে যেদিন আমায় ঠিকানা বলে দিয়েছিলেন ডাকবাক্সের’

‘নাহ,আমি আপনার চেনা নই।অচেনা আমি।মানুষ একসাথে বছরের পর বছর থেকেও অচেনা রয়ে যায়।আর আপনি তো কদিনের চেনা বলছেন।’

‘কেউ বছরের পর বছর একসাথে থেকেও একে অপরকে চিনতে পারেনা আর কেউ চিনলে একদিনেই চিনে ফেলতে পারে।কি অদ্ভুত আমরা তাইনা?’

‘আমি ভাল।আপনি অদ্ভুত’
———
সজীব তার রুমে এসে নতুন ফোনে চার্জ দিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।লেভেন তার ব্যাগ থেকে একটা ড্রেস বের করে সেটা পরে ফেললো ঝট করে।আয়নার সামনে এসে মুচকি হাসছে এখন।তখন কাজের একজন লোক এসে জানতে চাইলো ওরা কি খাবে।
লেভেন লোকটাকে বললো ওয়াইনের ব্যবস্থা করতে।তারপর সে সজীবের রুমের আলো নিভিয়ে দিলো সাথে সাথে।ঐ লোকটাকে দিয়ে কয়েকটা মোমবাতি এনে জ্বালিয়ে ফেললো গোটা রুম জুড়ে।
সজীব শাওয়ারটা সেরে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই লেভেন পেছনে দাঁড়িয়ে ওর চোখ বেঁধে দিলো শক্ত করে।

‘লেভেন চোখ বাঁধলে কেন?’

‘সারপ্রাইজ!! ‘

সজীব বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলতে যেতেই লেভেন ওর হাত দুটো ধরে বেঁধে ফেললো সাথে সাথে।সজীব এবার রেগে গিয়ে বললো,’এসব কি লেভেন??তুমি কিন্তু অতিরিক্ত করছো।আমি বলছি বিয়ের আগে এসব হবেনা তাও বাড়াবাড়ি করতেছো একের পর এক।তুমি এই মূহুর্তে চলে যাবে। হাত খুলো আমার’
————-
সারথি সোফার এক কোণায় বসে আছে।সজীবের মা ওর কাছে জানতে চাইছেন তার এভাবে চলে আসার মানে কি।সারথি উত্তরে কিছুই বলছেনা।শেষে বাধ্য হয়ে তিনি ওর কাছে বসে সজীবকে কল করেছেন।
——
সজীবকে সমুদ্রের কাছে নিয়ে এসেছে লেভেন।সজীব হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল তখনই লেভেন ওর দুপায়ের উপর ভর করে দাঁড়ালো।এরপর ওর গলায় হাত রেখে মুখটা এগিয়ে এনে সজীবের ঠোঁট স্পর্শ করবে সেসময় সজীবের বাসার কাজের লোক একজন ছুটে এসে বললো সজীবের মায়ের কল এসেছে।সজীব আর লেভেন দুজনেই অপ্রস্তুত ছিল।লেভেন বাধ্য হয়ে সজীবের হাত খুলে দিয়েছে।সজীব যেতে যেতে চোখের বাঁধন খুলে ফেলে।দ্রুত ফোন রিসিভ করেছে রুমে এসে।

‘কিরে তোর ফোন সারাদিন বন্ধ ছিল কেন?’

‘ব্যস্ত ছিলাম।কি হয়েছে বলো।সারথি কোথায়?’

‘সারথি কোথায়?আাদৌ তোর কিছু যায় আসে?’

‘এভাবে বলছো কেন মা?’

‘তুই জানিস? সারথি আজ একা একা ওর বাবার বাসায় চলে এসেছিল কাউকে কিছু না বলে।নিশ্চয় তোর সাথে ওর কোনো ঝামেলা হয়েছে।আমাকে তো বলছেইনা।তুই বল কি হয়েছে?’

সজীব লেভেনকে রেখে দূরে সরে গেলো।মাকে বললো ফোনটা সারথিকে দিতে।
মা ফোন সারথির হাতে দিয়ে চলো গেছেন।

সারথি ফোন কানে ধরে চুপ করে আছে।

‘সারথি আই এম সরি।আমি আসলে বিষয়টা তোমায় কি করে বলবো তা বুঝতেছিলাম না।তোমায় আমি নিজে পছন্দ করেছি এটা ঠিক কিন্তু আসলে আমি বাধ্য হয়ে করেছিলাম।আমি ভালবাসতাম অন্য কাউকে।বাবা মা ওকে একসেপ্ট করছিল না।তারা তোমায় পছন্দ করে আমায় মত জানার অপেক্ষায় ছিলেন।সারথি শুনছো?’

‘উর্মি আপুর বিয়েতে আসবেন?’

‘জানিনা’

‘চিন্তা করবেন না।আমি থাকবোনা বিয়েতে।আপনি আপনার ভালবাসার মানুষটাকে নিয়ে আসবেন সাথে।মায়ের সাথে দেখা করিয়ে দিবেন।কতদিন আর না মেনে থাকবেন তিনি ‘

চলবে♥
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here