তবুও_তুমি💖 পর্ব ৪

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৪
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
–দাদুভাই তোমাদের আজ সারা দিনে খোঁজ পাই নি কই ছিলা?
আজিজ চৌধুরী এর প্রশ্নে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল রোদ।
দাদা জান কে কখনো মিথ্যা বলে নি রোদ বুঝতে শিখছে যখন থেকে তখন থেকে
কিন্তু আজ সেই রোদ তার দাদা জানকে কি পরিমাণ মিথ্যা বলছে শুধু মাত্র ছোঁয়ার জন্য।
রোদ মলিন হেসে বলে,
–তোমার নাতি বউ আবদার করেছিল একটু লং ড্রাইভে যাবার।
তাই নিয়ে গেলাম আর কি।
রোদের কথায় দাদা জান হেসে দিলেন,
–তোর দাদিকে নিয়েও আমি প্রচুর ঘুরতাম জানিস।
তোদের তো ৫ বছরের সম্পর্ক। কিন্তু আমার আর তোর দাদির ছিল ৪ বছরের সম্পর্ক।
বিয়ে পর আমরা প্রচুর ঘুরেছি।
তোর বাবা হবার পর থেকে ঘুরাঘুরি কিছুটা কমে গেলেও তার আগে আমরা ভিশন ঘুরতাম।
তোদের দাদি মায়ের কাছে আমি কখনো পুরোন হই নি।
ও আমাকে খুব ভালোবাসতো এতোটাই ভালোবাসতো যে কখনো কোন ছেলের দিকে ও তাকাতো পর্যন্ত না।
কারন ও জানতো আমাদের জীবন এখন একটা সুতোয় গাঁথা।
দাদা জানের কথা শুনে রোদের বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে ওঠে।
রোদ ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
ছোঁয়াকে ও যে রোদ ঠিক এমন করেই চেয়েছিল।
কিন্তু ভাগ্য তা হতে দিলো না।
রোদ খাবার মাঝ পথে বন্ধ করে উঠে গেল।
ছোঁয়া আগের মতো বসে আছে,
–কি রে রোদ তুই খাবার ছেড়ে উঠছিস কেন?
–দাদা জান খাবার হয়ে গেছে।
রোদ উপরে চলে আসে,
আমি দাদা জনের পাশে বসে চুপচাপ চামচ নাড়াচ্ছি তখন দাদা জান বলে উঠলেন,
–ছোঁয়া তোমাদের মধ্যে কি কিছু হয়েছে?
–না দাদা জান (মাথা নিচু করে)
–কিছু তো হয়েছে ছোঁয়া আমার নাতি এতো নিরব কখনো থাকে না।
ওকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে আমার তুমি খোঁজ লাগাও ।
দাদা জান কথাটা বলে উঠে গেল।
আমিও চামচ রেখে উঠে গেলাম।
রুমের বাইরে আসতে শুনতে পাই রোদের কন্ঠ ও কাউকে মারার কথা বলছে,
আমি থমকে দাঁড়ায়,
–ওকে পুতে দেও ওর লাশ টা যেন না দেখা যায়।
–হে আল্লাহ বর্ষনের কথা বলছে না তো।
আমি দৌড়ে রুমে যাই।
–আপনি কি বলছেন আমাকে মিথ্যা বলেছেন আপনি বর্ষন কে বাঁচিয়ে রাখেন নি মেরেছেন ওকে।
আমি উত্তেজিত হয়ে এক ভাবে কথা গুলো বললাম,
রোদের চোখ লাল হয়ে গেল।। প্রচন্ড রেগে গেছে ও।।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
ভয়ে ভয়ে পেছনে সরছি আর ও এগোচ্ছে।
একটা সময় দেয়ালে থেমে গেলাম।
ওর চোখ দিয়ে বোধহয় ও আমাকে খেয়ে নিবে এমন করে তাকিয়ে আছে।
ও আমার গলাটা আবার চেপে ধরে শক্ত করে,
–তোকে আমি বলেছি তোর আসিক কে আমি ছেড়ে দিয়েছি তবে তুই বার বার ওর নাম আমার সামনে কেন নিচ্ছিস।
কেন?(চিৎকার করে)
আমাকে খুব শক্ত করে ধরেছে এতোটাই শক্ত করে যে আমার শ্বাস সত্যি বন্ধ হয়ে গোছে।
হাত পা ছোটাছুটি ও।
ও মনো হলো আরও শক্ত করে চেপে ধরে কিছু বলছে,
কিন্তু আফসোস সে কথা শোনা সৌভাগ্য আমার হলো না।
তার আগেই চোখ দুটো বুজে এলো।
ছোঁয়াকে ওভাবে পড়তে দেখে রোদের খেয়াল আসে।
ও কি করছিল এতো সময়,
ছোঁয়া রোদের বুকে ডলে পড়ে,
–ছোঁয়া এই ছোঁয়া তুমি তাকাও কি হয়েছে তোমার।।
রোদ ছোঁয়ার মুখে আলতো হাতে চড় দিচ্ছিল। কিন্তু ছোঁয়া উঠে নি।
রোদ ছোঁয়া কে শুইয়ে ডক্টর কে ফোন দেয়।।
ওদের দাদা তখন ঘুম বাসার কোন খবর তার কাছে নেই।।
ডক্টর এসে বলে,
— মি.চৌধুরী ইনি আপনার কে হন।
–আমার স্ত্রী।
–কি বলেন আপনার স্ত্রী
–মানে কি!!
–ওনাকে কেউ খুব শক্ত করে গলা চেপে ধরেছে যার কারনে দম বন্ধ হয়ে সেন্স হারিয়েছে আর কিছু সময় হলে মারাই যেতেন।
ওনার প্যানিক এটাক হয়।
ওনার পানিতে ফোবিয়া আছে। + উনি চিৎকার করা কথা শুনতে পারেন না ওনার হার্ট দুর্বল।
ওনাকে দেখে শুনে রাখবেন নাহলে এ দুনিয়াতে বেশি দিন সময়ের জন্য থাকবে না।
আপনার স্ত্রী আপনাকে খেলাল রাখতে হবে।।
ঔষধ দিয়েছে ।
আমি এখন আসছি।
ডক্টরের কথায় রোদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
ছোঁয়ার সাথে সেই প্রথম দিন থেকেই চিৎকার চেচামেচি করে যাচ্ছে।
কিন্তু আগে তো এগুলা ছিলো না।
–ডক্টর।
–জি।
–আমি ছোঁয়াকে বিগত ৫ বছর ধরে চিনি ওর আগে এমন সমস্যা ছিল না।
–মি.চৌধুরী পানিতে ফোবিয়া অনেক দিন ধরেই ওনার জন্মের থেকে।
–হ্যা ওটা সম্পর্কে জানি কিন্তু এই, বাকি গুলো,
–এগুলা রিসেন্ট তৈরি হয়েছে।
ওনার মধ্যে সব সময় জড়তা এবং ভয় কাজ করে উনি ভিশন ভিতু প্রকৃতির এক জন মানুষ।
খেয়াল রাখবেন আসি।
ডক্টর চলে গেল।
রোদ ছোঁয়ার পাশে বসলো,
হাতে সেলাইন চলছে তার।
গত দু দিন ভালো করে কিছু খাই নি মেয়েটা।
ওর উপর এতোটাই রাগ ছিল যে ও যে কিছু খাচ্ছে না সে দিকে কোন খেয়াল নেই রোদের।
কিন্তু রোদ করবে তো করবে কি রোদ কে যে সব সময় ছোঁয়ার দেওয়া আঘাত গুলো তাড়া করে বেড়ায়।।
রোদ যেন পাথর হয়ে যাচ্ছে।
এক দিকে ছোঁয়ার এই অবস্থা অন্য দিকে ছোঁয়ার দেওয়া হাজার কষ্ট।
কি করবে রোদ কিছুই বুঝতে পারছে না।।
,
,
,
সকাল গড়িয়ে বিকাল হলো।
ছোয়ার জ্ঞান এসেছে,
সেলাইন ও শেষ।
রোদ খাবার নিয়ে আসে ছোঁয়ার জন্য।
–খাবার খেয়ে নিবা চুপচাপ কোন কথা শুনতে চাই না।
রোদের ধমকে ছোয়া সব গুলো খাবার খেয়ে নেয় রোদের হাতে
খাবা শেষ হতেই এক জন সার্ভেন্ট এসে বলে,
–স্যার দাদা ডাকছেন আপনাদের দু জন কে।
–হুম আসছি,
সার্ভেন্ট চলে যায়,
–তুমি নামতে পারবা?
–জি.
–ওকে চলো।
রোদ ছোঁয়াকে নিয়ে নিচে আসে,
নিচে এসে দেখে লাগেজ দুটো,
রোদ অস্থির হয়ে বলে,
–দাদা জান আপনি কোথাও যাচ্ছেন?
–না তোমরা যাচ্ছো।
–মানে।
–মানে কোন প্রশ্ন নয় এখনি রওনা হচ্ছো তোমারা আমার গ্রামের দিকে ধান হয়েছে বৃষ্টি হচ্ছে নদী আছে ফুরফুরে বাতাস সেখানে আমাদের বাংলো বাড়িতে তোমরা থাকবে ৫ দিনের জন্য।
৫ দিনের এক দিন ও কম হলে তোমাদের আমি ঘরে ঢুকতে দিবো না।
–কিন্তু দাদা এভাবে হুট করে।
–কেন কথা নয় এটা আমার ওডার এখনি বের হও।
আমি দুই দাদা নাতির কথা দাঁড়িয়ে শুনছি।
দাদা হুট করে এমন ডিসিশন নিলো কেন।
–ছোঁয়া যা ঘুরে আয়।
রোদ তার দাদার উপর কথা বলতে পারল না ফলে দু’জন রওনা হলো।
গাড়িতে ছোঁয়া নিশ্চুপ ছিল।
রোদ ছোঁয়ার এই অবস্থা দেখে ভিশন কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু ওর হাত পাও বাঁধা আর এই বাঁধনের জন্য দায়ি এক মাত্র ছোঁয়া।।
অনেকটা পথ ড্রাইভ করার পর তারা গ্রামের বাসায় পৌঁছে যায়।
গাড়ি থেকে নেমে ছোঁয়া দেখে তাদের বাসার পাশেই ধান খেত সন্ধ্যা সন্ধ্যা সময় বেশ বাতাস হচ্ছে ছোঁয়া নিজের অজান্তে সে দিকে এগিয়ে যায়।
রোদ তা দেখেও কিছু বলে না।
ছোঁয়া গিয়ে বাতাসের মাঝে আলের উপর দাঁড়ায়।
অসম্ভব ভাবে বাতাস বইছে আর মিষ্টি ঘ্রাণ এখনি বৃষ্টি হবে।
চারিদিকে কালো হয়ে এসেছে মেঘে।
যা হবার তাই হলো কিছু সময়ের মধ্যে ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নেমে গেল।
ছোঁয়া মুখটা উঁচু করে বৃষ্টি গুলো উপোভগ করছিল।
আর দুর থেকে রোদ ছোঁয়াকে দেখছিল।
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here